দিনাজপুরে ধর্ষণের শিকার শিশুটির অস্ত্রোপচার হয়েছে
দিনাজপুরের ধর্ষণের শিকার শিশুটির গত শনিবার আবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এ অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় পরিবার। গত বছর শিশুটি যখন ধর্ষণের শিকার হয়, তখন তার বয়স ছিল পাঁচ বছর।
আজ মঙ্গলবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটি শুয়ে আছে। পাশে বসে নানি তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। দু-তিনবার মুখে দিয়ে আর খাবে না বলে জেদ করে। শিশুটির মাথার কাছে বসে আছেন বাবা।
শিশুটি কেমন আছে জানতে চাইলে বাবা কিছুক্ষণ কথা বললেন না, তারপর বললেন, আছে কোনো রকম। বাবা জানালেন, তিনি এখন অস্থির হয়ে আছেন অস্ত্রোপচারের ফলাফল শোনার জন্য। তাঁর মেয়ের যে সারাক্ষণ প্রস্রাব ঝরত, তা কি বন্ধ হবে? আবার কি স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারবে? দুই হাত দিয়ে সবকিছু আবার আগের মতো ধরতে পারবে? মেয়ে কি স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রতিবেদকের কাছে নেই বুঝতে পেরে বাবা একসময় চুপ করে গেলেন।
গত বছরের ১৮ অক্টোবর শিশুটি নিখোঁজ হয়। পরের দিন শিশুটিকে তার বাড়ির কাছে অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়। শিশুটির প্রজনন অঙ্গ, মাথা, গলা, হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ও ঊরুতে সিগারেটের ছ্যাঁকার ক্ষত ছিল। শিশুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন ছিল। শিশুটির চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে গত বছরের ২১ নভেম্বর প্রজনন অঙ্গে অস্ত্রোপচার হয়। এরপর বাড়ি ফিরে যায় শিশুটি। এরপর আবার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তা-ও প্রায় তিন মাস হয়ে গেছে। এর মধ্যে শিশুটির জলবসন্ত হলে ১৪ দিনের জন্য বাড়ি যায়। তারপর ফিরে এলে অস্ত্রোপচার হলো। বিভিন্ন ধকলে শিশুটি বেশ কাহিল হয়ে পড়েছে। অস্ত্রোপচারের পর থেকে বিছানায় সারাক্ষণ শুয়ে থাকতে হচ্ছে। বিশেষ ব্যবস্থায় নল দিয়ে প্রস্রাব করছে।
অনেকক্ষণ বসে থাকার পর শিশুটি আস্তে আস্তে কথা বলা শুরু করে। তার এক মাস বয়সী ভাইয়ের কথা জানতে চাইলে মুখে হাসি দেখা দেয়। নানি জানালেন, বাড়ি ফেরার সময় ভাইয়ের জন্য কোলবালিশ, খেলনা কিনে নিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। প্রতিবেদক ব্যাগ থেকে লাল-সাদা চুড়ি, মাথার জন্য লাল বড় একটি ফুলের ব্যান্ড, বড় টিপ বের করে দিলে চোখে খুশির ঝিলিক দেখা দেয়।
পাশে বসা নানি অসহায় কণ্ঠে বললেন, ‘শেষ পর্যন্ত কী যে হবে, আর কী যে হবে না, তা তো বুঝতে পারছি না।’ তিনি বললেন, হাসপাতালে চিকিৎসা বিনা মূল্যে পাচ্ছেন। কিন্তু হাসপাতালের দেওয়া খাবার তাঁর নাতনি বা তিনি নিজেও খেতে পারেন না। হাসপাতালেই বা আর কত দিন থাকতে হবে, তা-ও জানা নেই। আসামিপক্ষ সুযোগ পেলেই হুমকি দিচ্ছে, আসামির জামিন হলে তাঁদের দেখে নেবে বলে। শিশুটি অপরিচিত পুরুষ দেখলেই একটু অন্য রকম আচরণ করতে থাকে। রাতের বেলায় ঘুমের মধ্যেও আঁতকে ওঠে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শিশুটির মূত্রথলির সঙ্গে সন্তান প্রসব হওয়ার রাস্তা এক হয়ে গিয়েছিল (ভেসিকো ভ্যাজাইনাল ফিস্টুলা)। অস্ত্রোপচার করে তা আলাদা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আপাতত শিশুটিকে চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত হাসপাতালে রাখা হবে। তারপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শিশুটির বাবা গত বছরের ২০ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলায় সাইফুল ইসলাম (৪২) ও আফজাল হোসেন কবিরাজ (৪৮) নামের দুজনকে আসামি করা হয়। ২৪ অক্টোবর রাতে দিনাজপুর শহর থেকে গ্রেপ্তার হন সাইফুল। শিশুকে আইনি সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি। এ সংস্থার কেস ম্যানেজার ফাহমিদা আক্তার মামলা সম্পর্কে জানালেন, মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়েছে। মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল আসামি কারাগারে আছে, তবে আরেক আসামি এখন পর্যন্ত পলাতক।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন