বাংলাদেশের ‘গ্রেটেস্ট প্লেয়ার এভার’
তামিম-সাকিবরা তখনও বিকেএসপি’র বাইরে পরিচিতি পাননি। একজন সাংবাদিক বিকেএসপিতে গিয়ে একজন কোচকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার দলের সেরা ব্যাটসম্যান কে?’ কোচের থেকে উত্তর এসেছিলো, ‘সাকিব আল হাসান’।
অবধারিত পরের প্রশ্ন, ‘আর সেরা বোলার?’ এবারও একই উত্তর, ‘সাকিব আল হাসান’। হতবিহবল সাংবাদিক এবার প্রশ্ন করলেন, ‘আর সেরা ফিল্ডার?’ যথারীতি, ‘সাকিব আল হাসান’!
২০০৬ সালে আমরা মানসম্মত একজন অলরাউন্ডার খুঁজে ফিরছিলেন তৎকালীন কোচ ডেভ হোয়াটমোর। সেভাবে বিকল্প না থাকায় বাংলাদেশ ক্রিকেটে নতুন একটা ধারণা নিয়ে আসেন তিনি, ‘মিনি অলরাউন্ডার’। আর এই কোটাতেই দুজনের একসাথে অভিষেক হয়ে যায়, ফরহাদ রেজা এবং সাকিব আল হাসান।
বলাই বাহুল্য, ফরহাদ রেজার অভিষেকটা ‘দারুণ’ হলো, অভিষেকেই ফিফটি করে ফেললেন। বাংলাদেশের পক্ষে সেটা ছিলো মাত্রই দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত! হ্যা, সেই ফরহাদ রেজা, যাকে ‘স্যার’, ‘লর্ড’ বলে আমরা ছুড়ে ফেলেছি অনেকদিন আগেই। সেটা অন্য ব্যাপার, সেদিকে পরে আসলেই চলবে।
শুরু হলো মাগুরার এক সাধারণ ছেলের অসাধারণ হয়ে ওঠার যাত্রা। অভিষেক এতটা নজরকাড়া না হলেও এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার যে র্যাংকিং-এর শীর্ষে উঠতে পারেন, সেটা যে প্রমাণ করেছেন তিনিই! তাঁকে নিয়ে পরম শ্রদ্ধেয় ক্রীড়াসাংবাদিক এবং লেখক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় লিখেছেন – ‘সাকিব আল হাসানঃ আপন চোখে, ভিন্ন চোখে’, এমনকি গানও লেখা হয়েছে। তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের ‘গ্রেটেস্ট প্লেয়ার এভার’!
তবে কষ্টও কি পেয়েছেন কম? বারবার দেশকে গর্বিত করার মত সব রেকর্ড গড়েছেন, হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারদের একজন, হয়েছেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। অথচ প্রতিদানে আমরা তাঁকে কি দিয়েছি?
একগাদা গালি, এই ধরুন ‘স্বার্থপর’, ‘হোটেল ব্যবসায়ী’, ‘অর্থলোভী’সহ আরো হাজার হাজার গালি। তাঁর ফেসবুক পেইজ বন্ধ করে দিতে হয়েছিলো, ফেসবুক প্রোফাইলও বন্ধ ছিলো বেশ কিছুদিন। কারণ? আমাদের ফ্যানপেইজের
‘দারুণ’ মুখনিঃসৃত বাণী!
তবে তিনি সবসময়ই জোড় সংখ্যাদের মধ্যে একজন বিজোড়, সাকিব যে একজনই! তাই তিনি পারফর্ম করে গেছেন প্রতি ম্যাচেই, ব্যাটসম্যান হিসেবে, কিংবা বোলার, কিংবা দুটোই, এমনকি কোনোটাতেই তেমন একটা পারফর্ম করতে না পারলে স্রেফ ফিল্ডিং দিয়েই হয়ে উঠতেন দলের অন্যতম সেরা পারফরমার! তিনি আজীবনই ছিলেন ‘সিমপ্লি দ্য বেস্ট’!
কিন্তু বেশ কিছুদিন, আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ২০১৪ সাল থেকে সাকিবের সেই ব্যাটিং সত্ত্বা যেন খুঁজে ফিরছিলেন সবাই, এমনকি সাকিব নিজেও! নাহ, পারফরম্যান্স নিয়ে কখনোই প্রশ্ন ওঠেনি তাঁর। নিজের সবচেয়ে খারাপ সময়েই যিনি ছিলেন দলের সেরা পারফরমারদের একজন, তাঁর সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন ওঠেনি কখনোই।
তবে ব্যাটিং-এ সেই সেন্সিবল সাকিবকে যে পাওয়া যাচ্ছিলো না! প্রশ্ন উঠেছিল ব্যাটিং-এ দায়িত্ববোধ নিয়ে, আর সেটা নিয়ে প্রশ্নটা আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠেছিলো ইংল্যান্ড সিরিজে প্রথম ম্যাচে সাকিবের সেই দিনের প্রথম বলেই উড়িয়ে মারার পর থেকেই।
আর টেস্টে গত বছর ভারতীয় অলরাউন্ডার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে টেস্ট অলরাউন্ডার র্যাংকিং-এ শীর্ষে উঠে আসার পর সবাই রীতিমত শোরগোল শুরু করে দিয়েছিলেন, তবে কি সত্যিই সাকিব আল হাসান ‘বোলিং অলরাউন্ডার’ হয়ে উঠছেন?
জবাবটা তাই দিতেই হতো সব সমালোচনার।
আর সাকিব সেটা দিলেন ভয়ংকরভাবে, এর চেয়ে ভালোভাবে হয়তো এত সমালোচনার জবাব দেওয়া সম্ভব ছিলো না।
গতকালও সাকিব যখন ১১ বলে ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন, আশেপাশে শংকা উড়ে বেড়াচ্ছিলো, ‘সাকিব আবার ইংল্যান্ড সিরিজের মত পাগলাটে শট খেলে উইকেট বিলিয়ে আসবেন না তো আগামীকাল?’ কারণটা যত না সাকিবের উপর বিশ্বাসহীনতা, তার চেয়ে বরং সাকিবের ঐ ১১ বলের মধ্যেই একটা লাইফ পাওয়া ব্যাটিং নিয়ে আশংকা।
তবে তিনি যে সাকিব, নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে তাঁর চেয়ে আর কেউ বেশি ভালো জানে না! সকাল থেকে যেন একেবারে অন্যরূপে তিনি, একপাশে মমিনুল দিনের শুরুতেই আউট হয়ে গেলেও দলের উপর একটুও চাপ আসতে দেননি। একপাশে মুশফিককে নিয়ে শুরু করেছেন প্রতিআক্রমণ, এতটাই দাপুটে ব্যাটিং করেছেন যে মুশফিক পর্যন্ত পার্শ্বনায়ক হয়ে গিয়েছেন দুর্দান্ত আর একটা ইনিংস খেলার পরও!
রীতিমত ক্রিকেটের রেকর্ডবুকে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন আজ, একের পর এক কীর্তি গড়েছেন আজকের ২১৭ রানের ইনিংসের পথে। প্রিয় বন্ধু তামিমকে পিছনে ফেলে গড়েছেন সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ড, তামিম এবং হাবিবুল বাশারের পর তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ছুঁয়েছেন ৩০০০ রানের মাইলফলক, বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপ গড়েছেন, মুশফিককে সাথে নিয়ে একদিনে পুরো ৩৫৯ রানের জুটি গড়েছেন।
শুধুই কি রেকর্ডবুক? বোল্ট-সাউদিদের বুকেও কি কম রক্তক্ষরণ হয়েছে? সকাল থেকে দুর্দান্ত সব কাট, কভার ড্রাইভ, হুক-পুল খেলে বোল্ট-সাউদি-ওয়াগনারকে হতাশ করে গেছেন ক্রমাগত। বাউন্সার দিলে সেটার জবাব হুক কিংবা পুলে দিতে বিন্দুমাত্র কার্পন্য করেননি। নতুন বলে বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার ট্রেন্ট বোল্টকে যেভাবে বেধড়ক মার দিলেন, সেটা বোল্ট নিজেও কি ভুলতে পারবেন?
আর সেকেন্ড সেশনের শেষের দিকে যেন হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্য, প্রতি ওভারে অন্তত একটা বাউন্ডারি, নিয়মিত প্রান্তবদলে কিউই বোলারদের করে তুলেছিলেন অসহায়। ইনিংসটা ছিলো এতটাই মাহাত্মপূর্ণ, কোনো শব্দেই যেন সেটা আর বাঁধা সম্ভব নয়!
হ্যা, বিশাল এই ইনিংসে সুযোগও দিয়েছেন বেশ কিছু। তবে “ফরচুন ফেভারস দ্য ব্রেভ”- এই সূত্র ধরে আজ ভাগ্যদেবীও যেন বাজি ধরেছিলেন সাকিবের পক্ষেই!নাহলে হাতে জমা পড়ার পরও কেন বিজে ওয়াটলিং বলটাকে মাটিতে ঘষা দিয়ে ফেলবেন? রস টেলরই বা কেন হাতে জমা পড়া স্কুলবয় ক্যাচ ফেলে দেবেন? নিশ্চিত রানআউটই বা কেন মিস করবে নিউজিল্যান্ড?
সব মিলিয়ে প্রবল পরাক্রমেই ফিরলেন ব্যাটসম্যান’ সাকিব। তবু আজকে সবচেয়ে প্রশান্তির ব্যাপার ছিলো জমাট এবং দারুণ আক্রমণাত্মক, অথচ প্রচন্ড প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সেই সাকিবকে ফিরে পাওয়া, যিনি একটি রানের জন্য ক্ষুধার্ত বাঘের চেয়েও বেশি ক্ষিপ্র হতে জানেন। কে জানে, হয়তো এবার ফিরলেন আগের চেয়েও ভয়ঙ্কর রূপে!-খেলাধুলা
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪ : আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারিদের নাম ঘোষণা
এক মাস পরেই শুরু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা। আইসিসির প্রকাশিত তালিকাবিস্তারিত পড়ুন
মুস্তাফিজের আইপিএল খেলার ছুটি বাড়িয়েছে বিসিবি
আইপিএলের চলতি আসরে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করছেন কেবল মুস্তাফিজুর রহমান।বিস্তারিত পড়ুন
মুস্তাফিজকে স্বাগত জানাল চেন্নাই সুপার কিংস
আগামী ২২ মার্চ পর্দা উঠছে বিশ্বের জনপ্রিয় ক্রিকেট লিগ ইন্ডিয়ানবিস্তারিত পড়ুন