সোমবার, নভেম্বর ২৫, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

চট্টগ্রামে র‍্যাবের অভিযান কি ‘সাজানো গল্প’?

চট্টগ্রামে র‍্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার পাঁচ যুবককে অনেক আগেই তুলে নেওয়া হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে সাদাপোশাকধারী লোকজন ছয় মাস থেকে এক বছর আগে তাঁদের তুলে নিয়ে যান। রাখা হতো হাজতখানার মতো ছোট কক্ষে। কিছুদিন পর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়া হতো। হাতকড়া থাকত সব সময়। বেঁধে রাখা হতো চোখ। গত ২৯ নভেম্বর মাইক্রোবাসে করে তাঁদের চট্টগ্রামে র‍্যাব-৭-এর কার্যালয়ে আনা হয়। সেখান থেকে ৮ ডিসেম্বর ভোরে উত্তর কাট্টলীর একটি বাসায় নেওয়া হয়। ওই বাসায় আগে থেকেই অস্ত্র, গুলি, বোমা রাখা ছিল।

গতকাল সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নাজমুল হোসেন চৌধুরীর আদালতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে পৃথকভাবে এসব অভিযোগ করেন র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ওই পাঁচ যুবক। তাঁরা একজন আরেকজনকে চেনেন না বলে দাবি করেন। আদালতের কাছে তাঁরা অভিযোগ করেন, র‍্যাবের অভিযানের ঘটনা সাজানো নাটক। আদালতের কাছে বিচার চান তাঁরা।

রিমান্ড শুনানির জন্য গতকাল ওই পাঁচ যুবককে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে তাঁদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। তাই আসামিদের কোনো বক্তব্য আছে কি না, আদালত জানতে চান। তখন পাঁচ আসামি পৃথক বক্তব্যে তাঁদের কখন ও কীভাবে তুলে নেওয়া হয়, সেই বর্ণনা দেন এবং আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান। এ সময় এজলাসে প্রায় ৩০ জন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ৮ ডিসেম্বর র‍্যাব গণমাধ্যমকে বলেছে, ওই দিন ভোরে র‍্যাব-৭-এর সদস্যরা চট্টগ্রাম নগরের এ কে খান মোড় ও উত্তর কাট্টলী এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, বোমা, বিস্ফোরকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফরিদপুরের মাওলানা মো. তাজুল ইসলাম (২৭), যশোরের মো. নাজিমউদ্দিন (৩৮), ঝিনাইদহের আবুজার গিফারী (২২), নীলফামারীর নুরে আলম ইসলাম (২২) ও রংপুরের শেখ ইফতিশাম আহমেদ (২৩)। র‍্যাবের দাবি, পাঁচজনই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) সদস্য। তাঁরা প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে হুজি নেতাদের ছিনিয়ে নেওয়া ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্থাপনায় হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুটের পরিকল্পনা করছিলেন বলেও র‍্যাব ব্রিফিং করে জানিয়েছিল।

জানতে চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘জঙ্গি তৎপরতা তো চলছে। তরুণদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, জঙ্গিবাদে দীক্ষা দেওয়া হচ্ছে। আমরা সবাই এর বিরুদ্ধে। কিন্তু জঙ্গিবাদ দমনের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন আইনবহির্ভূতভাবে কিছু না করে, সেদিকে লক্ষ রাখা জরুরি।’

অবশ্য র‍্যাবের ওই অভিযান শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে গ্রেপ্তার নুরে আলমের ছবি দেখে তাঁকে শনাক্ত করে পরিবার। তাঁর মা নীলফামারীর বাসিন্দা নুর নাহার সাংবাদিকদের বলেন, গত ১১ এপ্রিল দিবাগত রাত দেড়টা থেকে দুইটার দিকে তাঁর ছেলেকে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে যান মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে আসা কিছু লোক। তাঁরা নিজেদের প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি এ ঘটনায় তখন থানায় জিডি করেন।

পরদিন ইফতিশাম আহমেদের বাবা রংপুরের ব্যবসায়ী শেখ ইফতেখার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর ছেলেকে ২৯ এপ্রিল রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে রাজশাহী নগরের মোন্নাফের মোড় এলাকার একটি ছাত্রাবাস থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি তখন রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় জিডি করেন। শেখ ইফতিশাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

গ্রেপ্তার নাজিমউদ্দিনের স্ত্রী যশোরের মনিরামপুরের বাসিন্দা নাজমা আক্তারও র‍্যাবের অভিযানের পরদিন সাংবাদিকদের বলেন, ২৫ মে ঢাকা থেকে সাদাপোশাকের একদল লোক নাজিমউদ্দিনকে তুলে নিয়েছিল। তাঁরাও থানায় জিডি করেছিলেন। সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করে এসব জিডির সত্যতা পেয়েছেন।

সর্বশেষ গতকাল ফরিদপুরে তাজুল ইসলামের পরিবার সাংবাদিকদের বলে, গত বছরের ৪ নভেম্বর রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য তাজুলকে মানিকগঞ্জ থেকে তুলে নিয়ে যান।

গতকাল আদালতে নাজিমউদ্দিন বলেন, গত ২৫ মে ঢাকার মিরপুর থেকে সাদাপোশাকধারী কিছু লোক তাঁকে তুলে নিয়ে যান। গত বৃহস্পতিবার ভোরে র‍্যাব তাঁকে চট্টগ্রামের এ কে খান এলাকায় ছেড়ে দেয়। তারপর আবার গ্রেপ্তার করে।

তুলে নেওয়ার ঘটনার প্রায় একই বর্ণনা দেন শেখ ইফতিশাম আহমেদও। তিনি আদালতকে বলেন, গত ২৯ এপ্রিল রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে কিছু লোক রাজশাহীর একটি ছাত্রাবাস থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর অন্ধকার একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। সব সময় চোখ বাঁধা থাকত, হাতে পরানো হতো হাতকড়া। গত ২৯ নভেম্বর মাইক্রোবাসে করে তাঁকে চট্টগ্রামে র‍্যাবের কার্যালয়ে আনা হয়। সেখান থেকে গত বৃহস্পতিবার ভোরে উত্তর কাট্টলীর একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় চোখ বাঁধা অবস্থায়। চোখ খুললে দেখতে পান ঘরের ভেতর অস্ত্র ও গুলি। গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে পরে মাইক্রোবাসে তুলে র‍্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ওই দিন রাত তিনটার দিকে চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানায় হস্তান্তর করা হয়। থানায় প্রথম পাঁচজনের সঙ্গে দেখা হয়। এর আগে কেউ কাউকে চিনতেন না।

আদালতে নুরে আলম বলেন, ১১ এপ্রিল নীলফামারী শহরের বাড়ি থেকে তাঁকে তুলে নেওয়া হয়। তাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে মানিকগঞ্জের একটি মাদ্রাসা থেকে সাদাপোশাকধারী কিছু লোক তাঁকে তুলে নেয়। আবুজার গিফারী বলেন, কুষ্টিয়া থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে যায় গত ২৮ জুলাই।

পাঁচ যুবকের বক্তব্য শেষে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ আদালতকে বলেন, গল্প কীভাবে তৈরি করতে হয়, গ্রেপ্তার আসামিদের তা জানা আছে। তাঁরা হুজির সদস্য। রিমান্ডে তাঁদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তাঁদের রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।

গ্রেপ্তার পাঁচজনের বিরুদ্ধে র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের উপসহকারী পরিচালক গোলাম রাব্বানী বাদী হয়ে অস্ত্র, বিস্ফোরক ও সন্ত্রাস দমন আইনে পৃথক তিনটি মামলা করেন। তিন মামলায় পাঁচ আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম প্রতি মামলায় সাত দিন করে ২১ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন গত রোববার।

গতকাল আদালত শুনানি শেষে তিন মামলার প্রতিটিতে এক দিন করে মোট তিন দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে সতর্কতার সঙ্গে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন আদালত।

পাঁচ আসামির আদালতে দেওয়া এ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চট্টগ্রামের র‍্যাব-৭-এর সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) সোহেল মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি র‍্যাব-৭-এর অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। র‍্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘দেশে ক্রসফায়ারে যখন মানুষ মারা শুরু হলো, তখন অনেকেই খুশি ছিল। এর দীর্ঘস্থায়ী যে কুফল, আইনের শাসন যে ভেঙে পড়তে পারে, সেটা আমরা বুঝতে পারিনি। জঙ্গি দমনের নামে এখন যা হচ্ছে, মানুষ প্রথমে খুশিই হয়েছে। ক্রমান্বয়ে বেআইনি কাজ হতে থাকবে, সেটা বুঝতে পারেনি। এখনো একই ঘটনা ঘটছে। এর খেসারত আমাদের দিতে হবে।’-প্রথম আলো।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

চট্টগ্রামে চিনির গুদামে আগুন- ১৭ ঘণ্টা পরও পুরোপুরি নেভেনি

গতকাল (৪ মার্চ) বিকালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার ঈসানগর এলাকায় অবস্থিতবিস্তারিত পড়ুন

পাল্টাপাল্টি অবস্থানে ছাত্রলীগ চবিতে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক আমীর উদ্দিনকে অপসারণ ও লাঞ্ছনার বিষয়েবিস্তারিত পড়ুন

ঋণের বোঝা নিয়ে দম্পতির ‘আত্মহত্যা’

মন্দিরের পাশেই কুঁড়েঘরে থাকতেন পুরোহিত স্বপন দে ও তাঁর স্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন

  • আজ খুলে দেয়া হচ্ছে চট্রগ্রামের আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার
  • চট্টগ্রামে মিনিবাস উল্টে নিহত ২
  • চট্টগ্রামে মন্দিরে হামলা-অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধ
  • ক্রিকেট নিয়ে মারামারি: আহত স্কুলছাত্রের মৃত্যু
  • নারী আইনজীবীর নাক ফাটিয়ে দিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা
  • চট্টগ্রামে ৬ ঘন্টার বৃষ্টিতে লাখো মানুষ পানিবন্দি
  • চট্টগ্রামে ইয়াবাসহ ২ পুলিশ কনস্টেবল গ্রেপ্তার
  • অ্যাম্বুলেন্সে থাকা পাকিস্তানের পতাকা ছিঁড়ে ফেললো চবি ছাত্রলীগ
  • সন্দ্বীপে নৌকাডুবি, ৪ লাশ উদ্ধার
  • ‘পুলিশ মেরে বেহেশতে যেতে চায় জঙ্গিরা’
  • ট্রেনে কাটা পড়ে দুইজনের মর্মান্তিক মৃত্যু
  • সীতাকুণ্ডে জঙ্গি আস্তানা : চার মামলা পুলিশের