রোহিঙ্গা নির্যাতন ধর্মীয় নয়, জাতিগত
মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। দীর্ঘ নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি তারা ফের নির্যাতিত হচ্ছে বলে গণমাধ্যমের খবর। এদিকে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বাংলাদেশের জন্যও আলোচিত বিষয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সীমান্ত খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। এর আগে থেকেই বাংলাদেশে অনেক রোহিঙ্গা আশ্রিত আছে। মিয়ানমার তাদের দেশকে রোহিঙ্গামুক্ত করতে চায়, এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ না করে স্রেফ বাংলাদেশকে আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানানো আদতে মিয়ানমারের পক্ষেই যায়। কারণ মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে স্থান দিতে রাজি নয়, তাদের দাবি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি; মিয়ানমারের নাগরিক নয়।
মানবিক দিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। এবারও যদি বাংলাদেশ সকল রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয় তাহলে প্রকৃতপক্ষে রোহিঙ্গামুক্ত হবে মিয়ানমার, যা তাদের দীর্ঘ পরিকল্পনার ফসল। জাতিসংঘ এখনও কোনো উদ্যোগ নেয়নি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব প্রদান সম্পর্কিত চাপ সৃষ্টি করতে।
এদিকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চলা নিপীড়নের প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে ফেলেছে, কিছু রোহিঙ্গাকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ফেরত পাঠিয়েছে। তবু রাতের আঁধারে অনেকেই বাংলাদেশে ঢুকে যাচ্ছে।
এই মুহূর্তে নতুনভাবে বাংলাদেশ আরও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবে না বলে জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ অভিমুখে অনবরত ঢলের কারণে বাংলাদেশ সীমান্তে বেশ চাপ পড়ে গেছে বলে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে তাদের দেশের আভ্যন্তরীণ শান্তিরক্ষার ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে ঠিক কত রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে এবং কতজন অবৈধভাবে আছে তার প্রকৃত তথ্য আলোচনায় আসে না। সরকারি হিসাবের বাইরে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করে। অনেকেই আবার নিজেদের পরিচয় গোপন করে এদেশের পাসপোর্ট পর্যন্ত করে ফেলেছে বলে গণমাধ্যমের খবর। কয়েক বছর আগে রামুর বৌদ্ধ বিহারে হামলার ঘটনায় রোহিঙ্গারাও জড়িত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। ধর্মের দিক থেকে রোহিঙ্গারা মুসলিম হওয়ার কারণে খিলাফতের স্বপ্ন দেখিয়ে এদেশিয় জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকরা এদেরকে দলে ভেড়াচ্ছে বলে জোর অভিযোগ। অর্থের লোভ ও খিলাফত এ দুই যখন এক বিন্দুতে মিলিত হচ্ছে তখন অবৈধ বসবাসী রোহিঙ্গাদের অনেকেই সে পথে পা বাড়াচ্ছে।
এটা ঠিক যে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার অনুরোধ রক্ষা করলে এদের জন্যে তহবিলের ব্যবস্থা করবে সংস্থাটি। এরকমই রীতি, শরণার্থীদের জন্যে যে আন্তর্জাতিক তহবিল প্রবাহ রয়েছে তার সদ্ব্যবহার করার দায়িত্ব এক্ষেত্রে বাংলাদেশের। এজন্যে দরকার হয় জোর কূটনৈতিক তৎপরতা, আগে থেকে যারা বাংলাদেশে শরণ নিয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হয়তো তহবিল আদায় করতে পারেনি বলে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এখন বোঝা হয়ে আছে আর্থিক ও নিরাপত্তাজনিত দু’দিক থেকেই। তাই আশ্রয় না দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্তটা এসেছে তাৎক্ষণিক। যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক নিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঘণ্টা ব্যাপী কূটনীতিকদের ব্রিফ করে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের কিছু অংশকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এসব রোহিঙ্গাকে আপাতত শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে না। একই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মিয়ানমার যেভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এসেছে, সেখানে এই ধরনের সমস্যা তৈরি হয় দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে। এটি অবশ্যই সমাধান করা সম্ভব। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধানই হলো একমাত্র পথ’।
গত ক’বছরে এবং বর্তমানে যে হারে এবং যে প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে সেক্ষেত্রে ওই এলাকায় সর্বক্ষেত্রে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ কতখানি থাকবে সেটাও প্রশ্নের। কারণ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয়টি গত কয়েক বছরে একপ্রকার নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা প্রবেশের চেষ্টা করছে, কিছু ধরা পড়লে তাদেরকে ফেরত দেওয়া হচ্ছে; আর সবাই যে ধরা পড়বে সেটাও না। এমন অবস্থায় অবৈধ অনুপ্রবেশ চলছে, যার ওপর আদতে কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলা নির্যাতন নিয়ে বিশ্বনেতারা খুব বেশি যে উদ্বিগ্ন সেটাও নয়। বর্তমানে তাদের ওপর ফের নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও জাতিসংঘ মিয়ানমার সরকারকে কিছু না বলে বাংলাদেশকে উদ্দেশ্য করে সীমান্ত খুলে রাখার আহবান জানাচ্ছে। এটা নিপীড়নের শিকার জনগোষ্ঠীর প্রতি সুবিচার হতে পারে না। ভিটে ছাড়া মানুষ কোথাও সুখী থাকতে পারে না, আর অন্য দেশে শরণ নেওয়া মানুষের ক্ষেত্রে সুখী জীবনের আশা করাটাই অবাক কল্পনা। জাতিসংঘ ঠিক সে কাজটাই গুরুত্ব দিয়ে করছে অথচ নির্যাতনের প্রতিবিধানকল্পে তাদের উদ্যোগী হওয়ার দরকার ছিল প্রথমেই।
রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ আলোচনায় এলেই বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে যায়। রোহিঙ্গারা ধর্মের দিক থেকে মুসলিম এটা ঠিক, কিন্তু কেবলই তাদের ধর্মের জন্যে তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সেটা সত্য নয়। পুরো মিয়ানমারে রোহিঙ্গারাই কেবল মুসলিম তা না, খোদ রাজধানী রেঙ্গুনসহ অন্যান্য শহরেও মুসলিমদের বাস; কই তাদের ওপরতো এমন নির্যাতন হচ্ছে না। সুতরাং এ নির্যাতনের মূল কারণ ধর্ম নয়, রোহিঙ্গা পরিচয় এ নির্যাতনের কারণ; তার ওপর এদেরকে দেশটি নাগরিকত্ব দিতেই রাজি নয়।
নৃতাত্ত্বিক এ জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমার তাদের দেশে স্থান দিতে চায় না এটা যতটা না ধর্মের ভিত্তিতে তারচেয়ে বেশি জাতিগত বিদ্বেষ। আদিবাসীদের ওপর বিশ্বের অধিকাংশই ক্ষমতাশালীরা খড়গহস্ত রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই মুহূর্তে বার্মিজরা রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করতে চাইছে, একটা সময়ে এরা সকলেই দেশ ছাড়লে চাকমা, রাখাইনসহ সকল অবার্মিজদের উপর নির্যাতন চালিয়ে দেশছাড়া করে বার্মিজ গোষ্ঠীর মিয়ানমার প্রতিষ্ঠা করবে।
রোহিঙ্গাদের মধ্যে মুসলিম জাতীয়তাবাদী হওয়ার এক ধরনের প্রবণতা রয়েছে, এবং বিশ্বে তাদের প্রতি যারা সহানুভূতিশীল তারা ধর্মকার্ড খেলার কারণে মিয়ানমারের পক্ষে এ নির্যাতন চালানো অনেকটাই সহজ হয়ে যাচ্ছে। মুসলিম জাতীয়তাবাদী চিন্তার লোকজন একে ব্যবহার করছে আবেগ আর ধর্মানুভূতির বশে, ফলে সারাবিশ্বে ব্যাপারটি নাড়া দিতে পারছে বলে মনে হয় না। ধর্মভিত্তিক এমন প্রচারের কারণে রোহিঙ্গারা বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ইসলামী মৌলবাদের ধারক বলে প্রচারের পথ উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। আর এতে রোহিঙ্গারা যতই নিপীড়িত হোক না কেন মানবতার এমন বিপর্যয় সত্ত্বেও বিশ্ব খুব সহজেই ব্যাপারটিকে অবজ্ঞা করতে পারছে। এর প্রমাণটাও তাই হাতেনাতে ‘ইউএনএইচসিআর’, নির্যাতিতদের প্রতি তারা তাদের দায় সারছে ভিনদেশকে আশ্রয় দেওয়ার আহবান জানিয়ে, নির্যাতককে কঠোরভাবে বলছে না নির্যাতন থামাও!
রোহিঙ্গারা ধর্মের দিক থেকে ইসলাম ধর্মের অনুসারি, মিয়ানমারের অধিকাংশ ধর্মের দিক থেকে বৌদ্ধ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের কিছু লোক বাংলাদেশে প্রচারণার ক্ষেত্রে ধর্মের আবরণ পরিয়ে দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ক’বছর ধরে বিশ্বের দেশে দেশে বিভিন্ন ঘটনার লোমহর্ষক ছবিকে রোহিঙ্গাদের উপর চালানো নির্যাতন বলে এক ধরনের প্রচারণা চলছে অনলাইন-জুড়ে। এতে করে প্রকৃত সত্য আড়ালে পড়ে যাচ্ছে মিথ্যা প্রচারণার মুখোমুখি হয়ে। হতে পারে সাম্প্রতিক নির্যাতন এমন অথবা এর চাইতে বেশি অমানবিক ও লোমহর্ষক, কিন্তু তাই বলে ভুয়া কিংবা অন্য কোনো জায়গার ছবি সামনে নিয়ে আসা কেন? এতে করে প্রকৃত নির্যাতনের কাহিনীই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। একটা মিথ্যা অন্য অনেক সত্যকে আড়াল করে দিচ্ছে সহজেই। এতে কার লাভ হচ্ছে আদতে?
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে নির্যাতিত হচ্ছে এটা সত্য, তবে এ সত্যপ্রকাশ করতে গিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার দরকার নাই। সত্য ছবিকে সামনে নিয়ে আসুন, মিথ্যা ছবিকে কেন সামনে আনবেন? মিথ্যা ছবি প্রকাশ করে কিছু অবুঝকে বিভ্রান্ত করা যায় কিন্তু সবাইকে সম্ভব হয় না। কারণ এখন অনলাইনে অনেক টুলস আছে যা দিয়ে ছবির প্রকৃত সূত্র বের করতে ইন্টারনেট এক্সপার্ট হতে হয় না; দু-একটা ক্লিকই যথেষ্ট!
আমাদের অনলাইন এখন কার্যত দুভাবে বিভক্ত। একদল দেখা যায় রোহিঙ্গাদের পক্ষে, আরেকদল বিপক্ষে। অনলাইনের বাইরে ইসলাম ধর্মের নামে গড়ে ওঠা কিছু রাজনৈতিক দলও একে ধর্মের আবরণ পরিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। হেফাজতে ইসলাম কিংবা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে মিয়ানমারের দূতাবাস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষিত হয়েছে। এর বাইরে রয়েছে প্রয়োজনে মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চ; আর এতে পুরো বিষয়টি ধর্মের আলখেল্লায় ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।
অনলাইন-অফলাইনের বিভিন্নজনের প্রতিক্রিয়া যাই হোক না কেন, আমার ব্যক্তিগত অবস্থান রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতনের বিপক্ষে। আমাদের দেশে আদিবাসী সাঁওতালরা নির্যাতিত হলে আমার মন যেমন কাঁদে, একইভাবে কাঁদে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাসহ বিশ্বের অপরাপর দেশে নির্যাতিতদের স্মরণ করে। আমি একটু বেশিই উৎকণ্ঠায় থাকি আমার দেশের আমার কাছের মানুষগুলো নিয়ে যারা নিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে। আমার উদ্বেগ অন্যদের জন্যেও থাকে কারণ আমার নিজের দেহের রক্তের রঙের সঙ্গে নির্যাতিতদেরও রঙ লাল বলে। এটা মানবিকতা। তাই মানবিকতার এ ডাককে আমি অস্বীকার করতে পারি না কোনোমতেই। তাই বিশ্বের যেখানেই মানবতা লঙ্ঘিত হয় সেখানেই আমার ব্যক্তিগত প্রতিবাদ, আর সংশ্লিষ্টদের প্রতি প্রতিবিধানের আকুল আবেদন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গারাও এর ব্যতিক্রম কিছু নয়!
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে এই মুহূর্তে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দিলেই সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তা না, এজন্যে দরকার মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ করা। এটা বাংলাদেশের সমস্যা না, এ সমস্যা বৈশ্বিক। সে হিসেবে জাতিসংঘ সহ বিশ্বনেতাদের এগিয়ে আসা দরকার। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে নারাজ এমন না, আগে থেকেই বাংলাদেশ তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে আসছে, প্রয়োজনে আরও দেবে, কিন্তু এই আশ্রয় গ্রহণ ও প্রদানই সকল সমস্যার সমাধান হতে পারে না। একে একে সকল রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রিত হয়ে গেলে মিয়ানমারের উদ্দেশ্যপূরণ হবে, নির্যাতনের মাধ্যমে একটা নৃগোষ্ঠীকে দেশছাড়া করারও নজির স্থাপন হয়ে যাবে। তাছাড়া যেসব রোহিঙ্গা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তারা কোনোভাবেই আর তাদের দেশে ফেরত যেতে রাজি নয়। ফলে বাংলাদেশের প্রবেশের বিষয়টি তাদের জন্যে ‘ওয়ানওয়ে ট্রাফিক’ হয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমার সরকার প্রকৃত অর্থে এমনটাই চায়!
রোহিঙ্গারা তাদের দেশে (যদিও মিয়ানমারে নাগরিকত্ব নাই তাদের) নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চায়, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিতে চায়- এমন অবস্থায় জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর পাশাপাশি বিশ্বনেতাদের সংশ্লিষ্ট করে মিয়ানমারের জন্যে শান্তির উদ্যোগ নিতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। প্রতিবেশি এক দেশের অশান্তি রোধকল্পে প্রথমে আঞ্চলিক পর্যায়ে এবং সেখানে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক ফোরামে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে পারে বাংলাদেশ।
বিশ্বে এক দেশ অন্য দেশের প্রতি বিভিন্নভাবে নির্ভরশীল। নির্ভরশীলতার এ প্রক্রিয়া ধনী-গরীব সকল দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আর মিয়ানমারের অর্থনৈতিক অবস্থা এমন না যে তারা প্রতিবেশি দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক চাপকে অবজ্ঞা করে। এটাকে সুযোগ হিসেবে নিতে পারে বাংলাদেশ। আর সে পথ ধরে বাংলাদেশই পারে আন্তর্জাতিক ফোরামে এ নিয়ে শক্ত ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে।
প্রশ্ন আসতে পারে বাংলাদেশ কেন উদ্যোগ নেবে? কারণ এক প্রতিবেশির অশান্তিতে অন্য প্রতিবেশিও আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশও হয়ে আসছে দীর্ঘ সময় ধরে। তাই ‘টেম্পোরারি সলিউশন’ নয় ‘পার্মানেন্ট সলিউশন’-এর দিকে দৃষ্টিপাত করুক বাংলাদেশ! সীমান্তে কিছুটা নমনীয় হয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হতে পারে ‘টেম্পোরারি সলিউশন’ কিন্তু এক্ষেত্রে ‘পার্মানেন্ট সলিউশন’ হতে পারে বিশ্ব-জনমতকে প্রভাবিত করা, আন্তর্জাতিক ফোরামের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া।
সারা বিশ্বকে বুঝাতে হবে রোহিঙ্গা ইস্যু ধর্মীয় কোনো বিষয় নয়, এটা জাতিগত সংঘাত। বিশ্ব যখনই জানবে ধর্ম এখানে মুখ্য নয়, তখনই হয়তো মিয়ানমারকে কঠিনভাবে বলতে পারবে ‘থামাও নির্যাতন’! এখন যেভাবে রোহিঙ্গা নির্যাতনকে অনেকেই ধর্মীয় বিদ্বেষ বলে উসকে দিতে চাচ্ছে, অথবা প্রচারণা চালাচ্ছে তাতে করে আলগা দরদ দেখাতে রোহিঙ্গাদের প্রতি অবিচারই করা হচ্ছে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। আমাদের কন্ঠস্বর -এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন