পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ চাই না সম্প্রীতি চাই
দু ই প্রতিবেশী বন্ধু মরুভূমি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মরুভূমির শেষ প্রান্তে পৌঁছানো। পথিমধ্যে এক দানব এসে তাদের সামনে হাজির। দানব একজনকে বলল, তুই কি চাস। তুই যা চাবি আমি তোকে তাই দিব, তবে একটি শর্ত আছে তোকে যা দেবো তার দ্বিগুণ দেবো তোর সাথের লোকটাকে। এখন ঐ ব্যক্তি যার সাথে দানব কথা বলছিল সে খুব চিন্তায় পড়ে গেল। সে চিন্তা করল যে আমি যদি অনেক ধন-সম্পত্তি চাই তা পাব কিন্তু তাহলে আমার সাথী তো আমার সম্পত্তির চেয়ে দ্বিগুণ পাবে। তাতো মেনে নেওয়া যায় না। তখন ঐ বন্ধু বলল, হে দানব তুমি আমার এক হাত, এক পা ও একটি চোখ ধ্বংস করে দাও। দানব বলল তুমি আরেকবার চিন্তা করে দেখ। লোকটি বলল, হে দানব তুমি তাই দাও। দানব ঐ লোকের একটি হাত, একটি পা ও একটি চোখ ধ্বংস করে দিল। তারপরে তার সাথীর দুই হাত, দুই পা ও দুটি চোখ ধ্বংস করে দিল। ফলে ঐ লোক একেবারে অচল হয়ে মরুভূমিতে পড়ে থাকল আর যার এক হাত, এক পা ও এক চোখ ধ্বংস করে দিল সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে চলতে লাগল।
প্রিয় পাঠক, এই গল্পটা আমি একটা উদ্দেশ্যে এখানে বললাম। আমার কথা হলো পাকিস্তান ও ভারতের চাওয়া যদি ঐ রকম হয় তাহলে আমার কিছুই বলার নেই। তারা যুদ্ধ করে যেন বা চায় এক দেশ শেষ হয়ে যাক ও আরেক দেশ পঙ্গু হয়ে থাক। এ রকম হলে ঐ দুটি দেশের কে লাভবান হবে? কেউ লাভবান হবে না। একটি দেশ হয়তো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। আরেকটি ১০০ বছর পিছিয়ে কোনোভাবে হয়তো টিকে থাকবে।
যুদ্ধ দেশে ধ্বংস নিয়ে আসে। যুদ্ধ প্রাণহানি ঘটায়। যুদ্ধরত দুটি দেশেরই অর্থনীতি, শিল্প কারখানা ধ্বংস হয়ে যায়। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি জন্মলগ্ন থেকে সামরিক আইন দিয়ে সামরিক শাসকরা দেশ শাসন করেছে। যুগের পর যুগ সামরিক শাসনের ফলে ঐ দেশটি কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি। পাকিস্তানের বিশাল জনগোষ্ঠী আজ অভুক্ত, তারা দিনে একবেলা খেতে পারে কিনা জানি না। অপরদিকে পাকিস্তানের বর্তমান তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকার দেশের উন্নয়ন না করে, শিল্পে উন্নয়ন না করে কৃষিতে উন্নয়ন না করে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে ও দেশে রণসজ্জা করে আসছে। অপরদিকে ভারত জন্মলগ্ন থেকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র থাকায় তাদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তারা সব দিক দিয়ে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে আছে। তবুও তাদের রণসজ্জা চলছে। এতটা রণসজ্জা দুটি দেশের কী প্রয়োজন? ইউরোপের দেশগুলো রণসজ্জা করে দেশের জনগণকে বঞ্চিত করছে না। তারা উন্নতির চরম শিখরে উঠে গেছে। পাকিস্তান ও ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর আমি দুটি যুদ্ধ দেখেছি।
১৯৬৫ সালে পাক ভারত যুদ্ধে জড়িত হয়ে পড়লে পাকিস্তান অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উভয় দেশই পিছিয়ে গেছে। কেউ লাভবান হয়নি। একটা কথা উল্লেখ করতে হয় প্রকৃতপক্ষে ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান রক্ষা করেছিল বেঙ্গল রেজিমেন্ট। বেঙ্গল রেজিমেন্ট না থাকলে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি ভারত দখল করে নিত। এখন যদি আর একটি যুদ্ধ হয়, তাহলে আমার মনে হয় পাকিস্তান একেবারেই ধ্বংস হয়ে যাবে এবং ভারতও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দুই দেশের জনগণ যুদ্ধ চায় না, উন্নয়ন চায়। আমরা কেউ পাকিস্তানের পক্ষে ইন্ধন দিচ্ছি আবার কেউ ইন্ধন দিচ্ছি ভারতের পক্ষে। আজ যারা পাকিস্তানকে ইন্ধন দিচ্ছে তারা হলো আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী ও তাদের বংশধররা। তারা আশা করে, ১৯৭১ সালের পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসেবে ভারতকে ধ্বংস করা হবে—এই প্রত্যাশায় বিভোর তারা।
আমার কথা হল, আমরা শান্তিকামী জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। আমরা কেন পাকিস্তান-ভারতের যুদ্ধে ইন্ধন দিব? আমরা সবাই এক সাথে বলব—আমরা যুদ্ধ চাই না। আমরা শুধু পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ তো নয়ই। আমরা বিশ্বের কোথাও যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তির পৃথিবী চাই। আমরা উন্নয়নের পক্ষে, যুদ্ধের বিরুদ্ধে। বিশ্বে শান্তিকামী জনতার জয় হোক, পাকিস্তান ও ভারতে শান্তিকামী মানুষের জয় হোক, এই কামনা করি।
লেখক :সাবেক ছাত্রনেতা ও ব্যাংকার
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন