শনিবার, নভেম্বর ২, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

পুলিশের আবার অপরাধ কী গো?

সাঁওতালের ঘরে পুলিশ আগুন দিচ্ছে -এই ভিডিওটা অনেকদিন ধরেই সামাজিক মাধ্যমে ঘুরছিল। মানুষের মধ্যে প্রশ্ন ছিল, পুলিশ ভাইরা কি আসলেই এ কাজটা করেছেb? এটা এতই অদ্ভূত যে চোখ দিয়ে দেখেও অনেকের বিশ্বাস হচ্ছিল না। কিন্তু আদালতের তদন্তের পর এখন ব্যাপারটা অনেকের জন্য সুরাহা হয়ে গেল। সবাই এখন ধর্ম না খুইয়েও বলতে পারবে, পুলিশ এই কাজটা করেছে।

বাংলাদেশ অনেক বড় বড় অর্জন করেছে, মধ্য আয়ের দেশ হচ্ছে ইত্যাদি। বলা যায় আমরা দুনিয়াকে চমকে দিয়েছি। ব্যতিক্রমী কাজ করা আমাদের বিশেষত্ব। এর মধ্যে নাগরিকের ঘরে দলবেঁধে পুলিশের আগুন দেওয়াও তেমনি একটা কাজ। তাই দেশ ও জাতির জন্য এই বিরল সম্মানটুকু এনে দেওয়ায় জাতীয় পুলিশ বাহিনীকে তসলিম।

পুলিশ আগুন দিল কেউ জানল না?

গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল উচ্ছেদ অভিযান যখন চলছিল, লোকজন অনেকেই তার প্রতিবাদ করে। তখন সাঁওতালদের জন্য মায়াকান্না করার অভিযোগ তুলে বেশকিছু সবল গালিগালাজকারী মাঠে নেমে পড়ে। তাদের বক্তব্য ছিল, কিছু মানুষ সাঁওতালদের জন্য অনেক কষ্ট পায়, কিন্তু পুলিশরা যে দেশ ও জাতির শত্রুদের সঙ্গে লড়তে গিয়ে দুঃখ- কষ্ট ও আঘাত পায়, তার কথা কেউ বলে না। পুলিশের সমালোচকরা হয় বিদেশি দালাল অথবা বিরোধী দলের সমর্থক।

তবে সবার ওপরে কয়েক কাঠি উঠে আমাদের রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রীগণ বললেন, সরকারি বাহিনীর কোনো দোষ নেই, সব দোষ নন্দ সাঁওতালের। দু-একজন মন্ত্রী এ কথাও বললেন, দেশ ও জাতির স্বার্থ ত্যাগ করে এসব মানুষ সাঁওতালদের অবস্থান সমর্থন করছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মাথায় ঢুকল না, সাঁওতালদের পক্ষে কথা বলার এটা বিষয় ছিল না। এটা ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির, আইনের শাসনের এবং যথাসামান্য হলেও প্রজাতন্ত্রের জনগণকে রক্ষা করার ব্যাপারে পুলিশের ভূমিকা সংক্রান্ত। মানুষ আশা করেছিল, বোধহয় পুলিশ আর যাইহোক নিজে অপরাধী হবে না। কিন্তু আদালতের কথার পর ধাক্কাটা বড় বেশি লাগছে।

একেবারে পুলিশের কাপড়-চোপড় পরেই বাহিনীর লোকরা সাঁওতালদের ঘরে নামল আগুন দিতে, এটা বিশ্বাস করা সহজ নয়। কোন ভাইসাহেব আবার সেটার ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখল বোঝা গেল না। এটা কি বীরত্বের স্মৃতি রক্ষা করার জন্য? কিন্তু বেশ হিরো হিরো ভাব করে মহা উৎসাহের সঙ্গে পুলিশের এই ভূমিকার ভিডিও দেখে সবাই ব্যাপক বিনোদন উপভোগ করেছে। সেজন্য পুলিশকে ধন্যবাদ।

পুলিশ কি শুধু জঙ্গি মারে?

পুলিশ ও র‌্যাব নিয়মিতভাবে অনেক কিছু করে, বন্দুকযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়াসহ। যখন গুলির উল্টো দিকে জঙ্গি থাকে, তখন মানুষজন কিছু বলে না। যেহেতু বাংলাদেশে প্রায় সবাই জঙ্গিবিরোধী, বেশির ভাগ মানুষ মনে মনে খুশি। কারণ তারা জানে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা কাঠামোর সেই ক্ষমতা নেই যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে জঙ্গি দমন হবে। অতএব এসব বাহিনীর উঠিয়ে নিয়ে জঙ্গি মেরে ফেলা সবার কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য। কিন্তু পুলিশ আর র‌্যাব শুধু জঙ্গি মারে না অন্যরাও এই তালিকার মধ্যে পড়ে যায়।

এমনকি হত্যাকাণ্ড বাহিনীর কিছু সদস্যদের জন্য উপরি রুজির ব্যবস্থা করছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা তার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু কেউ বলবে না এই হত্যাবাণিজ্য কেবল নারায়ণগঞ্জেই হচ্ছে। র‌্যাবের জন্য দুর্ভাগ্য যাঁদের হত্যা করা হয়েছিল, তাদেরও সমর্থক ছিল, তাই বিচার হলো। তবে এটাও স্মরণ রাখতে হবে, অনেকের নাম বিচারের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাও চায়ের কাপে মেপে বুঝে চিনি ঢালে।

পুলিশ তাহলে কী?

পুলিশ যেভাবে তৎপরতা দেখিয়ে একের পর এক জঙ্গি ধরছে, তাতে বোঝা যায়, তাদের অনুসন্ধানি জাল অনেক বিস্তৃত। তারা সবই জানে এবং প্রয়োজনে তথ্য তুলে এনে কাজ করে। অতএব একদল পুলিশ গিয়ে ঘরবাড়ি আক্রমণ করে আগুন দিল, ছবিও তুলল সেটা সরকার মহলের উচ্চপদস্থদের অজানা এটা বিশ্বাস করা যায় না। তাহলে আগুন দেওয়ার পরের দিন থেকে মন্ত্রী, এমপি, আমলা এবং পুলিশের কর্মকর্তারা যেসব বললেন সেগুলো কি সত্য কথা ছিল? যদি না হয়, তাহলে ওই আগুন দেওয়ার ষড়যন্ত্রে যারা পুলিশের ভূমিকাকে অস্বীকার করেছিল, তারাও কি যুক্ত হয়ে পড়ছে না?

যে দেশের পুলিশ নিজের দেশের মানুষের বাড়িতে দলবেঁধে আগুন দিতে পারে, তাদের সরল অর্থে আর পুলিশ বলা যায় না। যেই দেশের প্রশাসন এমন পুলিশ পালে তাদেরও আর জনপ্রশাসন বলা যায় না। যে দেশের জনপ্রশাসন এমন রাজনীতি থেকে জন্ম নেয়, তাকে আর জনরাজনীতিও আখ্যা দেওয়া ঠিক না।

কিছুদিন আগে এক ব্যক্তি একটা বাচ্চাকে নির্যাতন করে হত্যা করার দৃশ্য ফেসবুকে আপলোড করেছিল। দুনিয়াজুরে এটা খবর হয়ে গিয়েছিল। সবাই ধিক্কার দিয়েছিল এবং বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচার হয়ে তার মৃত্যুদণ্ড হয়। আমরা শুনেছি, আদালত থেকে আগুন দেওয়া পুলিশের তালিকা চাওয়া হয়েছে, কিন্তু এখনো দেওয়া হয়নি। যদি তাই হয়, তাহলে এই বাস্তবতার কী নাম দেব?

প্রিয় ক্ষমতাবান গোষ্ঠী, আপনারা যে দলেরই হোন না কেন আমরা যথেষ্ট ভীত। পুলিশ-র‌্যাবের দিকে তাকালে আমাদের বুক কাপে, বিজিবি ইত্যাদি দেখলে তো ভয়ের চোটে মরে যেতে ইচ্ছে করে। তাই আপনারা যদি একটা তালিকা দিতে পারতেন আপনাদের আগামী পরিকল্পনার, তাহলে আমরা পালিয়ে বাঁচার জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি সেটা ঠিক করতে পারতাম। সালাম নেবেন।

লেখক : সাংবাদিক ও গবেষক

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?