শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

ধর্ষণ কোনো অপরাধ নয়! ধর্ষণকে পুরুষদের জন্য এক স্বাভাবিক কর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক !

ধর্ষণ কোনো অপরাধ না। ধর্ষণের জন্য দেশে যে আইনগত শাস্তির বিধান রয়েছে তা উঠিয়ে দেওয়া হোক। ধর্ষণকে পুরুষদের জন্য এক স্বাভাবিক কর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। উপরন্ত ধর্ষককে এ কাজের জন্য পুরস্কৃত করা হোক। ধর্ষককে জামাই আদরে আদৃত করা হোক।

দেশে এখন বাল্যবিবাহ আইন অনুযায়ী ‘আক্ষরিকভাবেই’ ধর্ষকরা এবার থেকে জামাই আদর পেতে যাচ্ছে। বলতে গেলে ধর্ষকের জন্য জামাই আদর সত্যিকারভাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেল! কারণ ‘বিশেষ ব্যবস্থায়’ নাবালিকাকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ের যে বিধান দেওয়া হয়েছে তাতে অবশ্যই ধর্ষক শ্বশুরবাড়িতে অর্থাৎ ধর্ষিতার বাড়িতে গিয়ে জামাই আদর পাবে।

বাঙালি সমাজে মেয়ের জামাই যত দোষ করুক, যত রুঢ় হোক, যত অপকর্ম করুক জামাই আদর পায় না, এ তো অস্বাভাবিক ঘটনা। তিন বছরের শিশুকে যদি ৪০ বছরের পুরুষ ধর্ষণ করে তার সঙ্গে সেই শিশুর বিয়ে দেওয়া হোক। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ বছর নয়, মেয়েদের ন্যূনতম বিয়ের বয়স উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। অর্থাৎ মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বিয়ের বয়স থাকবে না। ধর্ষণের ফলে গর্ভধারণ করলে নাবালিকার বিয়ে জায়েজ। তবে তিন বছরের শিশু তো আর গর্ভধারণ করবে না। সে ক্ষেত্রে শিশুটি প্রাপ্তবয়স্ক হলে গর্ভধারণের আশঙ্কা থাকবে– এই অজুহাতে তিন বছরের শিশুর সঙ্গে ৪০ বছরের পুরুষটির বিয়ে দেওয়া হোক।

একাত্তরে বহু নাবালিকাকে পাকিস্তানি সেনারা ধর্ষণ করে এবং বহু বালিকা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। সেইসব খান সেনাদের তো ক্ষমা করে দিতে হবেই। বরং তাদের জামাই আদর দিয়ে বাংলাদেশে ডেকে আনা উচিত হবে! এরপর সেইসব ধর্ষিতা নাবালিকাদের খুঁজে এনে তাদের সঙ্গে বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ের এই আইনগত স্বীকৃতির ‘বাহাবা’ না দিয়ে উপায় নেই! ধর্ষক যদি বিবাহিত হয় তাহলে কি ধর্ষিতাকে বিয়ে করতে পারবে? পাকিস্তানের সেনাশাসক আইয়ুব খান তো একটা গণ্ডগোল বাঁধিয়ে গেছেন। দ্বিতীয় বিয়ে করতে হলে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাগে। এখন যদি ধর্ষকের প্রথম স্ত্রী অনুমতি না দেয়, তাহলে? বোকার মতো কথা হল।

বাংলাদেশের কজন স্ত্রীর বুকের পাটা আছে স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়েতে অনুমতি দেবে না? আর অনুমতি না নিয়ে বিয়ে করলেও বা কী? স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে যায় বা পারে কজন স্ত্রী? যদি ধর্ষকের ইতোমধ্যে চারটি বৌ থাকে, তাহলে বা এর কী সমাধান হবে? এসব নিয়ে আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকের মাথা ঘামানোর মতো মেধা নেই। যারা এই আইন করেছে তাদের মেধা অপরিসীম। আইনস্টাইনের মতো এসব আইনপ্রণেতার মস্তিষ্ক মৃত্যুর পরও সংরক্ষণ করে রাখা উচিত, যাতে পরবর্তী প্রজন্মও দেখতে পারে নারী জাতির এত বড় হিতৈষী কারা ছিল!

একটি মেয়ে যদি ধর্ষিত হয়, তার মন বেজায় প্রফুল্ল হয়ে ওঠে, ধর্ষক হয়ে ওঠে তার কাছে ‘হিরো’, তাই নয় কি? আমাদের আইনপ্রণেতাগণ কি তা মনে করেন না? যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের ক্ষমতাশীল রিপাবলিকান দলের প্রতিনিধি জজ ফট কিছুদিন আগে বলেছেন: “ধর্ষণ ঈশ্বরের ইচ্ছায় সংগঠিত হয়। বাইবেলে এর উল্লেখ আছে।”

ক্ষমতাশীন সরকারের গর্ভপাতের বিরুদ্ধে নিজ অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ওই কংগ্রেসম্যান এ কথা বলে। এ ধরনের মন্তব্য শোনা গেল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধারী দেশের ক্ষমতাশীলদের একজনের কাছ থেকে। কী যে ভালো হল বাংলাদেশের আইনপ্রণেতাদের জন্য! (যারা বাল্যবিবাহ আইন প্রণয়নের দায়িত্বে ছিলেন বা কোনোভাবে সম্পৃক্ত তাদের কথা বলছি)।

এ আইন প্রণয়নের আগে যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ টেনে বলা হয়েছিল কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১২ রয়েছে। তাদের যখন সবক্ষেত্রে অনুসরণ করি তখন এ ক্ষেত্রে করব না কেন?

শুধু ব্যক্তিস্বাধীনতা, পিতার সম্পত্তিতে কন্যার সমনাধিকার, অভিভাবকত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলো আমরা নিজ ধর্মের নীতিরীতি পালন করব। বিয়ের বয়স কমানোর পেছনেও আমাদের ‘ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুভূতি’ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামের হেফাজত করার দায়িত্ব যাদের উপর বর্তেছে তাদের কথা না শোনার মতো ‘কবিরা গুনাহ’ কে করতে চাইবে?

সুতরাং ঈশ্বরের ইচ্ছা বাস্তবায়নকারী সেসব ধর্ষককে অত্যন্ত সমীহ করে ধর্ষিতার সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করা হবে অত্যন্ত পবিত্র কাজ! সেই পবিত্র কাজ থেকে কাউকে বঞ্চিত করা হবে পাপ!

সাধারণ মেয়েরা স্বপ্ন দেখে রাজপুত্র এসে তাকে নিয়ে যাবে, এখন ধর্ষক হবে তার সেই রাজপুত্র। ‘বিউটি অ্যান্ড বিস্ট’ রূপকথাটা নতুন করে লেখা উচিত। বিস্ট হয়েও সে বিউটিকে ধর্ষণ করেনি, কারণ সে জানে ভালবাসা দিয়ে ভালবাসা পাওয়া যায়, আর ভালোবাসার পরিণতি বিয়ে। এখন এই রূপকথাটি হবে ‘বিস্ট সেই বিউটিকে ধর্ষণ করল, আর বিয়ে করল। বিস্ট হয়েও ধর্ষণ করবে না, এটি কি হয়? ধর্ষণ যেখানে পুরুষের জন্য স্বাভাবিক, সেখানে বিস্টের জন্য তো বটেই।

স্বামীর প্রতি ভালবাসা-শ্রদ্ধা-প্রেম ধর্ষককে বিয়ে করলে আরও বেশি উপচে পড়বে! তবে মেয়ের মনের খবর নেওয়ার প্রয়োজনটা কি?

পাশ্চাত্যে দেখেছি একটা দুই বছরের শিশুর ব্যক্তিগত মতামত নেওয়া হয় গুরুত্বের সঙ্গে। খাবার দেওয়ার সময় তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় সে কী খাবে। ওয়াড্রব খুলে তাকে বলা হয় তার পছন্দের পোশষাক বেছে নিতে।

আহা, ওদের সমাজ আর আমাদের সমাজ কি এক হল? যে নাবালিকার বিয়ে ধর্ষকের সঙ্গে জায়েজ করা হল তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা নিয়ে আইনপ্রণেতারা কেন মাথা ঘামাবে? হোক বিয়ে সারা জীবনের সিদ্ধান্ত। যে কারণে ‘অনভিজ্ঞ’ পূর্বজনেরা প্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য বিয়েটা বৈধ করেছিলেন। তারা মনে করেছিলেন বিয়েটা হল জীবনের এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যার জন্য শারীরিক ও মানসিক দুটোর ‘ম্যাচুরিটি’ দরকার। সব ভুল তত্ত্ব! বিয়ে হচ্ছে পরিবার থেকে চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। ‘ওঠ ছুড়ি তোর বিয়ে লেগেছে’ বচনটা কি এমনি এমনি এসেছে?

চিকিৎসকরা ধর্ষণের কারণে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি যেসব শারীরিক প্রতিক্রিয়ার কথা বলেছেন সেগুলো হচ্ছে: বাহ্যিক শরীর আহত হওয়া, ত্বকে কালশিরা পড়া, ত্বক ছিন্নবিছিন্ন হওয়া, রক্তপাত (অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক), হাটতে কষ্ট হওয়া, যন্ত্রনাময় শরীর, হাড় ভেঙে যাওয়া বা স্থানচ্যুত হওয়া ইত্যাদি। আর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া যা অনেক সময় চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হলে দেরিতে শনাক্ত হয়। গর্ভবতী হওয়া, যাকে পুঁজি করে এ ‘মহান আইন’ প্রণীত হল।
Capture
যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সেখানে ধর্ষণের ফলে শতকরা পাঁচজন ধর্ষিতা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। এর সঙ্গে রয়েছে যৌন বা অন্য কোনো কঠিন বা বাজে রোগে আক্রান্ত হওয়া, যোনী ছিন্নবিছিন্ন হয়ে যাওয়া, ক্রনিক কোমরে ব্যথা, ক্রনিক অবসাদ, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা, মাংসপেশি ও স্নায়বিক চাপ, অনিচ্ছাকৃত শরীর কাঁপা, খাওয়ার অনীহা, হজমের অসুবিধা, অনিয়মিত নিদ্রা এবং অবশ্যই যৌন-জীবনে অনীহা, ভীতি ইত্যাদি।

ধর্ষিতার মানসিক প্রতিক্রিয়া বলে শেষ করা যাবে না। নাইটমেয়ার বা দুঃস্বপ্ন তখন তার নিত্যসঙ্গি। শারীরিক ও মানসিকভাবে পর্যদুস্ত মেয়েটিকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে প্রতিদিন ধর্ষিত হওয়ার ‘মহান’ কাজে অনুপ্রাণিত করার জন্য আমাদের আইনপ্রণেতাদের হাজার সালাম।

ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ে দেওয়ার বিধানের মতো বর্বর ও অসভ্য আইন এখনও পৃথিবীর কিছু কিছু দেশে আছে। সম্প্রতি লেবাননে এ আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে।

ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ের এই আইনের পেছনে একমাত্র কারণ নারীকে পুরুষের সম্পত্তি মনে করা। আর তথাকথিত ‘সতীত্ব’-এর ধারণা। নারীর হাত কেটে গেলে, পা ভেঙে গেলে বা অ্যাসিড নিক্ষেপের আক্রান্ত হলেও সে যে সহানভূতি পায়, ধর্ষিত হলেও তার কণাও পায় না। কারণ নারীর ‘সতীত্ব’ যাওয়া মানে পরিবার, সমাজের ‘সতীত্ব’ যাওয়া। সে কারণে অপরাধীকে ধরার চেয়ে অপরাধের শিকার হওয়া ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া, হত্যা করা অধিক অগ্রগণ্যতার সঙ্গে পালন করা হয় এখনও বহু সমাজে।

শারীরিকভাবে হত্যা করা না হলেও মানসিকভাবে সেই ধর্ষিতাকে তিলে তিলে মারা হয়। দ্বিতীয়বার সে ধর্ষিত হতে থাকে, সেটি থানা, আদালত, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের কাছে। সমাজের এই ধারণাকে আরও বেশি আদরের সঙ্গে গ্রহণ করতে যাচ্ছে এই আইন। কোথায় আইন সমাজকে সামনের দিকে নিয়ে যাবে, আমাদের ‘সৌভাগ্য’ সেই আইন আমাদের পিছনের দিকে নিয়ে যাবে।

শেষ করছি ইতালির সিসিলি দ্বীপের ফ্রান্স ভায়োলা নামের এক সাহসী নারীর কাহিনি দিয়ে। ষাটের দশকের কথা। সেসময় ‘রিহ্যাবিটেশন ম্যারেজ’ নামে ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ে আইনগতভাবে স্বীকৃত ছিল, যার ফলে ধর্ষণের মতো অপরাধ থেকে ধর্ষক রেহাই পেত। মেলোডিয়া নামের এক ব্যক্তি ভায়োলাকে অপহরণ করে ধর্ষণ করে, পরে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ভায়োলা তার ধর্ষককে বিয়ে করতে অস্বীকার জানাল। উপরন্তু সে ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করল। প্রভাবশালী ধর্ষক ভায়োলার বাবার ক্ষেত-বাড়ি পুড়িয়ে দিল। ভায়োলা ক্ষান্ত দেয়নি। ইতালি পার্লামেন্ট বেকায়দায় পড়ে যায়। কারণ একদিকে যেমন ধর্ষণের শাস্তি ছিল, অন্যদিকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়েও আইনগত স্বীকৃতি ছিল। যা হোক ভায়োলা মামলায় জিতে গেল। মেলোডিয়ানের ১১ বছরের জেল হয়। ১৯৮১ সালে গিয়ে সে দেশে বিয়ে করলে ধর্ষককে শাস্তি অব্যাহতি দেওয়ার আইনটি বাতিল হয়।

আমরা বাংলাদেশে একজন ভায়োলার অপেক্ষায় আছি।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?