শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

বঙ্গবন্ধুর জন্য বুলেটের মুখে বুক পেতে দিলেন যিনি

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দীনকে শেষবারের মতো কল দিয়েছিলেন। তিনি জামিলকে বলেছিলেনÑ তাকে আক্রমণ করা হয়েছে, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছে।’ এর পরে লাইন কেটে যায়।
কালো রাতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, নগরীকে ঘিরে ধরেছিল অনিশ্চয়তা এবং দেশের নেতৃত্ব অচল হয়ে পড়েছিল; কর্নেল জামিল তার দায়িত্ব থেকে সরে আসেননি। তিনি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল শফিউল্লাহসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কল করেন এবং তাদের সেনা পাঠাতে বলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টকে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার নির্দেশ দেন এবং তৎক্ষণাৎ ৩২ নম্বর রোডের বাড়ির দিকে নিজেই ছুটে গেলেন।
শান্তভাবে নিজের পিস্তল খাপে রেখে স্ত্রী-সন্ত্রানদের বলে দিলেন, বঙ্গবন্ধুর বিপদ। কিভাবে আমি না গিয়ে পারি? জিপে চড়ার আগে স্ত্রীর প্রতি তার শেষ কথা ছিল, আমার কন্যাদের দিকে খেয়াল রেখো।’ অন্ধকার ভেদ করে গাড়ি চলে যায় ৩২ নম্বর রোডের বাড়ির দিকে।
সোবহানবাগ মসজিদের কাছে পৌঁছালে পিজিআর কনভয় কর্নেল জামিলকে থামিয়ে দেয়। তিনি কারণ জানতে চাইলে। তাকে বলা হয়, সামনে সেনা ইউনিট রয়েছে এবং গোলাগুলি চলছে। তিনি সামনে এগোনোর জন্য আমাদের বোঝাতে চেষ্টা করেন। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে তিনি জিপে চেপে বসেন এবং নিজে গাড়ি চালিয়ে ৩২ নম্বর রোডে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
গুলি করা হয় বীর সেনানি কর্নেল জামিলকে। গাড়ির ভেতর লুটিয়ে পড়েন তিনি। শাহাদত বরণ করেন কর্নেল জামিল, যিনি অন্যদের মতো বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার শপথ নিয়েছিলেন। নীতি ও কর্তব্যের প্রতি অবিচল আনুগত্য তাকে দান করেছে শহীদের মর্যাদা। যে রাতে অনেক সাহসী মানুষ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেছেন, কর্নেল জামিল একচুলও টলেননি কর্তব্যবোধ থেকে। সাহসিকতার চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন তিনি। জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন দায়িত্ববোধকে।
১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট বেলা ২টা পর্যন্ত জামিলের পরিবার জানত না, কী ঘটেছিল তার ভাগ্যে। ফোন করলেন জেনারেল শফিউল্লাহ, যাকে ভোরে কর্নেল জামিল বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে সেনা পাঠাতে অনুরোধ করেছিলেন। ফোন ধরলেন মিসেস জামিল। স্বামীর মৃত্যুসংবাদ মিসেস জামিলকে দিতে গলা ধরে আসছিল শফিউল্লাহর। চলে গেলেন বাংলাদেশের এক খাঁটি দেশপ্রেমিক।
কর্নেল জামিল অসাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় কর্নেল জামিল পাকিস্তানে বন্দী অবস্থায় ছিলেন। একজন সেনাকর্মকর্তা হিসেবে তার আন্তরিকতা আর পেশাদারিত্বে মুগ্ধ হয়ে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু তাকে তার সামরিক সচিব নিযুক্ত করেছিলেন।
কর্নেল জামিল এবং কে এম শফিউল্লাহ একসাথে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। অনেক বছর পর বন্ধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শফিউল্লাহ বলেন, সেই দিনগুলোতে জামিল ভাই, আমি এবং কিছু বাঙালি অফিসার পাকিস্তানে ছিলাম। আমাদের মাঝে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। সে সময় বাঙালি জাতীয়তাবাদ ছিল উদীয়মান অবস্থায়। পাকিস্তানের বেশির ভাগ জনসংখ্যা বাংলাদেশের হওয়া সত্ত্বেও আমরা দেখেছি, সেনাবাহিনীতে আমাদের প্রতিনিধিত্ব কত কম ছিল। যখনই আমাদের সাক্ষাৎ হতো, আমরা এ বিষয়ে কথা বলতাম। আমাদের মধ্যে জামিল ভাইয়ের জাতীয়তাবোধ ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী এবং মাঝে মাঝে তিনি ক্রোধে বেপরোয়া হয়ে যেতেন।
২০১০ সালে কর্নেল জামিলকে মরণোত্তর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল র‌্যাংক দেয়া হয় এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই সকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাঁচানোর জন্য যে অসীম সাহসিকতা দেখিয়েছিলেন, তার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
আমাদের দেশে রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে অনেক দেরিতে এ সম্মান দেয়া হলো কর্নেল জামিলকে। কারণ এ দেশে স্বজনপ্রীতির লেন্সের মাধ্যমে দেখা হয় ত্যাগ ও সাহস। আমাদের জাতির জন্য কর্নেল জামিলকে মহত্ত্বের এটা এক বিলম্বিত স্মরণ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ মহান বীরের বিরল আত্মত্যাগ প্রতিফলনেরও সময় এসেছে।
কর্নেল জামিলের জ্যেষ্ঠ কন্যা তাহমিনা এনায়েত বলেন, তার আত্মা শান্তিতে থাকবে এবং আমিও মরে যাবো। আমার বাবা ছিলেন একজন সৎ কর্মকর্তা। আমি গর্বিত, আমার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মতো নেতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
জামিলের অমর আত্মদান বাঁচিয়ে রেখেছে তাকে আমাদের মাঝে। দেশের ডাকে তিনি সাড়া দিয়েছেন এবং কর্তব্য পালনের জন্য হাসিমুখে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। জাতি যখন দাঁড়িয়ে ছিল অনিশ্চয়তার বাঁকে, জামিল দেখিয়েছেন অনুপম নৈতিক সাহসিকতা, যা তাকে করেছে মহান ও সত্যিকারের নায়ক।

লেখক : সম্পাদক ঢাকা কুরিয়ার, এডিটর ইন চিফ ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি)

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?