চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
শাটল ট্রেনে বগিভিত্তিক রাজনীতি চলছেই
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের ২২ জুলাই শাটল ট্রেনের ‘বগিভিত্তিক রাজনীতি’ নিষিদ্ধ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বীও দাবি করেন, ক্যাম্পাসে শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ হয়ে গেছে। ছাত্রলীগের কোনো কর্মী-সমর্থক বগির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে উঠলেই চোখে পড়ে বিপরীত চিত্র।
গত কয়েক দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনে উঠে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বগিতেই বিভিন্ন বগিভিত্তক সংগঠনের সমর্থকদের জন্য আসন সংরক্ষিত রয়েছে। অধিকাংশ বগিতে একাধিক পক্ষের সমর্থকদের বগির আসন দখলে রাখতে দেখা গেছে। শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে এ কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
দেখা গেছে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় শহর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতকারী শাটল ট্রেনের সঙ্গে বগি যুক্ত থাকে পাঁচ থেকে সাতটি। প্রতিটি বগিতে আসন থাকে ১২০টি। এর মধ্যে তিন থেকে চারটি বগিতে বিভিন্ন বগি সংগঠনের দখলে থাকে অনন্ত ৪৮টি করে আসন। শিক্ষার্থীরা জানান, এপিটাফ, একাকার, সিক্সটি নাইন, উল্কা, ভিএক্স, বিজয়, কনকর্ড, ককপিট, খাইট্যা খা, সাম্পান ও রেড সিগন্যাল নামের বিভিন্ন বগি সংগঠনের সদস্যরা এখনো শাটল ট্রেনে তাঁদের দখল বজায় রেখেছেন। এসব সংগঠনের সদস্যরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
শাটল ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করেন এমন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষ বগি সংগঠনের হয়ে বিভিন্ন সময় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। সংঘর্ষ থামাতে গত বছরের ২২ জুলাই ছাত্রলীগের বগি রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে এ নির্দেশ মানছেন না ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতা-কর্মীরা। কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে এখনো শাটল ট্রেনের আসন দখল করছেন তাঁরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে বগিভিত্তিক সংগঠনের সদস্যদের হাতে তাঁদের নানাভাবে হেনস্তা হতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে এসব বিষয়ে প্রতিকার চেয়েও তাঁরা প্রতিকার পাননি। আর এ কারণে বগির রাজনীতি ক্যাম্পাসে আরও উৎসাহিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়ের চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বগি রাজনীতি নিষিদ্ধ। কিন্তু শাটল ট্রেনে উঠলে দেখা যায়, বেশ কিছু বগির পেছনে ‘মেম্বার সিট’ লেখা। গত মঙ্গলবার একটি বগির পেছনে কয়েকজন ছাত্রী বসেছিলেন। ওই ছাত্রীদের ‘মেম্বার সিটে’ বসতে নিষেধ করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। ছাত্রীরা বগি রাজনীতির নিষিদ্ধ থাকার কথা তুললে তাঁরা খেপে যান। প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তবে ছাত্রলীগের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদককে এসব বিষয় অবহিত করলেও তাঁরা এর দায় নিতে চান না।
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ আব্বাস বলেন, ‘এমনিতেই শাটল ট্রেনে বগির সংখ্যা কম। আবার সেই সব বগিতেও আমরা ভালোভাবে যাতায়াত করতে পারি না। বগিতে বসলে ‘‘মেম্বার সিট’’ বলে আমাদের উঠে যেতে বলা হয়। একবার আমি নিজেও হেনস্তার শিকার হই। ছাত্রলীগের ঊর্ধ্বতন নেতাদের এ বিষয়ে জানালেও তাঁরা ব্যবস্থা নেননি।’
২ মার্চ ক্যাম্পাস হতে শহরগামী দুপুর আড়াইটার শাটল ট্রেনে একটি বগিতে উঠে আসনে বসতেই উঠে যেতে বলেন এক তরুণ। প্রশ্ন করলে ওই তরুণ জানান, তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। নিজেকে ছাত্রলীগের কর্মী বলে পরিচয় দেন। এ সময় দৈনিক সমকাল–এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সৌভাগ্য বড়ুয়াকেও তাঁর আসন থেকে উঠে যেতে বলা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুকে জানালে তিনি ওই ছাত্র ছাত্রলীগের কর্মী নন বলে দাবি করেন।
সমকাল–এর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সৌভাগ্য বড়ুয়া বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা বগি রাজনীতির কারণে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ দাবি করে ক্যাম্পাসে বগির রাজনীতি নেই। ২ মার্চ আমাকেও শাটলে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। নিজের পরিচয় দিলে তাঁরা আমাকে গালমন্দ করে মারধরের হুমকি দিয়েছে।’
সৌভাগ্য বড়ুয়া আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি ৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরবতা ও ছাত্রলীগের নেতাদের উদাসীনতার কারণে ক্যাম্পাসে বগি রাজনীতি উৎসাহিত হচ্ছে।?’
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ‘শাটল ট্রেনে সাংবাদিক হেনস্তার বিষয়ে আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অতি দ্রুত এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বগি রাজনীতি বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশের পর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক কোনো সংগঠন নেই। যাঁরা ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাচ্ছেন, তঁারা ছাত্রলীগের কেউ নন। তঁাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বগি রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছি। তবে ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মী জড়িত আছে, এমন অভিযোগ পেলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রথম আলো
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
এইচএসসির ফল প্রকাশ মঙ্গলবার, জানা যাবে যেভাবে
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করাবিস্তারিত পড়ুন
বিক্ষোভকারীদের অধিকার সমুন্নত রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, বিক্ষোভকারীদের অধিকার সমুন্নতবিস্তারিত পড়ুন
ঢাবি বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে ধন্যবাদ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন