টাইগারদের দাপুটে সিরিজ জয়
মুস্তাফিজুর রহমান, নাসির হোসেনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে লক্ষ্যটা ছোটই পেয়েছিল বাংলাদেশ। প্রাথমিক বিপর্যয় সামলে সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহর দৃঢ়তভরা ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সহজেই হারিয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজারা। টানা চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে হারের পর আগ্রাসী মেজাজে খেলে অসাধারণ এই জয় পেল বাংলাদেশ। ৭ উইকেটের এই দাপুটে জয়ে সিরিজে ১-১ -এ সমতা ফিরিয়েছে স্বাগতিকরা।
২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ম্যাচের পর এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকাকে কোনো ম্যাচে হারাল বাংলাদেশ। রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪ ওভার বাকি থাকতে ১৬২ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। ওয়ানডেতে প্রথমে ব্যাট করে এই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে অলআউট হল তারা। জবাবে ২৭ ওভার ৪ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। এই জয়ে মাশরাফিদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিয়ে সব ধরনের অনিশ্চয়তা কেটে গেছে।
ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। অভিষেকে হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেট নিয়ে হইচই ফেলে দেওয়া কাগিসো রাবাদা নিজের প্রথম দুই ওভারে উইকেট নিয়ে চাপে ফেলেন স্বাগতিকদের। দ্বিতীয় ওভারেই ফিরে যান তামিম ইকবাল। তেড়ে ফুঁড়ে মারতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন তিনি। রাবাদার বলে একটি করে ছক্কা ও চার হাঁকালেও তার বলেই বোল্ড হয়ে বিদায় নেন লিটন দাস।
২৪ রানে দুই উইকেট হারানো বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে সৌম্য ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। অতিথি বোলারদের চেপে বসতে দেননি এই দুই জনে। এক দিকে মাহমুদউল্লাহ ধীরস্থির ব্যাটিং করলেওআক্রমণাত্মক ব্যাটিং চালিয়ে যান সৌম্য। দ্রুত রান সংগ্রহ গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের থিতু হতে দেয়নি সৌম্য-মাহমুদউল্লাহ জুটি। এই দুই জনের ব্যাটেই সিরিজে প্রথমবারের মত শতরানের জুটি পায় বাংলাদেশ।
সৌম্যর সঙ্গে ২২.৪ ওভারে ১৩৫ রানের জুটি গড়ে মাহমুদউল্লাহ ফিরে যাওয়ার সময় জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৪ রান। কাইল অ্যাবটের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৫০ রান করেন তিনি। তার ৬৪ বলের ইনিংসটি ৬টি চারে গড়া। ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দেওয়া সৌম্য অপরাজিত থাকেন ৮৮ রানে। তার ৭৯ বলের ইনিংসে আছে ১৩টি চার।
এর আগে স্বাগতিক বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরু থেকেই রানের জন্য লড়াই করতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে সব সময়ই চাপে রাখেন মুস্তাফিজ-নাসির-রুবেল হোসেনরা। শুরু থেকেই ভালো বোলিংয়ের পুরস্কারটা পঞ্চম ওভারেই পেয়ে যায় বাংলাদেশ। মুস্তাফিজের দারুণ এক বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সাব্বির রহমানকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান কুইন্টন ডি কক।
অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হাশিম আমলাকে ফেরান জুবায়ের হোসেনের বদলে দলে ফেরা রুবেল। তার চমৎকার এক বলে বোল্ড হয়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক। বোলিংয়ে এসেই আঘাত হানেন নাসির। ১৯তম ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই রাইলি রুশোকে বোল্ড করে অতিথিদের চাপে ফেলেন এই অফ স্পিনার।
আক্রমণে এসে সাফল্য পান অন্য অফ স্পিনার মাহমুদুল্লাহও। ডেভিড ‘কিলার’ মিলারকে মাশরাফির ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। রানের গতি বাড়ানোর সংগ্রামের সঙ্গে উইকেটও ধরে রাখতে ঘাম ঝরাতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের। স্বাগিতক বোলারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে সপ্তম ওভার থেকে ৩২তম ওভারে দুটির বেশি চার হাঁকাতে পারেনি তারা।
রানের গতি বাড়াতে নাসিরকে উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে বিদায় নেন বিপজ্জনক ফাফ দু প্লেসি। লং অনে কিছুটা দৌড়ে সর্বোচ্চ ৪১ রান করা এই ব্যাটসম্যানের ক্যাচ তালুবন্দি করেন সৌম্য। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান জেপি দুমিনিকে বিদায় করেন মুস্তাফিজ। তার বলে আগেই শট খেলে শর্ট কাভারে সাব্বিরের তালুবন্দি হন দুমিনি।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে রুবেল ফেরান ক্রিস মরিসকে। সাকিব আল হাসানের দুই ওভারে একটি করে চার হাঁকানো এই অলরাউন্ডারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রুবেল। নিজের ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথমবারের মতো ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ মেলে রাবাদার। তৃতীয় স্পেলে ফিরে দারুণ এক অফ কাটারে এই তরুণকে বোল্ড করেন মুস্তাফিজ। শেষ পর্যন্ত ৩৮ রানে ৩ উইকেট নেন এই বাঁহাতি পেসার।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে নিজের তৃতীয় উইকেট নেন নাসির। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো তৃতীয় উইকেট নিতে কাইল অ্যাবটকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস দেড়শ’ পার হয় অলরাউন্ডার ফারহান বেহারদিনের দৃঢ়তায়। ৩৬ রান করা এই ব্যাটসম্যানকে সীমানায় নাসিরের ক্যাচে পরিণত করে অতিথিদের সব মিলিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অলআউট করতে অবদান রাখেন মাশরাফিও।
কোনো উইকেট না পেলেও ভালো বোলিং করেন সাকিব। ১০ ওভারে ৩০ রান দেন এই বাঁহাতি স্পিনার। আগামী বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হবে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৬ ওভারে ১৬২ (আমলা ২২, ডি কক ২, দু প্লেসি ৪১, রুশো ৪, মিলার ৯, দুমিনি ১৩, বেহারদিন ৩৬, মরিস ১২, রাবাদা ১০, অ্যাবট ৫, তাহির ১*; নাসির ৩/২৬, মুস্তাফিজ ৩/৩৮, রুবেল ২/৩৪, মাহমুদউল্লাহ ১/১৩, মাশরাফি ১/১৭)
বাংলাদেশ: ২৭.৪ ওভারে ১৬৭/৩ (তামিম ৫, সৌম্য ৮৮*, লিটন ১৭, মাহমুদউল্লাহ ৫০, সাকিব ০*; রাবাদা ২/৪৫, অ্যাবট ১/২২ )
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন