জুম্মার নামাযের যত বিশেষ তাৎপর্য গুরুত্ব ও ফযিলত
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই দিনটির বিশেষ তাৎপর্য ও গুরুত্ব আমরা অনেকেই জানিনা ! শুক্রবার মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্ব পূর্ণ দিন।
অনেকেরই জানা নেই যে শুক্রবার কেন এত গুরুত্বপূর্ণ।ইসলামে শুক্রবারের দিনটি অনেক বরকতময় ও তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে প্রথম মানুষ হযরত আদম)আ( কে সৃষ্টি করা হয়েছে,এই দিনে তাকে বেহেশতে স্থান দেয়া হয়েছে, এই দিনেই তিনি পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং সপ্তাহের সাতটি দিনের মাঝে শুক্রবারই সে দিন যেদিন তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। শুক্রবার দু’আকবুলেরও দিন,তবে দুয়ায় নিষিদ্ধ কিছু চাওয়া যাবে না।এই দিনেই সংঘটিত হবে কিয়ামত।আল্লাহ শুক্রবারকে অন্যান্য দিনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন!রাসুলুল্লাহ )স( দিনটির এরকম আরো কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন।হযরত আবু হুরায়রা)রা( এবং হুযাইফা)রা( থেকে বর্ণিত : রাসুলুল্লাহ )স( বলেন : “আমাদের পূর্বে যারা এসেছিলেন
আল্লাহ তাদেরকে শুক্রবার থেকে দূরে রেখেছিলেন।ইহুদীদের ছিল শনিবার এবং খ্রিস্টানদের ছিল রবিবার।
অতঃপর আল্লাহ আমাদেরকে শুক্রবারের ব্যাপারে জ্ঞান দিলেন ” প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ মুহাম্মদ)স( জবাবে বলেন, “আল্লাহ মাটিকে নিষেধ করেছেন নবীদের দেহ ভক্ষণ না করতে,তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক” )আবু দাউদ,সুনান আবু দাউদ ৪/২৭৩( .আবু
লুবাবাহ ইবন আল-মুনধির হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ)স( বলেন, “শুক্রবার সব দিনের
সেরা,এবং আল্লাহর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ।ঈদুল আজহা এবং ঈদুল ফিতরের চেয়েও এই দিন আল্লাহর কাছেমহান।
” এই দিন আল্লাহ আদম\ )আ( কে সৃষ্টি করেন,এই দিনেই পৃথিবীতে প্রেরণ করেন,এই দিনেই
তিনি মারা যান,এই দিনে এমন একটি সময় আছে যখন কেউ আল্লাহর কাছে যা চায় ,আল্লাহ তাকে তাই দেন, যতক্ষণ না হারাম কিছু চাওয়া হয়,এই দিনেই হবে কেয়ামত।
এমন কোন ফেরেশতা নেই,নেই কোন আসমান, নেই কোন যমীন,নেই কোন পর্বত আর নেই কোন
সাগর যে কিনা শুক্রবারের দিনটিকে ভয় করে না। ” ইবন মাজাহ : ০৮৪. বুখারী ও মুসলিম হতে বর্ণিত আছে,শুক্রবারের দিনটিতে এমন একটি নিদৃষ্ট সময় আছে যখন আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে যাই চাই না কেন আল্লাহ তা কবুল করেনযতক্ষণ পর্যন্ত না এমন কিছু চাওয়া হয়
যা ইসলামে নিষিদ্ধ।এখানে হাদীসটি উল্লেখ করা হল,আবু হুরায়রা রা( হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ )
জুমার দিনের ফযিলত সম্পর্কে বলেন, ” শুক্রবারে এমন একটি ক্ষণ আছে যখন একজন
মুসলিম,সে নামাজ আদায় করেছে এবং দুয়া করেছে,সেইদুয়া কবুল করা হয়ে থাকে”. তিনি)স( তাঁর হাতের দ্বারা ইশারা করে বোঝান যে,তা খুব অল্প একটি সময় । বুখারি ও মুসলিমশুক্রবারের
আরেকটি ফযিলত হল জুমার নামায।এর গুরুত্ব এতই অধিক যে ,পবিত্র কুরআনে আল-জুমুয়াহ
নামে একটি পূর্ণ সুরা রয়েছে । আল্লাহ তায়ালা কুরআনে জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, “মুমিনগণ, জুমআর দিনেযখন নামাজের আযান দেয়া হয়,তখন
তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে তাড়াতাড়ি করো এবং বেচাকেনা বন্ধ কর ।এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ ।আল-জুমুয়াহ ৬২:৯ এটি এমন একটি দিন যেদিন আল্লাহ তায়ালা,পরম করুনাময় আমাদের সগীরা)ছোট( গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিয়ে থাকেন, শুধুমাত্র ঐ দিনেরই নয় বরং পুরো সপ্তাহের এবং সাথে অতিরিক্ত আরো তিন দিনের।সহীহ মুসলিমের হাদীসটি বর্ণিত হল :আবু হুরায়রা রা হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ স বলেন,যদি কেউ যথাযথভাবে ওযু)পবিত্রতা অর্জন( করল, এরপর জুমার নামাযে আসলো,মনোযোগের সাথে খুতবা শুনলো এবং নীরবতা পালন করে,তার ঐ শুক্রবার এবং পরবর্তীশুক্রবারের মধ্যবর্তী সকল ছোটোখাট গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে,সাথে অতিরিক্ত আরো তিনটি দিনেরও,…… ”)মুসলিম(.জুমআর আজান হওয়ার পর নামাজের প্রস্তুতি ব্যাতিত সকল কাজ হারাম হয়ে যায়। হযরত আবু লুবাবা ইবনে আবদুল মুনযির (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, জুমু’আর দিন সকল দিনের সরদার। আল্লাহর নিকট সকল দিনের চেয়ে মর্যাদাবান। কোরবানীর দিন ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়ে বেশী মর্যাদাবান।
আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমরা শেষে এসেছি কিন্তু কেয়ামতের দিন সকলের আগে থাকবো। যদিও অন্য সকল জাতিগুলো (ইহুদী ও খৃষ্টান) কে গ্রন্থ দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে, আমাদের গ্রন্থ দেয়া হয়েছে তাদের পরে। অত:পর জেনে রাখো এই (জুমার) দিনটি আল্লাহ আমাদের দান করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাদের সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। আর অন্য লোকেরা এ ব্যাপারে আমাদের পিছনে আছে। ইহুদীরা জুমার পরের দিন (শনিবার) উদযাপন করে আর খৃষ্টানেরা তার পরের দিন (রবিবার) উদযাপন করে। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)
আসুন আমরা জুম্মার দিনে আগে ভাগে মসজিদে যাই, আমি আপনি যদি একটু আগে ভাগে মসজিদে যাই তবে এর জন্য অনেক ফজিলত রয়েছে। হাদিসে আছে জুম্মার দিনে আগে ভাগে মসজিদে গেলে দান-খয়রাত বা পশু কুরবানী করার সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত এক হাদীসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যাক্তি জু’আর দিন ফরজ গোসলের মত গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কুরবানী করল, দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানী করল, তৃতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানী করল। অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যায়।” (বুখারীঃ ৮৮১, ইফা ৮৩৭, আধুনিক ৮৩০)
যে ব্যাক্তি আদব রক্ষা করে জুম’আর সালাত আদায় করে তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তার জন্য পুরো এক বছরের রোজা পালন এবং রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার সমান সওয়াব লিখা হয়।
আউস বিন আউস আস সাকাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“জুমা’আর দিন যে ব্যাক্তি গোসল করায় (অর্থাৎ সহবাস করে, ফলে স্ত্রী ফরজ গোসল করে এবং) নিজেও ফরজ গোসল করে, পূর্বাহ্ণে মসজিদে আগমন করে এবং নিজেও প্রথম ভাগে মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় (অর্থাৎ কোন কিছুতে আরোহণ করে নয়), ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনে, কোন কিছু নিয়ে খেল তামাশা করে না; সে ব্যাক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছরব্যাপী রোজা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সওয়াব।” (মুসনাদে আহমাদঃ ৬৯৫৪, ১৬২১৮)
আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন আমরা যখন মসজিদে যাই তখন সেখানে তিন ধরনের মানুষ দেখতে পাই, যা হুজুর (সা:) এর নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়:
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“জুম’আর সালাতে তিন ধরনের লোক হাজির হয়। (ক) এক ধরনের লোক আছে যারা মসজিদে প্রবেশের পর তামাশা করে, তারা বিনিময়ে তামাশা ছাড়া কিছুই পাবে না। (খ) দ্বিতীয় আরেক ধরনের লোক আছে যারা জুম’আয় হাজির হয় সেখানে দু’আ মুনাজাত করে, ফলে আল্লাহ যাকে চান তাকে কিছু দেন আর যাকে ইচ্ছা দেন না। (গ) তৃতীয় প্রকার লোক হল যারা জুম’আয় হাজির হয়, চুপচাপ থাকে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনে, কারও ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে আগায় না, কাউকে কষ্ট দেয় না, তার দুই জুম’আর মধ্যবর্তী ৭ দিন সহ আরও তিনদিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহ খাতা আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন।” (আবু দাউদঃ ১১১৩)
যে সকল মসলমান জুম’আর নামাজ অত্যন্ত আদবের প্রতি লক্ষ্য রেখে আদায় করে, সেই সকল আদায়কারীদের জন্য দুই জুম’আর মধ্যবর্তী সময় গুনাহের কাফফারা স্বরূপ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ঈদের ছুটির পর বুধবার থেকে নতুন অফিস সময়সূচি
পবিত্র ঈদুল আজহার পর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিতবিস্তারিত পড়ুন
সৌদিতে হজে বিভিন্ন দেশের ৫৫০ হাজির মৃত্যু
সৌদি আরবে এ বছর হজ পালনে গিয়ে কমপক্ষে ৫৫০ জনবিস্তারিত পড়ুন
ঈদে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ টি গবাদিপশু কোরবানি
এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট ১ কোটি ৪বিস্তারিত পড়ুন