বুধবার, মে ৮, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

মালয়েশিয়ায় প্রবাসী শ্রমিকদের দুর্দশার খবর কেউ কি রাখেন?

মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা সবচেয়ে কষ্টের ও বিপদজনক কাজ করে। শুধু কষ্টের কাজ নয়, চাকুরি দাতা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে করে আট ঘন্টার জায়গায় ১২-১৬ ঘন্টা কাজ। কোন কোন সময় টানা চব্বিশ ঘন্টা বা আটচল্লিশ ঘন্টা কাজ করার অভিজ্ঞাতও প্রবাসীদের আছে। কোন মাসে প্রতিষ্ঠানে কাজের চাপ থাকলে মাসে ছয় মাসে একদিনও ছুটি না-কাটানো প্রবাসীও অনেক। ছুটি কাটায় না, তাও প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে। অথচ একজন মালয়েশিয়ান খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে কিনা ছুটি না-কাটিয়ে পুরো এক মাস কাজ করবে।

বাংলাদেশি অপারেটর দিয়েই মালয়েশিয়ার অনেক বড় বড় কারখানার উৎপাদন দিনকে দিন বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশিরা তাদের মেধা-শ্রম-সততা দিয়ে কাজ করে অনেক কারখানার সাধারণ অপারেটর থেকে সুপারভাইজার, টেকনেশিয়ান ও প্রোডাকশনের মূল দায়িত্ব পালন করে। তেমনি বড় বড় কন্সট্রাকশনের কাজেও বাংলাদেশিরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে দিনরাত খেটে মরে। অনেক সাধারণ নির্মাণ শ্রমিক তাদের কাজের দক্ষতা দেখিয়ে সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। বর্তমান সময়ে মালয়েশিয়ার বিশাল বাজেটের প্রকল্প পাতাল ট্রেন এমআরটি ও ১১৮তলা মারদেকা টাওয়ার নির্মাণে নিয়োজিত অধিকাংশ শ্রমিকই বাংলাদেশি।

এমআরটি`র নির্মাণাধীন কোন স্টেশনের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে কর্মব্যস্ত বাংলাদেশিদের দেখা যায়। নির্মাণাধীন মারদেকা টাওয়ারের পাশ দিয়ে গেলেই দেখা যায় গাছ তলায় জড়ো হয়ে ক্লান্ত দেহে আহার করে বাংলাদেশিরা। গাছ তলায় বসে কলাপাতায় বা কাগজে নিয়ে শ্রমিকদের ভাত খাওয়া প্রথমবার দেখলে যে কারো খুব মায়া হবে। কষ্ট অনুভূত হবে যে কোনো মানুষের। কিন্তু প্রবাসী শ্রমিকরা এ সময়ে নিজেদের মধ্যে নানা আলোচনায় মেতে বা ফোনে দেশে কথা বলে ভুলে থাকে কষ্টের কথা।

মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিকদের বিশেষ করে বাংলাদেশিদের ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টকর কাজ করার কথা স্বীকার করেছিলেন খোদ মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা উপপ্রধানমন্ত্রী আহমদ জাহিদ হামিদি। তিনি একবার সেলাংগর এর প্রাদেশিক রাজধানী শাহ আলমে এক যুব সমাবেশে হাজার হাজার মালয়েশিয়ান যুবকের সামনে বলেছিলেন, মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিকরা করে থ্রিডি কাজ। থ্রিডি মানে ডার্টি, ডিফিকাল্ট ও ডেঞ্জারাস। অর্থাৎ প্রবাসীরাই করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও কঠিন কাজ গুলো। এবং থ্রিডি কাজ গুলো করার জন্যই বাংলাদেশ থেকে আগামীতে শ্রমিক আনবে মালয়েশিয়া। জাহিদ হামিদির এ বক্তব্যে মালয়েশিয়ার সরকার থেকেই স্বীকৃত হলো বাংলাদেশি প্রবাসীদের কঠোর পরিশ্রমের কথা। মালয়েশিয়ায় সত্যিই কঠোর পরিশ্রম করে বাংলাদেশি শ্রমিকরা। অথচ, পরিশ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিকের কথা না- বললেও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কথা বলতেই হয়।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি সাধারণ শ্রমিকরা কতটুকু মানবিক সুযোগ-সুবিধা পায়? প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোতে যে সুযোগ-সুবিধা আছে, তুলনামূলকভাবে মালয়েশিয়ায় তা কম। চলতি বছর মালয়েশিয়ার সংসদে মালয়েশিয়ান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নূর জাযলান মোহাম্মদ তা স্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, মালয়েশিয়ার মালিকরা বিদেশি শ্রমিকদের সাথে ভালো আচরণ করে না। মালিকরা বিদেশি শ্রমিকদের কল্যাণের দিকটা এড়িয়ে যায়। মালয়েশিয়ায় প্রতিষ্ঠানের মালিকরা অধিকতর বিদেশি শ্রমিক নির্ভর, তবে তারা শ্রমিকদের যত্ন নেন না। শ্রমিকদের কল্যাণে মালিকদের দায়িত্ববোধ নেই। বাংলাদেশিরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশে গেলে প্রতি দুই বছর পরপর দুই মাসের ছুটি নিয়ে দেশে যেতে পারেন। অনেক সময় মালিকরা ছুটির দুই মাসের বেতনসহ বাড়িতে যাওয়া-আসার টিকেটের টাকা দেয়। কিন্তু, মালয়েশিয়ায় এ সুযোগ খুবই কম।

মালয়েশিয়ান মালিকরা বিদেশি শ্রমিকরা পাঁচ-সাত বছর দেশে না-গেলেও চুপ থাকেন। তার শ্রমিকটিকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে না। শুধু দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর তাকে (মালিককে) সার্ভিস দিয়ে গেলেই হলো। দেশে এই শ্রমিকের পরিবার-পরিজন আছে, তা তারা (মালিক) ভাবে না। হাতেগোনা কিছু কিছু মালিক শ্রমিকদের দেশে যাওয়ার টিকেট দিলেও ছুটির বেতন দিতে খুবই কম দেখা যায়। মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী কোনো শ্রমিক অসুস্থ হলে মেডিকেল খরচ কোম্পানি বহন করবে। কিন্তু, মালয়েশিয়ায় সব কোম্পানি বিদেশি শ্রমিকদের মেডিকেল খরচ বহন করে না। মেডিকেল খরচ, থাকার খরচ (বাসা ভাড়া) সব নিজেদের বহন করতে হয় অধিকাংশ শ্রমিকদের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, অজ্ঞতার কারণে প্রাপ্য বার্ষিক ছুটি, মেডিকেল ছুটি না-কাটিয়ে সারা বছর কাজ করে যায় বিদেশি শ্রমিকরা।

মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী শ্রমিকের প্রাপ্য এ সব ছুটি গুলো ভোগ না- করে কাজ করে গেলে ওভারটাইম হিসেবে ডাবল বেতন পাওয়ার কথা। কিন্তু, অধিকাংশ মালিক তা দেয় না বিদেশি শ্রমিকদের। সাধারণ শ্রমিকদের অজ্ঞতার সুযোগে মালিকরা প্রতারণা করেন বিদেশি শ্রমিকদের সাথে। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ায় যে সমস্ত বড়বড় কোম্পানি গুলোতে অধিকসংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন, সে সব প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ হাই কমিশনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে পরিদর্শন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশি শ্রমিকরা ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে কিনা দেখা প্রয়োজন। প্রবাসীদের অভিভাবক হিসেবে হাই কমিশনের এ ধরনের কোন কাজ তাদের রুটিনে আছে কিনা জানি না। যদি না-থাকে তাহলে বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি থাকবে- মালয়েশিয়াসহ বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকরা সে দেশের নিয়ম অনুসারে ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা গুলো পাচ্ছে কিনা তা তদারকির ব্যবস্থা করার। কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশনের মাধ্যমে বৃহত্তর মালয়েশিয়ায় ছড়িয়ে-ছিড়িয়ে থাকা ছয় লক্ষাধিক বাংলাদেশির ভালোমন্দ দেখা সম্ভব কিনা তা ভেবে দেখার বিষয়।

লেখক : মালয়েশিয়াপ্রবাসী।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

যে কারনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সম্মেলন স্থগিত

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশক্রমে মাত্র এক সপ্তাহের নোটিশে যুক্তরাজ্য বিএনপিরবিস্তারিত পড়ুন

ইউরোপ থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে বাড়ছে চাপ !

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যভুক্ত বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে থাকা বাংলাদেশিদের ফিরিয়েবিস্তারিত পড়ুন

বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার শ্রমিক নেবে সৌদি আরব

চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পেশার প্রায় ৩ হাজারবিস্তারিত পড়ুন

  • প্রবাসী গৃহকর্মীদের জন্য নীতিমালা সহজ করল সৌদি আরব
  • বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশিদের!
  • সবচেয়ে কম খরচে কম সময়ে পান কানাডার নাগরিকত্ব
  • মধ্যপ্রাচ্যে নানামূখী প্রতিকূলতার মুখোমুখি বাংলাদেশ
  • মালদ্বীপে কী করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা?
  • কানাডায় সাংবাদিক; অভিনয়, মডেল ও সংগীত শিল্পী; প্রযোজক, পরিচালক ও খেলোয়াড়দের দারুন সুযোগ!
  • তিন মাস শ্রমিকদের দুপুরে কাজ করাবে না সৌদি সরকার
  • সিনেট কমিটি গুরুত্ব দিচ্ছে জয়ের অভিযোগকে
  • পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী ভিসা মাত্র ১২ মাসে
  • প্রবাসীদের ভিসা সংক্রান্ত তথ্য মিলবে অনলাইনে
  • সৌদিতে শ্রম বেচাকেনার ফাঁদে ওরা ৩১১ বাংলাদেশি
  • নতুন ও সহজে নিয়মে AUSTRALIA মাইগ্রেশন এর বিপুল সুযোগ