বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিব আল হাসান।’ দীর্ঘ ও ধারাবাহিক সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের অভ্যুদয়। এরপর নানা টানাপোড়েন, রক্তক্ষয়, ষড়যন্ত্র, অভাব, দুর্ভিক্ষ, দু:শাসনের জোয়াল কাঁধ থেকে সরিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণ মাথা উচুঁ করে দাঁড়াচ্ছে।

আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে বাংলাদেশের এই উত্থান পর্বের বিনির্মাণে প্রশংসনীয় অবদান এ মাটিতে জন্ম নেয়া কয়েকজন কৃতি মানুষের। এদের মধ্যে যেমন আছেন রাজনীতিবিদ, তেমনি অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী কিংবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে উঠে আসা অসাধারণ কেউ।

স্বনির্ভরতা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশপাশি সারা দুনিয়ায় এই বদ্বীপের পরিচিতি ক্রিকেটের উঠতি পরাশক্তি হিসাবে। বাংলাদেশের সৃজনশীল তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের সুপারহিরো সাকিব, তামিম ও মাশরাফি। ক্রিকেট কিংবা জীবনের মাঠের সকল প্রতিকূলতাকে জয় করতে তরুণরা অনুপ্রেরণা খোঁজে এই টাইগারদের মাঝে। একজন সাকিব কিংবা মাশরাফি’র প্রভাব বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে বিশাল। অনুপ্রেরণার এই সীমাহীন শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের খেলাধুলার অঙ্গন এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে।

পশ্চিমা বিশ্ব, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এশিয়ার দেশগুলো খেলাধুলায় নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে ফি’বছর ব্যয় করে অজস্র অর্থ। সেই অর্থ-ব্যয়ে যেমন উত্থান হয় রোনালদো, মেসি, উসাইন বোল্ট, ফেদেরার, উইলিয়ামস বোনদের মতো একক খেলার তারকার, তেমনি দলীয় খেলায় চীন, জার্মানি কিংবা যুক্তারাষ্ট্রের মতো বিশ্ব জয়ী দলের। অলিম্পিক, বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে পদক, ট্রফির পাশপাশি অবকাঠামো নির্মাণে তাৎক্ষনিক সাফল্য আসে এ কথা সত্যি। তবে সেই খরচের সুদুরপ্রসারি সুফল আয়োজক দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কতটা পায় তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

আশার কথা, দেশে দেশে ক্রীড়া খাতের এই বিপুল ব্যয় কিভাবে দীর্ঘমেয়াদে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যানে ব্যবহার করা যায় তার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। ২০১৬’র রিও ডি জেনিইরো অলিম্পিকসে সেই নতুন চিন্তার আদান প্রদান হয়েছে মাত্র, আশা করা যায় ২০২৪’এ প্যারিস অলিম্পিকসে তার সফল প্রয়োগ দেখা যাবে। দুই সপ্তাহ মেয়াদি অলিম্পিকে ক্রীড়াবিদের আবাসনের জন্য নির্মিত গেমস ভিলেজ কিংবা ক্রীড়া স্থাপনা কিভাবে প্রতিযোগিতা শেষে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাজে লাগে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। আয়োজক শহর প্যারিসের স্যঁ-দনি অঞ্চলে বসবে ২০২৪’র অলিম্পিক গেমসের মূল আসর। ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’র জন্য স্থাপনা নির্মান তার দীর্ঘমেয়াদি ও বহুমুখি ব্যবহার দ্রারিদ্রপীড়িত অঞ্চলটির অধিবাসীদের জীবনমান উন্নয়ন ঘটাবে এমন স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। ‘সামাজিক-ব্যবসায়’র ছায়ায় এমন নতুন ধারণার সফল প্রয়োগ সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের প্রয়োজন মেটাবে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও এর উপযোগিতা তুলনামূলকভাবে বেশী। অবকাঠামো, অর্থনৈতিক ও মৌলিক বিষয়ে সীমাবদ্ধতা আছে বলেই অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পক্ষে অলিম্পিক, ফুটবল বিশ্বকাপ কিংবা এশিয়ান গেমসের মতো বড় আসরের আয়োজক হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে খেলাধুলার মাধ্যমে জনগোষ্ঠীর জীবনমান বাড়ানোর সুযোগ বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশী। এদেশের প্রেক্ষাপটে খেলাধুলার অঙ্গনে সামাজিক কল্যান বা সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীকে স্বাচ্ছন্দ্য দেয়া কিংবা জীবনযুদ্ধের জন্য আত্মবিশ্বাস যোগানোর প্রেক্ষাপট ভিন্নধর্মী। প্রতিবছর অসংখ্য তরুণ সাকিব, মুশফিক, তামিম কিংবা মাশরাফি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে শুরু করে পথচলা। যোগ্যতা, প্রতিভা থাকলেও মাশরাফিদের উত্তরসূরি হিসাবে কেবল মোস্তাফিজ, মিরাজ, সৌম্যরা পায়ের নীচে শক্ত মাটি পায়। সেই একই দলের সাথে বড় স্বপ্ন নিয়ে শুরু করা কত প্রতিভা যে কতভাবে পথ হারায় তার হিসাব কে রাখে? ঝরে যাওয়া প্রতিভাদের ভিন্ন আঙ্গিকে ভিন্ন ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত করা হতে পারে ক্রীড়াঙ্গণে সামাজিক দায়বদ্ধতার বড় চ্যালেঞ্জ।

হাতের কাছে আছে অজস্র উদাহরণ। জাতীয় দলের হয়ে কয়েক বছর বা কয়েকটি ম্যাচ খেলার পর ইনজুরি বা ফর্ম হারিয়ে অনেকেই কক্ষপথ থেকে ছিঁটকে গেছেন। হতাশা কাটিয়ে তাদের কেউ কেউ কোচ হিসাবে উঠতি প্রতিভাদের প্রশিক্ষণ দিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়েছেন ফুটবল-ক্রিকেট একাডেমি, কিংবা কোচিং স্কুল। যোগ্যতা বিশাল অথচ স্বপ্নের সাথে সামর্থ্যের টানাপোড়েনে গতিহারা তাদের মহতী উদ্যোগ। এরকম স্বপ্নবাজ উদ্যমী তরুণদের পাশে দাঁড়াতে পারে সামাজিক ব্যবসায়’র মাধ্যমে খেলাধুলার সমৃদ্ধ অঙ্গন থেকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণে আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। সাহায্য বা সহানুভূতি নয়, বরং অত্যাধুনিক কোচিং সেন্টার প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী উদ্যোমী তরুণদের জন্য কার্যকর ব্যবসায়িক সহযোগিতা পূরণ করতে পারে সময়ের দাবী। এ ধরণের উদ্যোগের উপযোগিতা বহুমাত্রিক। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, প্রজন্ম এমনকি দেশের সার্বিক চিত্রই ইতিবাচক উপায়ে পাল্টে দিতে পারে। উদাহরণের অভাব নেই। সারা দেশের ছড়িয়ে আছেন এমন অসংখ্য সাবেক ফুটবলার-ক্রিকেটার, যারা বিভিন্ন কারণে খেলোয়াড়ি জীবন শেষে কোচিং পেশাকে বেছে নিতে আগ্রহী। নিজস্ব উদ্যোগে গড়েছেন ফুটবল বা ক্রিকেট কোচিং স্কুল। সেই স্কুলে খেলা মৌলিক পাঠ নিচ্ছে সাধারণ ঘরের অগুনতি কিশোর-কিশোরী।

উদ্যোক্তাদের বড় পরিসরে প্রতিষ্ঠান গড়ার সাধ আছে সাধ্য নেই। সেই ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে জনকল্যাণে আগ্রহী ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কার্যকর সহযোগীতায় (অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে) সারাদেশে গড়ে উঠতে পারে অন্তত: শ’দুয়েক আধুনিক স্বাবলম্বী ফুটবল বা ক্রিকেট কোচিং স্কুল বা একাডেমি। এই প্রকল্প নিশ্চিত আর্থিকভাবে সাফল্যের মুখ দেখবে, সারাদেশে ফুটবল-ক্রিকেটে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে বাধ্য।

এছাড়াও খেলার নির্মল আনন্দ এবং তার প্রতি অনুরাগীদের ভালোবাসাকে মূলধন করে হতে পারে সামাজিক ব্যবসা। তার মাধ্যমেই স্বাবলম্বী হতে পারে আর্থিকভাবে রুগ্ন বাংলাদেশের অনেক জনপ্রিয় ক্লাব, ফেডারেশন কিংবা জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা। এক্ষেত্রে প্রয়োজন শুধু উদ্ভাবনী ক্ষমতা, উদ্যোম এবং কার্যকর সহযোগিতার। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে মোহামেডান, আবাহনী, সাকিব, তামিম, মাশরাফি, সিদ্দিকুরের মতো ক্যারিশম্যাটিক স্পোর্টস পার্সোনালিটি, প্রতিষ্ঠান আছে। শুধু চাই এই মহামূল্যবান দামী ব্র্যান্ডগুলোকে সর্বোত্তম ব্যবহার করার মতো উদ্যমী উদ্যোক্তা বা পৃষ্ঠপোষক। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গণে পেশাদারি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করার শুরুটা হতে পারে এভাবে। খেলার দুনিয়ায় উন্নত দেশগুলোর আধুনিক ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তি নির্ভর প্রশিক্ষণ পদ্ধতির সাথে পাল্লা দিয়ে সাফল্য পেতে হলে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের আর্থিক সামর্থ্য ও পেশাদারি ব্যবস্থাপনার প্রবর্তন সময়ের দাবী।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। আমাদের কণ্ঠস্বর-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী

ভারত ও চীনের মধ্যে কোনো না কোনো ইস্যুতে বাদানুবাদ, বিরোধিতাবিস্তারিত পড়ুন

  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?