রবিবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

‘দোস্ত সাবধানে থাকিস…’

-না, বল। তোর খবর কি?

-‘খবর কি ব্যাটা তুই আমারে একটা বই দিলি না। তোর একটা বই বের করতে চাইলাম।’

-আমার বই বের করে তুই কি করবি! বিক্রি হবে না বেশি। শুধু শুধু টাকা আটকে থাকবে। এমন বই বের কর, যা বিক্রি হবে, লাভ হবে।
-‘বিক্রির চিন্তা তোর করতে হবে না। তুই একটা বই রেডি করে দে। এক কাজ কর, তোর ফেসবুকের লেখাগুলো রেডি করে দে।’
-আরে দূর, ফেসবুকের লেখা দিয়ে বই হয়? এগুলো তো তাৎক্ষণিক বিচ্ছিন্ন চিন্তা।
নানা যুক্তি দিয়ে বোঝায়, আমিও বুঝতে বাধ্য হই। গত ফেব্রুয়ারির মেলায় ফেসবুকের লেখা নিয়ে প্রকাশিত হয় ‘কথার কথা’।
বলছি দীপনের কথা। জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপন। আমাদের বন্ধু, ঢাকা কলেজের বন্ধু। জীবনের কিছু রঙিন সময় কেটেছে দীপনের সঙ্গে।
দীপন প্রতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে নিয়ম করে ফোন করত। এই কথাগুলো কোনোদিন লিখব স্বপ্নেও ভাবিনি। আজ যখন লিখছি, তখন দীপন নেই। এইচএসসি পাস করার পর কয়েক বছর দীপনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। একদিন জানলাম দীপন প্রকাশনা ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়েছে। তারপর আবার যোগাযোগ তৈরি হলো। যোগাযোগটা বলা যায় একপাক্ষিকই ছিল। অধিকাংশ সময় ফোন করত দীপন। আমাদের অফিসেও আসত। আমি কখনো আজিজ মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীতে যাইনি। এ নিয়েও দীপনের আক্ষেপ ছিল ‘তুই ব্যাটা কখনো আসলি না।’
আমার বইয়ের কাজে একদিন দীপন ‘সাপ্তাহিক’ কার্যালয়ে এলো। ঠিক তখনই নোভার ভ্রমণের বই নিয়ে আরেকজন প্রকাশকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল টেলিফোনে। খুব মন খারাপ করল, ফর্সা-হাসিমাখা সুন্দর মুখ কালো করে বলল, ‘তুই আমারে বাদ দিয়ে ভাবীর বই আরেকজনকে দিচ্ছিস।’
বললাম, ওই প্রকাশকই ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল।
-‘না, দু’টি বইয়ের একটি আমি করব।’
এবং করেছিলও।
দীপন সবসময় ফোনে বা সামনাসামনি বলত, ‘দোস্ত সাবধানে থাকিস…’। হাসাহাসি করতাম, সাবধানে থাকা মানে কি? আমাদের নিয়ে অনেক চিন্তা করত। নানা কথা বলত! জানতে চাইত অনেক কিছু। কখনো ফোন করে বলত, ‘এই অবস্থায় এটা লেখার কি দরকার ছিল। কোনো কথা বললে তো শুনিস না…’ ইত্যাদি।
দীপনকে তো আমরা কোনো দিন সাবধান করিনি। দীপনের জীবন যে এতটা ঝুঁকির মধ্যে আছে, তা তো জানতামই না। হয়ত বন্ধু হিসেবে এটা ক্ষমাহীন ব্যর্থতা। কিন্তু দীপন কি জানত তার জীবন এতটা বিপন্ন?
জানি না।
কত কথা, কত স্মৃতি। ঢাকা কলেজের সেই দিনগুলো… সাধারণের জন্যে নয়, একান্ত বন্ধুত্বের স্মৃতি…।
২.
দীপনের বাবা, আমাদের প্রিয় শিক্ষক-লেখক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। সন্তান হারিয়ে বলেছেন, ‘আমি হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই না।’ একটি কার্যকর চপেটাঘাত করেছেন রাষ্ট্রের কর্ণধারদের মুখে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রে এর চেয়ে ভালো কথা আর কিছু হতে পারত না। যা পাওয়া যাবে না, তার পেছনে ছোটার কোনো অর্থ হয় না। সরকার তার কাজের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করেছে যে, এসব হত্যাকাণ্ডের কোনো তদন্ত বা বিচার করা হবে না। ‘তদন্ত তদন্ত’ খেলা হবে। রাজনীতির জন্যে যতটুকু সুবিধা, খেলা হবে ততটুকু! এই রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ভাঁওতাবাজির নাম ‘তদন্ত এবং বিচারের আশ্বাস’।
‘অপরাধী যেই হোক তাকে ধরা হবে’ ‘খুঁজে বের করা হবে’ ‘ধরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে’- এসব অসত্য কথাগুলো প্রতিনিয়ত শুনতে শুনতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিছু দেখেও শিখতে হয়। আমরা বোকারা তাও শিখি না। ‘নীরো যখন বাঁশি বাজাচ্ছিল…’ সেই ইতিহাস আমাদের অজানা নয়। দীপনের লাশ যখন মর্গে, যখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন শুদ্ধস্বর প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল, অনলাইন লেখক তারেক রহিম, রণদীপম বসু। তখন এলিট প্রধান টিভি চ্যানেলে লাইভ অনুষ্ঠানে গাইছেন ‘তুমি যে আমার কবিতা…’।
আমরা ইতিহাসের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেও শিক্ষা নিতে পারি না। জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় চলা পুলিশ হত্যাকাণ্ডের পর বলে, ‘ইহা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’ তাদের ধারণা যে, আমরা ‘বোকা’ এবং ‘অবুঝ’রা মনে করছিলাম এটা অপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
‘এরকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা সব দেশেই ঘটে’- বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সুতরাং মানতেই হবে এ কথা।
সব বন্ধুরা মানববন্ধন করছে, আমি নেই সেই মানববন্ধনে। কেন গেলাম না? প্রশ্ন করে কেউ কেউ নিজেই উত্তর খুঁজে নিচ্ছে তার মতো করে। আমি প্রশ্ন আর উপদেশ শুনছি শুধু।
৩.
সত্য কথাগুলো বারবার বলতে হয় না, মিথ্যা বারবার বলতে হয়। এসব হত্যাকাণ্ড বিষয়ে সত্য কথা কিছুদিন আগে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী পুত্র ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘…যে সব লোক তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার দাবি করেন তারা অবুঝ বোকা লোক।’
দীপনের বাবা আবুল কাশেম ফজলুল হক ‘অবুঝ’ বা ‘বোকা’ নন। বিচার না চেয়ে তার প্রমাণ দিয়েছেন। সরকার হয়তো বলতে পারবে, যেহেতু পরিবারের পক্ষ থেকে বিচার চাওয়া হয়নি, সুতরাং…।
‘অবুঝ’ এবং ‘বোকা’ আমরা যারা এখনও গ্রেপ্তার-তদন্ত-বিচার চাইছি।
৪.
যাদের হত্যা করা হচ্ছে তাদের সবাইকে ‘নাস্তিক’ পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত করে দেওয়া হয়েছে। যদিও সবাই মোটেই নাস্তিক নয়। আমাদের বন্ধু দীপন নাস্তিক নয়, ব্লগার বা অনলাইন লেখকও নয়। তারপরও গণমাধ্যম তাকে দেখছি ব্লগার হিসেবে পরিচিতি দিচ্ছে। ব্লগার, খারাপ কিছু বলছি না। কিন্তু যে যা না তাকে তা বলব কেন?
সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য, ‘ডব ধৎব ধিষশরহম ধ ভরহব ষরহব যবৎব. আমরা একটি চিকন রশির ওপর দিয়ে হাঁটছি।’

এই বক্তব্য সরকারের সবচেয়ে সত্য কথাগুলোর একটি। যদি তদন্ত করা হয় তবে যারা হত্যা করেছে তাদের নাম আসবে। নাম আসলে গ্রেপ্তার করতে হবে। গ্রেপ্তার করলে মনে হবে সরকার নাস্তিকদের পক্ষে, নাস্তিকদের যারা হত্যা করছে তাদের বিপক্ষে। সরকারও নাস্তিক পরিচয়ে পরিচিত হয়ে যাবে। এই দায় সরকার নেবে কেন? ষোলো কোটি মানুষের মধ্যে দুই চারজনকে প্রতিদিন হত্যা করা হলে, তেমন কোনো ক্ষতি নেই- সরকার এভাবে ভাবতেই পারে। তাছাড়া অনেক উন্নত দেশেও তো হত্যাকাণ্ড ঘটে!

আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির একটি খণ্ডিত অংশ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।’
তার মানে হানিফ-আওয়ামী লীগ-সরকার জানে, কারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে? তদন্ত চাইলে হানিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব তথ্য জানা যাবে। যেখানে জানারই দরকার নেই, সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের প্রসঙ্গই তো অবান্তর।

নিহত অভিজিতের স্ত্রীর সঙ্গে তদন্তকারীরা ছয় মাসেও কথা বলার প্রয়োজন মনে করেনি। জানতে চাওয়া হয়নি হত্যা বিষয়ে কোনো তথ্য তিনি জানেন কি-না। তার সামনেই হত্যা করা হয়েছিল অভিজিৎকে। সুতরাং সরকার কি তদন্ত করতে চায়, তা খুব পরিষ্কার।

শুধু শুধু এর পেছনে সময় নষ্ট না করে, সবারই উচিত আবুল কাশেম ফজলুল হকের নীতি অনুসরণ করা। বলা উচিত ‘হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই না।’
তাছাড়া এসব দাবি করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির সরকারকে বিব্রত করার কোনো মানে হয় না। সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে। জনগণ ভোট দিয়ে সরকারকে বিচার করার ক্ষমতা দিয়েছিল। সেই বিচার করতে গেলে এমন দু’চারটি হত্যাকাণ্ড মেনে নিতে হবে- সরকার প্রকাশ্যে না বললেও কার্যক্রম দিয়ে তা বুঝিয়ে দিচ্ছে প্রতি মুহূর্তে।

জনগণকে তো বুঝতে হবে ‘বেডরুম’ ‘অফিস’ ‘প্রকাশ্য স্থান’-এ সরকারের পক্ষে নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়। মন্ত্রী-সরকারি দলের নেতাদের নিরাপত্তা, বিরোধী দল দমনেই হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। গান গাওয়াসহ আরও কত কাজ আছে তাদের। আবার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা! জনমানুষের প্রত্যাশাও!! দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এতেই খুশি না থেকে আবার নিরাপত্তা চায়!!

তদন্ত-বিচার-নিরাপত্তা দিতে গিয়ে সরকার তো ‘চিকন রশি’র ওপর থেকে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে পারে না। সরকারপ্রধান নিহত সন্তানের পিতাকে প্রকাশ্যে সমবেদনা জানান না, ‘চিকন রশি’ থেকে পড়ে সব কিছু বিপন্ন হয়ে যাওয়ার ভয়ে, সেখানে বিচার চাওয়া কেন? আমরা এত ‘বোকা’ এবং ‘অবুঝ’ কেন?

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?