দেশে যিনি মহারানী, বিদেশে তিনি সেলসগার্ল
বিদেশ কি অত্যন্ত সুন্দর একটা দেশ? সেই দেশে কি আছে, মানুষ কি খায়? কি পাওয়া যায়? আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে।
আমার একজন বন্ধু, যিনি আমার সাথে এ দেশের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে কাজ করতেন। তার স্বামীও একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে উচ্চপদে ছিল। তার নিজের ৪তলা বাড়ি ছিল ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে। পুত্র কন্যারা ভাল স্কুলে পড়তো।
তিনি একদিন সকালে মিষ্টি নিয়ে অফিসে এসে হাজির। মুখের হাসি ক্লোজআপের মডেলের মতো। ঘটনা জানা গেলো, তিনি স্বপরিবারে কানাডার ভিসা পেয়ে গেছেন।
তার আনন্দে আমিও আনন্দিত হলাম। মিষ্টি খেলাম।
কিন্তু ধাক্কা খেলাম ছয় মাস পর তার আরো একটি হাস্যজ্জল ফোন পেয়ে। তিনি ফোন দিলেন। ভাল আছি ভাল থেকো পর্ব শেষ হলে জিজ্ঞেস করলাম ওখানে কি কাজ করছো তুমি?
বললো- একটি সুপার শপে সেলস গার্ল।
ক্লাস টেনে পড়া তার কন্যা ছিল একটি, বেনি দুলিয়ে স্কুলে যেতো। জিজ্ঞেস করলাম মেয়েটি কেমন আছে?
বললো – মেয়েটাও স্কুলের পর একটা সুপারশপে কাজ করে।
একরুমের ভাড়া বাসায় বসবাস।
আমি আবারো একবার জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি ভাল আছো তো’!
সে বলল- ‘জীবনে একটাই স্বপ্ন ছিল, ইউরোপ আসার। আমার আর কোন কষ্ট নাই। দেশে টাকা ছিল কিন্তু আভিজাত্য নাই। এখানে যে আভিজাত্য আছে তার ব্যাপারটাই আলাদা’।
আরেক বন্ধু আমার। ইনি পুরুষ। বউর গয়না, জমি, ভিটাসহ হেন কিছু নাই যা তিনি বিক্রি করে নাই বিদেশ যাবার জন্য। ভারত ছাড়া তার যে কোন বিদেশ হলেই হয়। প্লেন, জাহাজ, ড্রামের ভেতর, নৌকার পাটাতনের তলা যে কোন উপায়ে যেতে রাজি। বিদেশ গেলেই হলো।
নানান মানুষকে একধিকবার টাকা দিয়েছে বিদেশ যাবার জন্য। একাধিকবার বিদেশ যাবার তারিখ ঠিকঠাক হয়ে চাকরি ছেড়ে, ভাড়া বাসা ছেড়ে, ফার্নিচার বিক্রি করে বউ বাচ্চা গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছে।
কিছুদিন ঘুরে ফিরে আবার তিনি অফিসে এসে হাজির। চোখ লাল করে বসের সামনে যেয়ে ছেড়ে যাওয়া চাকরি পুনঃউদ্ধারে ব্যস্ত।
এবং তার কিছুদিন পরেই আবার দালাল খোজায় ব্যস্ত!!!
এর বক্তব্য ‘বিদেশ মানেই টাকা। কোনমতে একবার গেলে ৫ বছরে রাজা হয়ে ফেরত আসবো। এরপর বসে বসে খালি খাওয়া’।
আরেক কলিগ ছিলেন, বাবা মুক্তিযোদ্ধা। দেশের প্রতি এই কলিগের বিরক্তির শেষ নাই। রাস্তা ভাল না, খাবার ভালো না, এই দেশের গান-বাজনার মান নাই, নাটক- সিনেমার মান নাই, রাস্তার ধারে ফুল নাই, মেয়েদের সোনালী চুল নাই, সবথেকে বড় উক্তি ছিল তার ‘এই দেশে দেশ প্রেমিক নাই’!!!
তার অবশ্য বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা ছাড়াও আরো একটা কাজ ছিল। সেটা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় সরকারি চাকরি খোজা।
এটা তার দ্বিতীয় অপশন। বিদেশ প্রথম অপশন।
একদিন বিরক্ত হয়ে তারে বললাম ‘দেশের প্রতি এতো নালিশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় চাকরি খোঁজেন, আপনার লজ্জা লাগে না?
তিনি স্বভাবসুলভ তেলতেলে হাসি দিয়ে বললেন – ‘বাঙালির কাছ থেকে আপনি লজ্জা আশা করেন? এদের লজ্জা থাকলে আমি দেশ ছাড়তে চাইতাম!’
লেখক : পরিচালক, বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয় (ফেসবুক থেকে)
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন