বুধবার, অক্টোবর ২৩, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কি ঘাস কাটে?

আনিসুল হক একজন বাংলাদেশী কবি, লেখক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক পদে কর্মরত আছেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সত্য ঘটনা নিয়ে তাঁর লেখা মা বইটি বেশ জনপ্রিয়। বাংলা ভাষার পাশাপাশি বইটি দিল্লী থেকে ইংরেজি ভাষায় এবং ভুবনেশ্বর থেকে উড়ে ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।

সম্প্রতি তিনি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি বিশাল স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ এখানে তুলে ধরা হল-

বিশ্ববিদ্যালয় কুয়োর ব্যাঙ বানাবে না

রংপুরে আমার আম্মার একটা বাসা আছে। তিন কাঠা জমি। ওপরে ঢেউটিন। পাঁচটা ঘর। একটা স্টোররুম। দুইটা বাথরুম। একটা রান্নাঘর। একটা উঠান। বাড়ির পেছনে চার কাঠা খোলা জমি। এখন আম, লেবু, কলাগাছ, লাউগাছ ও শিমগাছ আছে।

আমি ভাবছি, এটা হতে পারে একটা আদর্শ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। এটার নাম দেব উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম বিশ্ববিদ্যালয়। আজকাল অবশ্য বাংলা নাম তেমন আকর্ষণীয় বলে বিবেচ্য হয় না। তাহলে ওরিয়েন্টাল, অক্সিডেন্টাল ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ট কেমব্রিচ হারভার্ট নাম দিতে পারি। অক্সফোর্ট কেমব্রিচ হারভার্ট নামের বানানগুলো ইচ্ছা করেই একটু বদলে দেওয়া। যাতে আসল অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড মামলা-টামলা করে না বসে।

আমাদের বাসার বাইরের এক চিলতে বারান্দাটাকে বানাব রিসেপশন কাম ওরিয়েন্টেশন হল। তারপরে যে ড্রয়িংরুমটা আছে, ১২ ফুট বাই ১২ ফুট, ওটা হবে ড. কুদরাত-এ-খুদা রেজিস্ট্রার হল। তার পাশে ১০ ফুট বাই ১০ ফুটের ঘরটা হবে সেমিনার রুম। ক্লাসও হবে, সেমিনারও হবে। মাটিতে পাটি বিছিয়ে বসিয়ে দিলে জনা তিরিশেক বসানো যাবে। আরও তিনটা ছোট ছোট রুম আছে। একটা হবে ওয়ারেন বাফেট বিজনেস ডিপার্টমেন্ট, একটা হবে বিল গেটস আইটি ডিপার্টমেন্ট, আরেকটা?

এখন কোন সাবজেক্টের ডিমান্ড বেশি? ইংলিশ? তাহলে ওটাকে ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট বানাই? নাকি হিন্দি? শুনেছি, এখন নাকি হিন্দি ভালো চলছে! তাহলে তাই সই। বাংলাদেশের প্রথম কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দি সাবজেক্ট খোলা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে ইংলিশ লিটারেচার। আমরা চালু করব হিন্দি ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড বলিউডি কালচার অ্যাডভান্সড কোর্স। এতে হিন্দিতে অডিও ও ভিডিও সাক্ষাৎকার দেওয়া হাতে-কলমে শেখানো হবে। এটার নাম দিতে পারি ঐশ্বরিয়া বচ্চন ডিপার্টমেন্ট।

স্টোররুমে আমরা চাল, গম, পুরোনো জুতার বাক্স ইত্যাদি রাখতাম। ওটাকে বানাব স্টিফেন হকিং ল্যাবরেটরি কাম কম্পিউটার হল। রান্নাঘরটা অবশ্য কাঁচা। চারদিকে বাঁশের বেড়া। ওটাকে স্টিভ জবস গ্রিন টেকনোলজি রিসার্চ সেন্টার করা যাবে। বাড়ির উঠানটাকে বানানো যাবে টিএসসি। ক্যানটিন কাম মিংলিং কাম ব্রেইন স্টর্মিং সেন্টার। আর পেছনের বাগানটাকে কাজী অর্গানিক রিসার্চ সেন্টার।

আম্মা হবেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। পদাধিকার বলে। কারণ জমি তাঁর, বাড়িও তাঁর। একজন ভাইস চ্যান্সেলর লাগবে। খেটেখুটে যাঁরা পিএইচডি করেছেন, তাঁদের পাওয়া মুশকিল হবে। তা না হলে কোনো টিভি চ্যানেলের মালিককে ভাইস চ্যান্সেলর করা যাবে। কোনো কিছুতেই না কুলালে একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার ধরে আনব। নামের আগে ড. লেখা থাকবে।

আমরা ক্লাস নেব পোস্ট মডার্ন পদ্ধতিতে। দুটো বাথরুমের পেছনে নীল রঙের পর্দা ঝোলাব। তার সামনে স্কাইপে শিক্ষক দাঁড়াবেন। তিনি লেকচার দেবেন। দেশে ও দেশের বাইরে থাকা ছাত্ররা লেকচার শুনবে। আমরা তাদের ই-মেইল করে ক্লাসনোট পাঠিয়ে দেব। পরীক্ষা হবে অনলাইনে। পরীক্ষার শেষে গ্রেড দেওয়া হবে। বেশি টাকা দিলে এ প্লাস, মাঝারি টাকা দিলে বি, বা বেশি টাকা দিলে ৪, কম টাকা দিলে ২.৫।
বুদ্ধিটা কেমন? ভালো না?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, বই দুই ধরনের—পাঠ্যবই, আর অপাঠ্যবই। তিনি মনে করতেন, বোর্ড যে বইগুলো পড়ার জন্য তালিকাভুক্ত করে দেয়, সেগুলো হলো অপাঠ্য পুস্তক। আসলেই এই দুনিয়ায় স্কুলে আমরা যে কটা বই পড়ি, তার বাইরে লাখ লাখ বই আছে। তার চেয়েও বড় কথা, চারদিকে জীবনে, জগতে, মানুষে, প্রকৃতিতে, আকাশে-প্রান্তরে, ক্ষুদ্র না-দেখা কণায়, লক্ষ আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্রে অনেক বেশি জ্ঞান ছড়িয়ে আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমরা চাই সেই উদার দৃষ্টিভঙ্গি। চোখ খুলে দেওয়া। দিগন্তটাকে বড় করে দেওয়া। কিন্তু তার মানে এই না, একজন মানুষ সব দিক জানতে গিয়ে কোনো একটা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হবে না।

আমি তো মনে করি, আমার প্রস্তাবিত তিন কাঠা জমির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বা সেই ধরনের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে বেরোবে, তার চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের -ঘাটে-মলে-টিএসসিতে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাঁচ বছর যে শুধু হাঁটাহাঁটি করবে, সে অনেক ভালো মানুষ হবে, বড় মানুষ হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কারিগরি দক্ষতা দেওয়া নয়। গাড়ি চালানো শিক্ষা বা সাইকেল সারানো শিক্ষা বা চুল কাটার দক্ষতা অর্জন করে যদি কেউ নিজেকে শিক্ষিত দাবি করে (তিনি শিক্ষিত হতেও পারেন, তবে ওই দক্ষতা তাঁর শিক্ষা নয়), তা যেমন হাস্যকর, তেমনি যোগ-বিয়োগ করতে শেখা, কম্পিউটার চালাতে শেখা, এ রকমের কারিগরি দক্ষতা মানুষকে শিক্ষিত করে না। একজন মানুষ নিরক্ষর হয়েও প্রজ্ঞাবান ও বিবেকবান হতে পারেন। সাহিত্য, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন ও নৈতিকতার শিক্ষার কোনো পাঠক্রম না থাকলেও চলে। কিন্তু এসব না শিখলে কেউ শিক্ষিত হয় না। আবার জীবনও মানুষকে অনেক ঋদ্ধ করে। আমাদের মাশরাফি বিন মুর্তজার সাক্ষাৎকার পড়লে গভীর ও বিশাল অন্তর্দৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়।

আমরা যখন সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পেছনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা বিদ্যালয় বা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের দায়ভাগ খুঁজছি, তখন এটা নিশ্চয়ই বেশি চাওয়া হবে না যে, তিন কাঠা জমির ওপরের ঢেউটিনের আমাদের বাড়িটাকে বিশ্ববিদ্যালয় বানানো ঠিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয় একজন মানুষের হৃদয় আর দৃষ্টিকে বিশ্ববিস্তারী করে তুলবে, কুয়োর ব্যাঙ বানাবে না।
_____________________________

তিনি খুব ভাল ভাল যুক্তি স্থাপন করলেও তার যে বেসরকারি শিক্ষার্থীদের উপর বিন্দুমাত্র ভরসা নেই তা বুঝা যাচ্ছে। তিনি খুব সুন্দর করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অপমান করেছেন। তার মনে তিন কাঠার জমি হলেই বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যায়। ভাইস প্রিন্সিপাল হতে কোন যোগ্যতা নয়, টাকা হলেই যথেষ্ট। আবার টাকা দিয়ে সিজিপিএ কিনে নেয়া যায়!!!

সব যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে ঘুরে শিখা যায়, তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কি ঘাস কাটে? আর নিত্যনতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের যে কার্যকলাপ দেখা যায়, তা কি খুব ভাল মানুষীর লক্ষণ? বেশি না, টিএসসির সেই নববর্ষের কথা আর রাস্তায় উল্টাপথে বাস চালিয়ে গুণ্ডামির চিত্র মনে পড়লেই চোখের সামনে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। সকল স্থানে ভাল-খারাপ আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিঃসন্দেহে দেশের ১ নাম্বার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই বলে সেখানে সবাই ধোয়া তুলসীপাতা তা কিন্তু নয়। ঠিক সেভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুচ্ছ ভাবাও কিন্তু অন্যায়।

জঙ্গিবাদের ভয়ঙ্কর ইস্যু নিয়ে আমাদের দেশের সকল মানুষ প্রতিদিন লড়াই করে চলছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধরা পড়া জঙ্গিরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাই বলে কি এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হবে? আমরা কেন মাথা ব্যথা করলে মাথাকে কেটে ফেলতে চাই? মাথা ব্যথা সারানোর কি কোন ঔষধ তৈরি করা যায় না?

এতো বিশিষ্ট একজন ব্যক্তিত্ব যখন এরকম মূর্খের মত আচরণ করে তখন আর কিছু বলার থাকে না। মোট প্রকাশের স্বাধীনতা সকলের রয়েছে। তাই বলে অন্যকে হেয় করে কোথা বলা অবশ্যই কাম্য নয়।

লেখিকা- ফাতেমা তুজ জোহুরা আরজু।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?