রোজায় রাত্রিকালীন ইবাদত
রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে ক্বিয়ামুল লাইল বা রাত্রিকালীন ইবাদতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি এ মাসে এত বেশি ইবাদত করতেন যে তার চেহারা মোবারকের রং পরিবর্তন হয়ে যেত।
ক্বিয়ামুল লাইল করলে গুনাহ মাফের নিশ্চয়তা রাসূলুল্লাহ (সা.) দিয়েছেন। বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক রমজান মাসের রোজা তোমাদের উপর ফরজ করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তার জীবনে রাত্রিকালীন নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদ নামাজই বেশি পড়েছেন। রাতের শেষভাগে তারাবিহ আদায় করেছেন। এ জন্যই অনেকে রাতের শেষভাগে তারাবিহ আদায় করাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি পূর্ণ ঈমান সহকারে এবং গুনাহ মাফের আশায় এ মাসে রোজা রাখে ও ক্বিয়ামুল লাইল করে, তাহলে সে এমন নিষ্পাপ হয়ে যায়, যেমন নিষ্পাপ তার মা তাকে প্রসব করেছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে পূর্ণ ঈমান সহকারে ও গোনাহ মাফের আশায় ইবাদত করবে তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। এ মাসে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও ক্বিয়ামুল লাইল করেছেন এবং আমাদেরও তা করতে বলেছেন। রাত্রিকালীন ইবাদত তারাবিহ নামাজ বা অন্য নামাজও হতে পারে।
তারাবিহ নামাজে কুরআন খতম করার রেওয়াজ সারা দুনিয়ায় আছে। কুরআন নাজিলের মাসে প্রতি রমজানে তারাবিহর মাধ্যমে কুরআন অন্তত এক খতম হয়। তারাবিহ নামাজে সুললিত কণ্ঠে হৃদয়গ্রাহী করে সহিহ শুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত।
আমাদের মনে রাখা উচিত নামাজে যত বেশি সহিহ শুদ্ধ করে কুরআন তেলাওয়াত করা হবে, আমাদের নামাজ তত বেশি সহিহ শুদ্ধ হবে।
মাঝখানে কয়েক বছর সাহাবীরা তারাবিহ ব্যক্তিগতভাবে বা ছোট ছোট জামাত আকারে আদায় করেছেন। হযরত ওমর রা. ছোট ছোট জামাতের প্রথা বিলুপ্ত করে একসঙ্গে তারাবিহ নামাজ পড়ার আদেশ দেন। হযরত ওমর রা. মনে করলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) যেহেতু আট রাকাত জামাতের সঙ্গে এবং বাকি বার রাকাত ব্যক্তিগতভাবে পড়েছেন, তাই (আট+বার) বিশ রাকাত নামাজই পড়া দরকার।
তাই তিনি বিশ রাকাত নামাজ কেন্দ্রীয়ভাবে বা সবাই সম্মিলিতভাবে আদায় করার জন্য হযরত উবাই ইবনে কাবকে ইমাম নিযুক্ত করেন।
তৎকালীন কোনো সাহাবায়ে কেরাম এর বিরোধিতা করেননি। বরং সব সাহাবায়ে কেরামের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই তা হয়েছে। হযরত ওসমান রা. এবং হযরত আলীর রা. শাসনামলেও এর অনুসরণ করা হয়। তিনজন খলিফার একমত হওয়া এবং সাহাবায়ে কেরামগণের ভিন্নমত পোষণ না করার কারণে বলা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সময় থেকে তা বিশ রাকাত পড়ার অভ্যাস ছিল।
ইমাম আবু হানিফা (র.), ইমাম শাফেয়ী (র.) ও ইমাম আহমদ (র.) তারাবিহ বিশ রাকাত পড়তেন। তবে আহলে হাদিসের লোকজন আট রাকাতের পক্ষে। তারা আট রাকাতকেই প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত বলে মনে করেন। ইমাম মালেক (র.) ৩৬ রাকাতের পক্ষে। তিনি বলেন- শতাধিক কাল ধরে মদিনায় তিন রাকাত বেতর ও ৩৬ রাকাত তারাবিহ পড়ার প্রচলন ছিল।
ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তারাবিহ নামাজ ছত্রিশ (৩৬) রাকাত পড়তেন বলে জানা যায়। তৎকালীন অনেকে তা সাহাবায়ে কেরামের আমলের খেলাফ মনে করতেন না। কারণ মক্কাবাসীদের নিয়ম ছিল তারা চার রাকাত তারাবিহ নামাজ আদায় করে কাবা ঘর তওয়াফ করতেন। ইবনে আজিজ মক্কাবাসীদের সমান ছওয়াব পাওয়ার জন্য তওয়াফের পরিবর্তে আরো চার রাকাত নামাজ বেশি পড়তেন। কিন্তু সর্বশেষ তা আর টেকেনি।
কেউ কেউ তারাবিহ নামাজ ৬০ রাকাত ও বিতরসহ ৬৩ রাকাত পড়েছেন। তাদের যুক্তি হলো রাসুল বলেছেন, তোমরা রাতের নামাজ দুই রাকাত দুই রাকাত করে পড়তে থাকো। যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই রাকাত করে পড়তে বলেছেন কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করে যাননি, তাই যত রাকাত ইচ্ছা পড়া যাবে।
মসজিদে ইমাম সাহেব ফরজসহ যত রাকাত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করেন ঠিক তত রাকাত নামাজই ইমাম সাহেবের সঙ্গে আদায় করলে তাকে সারারাত ক্বিয়ামুল লাইলের ছওয়াব দেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ঈদের ছুটির পর বুধবার থেকে নতুন অফিস সময়সূচি
পবিত্র ঈদুল আজহার পর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিতবিস্তারিত পড়ুন
সৌদিতে হজে বিভিন্ন দেশের ৫৫০ হাজির মৃত্যু
সৌদি আরবে এ বছর হজ পালনে গিয়ে কমপক্ষে ৫৫০ জনবিস্তারিত পড়ুন
ঈদে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ টি গবাদিপশু কোরবানি
এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট ১ কোটি ৪বিস্তারিত পড়ুন