মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৬, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

তুই কি ছাত্র, না ছাত্রলীগ?

ইঞ্জিনিয়ার আরিফ চৌধুরী শুভ-

ছাত্রলীগ কি আইনের উর্ধ্বে? প্রশ্নটি এবার আমারো। প্রশ্নটি করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই। এই প্রশ্নটি ছিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের। ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর শাবির ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে বেসামাল পরিস্থিতিতে প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করলে রাগে ক্ষোভে সেতুমন্ত্রী এমন প্রশ্ন ছুড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশানকে। শুধু প্রশ্ন নয়, তিনি হুশিয়ারী দিয়ে ছাত্রলীগকে বলেছেন, ‘যে ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার পরিবেশ নষ্ট করে, সেই ছাত্রলীগের দরকার নাই। এবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঠিক এই প্রশ্নটি আমারো, সত্যি কি এমন ছাত্রলীগের দরকার আছে?

গত ১৪ মার্চ রাতে ঢাবির বিজয় ৭১ হল দখল নিয়ে আবারো আলোচনায় ছাত্রলীগ। ৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকসেনারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘুমন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর পাকিস্থান জিন্দাবাদ বলে হামলা করেছে দেশ দখলের জন্যে। কিন্তু ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে ছাত্রলীগ একই কায়দায় জয় বাংলা বলে ঘুমন্ত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিছে শুধু একটি হল দখলের জন্যে। রাতের আঁধারে ঘুমন্ত শিক্ষার্থীদের ধরে ধরে জানতে চেয়েছে তুই কি ছাত্র, না ছাত্রলীগ? ছাত্র বললেই মারধর দিয়ে বের করেছে হল থেকে। ছুঁড়ে ফেলেছে তাদের বই ও জামাকাপড়। শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে তাৎক্ষণিক আবাসিক শিক্ষক ও প্রধ্যাক্ষ এগিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু দখলকারীরা তাদেরও ধাওয়া দিয়েছেন শিবির বলে। প্রধ্যাক্ষের সামনেই তার কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখতে গিয়ে খুব দু:খ আর কষ্ট পেয়েছি শিক্ষার্থীদের কথা শুনে। এই দু:খ রাতের আঁধারে হল থেকে বিতাড়িত হামলার শিকার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। সহপাঠীর এমন অবস্থায় সাধারণ শিক্ষার্থীরাও দু:খিত। এই দু:খ উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণে সন্তানদের পাঠানো বাবা মায়েদের। শিক্ষার্থীরা আজও পায়নি হানাহানি ও সংঘাতমুক্ত একটি শিক্ষাঙ্গনও। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তখন সে দল সমর্থিত ছাত্ররা উত্তপ্ত করে রাখে শিক্ষাঙ্গণকে। শিক্ষার্থীরা কি কখনোই পাবো না সংঘাতহীন ক্যাম্পাস? প্রধানমন্ত্রীর ও সেতুমন্ত্রীর কাছেই আজ প্রশ্ন, সত্যি কি ছাত্রলীগ আইনের উর্ধ্বে?

ছাত্রলীগের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন খুবই সজ্জন ও সরল মানুষ। আমার পরিচিত ছাত্রলীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ, বায়েজিদসহ অনেকেই অন্যায়ের বিপক্ষে সদা অনড়। আশা করি এঁদের প্রত্যেকের কাছে ছাত্রলীগের কোন অন্যায় যেমন প্রশ্রয় পায়নি, পাবেও না। তাঁদের উপর এই বিশ্বাস আমাদের আছে। কারণ ইতিমধ্যে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীকে চাঁদাবাজি ও উশৃঙ্খল আচরণের জন্যে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। আশা করি বিজয় ৭১ হলের ঘটনায় জড়িতদের ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।

শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো সকল সুযোগ সুবিধার দাবিদার। কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কায়দায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বিতাড়িত করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরই ভালো বলতে পারবেন আমার চেয়ে। কারণ তিনিও ছাত্রলীগের একজন সাবেক শীর্ষ নেতা। সেজন্য বিভিন্ন সভা সমাবেশে মাঝে মধ্যে সেতুমন্ত্রী ছাত্রলীগ রচনার দু-চার লাইন পাঠ করে শোনান আমাদের। ২০১৫ সালের ১১ মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে সেতুমন্ত্রী বলেন, চবিতে ছাত্রলীগ রাজনীতির নামে বলি খেলছে। সেবছরের ১৭ মার্চ ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এক আলোচনা সভায় বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবির পাশে টাউট-বাটপার, চাঁদাবাজ আর খুনিদের ছবি ছিঁড়ে ফেলুন! এসময় অবাধ্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে শাস্তির দাবিও করেন মন্ত্রী। সর্বশেষ ৬৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সেতুমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগের কর্মকা-ের কারণে আমাদের মাথা হেট হয়ে যায়।

ছাত্রলীগ কি সেটা সেতুমন্ত্রীর কথাতেই স্পষ্ট। কথা হলো ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে স্বয়ং সেতুমন্ত্রীরই যদি মাথা হেট হয়ে যায়, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাথা উঁচু করবে কিভাবে? তাদের তো মাথা থাকারই কথা না। এই অবাধ্য ছাত্রলীগের লাগাম কার হাতে? ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন ছাত্রলীগের সুনাম নষ্টকারীদের এখনই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। না হয় এরা ছাত্রলীগকে রসাতলে ডুবাবে।

শুধু সেতুমন্ত্রী নয়, ছাত্রলীগের এমন আচরণে প্রধনামন্ত্রীও মাঝে মাঝে বিরক্ত। ২০১০ সালে ৪ এপ্রিল এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগকে হুশিয়ারী দিয়ে বলেছেন, ‘ছাত্রলীগ নিয়ে আর কোন নেতিবাচক সংবাদ দেখতে চাই না।’ কিন্তু ঐদিন রাতেই শাহবাগে দুই সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। গত বছরের ১০ জুলাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় সম্মেলনে নেতাকর্মীদের সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘কেউ বিপথে গেলে, সংগঠনের সুনাম নষ্ট করলে, তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না’। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরই আসাদগেটে বিনে পয়সায় খাওয়া দাওয়া নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

প্রধানমন্ত্রী যখনই ছাত্রলীগকে হুশিয়ারী করেছেন, ঠিক তার কয়েকঘন্টার মধ্যেই ছাত্রলীগ কর্মীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর আদেশ অমান্যের সামিল। একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের কাছে এটা আশা করা যায় না। ২০০৯ সালের ৩১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ছাত্রলীগের আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমার খুব কষ্ট ও দু:খ হয় তখনই, যখন পত্রিকার পাতা খুললেই দেখি ছাত্রলীগ কর্মীরা টেন্ডার-চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত’।

দু:খ ও কষ্ট আমাদের ও হয় যখন মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় ৭১ হল বিতাড়িত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চোখে অপমানের পানি দেখি। তাদের মনের ব্যথাটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একবার উপলব্ধি করবেন? উপলব্ধি করতে বলবো ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইনকেও। আপনারাই বলেন, রাত ৩ টার সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্র, না ছাত্রলীগ, এই প্রশ্নন করাটা কতটুকু যৌক্তিক? জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার রহস্যটা কি?

২০১৫ সালের ৩১ আগষ্ট ছাত্রলীগ কর্মীরা একই কায়দায় জয় বাংলা স্লোগানে শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর হামলা করেছিল। সেই হামলায় গুরুতর আহত হন ড. জাফর ইকবালসহ ১০ জন শিক্ষক। চোখের সামনে স্ত্রী ইয়াসমিন ইকবালের আত্মচিৎকার দেখে ড. জাফর ইকবাল রাগ ক্ষোভ অভিমানে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বলেছেন, ‘জয় বাংলা স্লোগানকে অপমান করেছে আজকের ছাত্রলীগ। জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে আমাদের মুক্তি যুদ্ধ হয়েছে। আজ জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগ পিতৃতুল্য শিক্ষকদের উপর হামলা চালায়। আমরা এমন ছাত্রলীগের মুখোমুখি হব কল্পনাই করিনি। আমাদের শিক্ষকদের গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিত’।

ছাত্রলীগের আচরণে একজন শিক্ষক কতটুকু কষ্ট আর অপমান বোধ করলে নিজের গলায় দড়ি দিতে বলেন। কিন্তু সেই হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের সঠিক বিচার কি হয়েছে? ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষরা তখন ব্যর্থ হয়েছেন নীতিগত সিদ্ধান্তের জায়গায়। আশা করি বিজয় ৭১ হলের গঠনায় বর্তমান শীর্ষরা সবকিছুর উর্ধ্বে একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত দেখাবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক হলগুলোর একশয্যাবিশিষ্ট কক্ষের প্রায় ৬১ শতাংশই অছাত্রদের দখলে। এরা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মী, তাদের বন্ধু-স্বজন, চাকুরিজীবী, চাকুরী প্রত্যাশী ও সাংবাদিক। এর বাইরে দুইশয্যা ও চার শয্যার কক্ষগুলোতে রয়েছে অনেক অছাত্র ও বহিরাগত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ১৩ টি হলের ১১টিতে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে (প্রথম আলো ২৪ ফেব্রয়ারী ২০১৬)। এই অনুসন্ধানে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিজয় ৭১ হলে অনুসন্ধান করা হয়নি। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই একটি মাত্র হলই ছিল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু গত ১৪ মার্চ রাতে হামলার পর সেটিও দখল নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

জরিপ করা ১১টি হলে মোট ২ হাজার ৭৭৭টি কক্ষ আছে। এর মধ্যে একশয্যার কক্ষ ৮০৭টি এবং ১৯৭০টি হলো দুই তিন ও চার শয্যাবিশিষ্ট কক্ষ। ১১টি হলের মোট ধারণ ক্ষমতা ৭ হাজার ৪৬৭জন। কিন্তু সেখানে থাকছেন প্রায় ১৪ হাজার অর্থাৎ দ্বিগুণ শিক্ষার্থী। এক কক্ষের রুমগুলোর প্রায় ৫০০টি অছাত্রদের দখলে এবং বাকিগুলো ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রনে। অথচ জায়গা না পেয়ে ৯৩টি গণরমে, বারান্দায়, ছাদ ও হলের কেন্টিনের পাশে গাদাগাদি করে থাকছেন প্রায় ২৫০০ সাধারণ শিক্ষার্থী। এভাবে বাইরে রাতযাপন করতে গিয়ে শুধু যে পড়াশুনার ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, অসুস্থ ও মারা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারী মার্কেটিং বিভিাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান মোল্লা মুসলিম হলে আসন না পেয়ে হলের বারান্দায় রাত কাটাতে গিয়ে নিউমোনিয়া ও টাইপয়েডে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

হাফিজুরের মৃত্যুতে তার রিক্সাচালক বাবার শেষ কথা ছিল, আমার মতো গরিব মানুষের শেষ সম্পদটাকে কেড়ে নিয়েছে রাজনীতি। ঘরে একটু জায়গা দিলো না আমার কলিজার টুকরা পোলাডারে। এই মৃত্যুর জবাব কি? এটি কি কেবল একজন হাফিজুরের শারিরিক মৃত্যু, না এর পেছনে আমাদের অসুস্থ ছাত্ররাজনীতিও দায়ী? সেদিন হাফিজুরের শারিরক মৃত্যু ঘটলেও আমাদের ঘটেছে মস্তিঙ্ক মৃত্যুর।

বিজয় ৭১ হলের গণরুমটিতে ছাত্রলীগের প্রায় ৩০০ জন নেতাকর্মী থাকছেন। এরা বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছাত্রলীগ কর্মী। এটা কোন বাসযোগ্য পরিবেশ নয় যেকোন ছাত্রে জন্যে। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে এভাবে কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। এমন অস্বাস্থকর পরিবেশে ছাত্রদের পড়াশুনাতো দূরের কথা, প্রাণের হুমকি হয়েও দাঁড়তে পারে যেকোন সময়। ছাত্রলীগ রাজনীতি করে ভালো কথা, কিন্তু আমরাও চাই তারাও স্বাস্থকর পরিবেশে সুস্থ থাকুক, পড়াশুনা করুক।

কিন্তু তার জন্যে সাধারণ ছাত্রদের রাতের আঁধারে হল থেকে বের করে দিয়ে নিজেরা হল দখলে নেওয়ার সমর্থন দিবে না কেউ? ছাত্রলীগের যে কর্মীরা সহপাঠিদের পিটিয়ে হল দখল করেছেন, তাদের পিতামাতারাও তাদের এমন জগন্য কাজকে ঘৃণা করবেন। কোন পিতামাতাই চান না তার সন্তান শিক্ষাঙ্গণে অপরাজনীতির বলি হোক। পাঠ নিতে গিয়ে সন্তান যদি লাশ হয়ে ফিরে বাবা কাঁধে, তাহলে এর চেয়ে পৃথিবীতে দু:খজনক আর কি হতে পারে। হোক সে ছাত্রলীগ কিংবা অন্য রাজনৈতিক দলের সমর্থিত, আমাদের কাছে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবন অমূল্য।
পত্রিকা ও বিভিন্ন সূত্রমতে বর্তমান সরকারের সাড়ে সাতবছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগ প্রায় ৪৮০টির মতো ছোটবড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছে। শুধু ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই ৫৫ জন তরুণ মারা গেছেন। এরা সবাই উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। ফিরেছেন লাশ হয়ে। সরকার যদি সময়মত আন্তরিক ও উদ্যেগি হতেন, ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরতেন, তাহলে ৫৫জন বাবা মা সন্তানহারা হতেন না। ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ এই ছাত্রসংগঠনে বিশৃঙ্খলাকারীদের সংখ্যা হাতে গোনার মতো। তাদের এমন ঘৃন্নিত কর্মকান্ডের ফলে পুরো ছাত্রলীগের বদনাম সহ্য করা যায় না। এদের দল থেকে বহিষ্কার করলে ছাত্রলীগের কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে? ছাত্রলীগ কেন সেটি করছে না?
শুধু ক্যাম্পাস নয়, ক্যাম্পাসের বাইরে ব্যক্তিগত স্বার্থে যারা কারণে অকারণে খুনাখুনি ও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ছেন তাদেরও সরাসরি বহিস্কার করা উচিত। যেমন ২০১৩ সালে ৯ ডিসেম্ভর পুরান ঢাকায় জগন্নাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে নিশংস ভাবে খুন হয় দর্জি দোকনি বিশ্বজিৎ দাস। সেই খুনের সাথে জড়িত ছাত্রলীগ কমীদের ৮ জনের ফাঁসির আদেশ ও ১৩ জনের যাবৎজীবন কারাদ- দিয়েছেন আদালত। আমরা জীবিত বিশ্বজিৎকে সেদিন ছাত্রলীগের থাবা থেকে বাঁচাতে পারিনি সত্য, কিন্তু দোষীদের ফাঁসী ও সাজা কার্যকরের মাধ্যমে ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ফিরে আসুক এটাই আমরা চাই।

আজ বিশ্বজিৎ এর রক্তমাখা ‘লালশার্ট’ ছুঁয়ে প্রতিটি ছাত্রলীগ কর্মীকে শপথ করা উচিত, ছাত্রলীগের ঐতিহ্য পুরুদ্ধারে বিশ্বজিৎ এর মতো দ্বিতীয় কোন ঘটনা যেন বাংলার মাটিতে তাদের দ্বারা না ঘটে এবং কেউ ঘটাতে না পারে। বিশ্বজিৎ ছাড়াও যে সকল ছাত্রলীগ নেতা সহকর্মীদের হাতে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন, আশা করি তাদের প্রত্যেকের বাবা মায়ের কাছে পৌঁছে যাবে বর্তমান ছাত্রলীগের অমলীন ভালোবাসা। আমরা বদরুলের মতো লম্পটদের আর ছাত্রলীগের পতাকা তলে দেখতে চাই না। দেখতে চাই না আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে আগুন (২০১৬ সালের ৮ জুলাই) দেওয়া ছাত্রলীগও। যাদের আগুনে পোড়া ছাত্রাবাস দেখে সেদিন শিক্ষামন্ত্রী কেঁদেছিলেন, তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের আদর্শ ছিলো না, ছিলো সন্ত্রাসী মনোভাব। এমন মনোভাব যাদের মধ্যে ছিল, তারাই জাবিতে সহপাঠিকে পিটিয়ে হলের ৪ তলা থেকে ফেলে দিতে পেরেছেন?

আমরা যেমন সাপোর্ট করিনি ১৯৯৮ সালে জাবির ছাত্রলীগ নেতা মানিক ও তার সহযোগিদের ধর্ষণ, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, তেমনি আজও সাপোর্ট করছি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ মার্চ রাতের ঘটনাও। সেদিন (১৯৯৯ সালের ২ আগস্ট) ছাত্রলীগ নেতা মানিক ও তার সহযোগিরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও অভ্যুস্থানের মুখে প্রাণ ভয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে পালিয়েছেন। আশা করি বিজয় ৭১ হলের ঘটনায় ভুক্তভোগি শিক্ষক ও শিক্ষর্থীরা ছাত্রলীগের শীর্ষ কমান্ড, তদন্ত কমিটি ও প্রধানমন্ত্রী কাছে সুষ্ঠু বিচার পাবেন।

১৫ জানুয়ারী কক্সবাজারে এক সমাবেশে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেছেন, ‘অস্ত্র নয়, মেধা শক্তি দিয়ে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে ছাত্রলীগ’। কিন্তু ছাত্রলীগে মেধাবীদের আশার পথ কতটা সুগম? আমরাও চাই ৫২, ৬২, ৬৯, ৭০, ৮১, ৮৩, ৮৯, ৯৮ এবং ২০০২ সালের মতো গর্বিত নেতৃত্ব দিবে ছাত্রলীগ। ভ্যাট আন্দোলনের সময়ও আমরা ছাত্রলীগকেও শেষ পর্যন্ত সাথে পেয়েছি সহযোদ্ধার কাতারে। তাই সহযোদ্ধাদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা দেখতে চাই, দু:খ নয়।

১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ ছাত্র নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যে ছাত্রহত্যার রাজনীতি শুরু হয়েছি, আমরা তার থেকে মুক্তি পেতে চাই। মুক্তি পেতে চাই ক্যাম্পাস সন্ত্রাস থেকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেকোন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। প্রধানমন্ত্রী বহুক্ষেত্রে সফল। এই ক্ষেত্রেও তাঁর সফলতা দেখতে চাই। আজ কে দিবে আমাদের এই মুক্তি? কে হবেন আমাদের চোখে ইতিহাস?
লেখক: উদ্যোক্তা ও সংগঠক, নো ভ্যাট অন এডুকেশন আন্দোলন।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?