রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

পর্যটন রসদে ভরা হিমালয়কন্যা পঞ্চগড়

পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় অঞ্চল দেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড়। তিন দিকে ভারতবেষ্টিত সবুজ ও নির্মল প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়েছে ‘হিমালয়কন্যা’। জেলায় ছড়িয়ে আছে নানান ইতিহাস-ঐতিহ্যিক স্থাপত্য। এসব ইতিহাস-ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের জোগাবে নানা কৌতূহলের রসদ।

নেপালকে বলা হয় হিমালয়কন্যা। সেই নেপালের কাছের জনপদ বলে পঞ্চগড়কেও ‘বাংলাদেশের হিমালয়কন্যা’ হিসেবে ধরা হয়। এখানে রয়েছে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো নানান দর্শনীয় স্থান।

জেলার অভ্যন্তরে ভিতরগড়ে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বৃবহৎ প্রতœতাত্ত্বিক দূর্গনগরী, মহারাজা দীঘি, মহিলা কলেজে পাথরের জাদুঘর তথা রক্স মিউজিয়াম, আটোয়ারীর মির্জাপুরে বার আউলিয়া মাজার, শাহী মসজিদ (ইমাম বাড়া), দেবীগঞ্জের গোলকধাম মন্দির এবং তেঁতুলিয়ার চতুর্দেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের সংযোগ বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, পিকনিক কর্নার, রওশনপুর জেমকন গ্রুপের নয়নাভিরাম শিশুপার্ক ও আনন্দধারা পার্ক, সীমান্তবেষ্টিত ভারতের কাঁটাতারের বেড়ার সার্চলাইট, নদী মহানন্দা। এ ছাড়া পাথর ও চা শিল্প, সবজিগ্রাম- এসব পঞ্চগড়কে সমৃদ্ধ করেছে পর্যটন নগরী হিসেবে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এবং নিবিড় শান্তিময় পরিবেশের পঞ্চগড় জেলা আয়তনের দিক দিয়ে ক্ষুদ্র হলেও প্রাচীন ও প্রাগৈতিহাসিক ইতিহাসে সমৃদ্ধ। প্রাচীন এ জনপদের রয়েছে চমকপ্রদ নামকরণ। যে ‘পাঁচ গড়ের’ সমাহারে এই পঞ্চগড়, সেগুলো হলো-ভিতরগড়, মিরগড়, রাজনগড়, হোসেনগড় ও দেবনগড়। তবে পাঁচ গড়ের বাইরেও রয়েছে আরও বেশ কিছু পাঁচ-এর সমাহার- পঞ্চনদ, পঞ্চবটী, পঞ্চনগরী, পঞ্চগৌড় ইত্যাদি।

পঞ্চগড়ের উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলা, পূর্বে নীলফামারী জেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। তিন দিক দিয়ে ঘিরে রয়েছে ভারতীয় সীমান্ত। করতোয়া, মহানন্দা, গবরা, আত্রাই, তিস্তা, টাঙ্গন, ডাহুক, পাথরাজ, ভুল্লী, তালমা, নাগর, চাওয়াই, কুরুম, ভেরসা, তিরনই ও চিলকা ইত্যাদি ছোট-বড় নদ-নদী বয়ে চলেছে এর ওপর দিয়ে।

১৯৪৭ সালের পূর্ব পর্যন্ত ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্গত এবং বর্তমানে পূর্ণিয়া, পশ্চিম দিনাজপুর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা পরিবেষ্টিত পঞ্চগড়ের জনগোষ্ঠীর নৃতাত্তিক বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের সামগ্রিক রূপের সঙ্গে অভিন্ন হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে রয়েছে স্বাতন্ত্র্য ও বৈচিত্র্য। এ জেলার জনপ্রবাহের মধ্যে রয়েছে- হিন্দু ও মুসলিম প্রধান জনধারা, রাজবংশী, কোচ, পলিয়া, সাঁওতাল, ওঁরাও, হাড়ি, ভূইমাল, কামার-কুমার, বেহারা, কাহার, সুনরী প্রভৃতি। এই বিচিত্র জনধারার মিশ্র রূপায়ণে গড়ে উঠেছে পঞ্চগড়ের নৃতাত্ত্বিক ভিত্তি।

ইতিহাস-ঐতিহ্য, জীবনধারা আর প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্রের নিরিখে পর্যটন নগরী বা অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যেসব উপাদান প্রয়োজন তার সবই রয়েছে পঞ্চগড়ে।

ভিতরগড় প্রত্নতত্ত্ব দূর্গনগরী ও মহারাজা দীঘি

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রত্মতাত্ত্বিক সম্পদ এবং প্রাচীন দূর্গনগরী ভিতরগড়ে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ প্রতœতত্ত্বের স্থান হিসেবে খ্যাত। জেলা শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব কোণে জেলার সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রায় ২৫০ বর্গ কিলোমিটির জুড়ে অবস্থিত প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম নির্দশন ভিতরগড়ের প্রতœতাত্ত্বিক সমৃদ্ধ দূর্গনগরী। এখানে রয়েছে প্রাচীন ইতিহাসের বেশ কিছু নির্দশন। এ প্রাচীন দূর্গনগরীতে দুটি প্রাচীন মন্দির আবিস্কৃত হয়। আবিষ্কৃত একটি মন্দিরের অবয়ব বের হয়েছে গড়ের দ্বিতীয় আবেষ্টনীর দেওয়ালের বাইরে খালপাড়া নামক গ্রামে। আবিষ্কৃত অপর মন্দিরটি গড়ের দ্বিতীয় আবেষ্টনী দেওয়ালের বাইরে ঢিবরী ডাঙ্গা গ্রামে অবস্থিত।
মহারাজা দীঘি

ভিতরগড় দুর্গ নগরীতে অন্যতম আকর্ষণ হলো মহারাজার দীঘি। বিশালাকার মহারাজার দীঘির ইট নির্মিত সুউচ্চ পাড় এবং ১০টি ঘাট ভিতরগড়ের নৈসগির্ক দৃশ্যের অসাধারণ নিদর্শন। কথিত আছে, এই বিশালাকার দীঘি নির্মাণ করেন পৃথু রাজা। নিম্নবর্ণের কিচক সম্প্রদায় দ্বারা আক্রান্ত হলে পৃথু রাজা তার পবিত্রতা রক্ষার জন্য পরিবার পরিজন ও সৈন্য-সামন্তসহ এ দীঘির জলে প্রাণ বিসর্জন করেন। এ বিসর্জনতার কারণে দীঘিটির নামকরণ হয় মহারাজা দীঘি।

এই বিশাল দিঘীর চারপাশে রয়েছে অনেক গাছগাছালির সবুজের কারুকার্য, স্নিগ্ধ সমীরণ, সৌম্য শান্ত পরিবেশ যা পর্যটকদের তৃষ্ণাতুর দৃষ্টিকে মোহিত করবে।

পাথরের জাদুঘর বা রকস মিউজিয়াম

দেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর বা রকস মিউজিয়ামটি রয়েছে জেলা সদরের সরকারি মহিলা কলেজে। এ জাদুঘরের কোনো কোনো পাথরের বয়স হাজার বছরের বেশি। ভেতরের গ্যালারিতে বিভিন্ন আকৃতি, রং ও বৈশিষ্ট্যের পাথর আছে। আরও আছে পুরনো ইমারতের ইট, পাথর ও পোড়ামাটির মূর্তি। আদিবাসীদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের সম্ভার আছে জাতিতাত্ত্বিক সংগ্রহশালায়। উন্মুক্ত গ্যালারিও আছে। এখানে আছে বড় বড় সব পাথর এবং দুটি নৌকা। একটি মাত্র শালগাছ থেকে তৈরি প্রতিটি নৌকার দৈর্ঘ্য সাড়ে ২২ ফুট।

আটোয়ারী মির্জাপুরে বার আউলিয়া মাজার শরিফ

আটোয়ারী মির্জাপুরে বার আউলিয়া মাজার একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এ মাজার গড়ে ওঠা নিয়ে রয়েছে নানা রহস্য গল্প। জনশ্রুতি আছে, পবিত্র ধর্ম ইসলাম প্রচারে বারজন ওলী সুফি-সাধক চট্টগ্রামের শহর প্রান্তে প্রথমে এসে আস্তানা গাড়েন। ফলে জায়গাটি বার আউলিয়া নামে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে এখনো। জানা গেছে, বারজন ওলী খাজা বাবার নির্দেশে চট্টগ্রামসহ পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। পরে স্থলপথে রওয়ানা হয়ে ইসলাম প্রচার করতে করতে উত্তরবঙ্গের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছান এবং পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বার আউলিয়া আস্তানা গড়ে তুলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। এখানে রয়েছে প্রায় ৪৭ একর জমিতে মাজার কমপেক্স, মাজার, গোরস্তান, পুকুর, মসজিদ, মাদ্রাসা ও ডাকবাংলা। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ওরসে লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটে।

মির্জাপুর শাহী মসজিদ

আটোয়ারি উপজেলার মির্জাপুরে আরেকটি ঐতিহাসিক নির্দশন হলো শাহী মসজিদ। ১৬৭৯ সালে (সম্ভাব্য) নির্মিত ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত মসজিদের সঙ্গে মির্জাপুর শাহী মসজিদের নির্মাণশৈলীর সাদৃশ্য রয়েছে। ধারণা করা হয় ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত মসজিদের সমসাময়িককালে এ মির্জাপুর শাহী মসজিদের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। মসজিদের নির্মাণ সম্পর্কে পারস্য ভাষায় লিখিত মধ্যবর্তী দরজার উপরিভাগে একটি ফলক রয়েছে। ফলকের ভাষা ও লিপি অনুযায়ী ধারণা করা হয়, মোঘল স¤্রাট শাহ আলমের রাজত্বকালে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। মসজিদের নির্মাণশৈলীর নিপুণতা ও দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে।

দেবীগঞ্জের গোলকধাম মন্দির

গোলকধাম মন্দিরটি জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাংগা ইউনিয়নের শালডাংগা গ্রামে অবস্থিত। মন্দিরটি ১৮৪৬ সালে নির্মিত হয়। দেবীগঞ্জ উপজেলা সদর হতে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দিরটি অষ্টাদশ শতকের স্থাপত্যের একটি চমৎকার নিদর্শন। এ স্থাপত্যকৌশল গ্রিক পদ্ধতির অনুরূপ।

স্বপ্নের শহর তেঁতুলিয়া

পঞ্চগড় জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা তেঁতুলিয়া। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই জনপদে পাক হানাদার বাহিনীর পা পড়েনি বলে তেঁতুলিয়াকে মুক্তাঞ্চল হিসেবে মনে করা হয়। উপজেলাটি হিমালয় পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ সমাদৃত। বাংলাদেশের মানচিত্রে প্রথম যে গ্রামটি রয়েছে, তা এই তেঁতুলিয়ায়- ঝাড়–য়াপাড়া নাম। এখানে দাঁড়িয়ে দেখা যায় আকাশছোঁয়া হিমালয় পর্বতশৃঙ্গ, লতার মতো জড়িয়ে থাকা ভারতের অন্যতম বাণিজ্যিক শহর দার্জিলিং ও প্রাকৃতিক শোভা কাঞ্চনজঙ্গা। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ছুটে আসে তেঁতুলিয়াকে একবার চোখ বুলিয়ে দেখতে।

তেঁতুলিয়ায় রয়েছে বেশ কিছু নান্দনিক দর্শনীয় স্থান- ডাকবাংলো, সীমান্তঘেঁষা নদী মহানন্দা, জিরোপয়েন্ট, স্থলবন্দর, জেমকন গ্রুপের শিশুপার্ক, আনন্দধারা, অর্গানিক চা, সবুজ চা-বাগান, কমলা বাগান, ঐতিহাসিক তেঁতুলতলা, হাতিফাঁসা ব্রিজ, পাথরের খনি, বোম্বে বাঁশ, চা ফ্যাক্টরি, টুপি ফ্যাক্টরি ইত্যাদি।


পাথর শিল্প

পাথর খ্যাত অঞ্চল বলা হয় তেঁতুলিয়াকে। এ উপজেলার ৪০ হাজার শ্রমিক পাথরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। টনকে টন পাথর উত্তোলিত হয় এখানে। ভারত থেকেও আমদানি করা হয় পাথর। এ পাথর আমদানি করা বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে। নদী মহানন্দায় শত শত শ্রমিক পাথর তুলে। পাথর উত্তোলনের দৃশ্য থেকে সহজে চোখ ফিরিয়ে নেয়া যায় না।

সন্ধ্যায় ভারতের কাঁটাতারের বেড়ার সার্চলাইট জ্বলে ওঠে। তা-ও দর্শনীয় হয়ে ওঠে পর্যটকদের কাছে।
নানা দর্শনীয় উপাদানে ভরপুর তেঁতুলিয়া যেন পঞ্চগড়ের রত্মগর্ভ।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা

পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন

এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?

এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন

৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন

১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন

  • লজ্জায় লাল হয়ে যায় পাখিও
  • দুই হাতের হৃদয়রেখা মিলে গেলে কি হয় জানেন?
  • ৩২১ থেকে ওজন কমিয়ে ৮৫!
  • রং নম্বরে প্রেম, বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি ঝলসে যাওয়া মুখ
  • পানিতে ভেসে উঠলো অলৌকিক হাত!
  • ১৫ বছরে একবার ফোটে ‘মৃত্যুর ফুল’
  • চা বিক্রেতা এখন ৩৯৯ কোটি টাকার মালিক
  • একটি মাছের বিষে মারা যেতে পারে ৩০ জন
  • মোবাইল কিনতে ছয় সপ্তাহের শিশুকে বিক্রি
  • পরকীয়ায় জড়াচ্ছে নারীরা প্রধান যে তিনটি কারণ নেপথ্যে
  • ২৪০০ কেজি খিচুড়ি রান্না হয় যেখানে দৈনিক !
  • পরীক্ষায় ফেল করলেই বিবাহ বিচ্ছেদ