ধনী রাষ্ট্রগুলোকে উন্নত করছে গরিব দেশগুলোই!
অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে বিশ্বের ধনী ও গরিব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আমরা কী ভাবি? উদার মনের ধনী দেশগুলো হাত ভরে সাহায্য দেয় গরিব দেশগুলোকে। আর সেই অনুদান-সাহায্য নিয়ে বেশ উন্নত হচ্ছে গরিব দেশগুলো?
ধনি দেশগুলো হয়তো প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে এটাই জাহির করতে চায়, তাঁদের সাহায্য ছাড়া গরিব দেশগুলোর চলবেই না। বিষয়টি একটু অনুসন্ধানী চোখে দেখলে আসল জিনিসটা ধরা পড়বে। এ সবকিছুতেই রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি।
গ্লোবাল ফাইন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটি নামের মার্কিন একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে নরওয়ের একটি গবেষণা সংস্থা। তাঁদের মতে, গরিব দেশগুলো থেকে যে পরিমাণ অর্থ বের হয়ে যাচ্ছে তা ধনী দেশগুলো থেকে আসা সাহায্যের কাছে কিছুই না।
২০১২ সালে করা একটি জরিপ বলছে, সে বছর অনুদান, সাহায্য ও বৈদেশিক আয় সব মিলিয়ে ধনী দেশগুলো থেকে গরিব দেশগুলোতে যায় ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার (এক লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার)। বিপরীতে গরিব দেশগুলো থেকে বের হয়েছিল কত? প্রাপ্ত অর্থের চেয়ে দুই ট্রিলিয়ন ডলার বেশি! অর্থাৎ ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার (৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার)। এ থেকে স্পষ্ট গরিব দেশগুলো যা পেয়েছে, দিয়েছে তার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।
আর ১৯৮০ সাল থেকে যদি জরিপ করা হয়, তাহলে অর্থের পরিমাণটা শুনলে চোখ উল্টে যাবে। সে সময় থেকে মোট ১৬ দশমিক তিন ট্রিলিয়ন ডলার ধনী দেশগুলোর কাছে হারিয়েছে গরিব দেশগুলো।
অঙ্কের হিসাবগুলো মিলিয়ে কী বোঝা যাচ্ছে? ধনী দেশগুলোর সাহায্য নিয়ে উন্নতির দিকে যাচ্ছে গরিব দেশগুলো? মোটেও না। বরং তাদেরকে আরো ধনী করতে পরোক্ষভাবে সাহায্য চালিয়ে যাচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো।
এখন প্রশ্ন, কীভাবে এই অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রথম বিশ্বের দেশগুলো? প্রথমেই আসে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দেওয়া ঋণের কথা। ১৯৮০ সাল থেকে শুধু সুদের টাকা মেটাতে গিয়েই উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দিতে হয়েছে চার দশমিক দুই ট্রিলিয়ন ডলার (চার লাখ ২০ হাজার কোটি)। আর ওই সুদের টাকার শেষ স্থান ছিল নিউইয়র্ক ও লন্ডনের বড় ব্যাংকগুলো।
এর পরেই আসে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে বিদেশি বিনিয়োগের কথা। বিনিয়োগ থেকে লাভের একটা বড় অংশ দেশে নিয়ে আসে বিনিয়োগকারীরা।
এবার আসা যাক একটু ভিন্ন বিষয়ে। গরিব দেশগুলো থেকে ধনী দেশগুলোতে একটি বড় পরিমাণ অর্থ চালান হয় অবৈধ উপায়ে। ১৯৮০ সাল থেকে অবৈধ উপায়ে ধনী দেশগুলোতে গিয়েছে ১৩ দশমিক তিন ট্রিলিয়ন ডলার। ওই অর্থের পুরোটাই ছিল অনথিভুক্ত। উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে বিভিন্ন মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিগুলোও পিছিয়ে নেই। মিথ্যা চালানপত্র তৈরি, অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লভ্যাংশ সরবরাহসহ নিত্য-নতুন বিভিন্ন উপায়ে তাদের এই ক্রিয়াকলাপ দিনকে দিন বাড়ছেই।
সাহায্য-অনুদানপ্রাপ্তির তুলনায় গরিব দেশগুলো থেকে এই অর্থের বহির্গমনের পরিমাণটা হিসাব অনুযায়ী ২৪ গুণ বেশি। তার মানে ধনী দেশগুলো থেকে এক টাকা পেলে বিনিময়ে তাদের দিতে হচ্ছে ২৪ টাকা!
এখন কথা হচ্ছে এর জন্য দায়ী কারা? অবৈধ মূলধন পাচার, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্রতারণা নাকি অন্য কিছু? আগের দিনে কাস্টমস কর্মকর্তারা একটু সন্দেহ হলেই আটকে দিতেন যেকোনো অর্থের আদানপ্রদান। ফলে প্রতারণা ছিল প্রায় অসম্ভব। তবে প্রেক্ষাপট বদলাতে থাকে ১৯৯৪ সালের পর থেকে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা দাবি করে কাস্টমসে এমন কড়াকড়ি ব্যবসায়ীদের দমিয়ে দিচ্ছে। ১৯৯৪ সাল থেকে কাস্টমস কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয় চালানপত্রে লিখিত মূল্যকেই অভিহিত মূল্য হিসেবে ধরতে হবে। এতে দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
করছাড় অর্থের অবৈধ চালান বলতে গেলে অসম্ভব। করছাড়ের বিষয়টিতে নজর দেওয়া হলে অর্থ চালানের হোতাদের চিহ্নিত করা সহজ হয়ে পড়বে। এই হোতাদের সংখ্যা ৬০-এর বেশি। আর তাদের প্রায় সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করে পশ্চিমা দেশগুলো।
এতক্ষণে হয়তো বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে যে, খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ গরিব দেশগুলো দিচ্ছে বেশি, পাচ্ছে কম। তাই বলা যেতে পারে তাদের কোনো সাহায্যের প্রয়োজন নেই। তাদের প্রয়োজন সুবিচারের। যদি তাদের প্রতি সুবিচার করা সম্ভব হয়, তাহলে সেদিন বেশি দূরে নয়। যখন গরিব দেশগুলো নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারবে।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন