পাইলস বা অর্শ্বরোগ নিরাময়ে হোমিও চিকিৎসা
পাইলস বা অর্শ্বরোগ নিয়ে আমাদের মাঝে লুকোচুরি খেলার প্রবণতা অনেক। কিছুটা ভয় ও বিব্রতকর অনুভূতির জন্য এ জাতীয় রোগ হলে ডাক্তার দেখাতে চাই না। এ ক্ষেত্রে স্বচিকিৎসা আর হাতুড়ে চিকিৎসায় তুষ্ট থাকি আমরা। যার ফলে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে।
জটিল ও কঠিন এ রোগের হোমিও চিকিৎসা এই সময়ে ব্যাপক কার্যকর হচ্ছে।
এই রোগের রকম ফের অনুযায়ী চিকিৎসায়ও রকম ফের রয়েছে। এজন্য প্রথমে জেনে নেয়া যাক পাইলস বা অর্শ্বরোগ কী? যে সকল কারণে মলদ্বারের নিকটবর্তী শিরা সমূহে রক্ত চলাচলের গতিরোধ হয়ে রক্ত সঞ্চিতির ফলে স্ফীতি এবং বড় হয়, তাকে পাইলস বা অর্শ বলে। কখনও একটা কখনও বা একদিকে থোকা থোকা আঙ্গুরের ন্যায় দেখতে পাওয়া যায়। অর্শের বলি মলদ্বারের বাইরে থাকলে তাকে বহির্বলি এবং অভ্যন্তরে থাকলে তাকে অন্তর্বলি বলে।
স্রাব সম্বন্ধীয় পাইলস বা অর্শকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
যে অর্শ থেকে প্রবল রক্ত ধারা ছুটে তাকে রক্তস্রাবী পাইলস বলে। যে অর্শে রক্ত স্রাব থাকে না কিন্তু জ্বালা যন্ত্রণা, সুঁচ ফোটান ব্যথা ইত্যাদি কষ্টদায়ক উপসর্গ থাকে তাকে অস্রাবী পাইলস বলে। যে অর্শে কেবল মাত্র আম নির্গত হয় তাকে আমশ্রাবী পাইলস বলে, যা বর্ষাকালে ও বসন্তকালে প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
যে রোগীরা পাইলসে ভোগেন, তাদের সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া জাতীয় সমস্যা থাকে। অনেক রোগী আছেন, যাদের পেটে গ্যাস হয়। পায়খানার সঙ্গে মিউকাস বা আম যায়। পায়খানা করার পর মনে হয় ক্লিয়ার হয়নি। দুধ, পোলাও, ঝাল, গরু বা খাসির মাংস ইত্যাদি খেলে হজমে গোলমাল হয়। টয়লেটে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। অনেকে মলদ্বারের ভেতর আঙুল দিয়ে মলত্যাগ করেন। রোগীরা এ সমস্যাগুলোকে গ্যাস্ট্রিক বা ক্রনিক আমাশয় হিসেবে মনে করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে আমরা বলি, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম বা আইবিএস। এ জাতীয় রোগীদের দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, পোলাও, ঝাল, বিরিয়ানি খাওয়া নিষেধ।
কোষ্ঠবদ্ধতা, উৎকট উদরাময়, যকৃতের বিবৃদ্ধি, অতিরিক্ত মদ্য কিংবা মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার, অলস জীবন-যাপন, স্ত্রীলোকের জরায়ুর বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে বস্তি গহ্বরের সব শিরা চাপা পড়ে। ফলে রক্তের গতিরুদ্ধ হওয়ার কারণে মলদ্বারে নিকটবর্তী শিরা সকল রক্ত সঞ্চিত হয়ে স্ফীত হয়। এভাবে অর্শের জন্ম হয়। মোটকথা বস্তি গহ্বরের শৈরিক রক্তস্রোত বাধাপ্রাপ্ত হলেই পাইলস বা অর্শের উৎপত্তি ঘটে।
মলের সঙ্গে রক্তের ছিটে দেখা যায় অথবা সময় সময় এক বারের পায়খানাতেই প্রায় এক ছটাক হতে আধ পোয়া পর্যন্ত রক্ত বের হয়। মল ত্যাগকালে রোগী বিষম কষ্ট পান এবং সরলাস্ত্র মধ্যে জ্বালা ও চিড়িক মারার মত কষ্ট ভোগ করেন এবং সময় বিশেষে মল নির্গত হয়ে যাবার পরও অনেকক্ষণ পর্যন্ত সেই কষ্ট থাকে। যখন অর্শের বলীগুলো প্রদাহিত হয় অথবা গুহ্যদ্বারের পেশী বা স্ফিংটার দ্বারা নিষ্পেষিত হয়, তখন অতিশয় ক্লেশ বোধ হতে থাকে এবং উপর্যুপরি দুই তিন দিন পর্যন্ত রোগী বিছানা হতে উঠে কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। প্রায় সকল সময়েই অর্শ্বরোগের সঙ্গিরূপে কোষ্টবদ্ধতা প্রকাশ পায়। এই ধরণের কিছু রোগ পূর্বোক্ত “মেক্যানিক্যাল অবষ্ট্রাকসান” এবং কিছু রোগ মলত্যাগকালীন যন্ত্রনা জন্য আনীত হয়। অর্শরোগ নিবন্ধন, আলস্য বোধ, রুক্ষ্ম মেজাজ, শিরপীড়া, মূর্চ্ছাভাব এবং পরবর্তী অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তস্রাবের কারণে রক্ত স্বল্পতা ও মাথা ঘোরা, উপসর্গ দেখা দেয়।
পায়ূপথের এসব রোগ এড়াতে পায়খানার পরিমান বাড়ে এমন খাবার খাওয়া উচিত। যেমন- শাক, সবজি,সালাদ, ফল, ইসুপগুলের ভূষি, গমের ভূষি ইত্যাদি। দৈনিক পরিমিত পানীয় খেতে হবে। একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের জন্য ৬-৮ গ্লাস পানি প্রতিদিন পান করতে হবে।
এই রোগে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
পাইলস বা অর্শ্বে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের কার্যকারিতা বহু প্রাচীনকাল থেকেই সন্দেহাতীতভাবে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রমাণিত হয়ে আসছে। কেন্ট রেপার্টরীর প্রয়োগ-সংকেতও এ পীড়ায় প্রণিধানযোগ্য। অর্শে বহুল প্রচলিত ওষুধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেয়া হল:-
শ্রম বিমুখতা ও ভোগ বিলাসিতাজনিত অর্শে নাক্স ভূমিকা, সালফার, পডোফাইলাম, পালসেটিলা বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে অর্শ্বে ইস্কিউলাস, নাক্স, সালফার,কলিনসোনিয়া ও কার্বোভেজ।
গর্ভাবস্থায় অর্শ্বে- কলিনসোনিয়া, ইস্কুলাস, নাক্স ভমিকা,হ্যামামেলিস, অ্যাসিড মিউর, অ্যালো।
রক্তস্রাবী অর্শে- কলিনসোনিয়া, ইগ্লোসিয়া, র্যাটানহিয়া,হ্যামামেলিস, পিওনিয়া, এব্রোটেনাম, সালফার, ক্যাপসিকাম, ইস্কুইলাস-গ্ল্যাবরা, এসিড নাইট্রিক,তমন কার্ব।
অস্রাবী অর্শে- আর্সেনিক এল্ব, একোনাইট ন্যাপ, ইস্কুইলাস হিপ, এসিড মিউর, এমন মিউর, প্লান্টেগো, ক্যালিকার্ব।
আমস্রাবী অর্শে- এন্টিম ক্রুড, হিসার সালফ, লাইকোপডিয়াম সফলতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সূত্র: আধুনিক হোমিওপ্যাথি
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
রেড মিট খাওয়ার আগে কিছু পরামর্শ জেনে নিন
কোরবানি ঈদে বেশ কয়েকদিন টানা খাওয়া হয় গরু বা খাসিরবিস্তারিত পড়ুন
জাপান ও ইউরোপে বিরল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ
জাপানে, একটি বিরল “মাংস খাওয়া ব্যাকটেরিয়া” এর কারণে এক রোগবিস্তারিত পড়ুন