শবে কদর এক মহিমান্বিত রজনী
শবে ক্বদর’ মুসলিম উম্মাহর কাছে অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি রজনীর নাম। এ রাতে গভীর আবেগে আপ্লুত হয় প্রত্যেকটি মুমিনের হৃদয়। বারোটি মাসের দীর্ঘ বিরতির পরে পাওয়া এ মহান রজনীতে মহান আল্লাহর করুণা লাভের আশায় ব্যাকুল হয়ে ওঠে সকল মুমিন মুসলমানের হৃদয়।
নামকরণ
ভারত উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজে শবে কদর নামটি অধিক প্রসিদ্ধ হলেও এর আসল ও কোরআন শরিফের পরিভাষায় এর নাম হলো লাইলাতুল কদর। শবে কদর নামটি ফার্সি ভাষা থেকে আগত। আরবি লাইলাতুল আর ফার্সি শব দুটি শব্দের অর্থই রাত। আর কদর শব্দটিও উভয় ভাষাতে অভিন্ন অর্থে ব্যহৃত হয়। আর তা হলো মহান, মর্যাদা, নির্ধারণ করা ইত্যাদি। এ রাতটির ইবাদতের ফজিলত সীমাহীন এবং এ রাতে মহান আল্লাহ সৃষ্টিকূলের আগামী এক বছরের ভাগ্যলিপি ফেরেশতাদের হাতে অর্পণ করেন বলে রাতটির নাম শবে কদর বা লাইলাতুল ক্বদর করা হয়েছে।
শবে কদরের বৈশিষ্ট্য ও মাহাত্ম্য
(১) পবিত্র কোরআন নাজিল : কদরের রাতে মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম পবিত্র কোরআন নাজিল করেন। (২) হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রেসালাত অর্জন কুদরতের রাতেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) প্রথম ওহি লাভ করেন এবং রেসালাত অর্জন করেন। এরশাদ হয়েছে,‘নিশ্চয়ই আমি ইহা (কোরআন) নাজিল করেছি কদরের রাতে। (সুরাতুল কদর : ১) (৩) হজরত জিবরাঈল ও রহমতের ফিরিশতাদের আগমন : হজরত জিবরাঈল (আ.) নবী ও রাসুলদের কাছে ঐশী বাণী নিয়ে পৃথিবীতে আসতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের মাধ্যমে নবুয়ত ও রেসালাতের ধারা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হজরত জিবরাঈলের পৃথিবীতে আগমনও বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বছরে একবার মাত্র কদরের রাতে আল্লাহর নির্দেশে রহমতের একদল ফেরেশতাকে সঙ্গে নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন। এরশাদ হয়েছে,‘এ রাতে ফিরিশতারা এবং রূহ (জিবরাইল আ.) প্রত্যেক কাজের জন্য তাঁদের পালনকর্তার নির্দেশসহ অবতীর্ণ হন।’ (সুরাতুল কদর : ৪) (৪) তাকদির লিখন : শবে কদরে সমগ্র সৃষ্টির আগামী এক বছরের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। অর্থাৎ লওহে মাহফুজ থেকে তা নকল করে ফেরেশতাদের হাতে অর্পণ করা হয়। সুরাতুল কদরের ‘মিন কুল্লি আমরিন’ অংশের তাফসিরে কাতাদাহ প্রমুখ মুফাসসিরগণ বলেন, এ রাতে যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং মানুষের হায়াত,মউত,রিজিক,দৌলত ইত্যাদি নির্ধারণ করা হয়। (ইবনে কাসির) (৫) ফিরিশতাদের দোয়া : হজরত ইমাম শা’বী (র.) লিখেছেন, লাইলাতুল কদরে ফেরেশতারা মসজিদবাসী মুমিনদের জন্য শান্তির দোয়া করতে থাকেন। (৬) কদরের পূর্ণ রাতটি কল্যাণময় : এরশাদ হয়েছে,‘রাতটি ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত কল্যাণময়।’ (সুরাতুল কদর : ৫)
শবে কদরের ফজিলত
লাইলাতুল কদরের ফজিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন,‘লাইলাতুল কদর সম্পর্কে তুমি কী জানো? কদরের রাত এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।’(সুরাতুল কদর : ২,৩) লাইলাতুল কদরের ফজিলত সম্পর্কে এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : এ মাসে এমন একটা রাত আছে যা এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয় সে সত্যিকারের কপাল পোড়া। (ইবনে কাসির) অর্থাৎ একটি মাত্র রাত ‘লাইলাতুল কদরের’ ইবাদতের সওয়াব একাধারে তিরাশি বছর ইবাদত করার চেয়েও বেশি।
শবে কদর কোন রাত? এ সম্পর্কে অনেক মতানৈক্য রয়েছে। তবে অধিকাংশ মুহাক্কিক এর মতো হলো,মাহে রমজানের শেষ দশ দিনের যে কোনো বেজোড় রাতে শবে কদর হতে পারে। আর এ মতোটাই দালিলিকভাবে বিশুদ্ধ বলে মনে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমরা রমজান মাসের শেষ দশ দিনে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো (সসিহ আল-বোখারী : ২০১৭, সহিহ মুসলিম : ১১৬৭, ইবনে মাজা : ১৭৬৬, সুনানে আবু দাউদ : ১৩৮১, মুসনাদে আহমাদ : ২৫৬৯০)
শবে কদরের আমল
কদরের রাতটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিন বান্দার জন্য বিশেষ এক উপহার। তাই ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সে সুযোটাকে কাজে লাগানোই মুমিনের কাজ। যে কোনো ইবাদতের মাধ্যমেই আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা যেতে পারে। অনেকে বলে থাকেন, শবে কদরে একশত রাকাত নফল নামাজ পড়তে হবে এবং প্রথম রাকাতে সুরা কদর এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পড়তে হবে। এটা একেবারেই ভুল এবং মূর্খ লোকদের কথা। নফল নামাজ কোনো সময়েই নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাত এবং নির্দিষ্ট সুরা দিয়ে পড়ার বাধ্যবাধকতা নেই।
শবে কদরের দোয়া
হজরত আয়েশা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! শবে কদর কোন রাত সেটা যদি আমি বুঝতে পারি তাহলে আমি তাতে কি দোয়া করব? তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, তুমি বলবে ,‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি’, অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। (জামে আত্-তিরমিজি : ৩৫১৩, সুনানে ইবনে মাজা : ৩৮৫০, আস্-সুনানুল কুবরা : ৭৬৬৫, মুসনাদে আহমাদ : ২৫৩৮৪, বায়াকি- শুআবুল ইমান : ৩৪২৬)
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ঈদের ছুটির পর বুধবার থেকে নতুন অফিস সময়সূচি
পবিত্র ঈদুল আজহার পর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিতবিস্তারিত পড়ুন
সৌদিতে হজে বিভিন্ন দেশের ৫৫০ হাজির মৃত্যু
সৌদি আরবে এ বছর হজ পালনে গিয়ে কমপক্ষে ৫৫০ জনবিস্তারিত পড়ুন
ঈদে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ টি গবাদিপশু কোরবানি
এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট ১ কোটি ৪বিস্তারিত পড়ুন