ধর্ম যার যার উৎসব সবার
সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্যের পর এবার পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা। ধর্মের দোহাই দিয়ে এরপর হয়তো বলা হবে ‘বাংলাদেশ’ কিংবা ‘বাঙালি জাতি’ নামটিই যথেষ্ট ‘ইসলামি’ নয়। অতএব এসবও বদলাও।
প্রশ্ন হল যেতে যেতে আমরা অন্ধকারের দিকে আর কতটা যাব? অতীত ইতিহাস থেকে আমরা জানি, যখনই জাতিসত্তার চেয়ে আমরা ধর্মীয় পরিচয়কে বড় বলে তুলে ধরতে চেয়েছি তখনই আমরা বিপর্যয়ের দিকে এগিয়েছি।
চর্যাপদের কালে নিশ্চিত জানতাম যে, আমরা বাঙালি। চর্যাপদের কবি ভুসুকু তাই নিজেকে বঙ্গাল বা বাঙালি পরিচয় দিতে দ্বিধা করেননি। পাল, সেন ও সুলতানি আমলেও নিশ্চিত জানতাম যে আমরা বাঙালি। সে সময় ধর্ম যাই হোক, বাঙালির পালা-পার্বণ উদযাপনে কারও সমস্যা ছিল না। বাধাও ছিল না। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ সবাই মিলে সে সময় চড়কের মেলা, বারুণীর স্নানযাত্রার মেলা, রথের মেলা, মহরমের মেলায় যেতে দ্বিধা করেনি। মোঘল আমলে ফসলি সন পালন, খাজনা আদায়, পুণ্যাহ পালন হয়েছে। ভূস্বামী বা বাদশাহকে খাজনা দেওয়ার পাশাপাশি বৈশাখের মেলা, আনন্দ উৎসবেও কেউ পিছিয়ে থাকেনি। সে সময় থেকেই নববর্ষ শুরু হয়েছে বৈশাখে।
ব্রিটিশ আমলে আমরা বাঙালি নাকি মুসলমান সে কথা উপলব্ধি করতে করতেই আমাদের অনেকটা সময় চলে গিয়েছে। এই দোলাচলের ভেতরেই দ্বিজাতি তত্ত্বের মতো একটি ভ্রান্ত ধারণার উপর ভিত্তি করে আমরা বাংলাকে ভাগ করে ফেলেছি আর তার পরিবর্তে ১৯৪৭ সালে পেয়েছিলাম পাকিস্তান নামের একটি জোড়াতালি দেওয়া গোঁজামিলে ভরপুর রাষ্ট্র। যে রাষ্ট্র আমাদের বারে বারে বলেছে: “বাঙালি নয়, তোমাকে হতে হবে সাচ্চা মুসলমান। পাকি মুসলমান।”
এই সাচ্চা মুসলমান হতে হলে তোমাকে কী করতে হবে? প্রথমেই ভুলতে হবে তুমি যে বাঙালি সেই সত্যটি। তোমার পোশাক-আশাক, মুখের ভাষা সবকিছুতেই বড় বেশি ‘হিন্দুয়ানি’র গন্ধ। তোমাকে ‘বাংলা’ ছেড়ে ‘উর্দুু’ ধরতে হবে। আর যদি বাংলা ছাড়া একান্তভাবে তুমি অন্য ভাষা রপ্ত করতে না-ই পার তাহলে অন্তত বাংলার চেহারাটা বদলাতে হবে। বাংলা লিখতে হবে আরবি অক্ষরে। কারণ বাংলা অক্ষরগুলোরও কেমন যেন ‘হিন্দুমার্কা’ চেহারার। বাংলাভাষার মধ্যে যত পার আরবি-ফার্সি শব্দ যোগ কর। স্বাভাবিক নিয়মে যা গৃহীত হয়েছে তার বাইরেও ভাষাকে ধর্ষণ করে হলেও এসব নতুন নতুন ‘পাকি’ শব্দ তোমাকে ব্যবহার করতে হবে।
আর বাঙালির রীতি-রেওয়াজ? সর্বনাশ! ওগুলো তো আরও বেশি ‘নাপাক’। গায়ে হলুদ, পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন এগুলো বর্জন কর যত দ্রুত সম্ভব।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বাঙালিত্বের চেতনা থেকেই যা ছিল সর্বতোভাবে অসাম্প্রদায়িক। ধর্ম বিশ্বাস যার যা হোক না কেন জাতিসত্তায় আমরা বাঙালি। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে আমরা পেলাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। কথাটির মধ্যে কোথাও লেখা নেই এটি ‘মুসলিম কাওয়ামি বাংলাদেশ’, ‘নিখিল হিন্দু বাংলাদেশ’, ‘তথাগত বৌদ্ধ বাংলাদেশ’ কিংবা ‘সদাপ্রভুর খ্রিস্ট বাংলাদেশ’।
আমাদের টাকার মধ্যে কোথাও আমরা ধর্মবিশ্বাস নিয়ে টানাটানি করিনি। আমাদের জাতীয় প্রতীকের মধ্যে কোথাও কোনো বিশেষ ধর্মের ইঙ্গিত নেই। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের গর্ভভার ও প্রসব যন্ত্রণার পর বাংলাদেশ নামে যে নতুন শিশু রাষ্ট্রের জন্ম হয় তার ধর্মীয় পরিচয় কী তা আমরা কেউ জানতে চাইনি। জানতে চাইনি কারণ আমরা ছিলাম ভুক্তভোগী।
একটি রাষ্ট্রের বিশেষ ধর্মীয় পরিচয় থাকার যন্ত্রণা, বেদনা ও শোষণের সঙ্গে আমরা পরিচিত হয়েছিলাম বা বলা ভালো হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম ২৫ বছরের পাকিস্তানি যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে। সে সময় আমাদের শেখানোর চেষ্টা হয়েছিল কিভাবে ভাষাগত ও জাতিগত পরিচয় ভুলে পাকিস্তানি মুসলমান হয়ে উঠতে হয়। শুধু তা-ই নয়, যতই আমি পাকিস্তানি মুসলমান হই আমি চিরদিনই পাঞ্জাবি ও পাঠানদের তুলনায় ‘কম মুসলমান’ হয়ে থাকব। কারণ আমার নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য। আমার গায়ের কালো রং, কম উচ্চতা, আমার ভাত-মাছ, আমার শাড়ির কারণে আমি চিরদিনই দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে থাকব। তবে বাঙালি নারীরা যেদিন গণহারে পাঞ্জাবি, পাঠান, বেলুচ ও সিন্ধি পুরুষদের সঙ্গে সম্পর্কের জেরে সন্তান উৎপাদন করবে সে সন্তান আরও কিছুটা খাঁটি পাকিস্তানি মুসলমান হবে। এইভাবে দু-তিন প্রজন্ম পর বাঙালি জাতির নাম-নিশানা মুছে গিয়ে নতুন কওম খাঁটি পাকিস্তানির সৃষ্টি হবে।
যে উর্দু ভাষা আমি বুঝি না, জানি না, সে ভাষাতেই কথাবার্তা বললে যে আমি খাঁটি পাকিস্তানি হব সেটাও আমাকে শেখানো হয়েছিল। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানরা যে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক এবং তারা যে ‘কাফের’, ‘মালাউন’ ‘নাসারা’ ইত্যাদিও শেখানো হয়েছিল তখনই। আমাকে শেখানো হয়েছিল যে, খাঁটি পাকিস্তানি হতে হলে ভুলতে হবে রবীন্দ্রনাথ। নজরুলেরও শুধু ‘ইসলামি গান’ মনে রেখে ভুলে যেতে হবে ‘শ্যামাসংগীত’ ও অন্যান্য লেখা। আমাকে ভুলতে হবে চণ্ডীদাস, কীর্তন, ময়মনসিংহ গীতিকা এবং যাবতীয় লোকজ আচার অনুষ্ঠান।
ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু ও মুসলমান দুটি পৃথক জাতি– এ কথা জানিয়ে-বুঝিয়ে পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই তত্ত্বের ভেতর পরিষ্কার করা হয়নি ভারতীয় উপমহাদেশের খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পারসিক, অসংখ্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা কী এবং কোন জাতির মানুষ। আবার মুসলিমদের ভেতর শিয়া, সুন্নি, হানাফি, কাদেরি, বাহাই, আহলে হাদিস, আহম্মদিয়া, আগাখানিসহ চার তরিকা, বাহাত্তর মাহজাব– এক জাতি না, ভিন্ন ভিন্ন জাতি– তা-ও পরিষ্কার করে বলা হয়নি।
একজন পারসিকের সঙ্গে একজন শিখের বা জৈনের ততটাই অমিল যা একজন সুন্নি হানাফি চিশতিয়া মুসলমানের সঙ্গে বৌদ্ধ বা আগাখানির। আমি যখন ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাবার চাইব পশতুভাষী এক মুসলমানের কাছে, তখন সে কী বুঝবে জানি না, কিন্তু একজন বাঙালি হিন্দু আমাকে ঠিকঠাক ভাত-মাছ এনে দিতে পারবে, সেটা জানি।
মুক্তিযুদ্ধ আমাকে সেই উপলব্ধিতেই পৌঁছে দিয়েছিল যে, আমার ভাষা, আমার সংস্কৃতি যে ধারণ করে সেই বাঙালিই আমার আপন। সেই বাঙালি হিন্দু না মুসলিম না বৌদ্ধ না খ্রিস্টান তা জানার আগে আমার জানা দরকার ছিল সে আমার একদেশবাসী কি না। শুধু বাঙালি নয়, এ দেশের পাহাড়ি ও সমতলবাসী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষও মুক্তিযুদ্ধে একই সঙ্গে অংশ নিয়েছেন। কারণ একই ভূখণ্ডের ভেতর বসবাসকারী আমাদের মধ্যে অমিলের চেয়ে মিলই বেশি। পাহাড়ের বৈসাবি আর আমার বৈশাখীর মধ্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে। যা ছিল না আমার সঙ্গে করাচি, ফ্রন্টিয়ার বা বেলুচিস্তানের অধিবাসীর।
মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের সংস্কৃতি বিকশিত হচ্ছিল এই ভূখণ্ডের ঐতিহ্য ও ইতিহাস চেতনায় ধারণ করে। অসাম্প্রদায়িক লোকজ ঐতিহ্যের ধারণ ও বিকাশই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চেয়েছি যে দেশে ধর্ম সম্প্রদায় নির্বিশেষে সব নাগরিক সম সুযোগ ও অধিকার নিয়ে বিকশিত হবে।
কিন্তু আমরা একটা বিষয় ভুলে গিয়েছিলাম। দ্বিজাতি তত্ত্বের বিষাক্ত গাছটির ডালপালা যতই ছাঁটা হোক তার শিকড় যে রয়ে গেছে কিছু কিছু মানুষের মনের কালো গহ্বরে। সেখান থেকে অনুকূল সময়ে তা আবার মাথা চাড়া দেবে এবং সেই আগাছা খেয়ে ফেলবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সোনালি ফসল।
সেই আগাছাজাত গোষ্ঠীই আজ নতুন চেহারায়, নতুন রূপে আবির্ভূত হচ্ছে। সেই গোষ্ঠীই পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরোধিতা করছে।
আবহমান কাল থেকে বাঙালি চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ পালন করেছে। চড়কের মেলা, বৈশাখি মেলা আমাদের ঐতিহ্য। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব রয়েছে। কিন্তু একমাত্র পহেলা বৈশাখের উৎসবেই এ দেশের সব মানুষ একসঙ্গে উৎসব পালন করতে পারে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীও এ সময় বৈসাবি উৎসবে মেতে ওঠে। এই একটি জাতীয় উৎসবে আমরা অনাবিল আনন্দে মেতে উঠি। এই উৎসবে পাহাড় ও সমতল একই সঙ্গে উৎসবের রঙে রঙিন হয়ে ওঠে।
আমাদের মঙ্গল শোভাযাত্রায় কী থাকে? মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকে আমাদের চিরন্তন মোটিফ বা নকশায় তৈরি মুখোশ। সেই গঙ্গাহৃদি, পুণ্ড্রবর্ধন, রাঢ়, গৌড়, বঙ্গ, সমতট, হরিকেলসহ প্রাচীন জনপদগুলোর জনঐতিহ্যের ধারক মোটিফগুলো থাকে এই শোভাযাত্রায়। প্রাচীন বাংলায় পোড়ামাটির ফলক, মাটির টেপা পুতুলে আমরা যে ছবিগুলো দেখি প্যাঁচা, বাঘ, পাখি, হাতি, পুতুল ইত্যাদি থাকে মঙ্গল শোভাযাত্রায়।
১৯৮৯ সালে স্বৈরাচার বিরোধিতার অংশ হিসেবে চারুকলার ছাত্রশিক্ষকদের উদ্যোগে এটি শুরু হয়। এখন এই শোভাযাত্রা পরিণত হয়েছে আমাদের ঐতিহ্যে। ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রা কোনো বিশেষ ধর্মের পরিচয় বহন করে না, বরং বাঙালির জাতীয় ঐতিহ্যকে ধারণ করে। এই মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরুদ্ধে যে কোনো অমঙ্গলসূচক বিরোধিতা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা দরকার।
পহেলা বৈশাখের উপর আগেও আক্রমণ হয়েছে। ২০০১ সালে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা হয়েছে। ১০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। পহেলা বৈশাখের উৎসবে নারীর উপর জঘন্য যৌন আক্রমণও যে এই উৎসবকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল না, সেটিই বা নিশ্চিত হয়ে বলা যায় কিভাবে।
তবে যত ষড়যন্ত্র আর আক্রমণই হোক না কেন পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব, পুরো বাংলাদেশের প্রাণের উৎসব। এই উৎসব আমার। ধর্ম, সম্প্রদায় নির্বিশেষে পহেলা বৈশাখ আমার উৎসব। আমার একান্ত আপন উৎসব। আমার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, জাতিসত্তার উৎসব। এদিন আমি মেলায় যাব, পরব শাড়ি, কপালে পরব টিপ, মিষ্টি খাব, চড়ব নাগরদোলায়, অংশ নেব মঙ্গল শোভাযাত্রায়। আমি বাঙালি। আমার চেহারায়, স্বভাবে রয়েছে বাঙালিত্বের অমোচনীয় ছাপ।
“আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তারচেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি। এটি কোনো আদর্শের কথা নয়, এটি একটি বাস্তব কথা। মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যে, মালা-তিলক-টিকিতে কিংবা টুপি-লুঙ্গি-দাড়িতে ঢাকবার জো টি নেই।”
বাঙালি জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বড় খাঁটি কথা বলেছিলেন।
সেই কথার সুরে সুর মিলিয়েই বলতে চাই পহেলা বৈশাখ এমন একটি উৎসব যা আমাদের প্রাণের, আমাদের ঐতিহ্যের। আমাদের ধর্মপরিচয়ের ঊর্ধ্বে যার অবস্থান। এই উৎসবের ওপর যে কোনো বিরোধিতা, যে কোনো অশুভ পাঁয়তারা বাঙালি প্রতিরোধ করবে সর্বশক্তিতে।
জয়তু পহেলা বৈশাখ। শুভ নববর্ষ। নতুন বছরের মঙ্গল আলোয় দূর হোক যত অমঙ্গল।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন