যেন মধুমাখা হাসিই তার সফলতার চাবিকাঠি
মন দিয়ে শুনছেন। যে যা বলছেন, তাতেই সায় দিচ্ছেন। আয়োজন থাকলে পরিবেশন করছেন, না থাকলে ঘাড় নেড়ে না করছেন। কথা বলছেন একেবারেই শান্ত গলায়। হোটেলে প্রবেশ করে সবাই তাকে দিদি বলে সম্বোধন করছে। মুহূর্তের দেখা, তবুও যেন হাজার বছরের পরিচিত তিনি।
দেহ, মনে ক্লান্তির ছাপ। তবে সে ক্লান্তির কোনো প্রকাশ নেই। যেন মধুমাখা হাসিই তার সফলতার চাবিকাঠি। ব্যবসা যে তার কাছে ব্রত, তা পর্যটকদের সেবা দিয়েই প্রমাণ করছেন।
মারোয়াতি লুসাই। পাহাড়ি মেয়ে। গঠনশৈলীতেও পাহাড়ের ছাপ। দুপুর বেলার কথা। দিন-রাত খাটা চোখ ঘুমে তখনো ঢুলো ঢুলো করছিল। কিন্তু উপায় নেই। অতিথিরা এসে গেছেন। বেলা ২টার মধ্যেই খাবার পরিবেশন করতে হবে। খাবার প্রস্তুতও বটে।
আগের অতিথিরা একটু আগেই চলে গেছেন। হোটেল কক্ষগুলো পরিষ্কারও করে ফেলেছেন ইতোমধেই। সব আয়োজনের কেন্দ্রে তিনিই।
রাঙ্গামাটির সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে স্বামী মোয়া লুসাইয়ের সঙ্গে হোটেল এবং খাবার ব্যবসা করছেন মারোয়াতি লুসাই। ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর সঙ্গে বিশেষ কন্ট্রাক্টে ব্যবসা তাদের।
কাঠে নির্মিত তিনটি ঘরের কক্ষগুলোতে অর্ধশত পর্যটক রাতযাপন করতে পারেন। আয়তন বুঝে এক হাজার, দুই হাজার, আড়াই হাজার এবং তিন হাজার টাকায় কক্ষগুলো ভাড়া হয়। আর খাবার হোটেলে দেড়শ লোকের অর্ডার নিতে পারেন প্রতি বেলায়। মারোয়াতির ভাইসহ মোট তিনজন হোটেল পরিচালনায় সহযোগিতা করে। তিন বছরের হোটেল ব্যবসায় মারোয়াতির পরিবার এখন সাজেকের পরিচিত নাম। সফলও বটে। ঢাকার ট্রাভেল এজেন্সিগুলোও এক নামেই চেনেন তাদের।
মারোয়াতির জন্ম পাহাড় দেশেই। ভারতের মিজরামের আইজলে। সেখানেই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা। সাত বছর আগে বিয়ে হয়েছে সাজেকের হেডম্যান লাল থাংগার বড় ছেলে মোয়া লুসাইয়ের সঙ্গে। বছর পাঁচেক আগে ঘরে ছেলে এমানুয়েলের জন্ম। তার নামেই হোটেল। এমানুয়েল মিজরামের আইজলে একটি আবাসিক স্কুলে পড়ছে। লালিয়ান জলা এবং ফ্রেডে নামের আরও দুই ছেলে মারোয়াতির ঘরে।
বছর পাঁচেক আগে সাজেকে যখন পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়, তখন রাস্তার পাশে ছোট একটি দোকান ছিল মারোয়াতির স্বামীর। পরে সেনাবাহিনীরে সহযোগিতায় খাবার এবং হোটেল ব্যবসা শুরু করেন তিনি। দিন দিন ব্যবসার পরিধি বাড়ছে, বাড়ছে কাজের পরিধিও। দিন-রাত বিন্দুমাত্র ফুরসত নেই তাদের।
সরকারি ছুটির দিনে সাজেকে পর্যটকদের চাপ বেড়ে যায়। চাপ বাড়ে শীতের মৌসুমেও। সাজেকে পর্যটক আসে, পর্যটক যায় কিন্তু মারোয়াতি লুসাইয়ের দিন-রাত পাহাড়েই আটকে থাকে। হোটেল ব্যবসা শুরু করার পর ওপারে বাবার বাড়িও আর যাওয়ার সুযোগ পায়নি মারোয়াতি। বাবার দেশে ঘুরে আসতে আট কি নয় দিন সময় লাগে। পাহাড় মাড়িয়ে হাঁটার রাস্তা। মারোয়াতি এত দিন না থাকলে হোটেল বন্ধ রাখতে হবে।
পরিশ্রম করলে পাহাড়েও ভালো থাকা যায় বলে মত দিলেন মারোয়াতি। বলেন, সাজেক অনেক সুন্দর জায়গা। দিন দিন পর্যটক বাড়ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ সাজেক দেখতে আসেন। তারা আমাদের অতিথিও। আমরা সেবা না করলে তারা থাকবে কোথায়, খাবে কি? সেবার বিনিময়ে আমরাও দু পয়সা পাচ্ছি। কষ্ট হলেও মানুষের ভালোবাসা নিয়ে থাকতে পারছি, মানুষের সঙ্গে মিশতে পারছি।
ফড়িং ট্রাভেল এজেন্সির গাইড তানভীর। তিনি বলেন, দিদি আসলেই ভালো মানুষ। আমরা সাজেকে দিদি এবং দিদির স্বামীর ওপর বেশি ভরসা করতে পারি। এখানে সেবার মানও ভালো।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন