প্রতি রাতে খোদার আরশ কেঁপে উঠত : বীরাঙ্গনা মনছুরা
আমার গর্ভের ৬ মাসের সন্তানকে নষ্ট করেছে। ওদের নির্যাতনের ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি। যে সব রাজাকার আমাকে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছিল আমি তাদের বিচার চাই। কথাগুলো বলছিলেন রংপুর নগরীর কাচনা তকেয়ার পাড়া এলাকার একাত্তরের বীরাঙ্গনা মনছুরা বেগম। স্বামী মোস্তফা মিয়া মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার অপরাধে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
মনছুরা বেগম বলেন, স্বামী মোস্তফা মিয়া মুক্তিযুদ্ধে গেছেন। বাড়িতে বৃদ্ধ শ্বশুরসহ থাকি। সব সময় আতঙ্কে থাকতাম। ভাদ্র মাসের ২ তারিখ রাত ৮টা। বাড়ির সামনে ২ থেকে ৩টি মিলিটারির গাড়ি এসে থামে। এরপর তারা ফাঁকা গুলি করতে থাকলে আশপাশের সবাই পালিয়ে যায়। আমরা পালানোর সময় পায়নি। একটু পরে আমাদের বাসায় ঢুকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সঙ্গে কয়েকজন স্থানীয় রাজাকার। রাজাকারদের বাড়ি ছিল সিগারেট কোম্পানি এলাকায়। বাড়িতে ঢুকে প্রথমে আমার শ্বশুরকে উর্দুতে জিজ্ঞাসা করে তোমার ছেলে কোথায়? তোমার ছেলে কি মুুক্তিবাহিনীতে গেছে? উর্দু কথা বুঝতে না পারায় রাজাকারেররা বাংলায় বলে মোস্তফা কোথায়। এ কথা বলার পর পাকিস্তানিরা আমার শ্বশুরকে মারতে থাকে। এ সময় স্থানীয় এক রাজাকার বলে ঘরে মোস্তফার বউ আছে। ওকে ধরলে সব খবর পাওয়া যাবে। ওই রাজাকার এ সময় আরো বলে- মোস্তফার স্ত্রীর কাছে বোমা আছে। রাজাকারদের কথা শুনে কয়েকজন মিলিটারি আমাকে মারতে থাকে। এক পর্যায়ে আমাকে ও শ্বশুরকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুদূর যাওয়ার পর শ্বশুরকে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে দেয় পাক হানাদার বাহিনী। আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় রংপুর টাউন হলে।
তিনি আরো বলেন, টাউন হলে আটকে রেখে আমার ওপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। এ সময় গর্ভের সন্তানটি নষ্ট হয়ে যায়। টানা ১৯ দিন অমানুষিক নির্যাতনের ফলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ি। এর পর আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
টাউন হলের টর্চার ক্যাম্পের ১৯ দিনের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে মনছুরা বেগম বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ জন সুন্দরী নারীকে ধরে নিয়ে আসতো হানাদারেরা। একটি ঘরে ২৫ থেকে ৩০ জন নারীকে রাখা হতো। রাত হলেই নারীদের চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠতো। খোদার আরশ পর্যন্ত কেপে উঠতো। কিন্তু হানাদারদের মন নরম হতো না। প্রতিরাতেই ধরে আনা নারীদের ওপর চলতো পাশবিক নির্যাতন, যা মুখে বলা যাবে না।
তিনি আরো বলেন, যে সব পুরুষদের ধরে নিয়ে আসা হতো তাদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা ছিল আরো বেশি। টাউন হলের পিছনে একটি বড়ই গাছ ছিল। গাছটির পাশেই ছিল একটি বড় ইন্দ্রিরা (কুয়া)। পুরুষদের গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতনের পর হত্যা করে সেই কুয়ার মধ্যে ফেলে দেওয়া হতো।
মনছুরা বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীরাঙ্গনাদের সম্মান দিয়েছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বীরাঙ্গনাদের সম্মাননা ও আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন। সেই অনুষ্ঠানে আমিও গিয়েছিলাম। সেই অনুষ্ঠান থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে একটি ঘর তুলেছি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে নাম উঠেছে। তবে এখন পর্যন্ত ভাতা পাইনি। কিন্তু স্বামীর নাম এখনো মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় উঠেনি।
মোস্তাফা মিয়া রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। এখন তিনি নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে রিকশা চালাতে পারেন না। বড় ছেলে দিন মজুরি করে। আর ছোট ছেলে রিকশা চালায়। এ দিয়ে তাদের সংসার চলে। রাইজিংবিডি
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চলে গেলেন হায়দার আকবর খান রনো
প্রবীণ রাজনীতিক ও লেখক বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা হায়দারবিস্তারিত পড়ুন
গফরগাঁওয়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক শামছুন নাহার
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ- ২০২৪ এ ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়েবিস্তারিত পড়ুন
‘ও আল্লাহ আমার ইকবালরে কই নিয়ে গেলা’
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক মা সুফিয়া বেগম। ঢাকায় অগ্নিদগ্ধ হয়েবিস্তারিত পড়ুন