মুসলিম নারীর পর্দায় জরুরি শর্তসমূহ
ইসলামে নারীর পর্দা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই কুরআন-হাদিসে এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা রয়েছে। তাই আজ আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করবো। পর্দার ক্ষেত্রে নারীকে যে সব মানতে হবে-
১. সমস্ত শরীর ঢাকা : আল্লাহ তাআলা বলেন, وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آَبَائِهِنَّ أَوْ آَبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿৩১﴾(النور-৩১) “আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে ঢেকে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীন যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” অন্যত্র বলেন, يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا “হে নবি, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে , কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সুরা আহযাব-৫৯)
২. কারুকার্য ও নকশা বিহীন পর্দা ব্যবহার করা : তার প্রমাণ পূর্বে বর্ণিত সূরা নুরের আয়াত- وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ “তারা স্বীয় রূপ-লাবণ্য ও সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না।” এ আয়াতের ভেতর কারুকার্য খচিত পর্দাও অন্তর্ভুক্ত। কারণ আল্লাহ তাআলা যে সৌন্দর্য প্রকাশ করতে বারণ করেছেন, সে সৌন্দর্যকে আরেকটি সৌন্দর্য দ্বারা আবৃত করাও নিষেধের আওতায় আসে। তদ্রুপ সে সকল নকশাও নিষিদ্ধ, যা পর্দার বিভিন্ন জায়গায় অঙ্কিত থাকে বা নারীরা মাথার উপর আলাদাভাবে বা শরীরের কোন জায়গায় যুক্ত করে রাখে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى “আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।” (সুরা আহযাব-৩৩) التبرج অর্থ: নারীর এমন সৌন্দর্য ও রূপ-লাবণ্য প্রকাশ করা, যা পুরুষের যৌন উত্তেজনা ও সুড়সুড়ি সৃষ্টি করে। এ রূপ অশ্লীলতা প্রদর্শন করা কবিরা গুনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তিনজন মানুষ সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা কর না। (অর্থাৎ তারা সবাই ধ্বংস হবে।)
যথা : ক. যে ব্যক্তি মুসলমানদের জামাত থেকে বের হয়ে গেল অথবা যে কুরআন অনুযায়ী দেশ পরিচালনকারী শাসকের আনুগত্য ত্যাগ করল, আর সে এ অবস্থায় মারা গেল।
খ. যে গোলাম বা দাসী নিজ মনিব থেকে পলায়ন করল এবং এ অবস্থায় সে মারা গেল।
গ. যে নারী প্রয়োজন ছাড়া রূপচর্চা করে স্বামীর অবর্তমানে বাইরে বের হল।” ( হাকেম, সহিহ আল-জামে : ৩০৫৮) ৩. পর্দা সুগন্ধি
বিহীন হওয়া : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রচুর হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সুগন্ধি ব্যবহার করে নারীদের বাইরে বের হওয়া হারাম। সংক্ষিপ্ততার জন্য আমরা এখানে উদাহরণ স্বরূপ, রাসূলের একটি হাদিস উল্লেখ করছি, তিনি বলেন, “যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে বের হল, অতঃপর কোন জনসমাবেশ দিয়ে অতিক্রম করল তাদের ঘ্রাণে মোহিত করার জন্য, সে নারী ব্যভিচারিণী।” (আহমদ, সহিহ আল-জামে : ২৭০১)
৪. শীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভেসে উঠে এমন পাতলা ও সংকীর্ণ পর্দা না হওয়া। ইমাম আহমদ রহ. উসামা বিন জায়েদের সূত্রে বর্ণনা করেন, “দিহইয়া কালবির উপহার দেয়া, ঘন বুননের একটি কিবতি কাপড় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পরিধান করতে দেন। আমি তা আমার স্ত্রীকে দিয়ে দেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাকে বলেন, কি ব্যাপার, কাপড় পরিধান কর না? আমি বললাম, আল্লাহর রাসূল, আমি তা আমার স্ত্রীকে দিয়েছি।
তিনি বললেন, তাকে বল, এর নীচে যেন সে সেমিজ ব্যবহার করে। আমার মনে হয়, এ কাপড় তার হাড়ের আকারও প্রকাশ করে দেবে।” (আহমাদ,বায়হাকি) ৫. পর্দা শরীরের রং প্রকাশ করে দেয় এমন পাতলা না হওয়া। সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জাহান্নামের দু’ প্রকার লোক আমি এখনো দেখিনি :
(ক). সে সব লোক যারা গরুর লেজের মত বেত বহন করে চলবে, আর মানুষদের প্রহার করবে।
(খ). সে সব নারী, যারা কাপড় পরিধান করেও বিবস্ত্র থাকবে, অন্যদের আকৃষ্ট করবে এবং তারা নিজেরাও আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে ঘোড়ার ঝুলন্ত চুটির মত। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, তার ঘ্রাণও পাবে না।
৬. নারীর পর্দা পুরুষের পোশাকের ন্যায় না হওয়া। ইমাম বুখারি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারী নারী এবং নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষের উপর অভিসম্পাত করেছেন।”
(বুখারী, ফাতহুল বারি : ১০ : ৩৩২) ৭. সুখ্যাতির জন্য পরিধান করা হয় বা মানুষ যার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে, পর্দা এমন কাপড়ের না হওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন “যে ব্যক্তি সুনাম সুখ্যাতির পোশাক পরিধান করবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন অনুরূপ কাপড় পরিধান করাবেন, অতঃপর জাহান্নামের লেলিহান আগুনে তাকে দগ্ধ করবেন।” সুনাম সুখ্যাতির কাপড়, অর্থাৎ যে কাপড় পরিধান করার দ্বারা মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি লাভ উদ্দেশ্য হয়। যেমন উৎকৃষ্ট ও দামি কাপড়। যা সাধারণত দুনিয়ার সুখ-ভোগ ও চাকচিক্যে গর্বিত-অহংকারী ব্যক্তিরাই পরিধান করে।
এ হুকুম নারী-পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যে কেউ এ ধরনের কাপড় অসৎ উদ্দেশ্যে পরিধান করবে, কঠোর হুমকির সম্মুখীন হবে, যদি তওবা না করে মারা যায়। ৮. পর্দা বিজাতীয়দের পোশাক সাদৃশ্য না হওয়া। ইবনে ওমর রাদিআল্লাহ আনহু থেকে আবু দাউদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিসিনগণ বর্ণনা করেন, “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখল, সে ওই সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে গণ্য।” এরশাদ হচ্ছে, أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آَمَنُوا أَنْ تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلُ ﴿১৬﴾ (الحديد:১৬) “যারা ঈমান এনেছে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য নাজিল হয়েছে, তার কারণে বিগলিত হওয়ার সময় হয়নি? আর তারা যেন তাদের মত না হয়, যাদেরকে ইতঃপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল।” (সুরা হাদীদ-১৬) ইবনে কাসির অত্র আয়াতের তাফসিরে বলেন, “এ জন্য আল্লাহ তাআলা মোমিনদেরকে মৌলিক কিংবা আনুষঙ্গিক যে কোন বিষয়ে তাদের সামঞ্জস্য পরিহার করতে বলেছেন। ইবনে তাইমিয়্যাও অনুরূপ বলেছেন। অর্থাৎ অত্র আয়াতে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপক ও সব ক্ষেত্রে সমান, কাফেরদের অনুসরণ করা যাবে না।” (ইবনে কাসির:৪:৪৮৪)
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ঈদের ছুটির পর বুধবার থেকে নতুন অফিস সময়সূচি
পবিত্র ঈদুল আজহার পর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিতবিস্তারিত পড়ুন
সৌদিতে হজে বিভিন্ন দেশের ৫৫০ হাজির মৃত্যু
সৌদি আরবে এ বছর হজ পালনে গিয়ে কমপক্ষে ৫৫০ জনবিস্তারিত পড়ুন
ঈদে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ টি গবাদিপশু কোরবানি
এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট ১ কোটি ৪বিস্তারিত পড়ুন