রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

বীরাঙ্গনা দিবসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই

বিশ্বে যুগে যুগে বহু যুদ্ধ হয়েছে, যেমন গৃহযুদ্ধ, স্বাধীনতা যুদ্ধ, বিশ্বযুদ্ধ ইত্যাদি। ভয়ঙ্কর সেসব যুদ্ধের মধ্যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাসের অন্যতম বীভৎস মানবাধিকারহরণ যুদ্ধ। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পাশবিকতা ও নির্মমতা বিশ্ব বিবেককে স্তম্ভিত করে এখনও। বাঙালিদের দোষ ছিল তারা বাঙালি এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। নির্বিচারে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তারা তৎকালীন সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির ওপর।

দীর্ঘ ৯ মাসের মরণপণ লড়াইয়ে সশস্ত্র মনুষ্যত্বহীন বর্বর পাকিস্তানি সেনাদের পরাজিত করতে শহীদ হয়েছিলেন ৩০ লাখ বাঙালি, সম্ভ্রম বিসর্জিত হয়েছিল ৪ লাখ নারীর। হত্যাযজ্ঞ থেকে বাদ পড়েনি নিষ্পাপ শিশুও। তবে বাংলাদেশের নারীরা যে দেশপ্রেমিক ছিলেন, রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন তার প্রমাণ তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দিয়েছিলেন। যারা প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি তারা নিজের স্বামী, সন্তান, ভাই, প্রতিবেশীকে উৎসাহিত করেছিলেন শত্রুর মোকাবিলা করতে।

নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও লাঠিসোঁটা নিয়ে যুদ্ধে যেতে সন্তানকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন হাসিমুখে। মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে খাবার পরিবেশন করা, রাতে গোপনে আশ্রয় দেয়া, নিরাপদ পথ দেখিয়ে দেয়া, দেশাত্মবোধকে উজ্জীবিত করার জন্য সংগ্রামী গান গাওয়া ছাড়াও গ্রামগঞ্জে ব্রিটিশবিরোধী নারী যোদ্ধা ইলা মিত্র কিংবা প্রীতিলতাদের মতো শক্ত হাতে যুদ্ধ করেছেন বীরপ্রতীক তারামন বিবিরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম সংলগ্ন মাঠে ছাত্রীরা অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন শত্রুদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য। ফরিদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমাদের বীর নারীরা অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন পুরুষের সঙ্গে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠায়, দেশপ্রেম ও বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের জন্য। আমাদের নারীরাও উপলব্ধি করেছিলেন বাংলার জনগণ তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শাসন থেকে বঞ্চিত হয়ে পশ্চিমা শাসকদের জাঁতাকলে পতিত হয়েছে। আয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র যে গণতন্ত্রবিরোধী প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ১৯৬২-তে আয়ুব খান কেড়ে নেয় ভোটাধিকার।

আমাদের নারীরা আরও বুঝতে পেরেছিলেন, ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের শুধু পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে ব্যস্ততা এবং পূর্ব পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ অরক্ষিত রেখে এদেশের জনগণের ওপর বিমাতাসুলভ আচরণ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। পূর্ব বাংলার বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যমূলক আচরণ ছিল সর্বত্র।

সরকারের বিভিন্ন বিভাগে চাকরি প্রদানের ক্ষেত্রেও একই রকম। যার প্রতিবাদে ৬ দফা দাবি উত্থাপনের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেছিল। আমাদের মহীয়সী বীর নারীরা বুঝতে পেরেছিলেন ১৯৭০-এর নির্বাচনেও পাকিস্তানের ভাষাগত সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাভাষী জনগণের ওপর উর্দুকে চাপিয়ে দেয়া, বাংলার জনগণের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চিরতরে নিশ্চিহ্ন করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য।

ধর্মান্ধতার গোঁড়ামি দিয়ে নারীদের গৃহবন্দি করে রাখাও ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্যতম এজেন্ডা। ১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে মোট ৩১৩টি আসনের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত ১৬৯টির মধ্যে ১৬৭টি লাভ করে আওয়ামী লীগ। আবার ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮২টি লাভ করে আওয়ামী লীগ। পূর্ব পাকিস্তানের এ নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পায় আওয়ামী লীগ। অথচ নির্বাচনের পর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা অর্পণ করেনি। ১৬ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কিছু দাবি অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রত্যাশিতভাবে মেনে নেয়ার আহ্বান যে ছিল ভ-ামি এবং পূর্ব বাংলার জনগণকে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণে রক্তাক্ত করার পূর্ব প্রস্তুতি সেটিও কারও বুঝতে বাকি ছিল না। সুতরাং স্বাধীনতা যুদ্ধে যার যা কিছু ছিল তা নিয়ে নেমে পড়া, মানবতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদায় করা যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে যৌক্তিক ও যথার্থ সেটি বাঙালি নারীরা বুঝতে পেরেছিলেন।

২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তান সরকার তারই রাষ্ট্রের পূর্ব অংশের জনগণের ওপর ঘৃণ্য পরিকল্পনা অনুযায়ী সেনাবাহিনী লেলিয়ে দিয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট চালানোর নির্দেশ দিয়ে বিশ্ব ইতিহাসে যে কলঙ্ক লেপন করেছিল তারই ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃতি লাভ করে। আমাদের বীর নারীরা স্বামী, সন্তান, বাবা, ভাই, বোন এমনকি কোলের শিশুসন্তানসহ আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্বাধীনতা যুদ্ধে, ইজ্জত-সম্ভ্রম নিয়ে মুক্ত স্বাধীন দেশে শান্তিময় জীবনের প্রত্যাশায়।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ওপর পৈশাচিক অত্যাচার ও হত্যাকা-কে পৃথিবীর কোনো মানুষ মেনে নিতে পারে না, মেনে নেয়নি। অথচ বাস্তবতা ছিল এমনই যে, কল্পিত জাতিতত্ত্বের ওপর পাকিস্তানি শাসক ও তাদের বর্বর সেনাবাহিনী সাধারণ নিরপরাধ নারীদের হত্যা করেছে, ধর্ষণ করে হত্যা করেছে, যাদের ধর্ষণ করতে পারেনি তাদের ওপর যে লোমহর্ষক অত্যাচার করেছে তা ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমন গৌরবের তেমনি বড় বেদনার, বড় যন্ত্রণার, বড় বেশি অকল্পনীয়, অসহনীয়। নরপশু পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের এদেশীয় দোসর, ধর্মব্যবসায়ী আলবদর আলশামসদের সহযোগিতায় ঢাকার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য অভিজাত এলাকা থেকে বাঙালি নারী ও বালিকাদের অপহরণ করে বিভিন্ন সেনা ছাউনিতে নিয়ে জড়ো করত।

তারা এসব নারী, বালিকাকে বুট দিয়ে লাথি মারত, চাবুক মারত, রাইফেলের বাঁট দিয়ে আঘাত করত, দিগম্বর করে নির্জন কক্ষে আটকে রাখত। কামড়ে কিংবা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে অনেকের স্তন তুলে ফেলত। কখনও আবার নিতম্বের মাংস কেটে নিয়ে আনন্দ-উল্লাস করত। গোপনাঙ্গে গরম লোহার রড বা শিক ঢুকিয়ে পৈশাচিক উল্লাসে উন্মত্ত হতো।

আবার অনেক নারীকে যৌনাঙ্গে বেয়নেট ঢুকিয়ে হত্যা করত বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। মানব সভ্যতা কি এত বড় জঘন্য অপরাধ মেনে নিতে পারে? এসব অত্যাচার-নির্যাতন মানবতাকে, সভ্যতাকে কুকুরের মতো কামড়ে ছিঁড়ে খেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পুরুষের পাশাপশি নারীদের হত্যা করা ও ধর্ষণসহ বিকৃত যৌনাচারের কাহিনী বিবেকবান মানবজাতিকে তাগিদ দেয় এসব যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর প্রতি ঘৃণায় থুতু ছিটানোর।

আমরা মনে করি, মানবসভ্যতা অনন্তকাল ধরে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদ ও বীরাঙ্গনাদের ওপর সংঘটিত অপরাধের বিচার দাবি করবে। আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নারীদের আত্মত্যাগ ও সম্ভ্রম বিসর্জনের বিনিময়ে জাতির কাছে প্রত্যাশা করি, আর যেন একটি নারীও স্বাধীন দেশে ধর্ষণ, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার না হয়। আমরা প্রত্যাশা করি, নারী নির্যাতনমুক্ত একটি আলোকিত সমাজ, দেশ ও পৃথিবীর। একইসঙ্গে আমরা চাই, মুক্তিযুদ্ধে নারীদের আত্মত্যাগ ও নারীর সর্বোচ্চ সম্পদ সতীত্ব হরণের বিষয়টি স্মরণ করতে প্রতি বছর ১৭ ডিসেম্বর নির্যাতিত নারীদের পাকিস্তানি বন্দিশালা থেকে মুক্ত হওয়ার দিনটিকে ‘বীরাঙ্গনা দিবস’ ঘোষণা করা হোক।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?