চিকিৎসকের দেখা ছাড়া আর কিছু করার নাই!
ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সি গেটে এম্বুলেন্স চাপায় ৪ জন নিহতের প্রায় সবাই খেটে খাওয়া মানুষ। যে স্থানে দুর্ঘটনা হয়েছে তাতে ভিকটিম আমি, আপনি বা ঢাকা মেডিকেলের যে কোন ডাক্তারও হতে পারতো। বরাবরের মত চালকের সহকারী গাড়ি চালাচ্ছিল।গাড়ির মালিক ওয়ার্ড বয়।
এম্বুলেন্স নিয়ে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে যে সিন্ডিকেট ব্যবসা চলে তার পুরো র্যাকেটটাই চালায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীরা এটা এখন দিবালোকের মতই সত্য। শুধুমাত্র চিকিৎসা দেয়া ছাড়া আদতে একটি হাসপাতালে ডাক্তারের আর কোন কাজ নেই।তবে আফসোসের কথা এই যে, হাসপাতালে দুর্গন্ধ, রোগীর বিছানার সংকট, ট্রলি পায় না, ওষুধ পায় না, ওয়ার্ড বয় ইঞ্জেকশন দিয়ে রোগী মারে এই সব কিছুর জন্যেও শিক্ষিত মুর্খ সকল আমজনতা ডাক্তারদেরই দোষারোপ করেন।
একজন রোগী ইমার্জেন্সি থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত যাওয়াকালীন তার ৫০০ টাকা নেমে যায় ট্রলি ভাড়া গুনতে।সেই হিসাবে একজন ট্রলির মালিক একজন গাড়ির মালিকের চেয়েও বেশি ইনকাম করে।
ওয়ার্ডে পৌছে ডাক্তার রোগী দেখার পর কিছু পরীক্ষা নীরিক্ষা দেন, ওষুধ দেন, স্যালাইন দেন। সরকারি হাসপাতালে সেই পরীক্ষা করাতে গিয়ে রোগীর লোক এবার দালালের হাতে পরে। বাইরের নিন্মমানের ডায়গোনস্টিক থেকে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট আসে।এই দালালদের সাথে লিয়াজো থাকে ওয়ার্ড বয় কিংবা খাল/ মাসিদের।
অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে এক বেডে দুই জন রোগী কখনই থাকতে চায় না। সেই সুযোগে সক্রিয় হয় বাইরের ক্লিনিকে ভাগানো গ্রুপ।এখানেও সেই একই সুত্র।
ঢাকা মেডিকেলে অধিকাংশ ওষুধ সাপ্লাই আছে।এই ওষুধ দেওয়া, স্টোর থেকে আনা, হিসাব রাখা এর সব দ্বায়িত্ব সিস্টারের।ডাক্তার শুধু মনিটরিং করে সবাই ওষুধ পাচ্ছে কিনা। এক্ষেত্রে ওষুধ সাপ্লাই আছে কিন্তু রোগী পাচ্ছে না বরং সেই ওষুধ বস্তায় ভরে বাইরে বিক্রি করার মত অনেক ঘটনাই ঘটেছে।
এই সব বিষয় তদারকির জন্যে হাসপাতাল প্রশাসন নামে একটা বিভাগ রয়েছে কিন্তু আদতে ইনাদের কাজের কোন কুল কিনারা পাই না। ইনারাও জানে ওষুধ চুরি হয়, দালাল রোগী ভাগায়, এম্বুলেন্স ট্রলি সিন্ডিকেট ব্যবসা, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের অবৈধ ব্যবসার কথা। ঘটনা ঘটলেই কেবল তাদের টনক নড়ে তার আগে ইনারা প্রতিষেধক খুজে না। নাকি চোখে গামছা বেধে রাখে তা আল্লাহ ভালো জানেন।
গত দেড় মাস ধরে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিন অচল হয়ে পরে আছে। ঢাকা মেডিকেলের মত বাংলাদেশের অন্যতম হাসপাতালের জন্যে এটা অত্যন্ত হতাশজনক। অথচ প্রশাসনের এই বিষয়ে কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। তারা শুধু তদন্ত কমিটি গঠন নিয়ে ব্যস্ত। ঢাকা মেডিকেলের এক দিনের ভর্তি ফি আর ইনভেস্টিগেশনের চার্জ দিয়েই ৫ টা সিটি মেশিন কেনা যায়। ঢাকা মেডিকেলের এই অকার্যকর প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কবে তদন্তের আওতায় আনা হবে? তৃতীয় , চতুর্থ শ্রেনি আর হাসপাতাল প্রশাসনের সকল দূর্নিতীর দায় আমরা ডাক্তারেরা আর কত দিন মাথা পেতে নিব?
সাংবাদিকগণ ফাক ফোকরে শুধু ভুল চিকিৎসা খুজেন। কিন্তু কখনো আমাদের সেরা কাজগুলোকে হাইলাইট করেন না। কত সীমিত লজিস্টিক নিয়ে বাংলাদেশি ডাক্তারেরা কত বড় বড় কাজ করে যাচ্ছেন তা কখনোই আপনারা জানতে আসেন নাই।ধনী দেশে যে অপারেশন করতে কোটি টাকা খরচ হয় সে অপারেশন আমরা করি বিনা পয়সায়। বিশ্বাস হয় না? হুমায়ুন আহমেদ স্যারের কোলোন ক্যান্সার অপারেশনে আমেরিকায় এই রকমই খরচ হয়েছে, অপারেশান করেছে বিখ্যাত সার্জনেরা। কিন্তু ফলাফল? অপারেশন ফেইলিউর। আমাদের স্যারেরা এই অপারেশন সকাল বিকেল করেন। আমরা ট্রেইনি সার্জনেরাও এই অপারেশান করি স্যারদের সরাসরি মনিটরিংয়ে। রোগী ভালো হয়ে হাসি মুখে বাড়ি যায়। হুমায়ুন স্যার বিদেশে মারা গেছে তাই সংবাদের হেডিং হল “চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতায় বিদেশের মাটিতে হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যু”। এই দেশে হলে হাসপাতাল ভাংচুর, মামলা, ডাক্তার গ্রেফতার সাথে হেডিং ” ভুল চিকিৎসায় বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যু “.।
অতিথি লেখক , ডাঃ তানভির শুভ .ঢাকা মেডিকেল কলেজ
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন