শনিবার, এপ্রিল ১২, ২০২৫

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

ফিলিস্তিনের মুক্তিসংগ্রাম ও জিয়াউর রহমান

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে বিশেষ আবেগ। পবিত্র নগরী জেরুসালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের যে স্বপ্ন প্রতিটি ফিলিস্তিনি নাগরিক দেখে থাকে, সে স্বপ্নের অংশীদার এ দেশের মানুষ। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি এ দেশের মানুষের সমর্থন নিরবচ্ছিন্ন। এই সংগ্রামের ঐতিহাসিক প্রাণপুরুষ ইয়াসির আরাফাতের প্রতি এ দেশের মানুষের রয়েছে বিশেষ শ্রদ্ধা। সর্বকালের সেরা গেরিলা যোদ্ধাদের একজন ফিলিস্তিনের সংগ্রামী নেতা ইয়াসির আরাফাতের নামে সত্তর ও আশির দশকে এ দেশে বহু সন্তানের নাম রাখা হতো।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি এ দেশের মানুষ সমর্থন দিয়ে আসছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামে অনেক বাংলাদেশী স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এদের অনেকে লড়াইয়ে অংশ নিয়ে শাহাদতবরণ করেন। আবার অনেকে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ যখন লাহোরে ওআইসি সংম্মেলনে অংশগ্রহণ করে সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গনাইজেশন প্রধান ইয়াসির আরাফাতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ফিলিস্তিনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়। এ সময় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের সমর্থনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক কোরের ডিন শাহের মোহাম্মদের তথ্য অনুযায়ী ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত ১৩ বার রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসেন। এর মধ্যে ৯ বার এসেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদতের পর তিনি গভীর হতাশা ও দুঃখ প্রকাশ করেন। দুই নেতা বহু আন্তর্জাতিক ফোরামে একসাথে কাজ করেছেন। জিয়াউর রহমান ছিলেন আলকুদস কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এই কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন মরক্কোর বাদশাহ দ্বিতীয় আল হাসান এবং সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সাল। ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে আল কুদস কমিটির নেতৃত্বে জিয়াউর রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়া জিয়াউর রহমান ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহমেদ মোহাম্মদ আলী ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় আমাকে জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরামর্শে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক ফিলিস্তিনের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।

জিয়াউর রহমানের সময় ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশের মিলিটারি স্কুল ও কলেজ এবং মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য অবারিত সুযোগ দেয়া হয়। সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত বহু ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে লেখাপড়া করেছে। ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিভিন্ন সময় জাতিসঙ্ঘে উত্থাপন করেছেন। এমনকি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ফিলিস্তিন দূতাবাসের জন্য ভূমি বরাদ্দ দেয়া হয়।

জিয়াউর রহমানের সময় ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, পরে বাংলাদেশের সব সরকার ফিলিস্তিনের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সমর্থন দিয়ে আসছে। তার ধারাবাহিকতা আজো বিদ্যমান। বেগম খালেদা জিয়ার সরকারও আন্তর্জাতিক ফোরামে সব সময় ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সাথে ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রামের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। যে বন্ধন এখনো অটুট আছে। গাজায় ইসরাইলের বর্বরতার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল ফিলিস্তিন দূতাবাসে গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। অপর দিকে গত নভেম্বরে ফাতাহর সপ্তম ন্যাশনাল কাউন্সিলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণ ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকবে।

বর্তমান আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহে ফিলিস্তিনের জনগণ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এক দিকে দখলদার বাহিনী তাদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করছে, অপর দিকে পবিত্র নগরী জেরুসালেমকে নিয়ে ইসরাইল এক নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের আবাসভূমি থেকে উচ্ছেদের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে মাত্র কিছু দিন আগেও ইসরাইল প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিল। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে বসতি নির্মাণ বন্ধে প্রস্তাব পাস হয়েছে। প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষে ভেটো প্রদান থেকে বিরত ছিল। এ ছাড়া প্যারিসে ফিলিস্তিন বিষয়ে ৭০টি রাষ্ট্রের এক সম্মেলনে দুই রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের পুরনো এই সঙ্ঘাত নিরসনে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্যারিস সম্মেলনে তিনটি বিষয়ে ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এর মধ্যে ফিলিস্তিনের জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো, নাগরিক সমাজকে শক্তিশালী করা এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কাঠামোগত ভিত্তি তৈরি করা। মধ্যপ্রাচ্যে সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতিতে এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দুই রাষ্ট্রের ভিত্তিতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সম্প্রতি মস্কোয় ফাতাহ এবং ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ঐক্য সরকার গঠনের ব্যাপারে একমত হয়েছে। বৈঠক শেষে ফিলিস্তিনি নেতারা রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে মার্কিন দূতাবাস জেরুসালেমে না সরানোর ব্যাপারে রাশিয়ার প্রভাব খাটানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ইসরাইলের এ নীতির সমালোচনা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে সতর্ক করা হয়েছে জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়া হলে ফিলিস্তিনি জনগণ আরো বেশি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে। বড় ধরনের রক্তপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঐক্যবদ্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন ও ইসরাইলি আগ্রাসন মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সমর্থন এখন অত্যন্ত জরুরি। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন পেতে তিন দিনের সফরে ঢাকা এসেছেন। বাংলাদেশ ছাড়াও আরো বেশ কিছু দেশ সফর করবেন বলে ধারণা করা যায়। আমরা আশা করব শুধু মুসলিম বিশ্ব নয়, মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে প্রতিটি দেশ ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়াবে। ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর দশকের পর দশক ধরে যে নিপীড়ন চলছে তার অবসান ঘটবে। বাংলাদেশ রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। অন্য যেকোনো দেশের মানুষের চেয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্ব এ দেশের মানুষ বেশি উপলব্ধি করে। এ কারণে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি এ দেশের মানুষের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরো বেশি সুদৃঢ়।

লেখক : বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?