রোজাদারকে ইফতার করালে অনেক সওয়াব
রমজান হচ্ছে অল্প ইবাদত করে অধিক সওয়াব অর্জনের এক সুবর্ণ সুযোগ। এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করা আমাদের সবার কর্তব্য। এমন সুযোগ হাতছাড়া করা মোটেই উচিত নয়। বিশেষত রমজানে রোজাদারকে ইফতার করানো একটি বড় সওয়াবের কাজ।
বিভিন্ন হাদিসে রোজাদারকে ইফতার করানোর অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হজরত যায়দ ইবনে খালিদ জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেউ যদি রোজাদারকে ইফতার করায় তবে তারও একই সওয়াব হবে। তবে এতে রোজাদারের সওয়াবের কোনো ঘাটতি হবে নাG (তিরমিযি)
অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত- যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গোনাহ মাফ হবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে এবং সে ওই রোজাদারের সমান সওয়াব পাবে। এতে ওই রোজাদারের সওয়াবে কোনো ঘাটতি হবে না। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের সবার তো আর রোজাদারকে ইফতার করানোর মতো সামর্থ্য নেই। রাসূল (সা.) ইরশাদ করলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে খেজুর, পানি অথবা সামান্য দুধ দিয়ে ইফতার করাবে মহান আল্লাহ তাকেও এই সওয়াব দেবেন। (ইবনে খুজায়মা, বায়হাকি)
এই হাদিস আমাদের সবার জন্যই অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। কারণ এই হাদিসের আলোকে দেখা যাচ্ছে, আমরা সবাই রোজাদারকে ইফতার করানোর সওয়াব অর্জন করতে পারি। কারও জন্য এই সওয়াব অর্জন করা কঠিন বিষয় নয়। এটা শুধু সামর্থ্যবানদের জন্যই নয়, বরং ধনী-দরিদ্র সবার জন্য এটা একটা সহজ নেকি। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার। ইচ্ছা করলেই আমরা এই অশেষ সওয়াব অর্জন করতে পারি।
কিন্তু এই অতি সহজ নেক আমলটির প্রতিই আমরা গাফিলতি করি। সারা বছর যেমন আমাদের সমাজে চরম বৈষম্য বিরাজ করে রমজানেও এর ব্যতিক্রম হয় না। ধনীরা তাদের ইফতারিতে অনেক অর্থই ব্যয় করেন। ভোজনবিলাসীদের ইফতার আয়োজন রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেয় সমাজের সাধারণ মানুষকে। অভিজাত হোটেলগুলোতে তৈরি হয় অনেক মুখরোচক ইফতারি। ধনীরা এসব দামি ইফতারি প্রায় প্রতিদিনই কেনেন। ধনীদের বাসায়ও রকমারি ইফতারি তৈরি হয়। সব মিলিয়ে সামর্থ্যবানদের ইফতারে অনেক ধুমধাম লক্ষ্য করা যায় প্রতি রমজানে।
কিন্তু দরিদ্র শ্রেণীর ক্ষেত্রে এর সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র পরিলক্ষিত হয় বরাবরই। অনেক হতদরিদ্রের কপালে সামান্য ইফতারিও জোটে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই দুর্দিনে ইফতারে আলাদা অর্থ ব্যয় করার মতো সামর্থ্য নেই অনেক গরিব মানুষের। তারা ইফতারির আলাদা আয়োজন না করে ইফতারের সময় রাতের খাবার খাওয়াতেই সাশ্রয় মনে করে। এ ধরনের দরিদ্র শ্রেণীর কথা ধনীদের বিবেচনায় রাখা উচিত। তাদের ইফতার কিনে দেয়া বা ইফতারের জন্য আর্থিক সাহায্য করা ধনীদের নৈতিক দায়িত্ব। ধনীরা যখন ব্যয়বহুল ইফতার করেন তখন হতদরিদ্রদের কথা একটু স্মরণ রাখাও যে রমজানের মহান শিক্ষা তা মোটেই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। গরিব মানুষ সারাদিন রোজা রেখে যেন তৃপ্তির সঙ্গে ইফতার করতে পারে সেদিকে ধনীদের নজর দিতে হবে।
আরেকটি বিষয়ের প্রতি আমাদের গুরুত্ব দেয়া একান্ত জরুরি। রমজানে অনেক ধার্মিক মুসাফির ও পথচারীকে ইফতারের জন্য বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। হোটেল-রেস্তোরাঁয় অনেকেই ইফতার করতে সংকোচবোধ করেন। অনেক জায়গায় রুচিসম্মত হোটেল-রেস্তোরাঁও থাকে না। অনুকূল ও পছন্দসই পরিবেশের অভাবে মুসাফির ও পথচারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ইফতার করতে পারেন না। অনেকে ইফতারের জন্য মসজিদেই যান। কিন্তু সেখানেও ইফতারের পরিবেশ থাকে না। হোটেল থেকে ইফতার কিনে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। অথচ একটি মুসলিম দেশে মসজিদে মসজিদে ইফতারির আয়োজন থাকার কথা ছিল।
আমাদের বাল্যকালে বরাবর মসজিদে ইফতারির ব্যাপক আয়োজন দেখেছি। এলাকাবাসী মসজিদে এত ইফতারি পাঠাতেন যে, মসজিদের লোকেরা অনেক ক্ষেত্রেই তা খেয়ে শেষ করতে পারতেন না। বিশেষত গ্রামের লোকেরা প্রত্যেকেই সামান্য হলেও মসজিদে ইফতারি পাঠানোকে নিজেদের কর্তব্য মনে করতেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এখন এই রেওয়াজ নেই বললেই চলে।
আমি ২০১৪ সালে রমজানে চিকিৎসার জন্য ভারত গিয়েছিলাম। কলকাতায় জাকারিয়া স্ট্রিটের নাখোদা মসজিদে ইফতারির সময় গিয়ে রীতিমতো তাজ্জব বনে গেলাম। বিশাল মসজিদ লোকে লোকারণ্য। সবার জন্যই মানসম্পন্ন ইফতারির আয়োজন। ভাবলাম, প্রতিদিন এত ব্যয়বহুল আয়োজন কিভাবে হয়। পরে বুঝতে পারলাম, আশপাশের ব্যবসায়ীরাই মসজিদে ইফতারি কিনে পাঠান। সবাই আগ্রহী। ফলে কারও জন্য বোঝা হয় না।
বাংলাদেশে কি এ ব্যবস্থা করা যায় না? মুসাফির, পথচারী ও দরিদ্রদের জন্য মসজিদে মসজিদে ইফতারির আয়োজন করতে এলাকাবাসী সবাই মিলে উদ্যোগ নিলে এটা তেমন কোনো কঠিন বিষয় হবে না।
তথাকথিত লোক দেখানোর প্রচারসর্বস্ব প্রথাগত ইফতার পার্টির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দল কিন্তু প্রতি রমজানেই প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকে। সেসব ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণকারী অনেকে রোজাই রাখেন না। নামাজও পড়েন না। সুতরাং সত্যিকারের ধর্মপ্রাণ মুসাফির, পথচারী ও দরিদ্র রোজাদারদের জন্য কি আমরা সবাই মিলে মসজিদে মসজিদে ইফতারের আয়োজন করতে পারি না?
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ঈদের ছুটির পর বুধবার থেকে নতুন অফিস সময়সূচি
পবিত্র ঈদুল আজহার পর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিতবিস্তারিত পড়ুন
সৌদিতে হজে বিভিন্ন দেশের ৫৫০ হাজির মৃত্যু
সৌদি আরবে এ বছর হজ পালনে গিয়ে কমপক্ষে ৫৫০ জনবিস্তারিত পড়ুন
ঈদে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ টি গবাদিপশু কোরবানি
এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট ১ কোটি ৪বিস্তারিত পড়ুন