‘ট্রাম কার্ড নয়, আশরাফের প্রস্তাবে সাধারণ সম্পাদক হলেন ওবায়দুল কাদের’
নোয়াখালী প্রেমিক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জেলাবাসীর কৃতজ্ঞতা ট্রাম কার্ড নয় আশরাফের প্রস্তাবে সাধারণ সম্পাদক হলেন ওবায়দুল কাদের।
সম্মেলনের আগে বুধবার পর্যন্ত গুঞ্জন চলছিল ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন এমনটি গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন নেত্রী। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে সৈয়দ আশরাফ ও সোহেল তাজ গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ পরবর্তী বিভিন্ন মিডিয়ায় কি চমক আছে নেত্রী আর আমি জানি। সৈয়দ আশরাফের এমন বক্তব্যে ভাবিয়ে তুলছিল রাজনৈতিক বোদ্ধাদের। সৈয়দ আশরাফ অতিরিক্তও অপ্রয়োজনীয় কথা বলেন না। সুতরাং তার বক্তব্যটি চলছিল চুল ছেঁড়া বিশ্লেষণ।
জামিতিক ভাষায় আশরাফ সভাপতি সোহেল তাজ সম্পাদক। আবার আশরাফ সভাপতি জয় সম্পাদক। আবার শেখ রেহানা সভাপতি সোহেল তাজ সম্পাদক এমনি সংবাদ বেরিয়ে ছিল দেশের মিডিয়াগুলোতে। সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে দেশি-বিদেশী বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল উদারপন্থী ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক না বানানোরই পক্ষে। কিন্তু সভানেত্রী শেখ হাসিনা অটল ছিলেন তার মিশন এবং ভিশন-২১ বাস্তবায়নে। তিনি ঘরে বাহিরের সকল প্রতিবন্ধকতায় অটল ছিলেন পরিশ্রমী সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক বানাতে।
তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফের প্রস্তাবনায় মাহবুবুল আলম হানিফের সমর্থনে এবং কাউন্সিলদের সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হলেন ওবায়দুল কাদের। সিকি শতক পর বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার যে স্বপ্ন শেখ হাসিনা দেখছেন, সেই লক্ষ্য পূরণে তার সঙ্গী হলেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
গতকাল রোববার ক্ষমতাসীন দলটির কাউন্সিল অধিবেশনের শেষ পর্বে শেখ হাসিনা সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর সাধারণ সম্পাদক পদেও নির্বাচন হয়। দুটি পদে আরও কোনো নাম প্রস্তাব না আসায় কাউন্সিলের জন্য গঠিত আওয়ামী লীগের নির্বাচন কমিশনের প্রধান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন দুজনকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করার পরপরই নির্বাচনী অধিবেশন শুরু হয়। নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে শেখ হাসিনা আহ্বান জানিয়ে এলেও নির্বাচনী অধিবেশনের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুকন্যার নামই সভাপতি পদের জন?্য প্রস্তাব করেন প্রবীণ নেত্রী বিদায়ী সভাপতিম-লীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। তা সমর্থন করেন সভাপতিম-লীর আরেক সদস?্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করলে তা সমর্থন করেন বিদায়ী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। এরপর সভাপতিম-লী গঠন করা হয়।
বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের স্থান হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই পরিষদে। সভাপতিম-লীতে তার পাশাপাশি নতুন এসেছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ, আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক খান, আবদুল মান্নান খান, রমেশ চন্দ্র সেন ও পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য (যশোর)। পুরনোদের মধ?্যে সভাপতিম-লীতে থাকছেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল?্যাহ, সাহারা খাতুন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। পুরনো যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছেন আব্দুর রহমান। কোষাধ?্যক্ষ পদে এন এইচ আশিকুর রহমানই থাকছেন নতুন কমিটিতে।
২০০৭ সালের জরুরি অবস্থার পর দুঃসময়ে দলের হাল ধরতে এগিয়ে আসা আশরাফ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফের উপর ভরসা রেখে তাকে মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদে এনেছিলেন শেখ হাসিনা। দলের নেতা-কর্মীরা আশরাফকে সহজে পান না বলে অভিযোগের মধ?্যওে হেফাজত ও বিএনপির আন্দোলন পেরিয়ে নির্বাচন করার দক্ষতায় তার উপর ভরসা রেখে যান বঙ্গবন্ধুকন?্যা। তবে গত বছর আকস্মিকভাবে আশরাফকে মন্ত্রিসভায় দপ্তরছাড়া করার পর সেই ভরসায় চিড় ধরার ইঙ্গিত মিললেও সপ্তাহের ব?্যবধানে ফের তাকে মন্ত্রিসভায় এনেছিলেন শেখ হাসিনা।
এবার কাউন্সিলে কয়েকদিন আগে থেকে গুঞ্জন ছড়ায় যে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে। সভাপতিম-লীর সদস্য ওবায়দুল কাদের তার ঘনিষ্ঠজনদের বলেন, নেত্রী তাকে ‘তৈরি’ থাকতে বলেছেন। তবে নেতৃত্বে কী হবে, সে বিষয়ে মুখ খুলছিলেন না কেউই। এর মধ?্যইে আশরাফ বলেন, নেতৃত্বে কে আসবে, তা শুধু শেখ হাসিনা ও তিনিই জানেন। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দৃশ্যত দলে শেখ হাসিনার কাছে নিজের গুরুত্ব তুলে ধরেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী আশরাফ। কাউন্সিলে তিনিই নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন। এজন্য কাউন্সিলে আশরাফকে ধন্যবাদও জানান শেখ হাসিনা। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী হিসেবে ছুটোছুটি করে আলোচিত ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পাওয়ায় দল আরও শক্তিশালী হবে বলেও মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৬৪ বছর বয়সী ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার পা ছুঁয়ে সালাম করেন। এরপরই জড়িয়ে ধরেন সৈয়দ আশরাফকে। আশরাফের সঙ্গে আলিঙ্গন শেষ করে কাদের সাহারা খাতুনেরও পা ছুঁয়ে সালাম করেন।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর বিরূপ সময়ে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী ওবায়দুল কাদের ডাকসুতে সংগঠনের হয়ে ভিপি প্রার্থী হয়েছিলেন। ছাত্রজীবন শেষে দৈনিক বাংলার বাণীতে কাজ করতেন। গত কাউন্সিলে সভাপতিম-লীতে আসার আগে তিনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদেও ছিলেন। ২০০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার থাকাকালে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও নিয়ে সমালোচিত ওবায়দুল কাদের।
সম্মেলনস্থল থেকে বের হয়ে গাড়িতে ওঠার সময় সৈয়দ আশরাফকে জড়িয়ে ধরেন শেখ হাসিনা। আশারাফও এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরেন। শেখ হাসিনা তার আগে কাউন্সিলে বলেন, “আশরাফুলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, ও আমার ছোট ভাইয়ের মতো। শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে সে সংগঠন ও দেশকে ভালবেসেছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেছে, ধন্যবাদ জানাই। আশা করি সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে।
এবার কাউন্সিলের কিছু দিন আগে থেকে দায়িত্ব ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে আসছিলেন ৭০ বছরে পা দেওয়া শেখ হাসিনা। কাউন্সিলেও কয়েকবারই নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার কথা বলেছিলেন ৩৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব দিয়ে আসা বঙ্গবন্ধুকন্যা। তবে যতবারই তিনি একথা বলেছেন, ততবারই কাউন্সিলর ও নেতারা ‘না না’ বলে সরব হয়েছিলেন। ২০তম কাউন্সিলে ফের সভাপতি নির্বাচিত নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনা আবারও পরবর্তী নেতৃত্ব ঠিক করার তাগিদ দেন নেতাদের। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও সংগঠনের দায়িত্ব পালন যে কঠিন, তাও মনে করিয়ে দেন তিনি। যে গুরু দায়িত্ব আপনারা আমাকে দিয়েছেন, তা বহন করব। ৩৫ বছর একটা দলের সভাপতি, তবে একটা সময় আমাকে বিদায় নিতে হবে।
এবার প্রথম আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর হিসেবে সম্মেলনে যোগ দেওয়া সজীব ওয়াজেদ জয়কে নেতৃত্বে চেয়ে দাবি তুলেছিলেন তৃণমূল নেতারা। তবে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই ছেলে তা নাকচ করে বলেন, বিদেশে থেকে দলীয় পদ রাখতে চান না তিনি। এদিকে ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন এমন সংবাদে সমগ্র বৃহত্তর নোয়াখালীসহ সমগ্র বাংলাদেশ মেতে উঠে উৎসব আনন্দে।
ফেনীতে শতাধিক মাইক দিয়ে গান-বাজনাসহ অভিনন্দন জানানো হচ্ছে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদককে। নোয়াখালী বিভিন্ন উপজেলায় চলছে মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল। বৃহত্তর নোয়াখালীবাসী উল্লাসিত। নোয়াখালীবাসী মনে করে জননেত্রী শেখ হাসিনা নোয়াখালী প্রেমিক। তিনি নোয়াখালীকে অনেক দিয়েছেন। দেশের সেবায় নোয়াখালীর অনেক রতœকে তিনি স্থান দিয়েছেন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। শেখ হাসিনাই একমাত্র সরকার প্রধান যার সময়ে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত হয়েছেন নোয়াখালীবাসীরা। নোয়াখালীবাসী নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে নোয়াখালী প্রেমিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কোটি জনতার সংবর্ধনা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
লেখক : রফিকুল আনোয়ার, সম্পাদক, দৈনিক নোয়াখালী প্রতিদিন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন