যে কারণে রোজা ভঙ্গ হয়
মাহে রমজানের তৃতীয় রোজা শেষ হলো আজ বৃহস্পতিবার। আত্মসংযমের এই মাসকে ফজিলতের দিক থেকে ১০ দিন করে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম ১০ দিন রহমত, তারপর ১০ দিন মাগফিরাত ও শেষ ১০ দিন নাজাত।
ইতোমধ্যে রহমতের ১০ দিনের তিনটি দিন পার হলে গেল। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে রোজা আদায় করছেন। কিন্তু রোজার পবিত্রতা, কী কারণে রোজা ভঙ্গ হয় তা আমাদের অনেকের কাছে অজানা।
এখানে রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ তুলে ধরা হলো যাতে, ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা সঠিকভাবে আমল করতে পারেন এবং রোজা রেখে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন।
রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ-
রোজা রাখা অবস্থায় কেউ ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে, স্ত্রী সহবাস করলে, কুলি করার সময় হলকের নিচে পানি চলে গেলে (অবশ্য রোজার কথা স্মরণ না থাকলে রোজা ভাঙবে না), ইচ্ছাকৃত মুখভরে বমি করলে, নস্য গ্রহণ করলে, নাকে বা কানে ওষুধ বা তেল প্রবেশ করালে, জবরদস্তি করে কেউ রোজা ভাঙালে, ইনজেকশন বা স্যালাইনের মাধ্যমে ওষুধ নিলে, কংকর পাথর বা ফলের বিচি গিলে ফেললে, সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে ইফতার করার পর দেখা গেল সূর্যাস্ত হয়নি, পুরা রমজান মাস রোজার নিয়ত না করলে, দাঁত হতে ছোলা পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য গিলে ফেললে, ধূমপান কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে লোবান বা আগরবাতি জ্বালায়ে ধোয়া গ্রহণ করলে, মুখভর্তি বমি গিলে ফেললে, রাত্রি আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর পানাহার করলে।
রোজা রাখা অবস্থায় বমি হলে রোজা ভেঙে গেল কি না মুসল্লিা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এ প্রসঙ্গে সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যার মাহে রমজানে আপনা আপনি বমি এসে যায়, তার রোজা ভাঙে না। আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বমি করে তার রোজা ভেঙে যাবে। (কানযুল উম্মাল, ৮ম খন্ড, ২৩০ পৃষ্ঠা)
প্রসিদ্ধ হাদিসগ্রন্থ তিরমিযী শরীফের ২য় খণ্ডের ১৭৩ পৃষ্ঠায় এ প্রসঙ্গে আরেকটি হাদিস রয়েছে, এতে রাসুল (সা.) বলেছেন, যার আপনা আপনি বমি এসেছে তার উপর কাযা নেই। আর যে জেনে বুঝে বমি করেছে, সে কাযা করবে।
বাহারে শরীয়তের ৫ম খণ্ডের ১১৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, হুক্কা, সিগারেট, চুরুট ইত্যাদি পান করলে রোজা ভেঙে যায়, যদিও নিজের ধারণা কণ্ঠনালী পর্যন্ত ধোঁয়া পৌছেনি।
এতে আরো বলা হয়, পান কিংবা তামাক খেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। যদিও আপনি সেটার পিক বারবার ফেলে দিয়ে থাকেন। কণ্ঠনালীতে সেগুলোর হালকা অংশ অবশ্যই পৌঁছে থাকে। এ ছাড়া চিনি কিংবা এমন খাবার জিনিস যা মুখে রাখলে গলে যায়, তাহলেও রোজা ভঙ্গ হবে।
দুররে মুখতার গ্রন্থে তৃতীয় খণ্ডের ৩৯৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, দাঁতের মাঝখানে অসাবধানতাবশত থাকা কোনো জিনিস ছোলা বা বুটের সমান কিংবা তার চেয়ে বেশি কিংবা কম ছিল, এমন দ্রব্য মুখ থেকে বের করে আবার খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে।
এতে আরো বলা হয়, দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে তা কণ্ঠনালীর নিচে নেমে গেলে, আর ওই রক্ত থু থু অপেক্ষা কম-বেশি কিংবা সমান হলো কিন্তু এর স্বাদ কণ্ঠে অনুভূত হলে রোজা ভেঙে যাবে। আর যদি স্বাদ অনুভূত না হয় তাহলে রোজা ভাঙবে না।
ফতোয়ায়ে আলমগীরীর প্রথম খণ্ডের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, রোজা রাখা অবস্থায় কেউ ইচ্ছা করে নাকের ছিদ্র দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করালো, তার রোজা ভেঙে যাবে।
আলজাওয়াতুন নাইয়ারাহ এর ১ম খণ্ডের ১৭৮ পৃষ্ঠায় বলা আছে, কুলি করা অবস্থায় অনিচ্ছাসত্ত্বেও পানি কণ্ঠনালী বেয়ে নিচে নেমে গেলে, কিংবা নাকে পানি দিলে তা যদি মগজে পৌঁছে, যায় তাহলে রোজা ভাঙবে না।
ওই গ্রন্থে আরো বলা হয়েছে, ঘুমন্ত অবস্থায় পানি পান করলে, কিছু খেয়ে ফেললে, কিংবা মুখ খোলা অবস্থায় পানির ফোটা বা বৃষ্টির পানি কণ্ঠে চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে।
দু-এক ফোটা চোখের পানি মুখের ভেতরে চলে গেলে, আর সেটা গিলে ফেললে রোজা ভাঙবে না, তবে যদি ফোটার পরিমাণ বেশি হয়, আর তাতে লবণাক্ততা অনুভূত হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (ফতোয়া আলমগীরী- ১ম খন্ড ২০৩ পৃষ্ঠা)
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ঈদের ছুটির পর বুধবার থেকে নতুন অফিস সময়সূচি
পবিত্র ঈদুল আজহার পর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিতবিস্তারিত পড়ুন
সৌদিতে হজে বিভিন্ন দেশের ৫৫০ হাজির মৃত্যু
সৌদি আরবে এ বছর হজ পালনে গিয়ে কমপক্ষে ৫৫০ জনবিস্তারিত পড়ুন
ঈদে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ টি গবাদিপশু কোরবানি
এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট ১ কোটি ৪বিস্তারিত পড়ুন