শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফর
চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের গুরুত্ব-তাৎপর্য
বাংলাদেশের জন্য চীন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী ও বিশ্বস্ত বন্ধুরাষ্ট্র। আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে চীন অব্যাহতভাবে একটি কেন্দ্রীয় অবস্থানে রয়েছে এবং চীনা কূটনীতিকরাও বাংলাদেশকে তাঁদের দেশের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছেন। বর্তমান পরিবর্তনশীল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বিশ্বে চীন ক্রমবর্ধমান হারে তার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামরিক শক্তির সম্প্রসারণ করে যাচ্ছে, যা বিশ্ব রাজনীতিতে চীনকে একটি শক্তিশালী ও লক্ষণীয় ভূমিকা নির্ধারণ করেছে। এ প্রেক্ষাপটে আমার দৃষ্টিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আসন্ন ঢাকা সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে সাম্প্রতিক ভারত-মার্কিন সম্পর্কের নতুন আঙ্গিক, ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব ও বৈরী সম্পর্ক এবং এর ফলে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠান স্থগিত-পরবর্তী পর্যায়ে চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর এ দুদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে একটি ভিন্ন ইতিবাচক মাত্রা যোগ করতে পারে, যা এ অঞ্চলে চীনের অবস্থান ও নীতি নতুনভাবে নির্ধারণের সুযোগ তৈরি করবে।
চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন চীনের বিবেচনায় বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য একটি কাঙ্ক্ষিত ও উপযুক্ত গন্তব্য। গত কয়েক বছরে চীন আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্বে একটি অপ্রতিরোধ্য অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় চীনা বিনিয়োগকারীরা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী, কারণ এ দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী ও বৃহৎ বাজার চীনা বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করছে। অধিকন্তু বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ চাকরিবাজারে প্রবেশ করছে এবং চীন ব্যাপক মাত্রার বিনিয়োগের মাধ্যমে এ তরুণ কর্মশক্তিকে ব্যবহার করতে ইচ্ছুক।
চীনা প্রেসিডেন্টের সফর বাংলাদেশের জন্য কতটুকু লাভবান হবে, তা এ মুহূর্তে স্পষ্ট না হলেও বলা যায়, বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করা চীনের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। বর্তমানে চীন পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ বড় আকারের প্রকল্পগুলোয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে, যা পারস্পরিক স্বার্থের আলোকে দুদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সহযোগিতার আরো নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ খাত, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত, ঔষধ ও চামড়াশিল্প এবং জাহাজ নির্মাণশিল্পে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অর্থবহ ও আস্থার সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী চীন সরকার। বাংলাদেশও চীনের এ আগ্রহে সাড়া দিয়ে এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করেছে। তবে সুষ্ঠু ও নিরাপদ বিনিয়োগের স্বার্থে চীন বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখতে চায়, কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা যেকোনো বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
এ দুদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কিছু সমস্যাও রয়েছে। যেমন—বর্তমানে বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্যে প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের অসমতা বিরাজ করছে, যা নিরসনে চীনা বাজারে অধিক হারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশ নিশ্চিত করার জন্য চীনা প্রেসিডেন্টের সফরকে বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারে। সার্বিকভাবে বলা যায়, চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর দুই পক্ষ থেকে অতীতের যেকোনো সফরের তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি বাংলাদেশের স্বার্থের উন্নয়নে একটি বড় সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
লেখক : চেয়ারম্যান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন