রমজানে ‘রোজার কাফফারা’
মাহে রমজানের চৌদ্দ রোজা আজ। দেখতে দেখতে বিদায় নিচ্ছে মাগফিরাতের বরকতময় দিনগুলি।
রমজানে শরীয়তসম্মত কারণ ছাড়া রোজা ভেঙে ফেলা হলে ‘কাযা’ তো দিতে হবে, সে সঙ্গে বান্দাকে বিভিন্ন কারণে কাফফারাও দিতে হবে। অন্যথায় ‘ফরজ’ ছেড়ে দেওয়ার কারণে বান্দা মহাপাপী হবেন।
ইতিপূর্বে আমরা রোজার কাযা, রোজার মাকরূহ, রোজা ভঙের কারণসমুহ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেছি। আজ রোজার কাফফারা নিয়ে আলোকপাত করবো।
সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা (রাদি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে বললো, এই হতভাগা রমজানে স্ত্রী সহবাস করেছে। তিনি (রাসূলুল্লাহ) ওই ব্যক্তিকে বললেন, তুমি কি (কাফফারা) একটি গোলাম আযাদ করতে পারবে? লোকটি বললো, না। তিনি বললেন, তুমি কি ক্রমাগত দুমাস রোজা পালন করতে পারবে? লোকটি বললো, না। তিনি বললেন, তুমি কি ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে? সে বললো, না। এসময় রাসূল (সা.) এর নিকট এক ঝুড়ি খেজুর এলো। নবী (সা.) বললেন, এগুলো তোমার তরফ থেকে লোকদেরকে খাইয়ে দাও ..। (সহিহ বুখারী, ৩য় খণ্ড)
রোজার কাফফারা দেওয়ার পদ্ধতি :
রোজা ভাঙার কারণে কাফফারা হচ্ছে– একজন বাদী (ক্রিতদাসী) কিংবা একজন দাস (ক্রিতদাস) আযাদ (মুক্ত) করে দেওয়া। এখন যেহেতু দাস দাসী পাওয়া যায় না, কিংবা তার দাস-দাসী মুক্ত করার মত যদি টাকা পয়সা না থাকে তাহলে তাকে ধারাবাহিকভাবে দুমাস তথা ষাটটি রোজা রাখতে হবে।
রোজা রাখার সময় (কাফফারা আদায়কালে) মাঝখানে একটা রোজা ছুটে গেলে কাফফারা আদায় হবে না। বরং তাকে আবারো ষাট রোজা শুরু করতে হবে এবং ধারাবাহিকভাবে তা আদায় করতে হবে। তবে রোগাক্রান্ত কিংবা শরিয়ত সম্মত অপারগতার কারণে রোজা ছুটে গেলে কিংবা হায়েয নেফাস হলে এক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা ভঙ্গ হলেও কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। অবশ্য পরবর্তী যথানিয়মে রোজা আদায় করতে হবে।
যদি দুমাস বিরতিহীন রোজা রাখা সম্ভব না হয় তাহলে ষাটজন মিসকীনকে দুবেলা পেটভরে খাবার খাওয়াতে হবে। তবে এক্ষেত্রে যে ষাটজনকে একবেলা খাবার খাওয়ানো হয়েছে তাদেরকেই দ্বিতীয় বেলা খাবার খাওয়াতে হবে। অথবা ষাটজন মিসকীনকে একেকটা সাদকায়ে ফিতর অর্থাৎ প্রায় দুই কিলো থেকে আশি গ্রাম কম পরিমাণ গম অথবা এর মূল্য দিয়ে দিতে পারবে। তবে একজনকে একত্রে ষাটজনের সদকা দিয়ে দিলে রোজার কাফফারা আদায় হবে না।
যেসব কারণে রোজার কাফফারা আদায় করতে হবে :
মাহে রমজানে কোনো বিবেকবান, বালেগ ও মুকীম (মুসাফির নয়) রোজা আদায় করার নিয়্যতে রোজা রাখলো, আর জেনেবুঝে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করলো, তাহলে তার জন্য রোজার কাযা হিসেবে রোজা রাখতে হবে, সেই সঙ্গে রোজার কাফফারাও আদায় করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খণ্ড)
রোজাদার শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া কোনো কিছুর স্বাদ গ্রহণ করলো কিংবা ওষুধ খেলো, এমতাবস্থায় রোজার কাযা ও কাফফারা আদায় করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খণ্ড)
রোজা ভাঙলে কাফফারা অপরিহার্য হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে রাত থেকেই রমজানের রোজার নিয়্যত করে নেওয়া। যদি দিনে নিয়্যত করে এবং ভেঙে ফেলা হয় তাহলে কাফফারা অপরিহার্য নয়, শুধু কাযা দিলে হবে। (আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, ১ম খণ্ড)
স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ হবে না, এটা জানার পরও রোজাদার যদি আহার করে নেয় তবে কাফফারা অপরিহার্য। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খণ্ড)
রোজাদার নিজের থুথু ফেলে পুনরায় তা চেঁটে নিলে কিংবা অপরের থুথু গিলে ফেললে রোজার কাফফারা অপরিহার্য। (ফতোয়া আলমগীরী, ১ম খণ্ড)
কাঁচা চাল, ভুট্টা, মুগডাল ও কাঁচা যব খেলে রোজার কাফফারা দিতে হবে না বরং ভুনা হলে দিতে হবে। (ফতোয়া আলমগীরী, ১ম খণ্ড)
সেহেরির লোকমা মুখে ছিলো এমন সময় সুবহে সাদিক হয়ে গেছে তথা আযান দিয়ে দিলো কিংবা আযান দেয়নি ভুলে খাচ্ছিল হঠাৎ মনে পড়লো আযান তো হয়ে গেছে এমতাবস্থায় যদি খাবার গিলে ফেলে তাহলে কাযার সঙ্গে রোজার কাফফারা দিতে হবে। (ফতোয়া আলমগীরী, ১ম খণ্ড)
বর্তমান সময়ে মুসলমানদের অনেকেই রোজা রাখেন না, রোজা রাখলেও আবার বিনা কারণে ভেঙে ফেলেন কিন্তু পরে কাযা দেন না, কাফফারাও আদায় করেন না। তাহলে বড় গুনাহগার হবেন।
আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে শরিয়ত সম্মতভাবে রাজা রাখার এবং এর গুনাহ থেকে মুক্ত থাকার তওফিক দিন… আমীন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ঈদের ছুটির পর বুধবার থেকে নতুন অফিস সময়সূচি
পবিত্র ঈদুল আজহার পর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিতবিস্তারিত পড়ুন
সৌদিতে হজে বিভিন্ন দেশের ৫৫০ হাজির মৃত্যু
সৌদি আরবে এ বছর হজ পালনে গিয়ে কমপক্ষে ৫৫০ জনবিস্তারিত পড়ুন
ঈদে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ টি গবাদিপশু কোরবানি
এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট ১ কোটি ৪বিস্তারিত পড়ুন