রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

র‍্যাব-পুলিশে দ্বন্দ্ব কেন?

এলিট ফোর্স র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও পুলিশের বিশেষায়িত শাখা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী দুই বাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে কেন চলে গেল তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। জঙ্গিবাদ ইস্যু ও ইতালিয়ান নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যাকাণ্ড নিয়ে এ দুই বাহিনীর দুই দায়িত্বশীল কর্মকর্তার দুই রকম বক্তব্য জনমনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এখনো তারা দুই মেরুতে এবং নিজ নিজ অবস্থানে অনড়। এমন অবস্থায় মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে, সন্দেহ নেই।

র‍্যাব ও পুলিশের এ দ্বন্দ্ব শুরুর বিষয়টি অনেক আগে থেকেই শুরু বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ। সম্প্রতি পুলিশের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগও করেছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক। সেখানে বলা হয়, এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তী সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী দুটি বাহিনীর বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এতে পুলিশ বাহিনী ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। পুলিশ-র‌্যাবের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক স্থাপনে সম্প্রতি ১০ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। ফলে ধারণা করা যায়, ভেতরে ভেতরে জল অনেক দূর গড়িয়েছে। যার প্রকাশ ঘটেছে উচ্চ পর্যায়ের দুই কর্মকর্তার বক্তব্যে। বিশেষ করে আব্দুর রহমান ওরফে সারোয়ার জাহান ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফের মৃত্যুর পরবর্তী র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে। এ জঙ্গি আশুলিয়ায় র‍্যাবের অভিযানের সময় বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং মারা যায়।

গত ২১ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ দাবি করে বলেন, নব্য জেএমবির আমিরের নাম আব্দুর রহমান ওরফে সারোয়ার জাহান ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ।’ তবে র‍্যাব প্রধানের এ দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়ে ২৬ অক্টোবর কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আব্দুর রহমান ওরফে সারোয়ার জাহান ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ দলটির তৃতীয় সারির নেতা ও অর্থদাতা। নারায়ণগঞ্জে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অভিযানে নিহত তামিম আহমেদ চৌধুরীকে নব্য জেএমবির প্রধান সমন্বয়ক বলেও তাঁর দাবি। এখানে লক্ষণীয় যে র‍্যাব মহাপরিচালক ও সিটিটিসি প্রধান দুজনই আব্দুর রহমানকে নব্য জেএমবির নেতা বলে স্বীকার করছেন, কিন্তু নেতৃত্ব ও অবস্থানের বিষয়ে তাঁদের পরিষ্কার ভিন্নমত। একজন যেখানে আব্দুর রহমানকে শীর্ষ নেতা দাবি করছেন, অন্যজন তাকে বলছেন তৃতীয় সারির নেতা এবং শীর্ষ নেতা তামিম আহমদ। অবশ্য গত জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর পুলিশ প্রথম থেকেই তামিমের কথা বলে আসছিল এবং তাঁকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কারেরও ঘোষণা দিয়েছিল।

এদিকে, কেবল আব্দুর রহমানের সংগঠনগত অবস্থানের দিক দিয়েই তাদের ভিন্নমত সীমাবদ্ধ থাকেনি, তারা নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিবিরোধী ওই অভিযানের সময়ক্ষণ নিয়েও দুই ধরনের তথ্য দিয়েছেন। নিজস্ব তথ্য-প্রমাণের হাজির করে র‌্যাব মহাপরিচালক দাবি করেন, অভিযান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তামিম দলটির (নব্য জেএমবি) আমির আব্দুর রহমানের সঙ্গে বিশেষ একটি অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। ২৭ আগস্ট রাত ২টা ২৩ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডে দুজনের মধ্যে মেসেজ আদান-প্রদান শুরু হয়। ভোর ৩টা ৩৯ মিনিট ৫ সেকেন্ড পর্যন্ত থেমে থেমে চলা ওই মেসেজে তামিম বিভিন্ন বিষয়ে আব্দুর রহমানের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা চান। আবার একই বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নারায়ণগঞ্জে তামিম চৌধুরীকে ঘিরে ফেলা হয় ২৭ আগস্ট সকাল সোয়া ৬টা থেকে ৬টা ২০ মিনিটের মধ্যে। এর আগে ঘিরে ফেলার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

নারায়ণগঞ্জের অভিযান সম্পর্কে দুই বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের এ ধরনের বক্তব্য কিছুটা হলেও পরস্পরবিরোধী মনে হয় এবং প্রমাণিত হয় তাঁরা উভয়েই নিজ নিজ বাহিনীর ক্রেডিট নেওয়ার জন্যে কিছুটা হলেও মরিয়া হয়ে অন্য বাহিনীর চাইতে নিজেরা একটু বেশি কর্মক্ষম ও সক্ষম প্রমাণে মরিয়া।

এমন অবস্থা কেন হলো- প্রশ্ন জাগাটাই তবে স্বাভাবিক!

পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, র‍্যাব গঠিত হয়েছিল পুলিশেরই এলিট ফোর্স হিসেবে। র‍্যাবের ওয়েবসাইটে গেলে দেখা যায় কী বিষয়ে তাদের নোটিস করা যাবে, আর কী বিষয়ে যাবে না। বড় বড় অপরাধ দমন তাদের কার্যপরিধির মধ্যে সন্নিবেশিত ও কিছু দৃষ্টান্ত থেকেই তা পরিষ্কার হয়। পুলিশের এ এলিট ফোর্স ৬ মার্চ ২০০৪ তারিখে জাতীয় স্বাধীনতা দিবস প্যারেডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনসাধারণের সামনে আত্মপ্রকাশ করে। প্রাথমিক অবস্থায় তারা কেবল তথ্য সংগ্রহ করত, এরপর প্রথম অপারেশনাল দায়িত্ব পায় ১৪ এপ্রিল ২০০৪ তারিখে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান-রমনা বটমূলে নিরাপত্তা বিধান করার জন্য। এরপর আবার র‌্যাব তথ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিল। গত ২১ জুন ২০০৪ সাল থেকে র‌্যাব ফোর্সেস পূর্ণাঙ্গভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করে।

র‌্যাব বিধি অনুসারে ৪৪ শতাংশ পুলিশ বাহিনী, ৪৪ শতাংশ সশস্ত্র বাহিনী, ৬ শতাংশ বিজিবি (অধুনা বিডিআর), ৪ শতাংশ আনসার ও ভিডিপি, ১ শতাংশ কোস্টগার্ড এবং সিভিল প্রশাসন থেকে ১ শতাংশ জনবল নিয়ে র‌্যাব গঠিত হওয়ার কথা। র‍্যাবে উচ্চপদে পুলিশের উপস্থিতি কম বলে একটা জোর প্রচারণা রয়েছে। এর বাইরে পুলিশ সদস্য ও সামরিক বাহিনী থেকে আসা কর্মকর্তাদের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনাও হয়েছে। পুলিশের অধীনে পুলিশেরই এ এলিট ফোর্স বড় কিছু অপারেশনাল কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কিন্তু অতি সম্প্রতি গঠন হওয়া টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) কিছু অপারেশনাল কার্যক্রম বিশেষ করে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সাফল্য ব্যাপকভাবে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়। এ কারণে পুলিশের এলিট ফোর্স ও পুলিশের বিশেষায়িত শাখা মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড়িয়ে গেছে বলেই মনে হয়। তা ছাড়া র‍্যাবের মহাপরিচালক স্বয়ং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশ কর্তৃক র‍্যাবকে হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন- যা দুই বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়।

এ মুখোমুখি অবস্থানের নেপথ্যে কি সাম্প্রতিক কিছু অভিযান পরবর্তী সময়ে উল্লেখিত ‘ক্রেডিট’ নেওয়ার মানসিকতা? তা না হলে দুই বাহিনী একই ঘটনা নিয়ে দুই রকম বক্তব্য দেবে কেন এবং তাও আবার প্রকাশ্যে, সংবাদ সম্মেলনে! এতে কি সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্নের জন্ম নিচ্ছে না? তা ছাড়া তারা যখন সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ হয়ে ওঠা জঙ্গিবাদ বিষয়ে কথা বলছেন তখন সত্যকথনই তাদের কাছ থেকে ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু একই বিষয়ে যখন দুই বাহিনী দুই রকমের বক্তব্য দেয় তখন নিশ্চিতভাবেই কেউ সত্য বলছে না, অথবা দুই পক্ষই সত্য থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। এমন অবস্থা বিভ্রান্তিকর- আর এ বিভ্রান্তি কেবল তাদের নিজেদেরই মূল পথের বাইরে যে ঠেলে দেবে না, তা বলবে কে?

এ তো গেল জঙ্গিবাদ বিষয়েই পুলিশ-র‍্যাবের দুই ধরনের বক্তব্য। এর বাইরে গুলশানে ইতালিয়ান নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন র‍্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ ও সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম। র‍্যাবের মহাপরিচালক যেখানে বলছেন তাভেলা হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিগোষ্ঠী অর্থাৎ নব্য জেএমবি জড়িত সেখানে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট প্রধান বলেছেন ওই হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিগোষ্ঠী নয়, বরং যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে তারা জড়িত। ইতিমধ্যেই এ মামলার চার্জশিট হয়েছে এবং চার্জশিটে বিএনপি নেতা কাইয়ুমসহ আরো সাতজনকে দায়ী করা হয়েছে।

তাভেলা সিজার নিয়ে এখানেই তাদের পরস্পরবিরোধিতা শেষ নয়। সিটিটিসি প্রধান এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, ‘ফৌজদারি তদন্ত পরিচালিত হয় সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে। এখানে রচনা বা ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ক করার সুযোগ নেই। তথ্য-প্রমাণ বা সাক্ষ্য-প্রমাণে যা আছে সেটিই করা হয়। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির সব নিয়ম মেনেই তদন্ত কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে একদল পেশাদার অফিসার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সাহায্য করছে। যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার কাজও শুরু হয়েছে।’ এতে দুই বাহিনীর সমন্বয়হীনতাই কেবল নয়, পরস্পরকে আক্রমণের একটা দৃশ্য ভেসে ওঠে।

র‍্যাব-পুলিশের এমন মুখোমুখি অবস্থানের বিপরীতে দাঁড়িয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, ‘র‌্যাব-পুলিশের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। র‌্যাব পুলিশেরই একটি ইউনিট। একটি পরিবারের মধ্যে আপন ভাইদের মধ্যেও মতবিরোধ হয়। র‌্যাব ও পুলিশের মধ্যে কোনো ধরনের মতবিরোধ হয়ে থাকলে সেটাও আপন ভাইদের মধ্যে মতবিরোধের মতোই। এ ধরনের মতবিরোধকে কোনোভাবেই দ্বন্দ্ব বলা যাবে না।’ একই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, র‌্যাব ও পুলিশের মধ্যে দ্বন্দ্ব নেই। কাজ করতে গেলে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। যা তারা নিজেরাই মিটিয়ে ফেলে।

এ প্রসঙ্গে স্মরণ করছি কেনেচি ওমেইকে; তিনি বলেছিলেন- when politician and bureaucrats say the situation is under control; it was first warning sign. অন্তত এ ক্ষেত্রে কেনেচি ওমেই যেন প্রযোজ্য না হন!

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?