মাহে রমজানে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর আমল : নফল নামাজ
মানুষের স্বাভাবিক অভ্যাস হলো দিনের বেলায় কাজ করা আর রাতের বেলায় বিশ্রাম নেওয়া বা ঘুমানো। কিন্তু প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে কখনো কখনো এমন রাতও আসে যে, সে সারা জেগে কাজ করে আর বলে, জীবনে বহু ঘুমিয়েছি, আজকের রাতটা ঘুমানোর জন্য নয়। তেমনি মুমিনের জীবনে মাহে রমজানের রাত ঘুমানোর জন্য নয়। কারণ রমজানের রাত নিজের আমলের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার জন্য, মহান আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য লাভের জন্য। আর এদিক দিয়ে নফল নামাজ অপেক্ষা কার্যকর পন্থা অন্য কিছুই হতে পারে না। রাসুলুল্লাহ রমজান মাসজুড়ে রাত জেগে নফল নামাজ পড়তেন এবং পরিবারের লোকদেরও জাগিয়ে দিতেন। রাতের নামাজ তথা তাহাজ্জুদের সালাত সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রালুলুল্লাহ (স.) বলেছেন : রমজান মাসের ফরজ রোজার পরে সবচেয়ে উত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ। (সহীহ মুসলিম : ১১৬৩, সুনানে আবু দাউদ : ২৪২৯, সুনানে তিরমিজি : ৭৪০ আস-সুনানুল কুবরা : ১৩১৪, সুনানে নাসায়ি : ১৬১৩, মুসনাদে আহমাদ : ১০৯১৫, সুনানে দারেমি : ১৭৯৮)।
শুধু রমজান মাসই নয়, রাসুলে কারিম (স.) সারা বছরই রাত জেগে নফল নামাজ আদায় করতেন। কারণ তাঁর রব তাঁকে এ বিষয়ে আদেশ করেছিলেন। এরশাদ হয়েছে, ‘হে বস্ত্রাবৃত! রাত্রিতে দণ্ডায়মান হোন এর কিছু অংশ বাদ দিয়ে; অর্ধরাত্রি অথবা তার থেকে কিছু কম অথবা তদপেক্ষা বেশি এবং কোরআন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্তভাবে স্পষ্ট করে। আমি আপনার ওপর অবতীর্ণ করেছি অত্যন্ত সুদৃঢ় বাণী। নিশ্চয়ই ইবাদতের জন্য রাত্রি জাগরণ প্রবৃত্তি দমনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। (সুরা আল-মুজাম্মিল : ১-৬ ) রাসুলুল্লাহ (স.) এত দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাতের বেলায় নফল নামাজ পড়তেন যে তাঁর পা ফুলে যেত। হজরত মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) রাত্রিবেলায় এত দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তেন যে তাঁর পা মোবারক ফুলে গিয়েছিল। সুতরাং তাঁকে বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তো আপনার পূর্ব ও পরের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন (তাহলে আপনি এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েন কেন?) উত্তরে তিনি বললেন, আমি আল্লাহর শুকর গুজার বান্দা হব না? (মুসনাদে আহমাদ : ১৮১৯৮, ফায়জুল বারি : খণ্ড-১, পৃষ্ঠা ১৭০, সিফাতুল্লাহি ওয়া আসারিহা ফি ইমানিল আবদ্ : খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৪)।
রাতে নফল নামাজের আসল রহস্য হলো, রাত্রিবেলায় মুমিন বান্দা মহান আল্লাহর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পায় যা তার ইমানি শক্তিকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে এবং খোদায়ী মদদে তার বৈষয়িক জীবনের যাবতীয় কামনা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন : প্রাচুর্যময় আল্লাহ প্রতি রাতে রাতের এক-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেণ। অতঃপর তিনি বলেন, আমি রাজাধিরাজ। কে আছে আমার নিকট প্রার্থনাকারী, আমি তার প্রার্থনা মঞ্জুর করব। কে আছে আমার কাছে আবেদনকারী, আমি তার আবেদন পূরণ করব। কে আছে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। সকাল উদিত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা এভাবে বান্দাকে আহ্বান করতে থাকেন। (সহিহ আল-বোখারি : ১১৪৫, সহিহ মুসলিম : ৭৫৮, সুনানে ইবনে মাজা : ১৩৬৬, সুনানে আবু দাউদ : ১৩১৫, সুনানে তিরমিজি : ৪৪৬, মুআত্তা ইমাম মালেক : ৭২৪, মুসনাদে আহমাদ : ৭৫৯২, সুনানে দারেমি : ১৫২০, আল-আদাবুল মুফরাদ : ৪০১)।
কিয়ামতের দিন যখন কোনো বান্দার ফরজ নামাজের হিসাবে ঘাটতি দেখা দেবে তখন নফল নামাজ দিয়ে সে ঘাটতি পূরণ করা হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন : কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। যদি ফরজ নামাজের হিসাব পুরা হয়ে যায়, তাহলে ভালো। আর যদি ফরজের হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলে মহান আল্লাহ বলবেন, দেখ আমার বান্দার কোনো নফল আছে কি না। যদি নফল পাওয়া যায়, তাহলে আল্লাহ তায়ালা বলবেন, নফল দিয়ে আমার বান্দার ফরজের ঘাটতি পূরণ করো। (সুনানে ইবনে মাজা : ১৪২৬, সুনানে আবু দাউদ : ৮৬৪, সুনানে তিরমিজি : ৪১৩, সুনানে নাসায়ি : ৪৬৫, মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই : ৫০৬, মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৩৬০০৮, মুসনাদে আহমাদ : ২৩২০১)। সুতরাং মাহে রমজানের পবিত্রতম রাতে মুমিন মুসলমান মহান আল্লাহর পরম সান্নিধ্য অর্জনে রাত জেগে নফল নামাজে নিমগ্ন থাকবেন-এটাই স্বাভাবিক।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ঈদের ছুটির পর বুধবার থেকে নতুন অফিস সময়সূচি
পবিত্র ঈদুল আজহার পর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিতবিস্তারিত পড়ুন
সৌদিতে হজে বিভিন্ন দেশের ৫৫০ হাজির মৃত্যু
সৌদি আরবে এ বছর হজ পালনে গিয়ে কমপক্ষে ৫৫০ জনবিস্তারিত পড়ুন
ঈদে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ টি গবাদিপশু কোরবানি
এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট ১ কোটি ৪বিস্তারিত পড়ুন