শাহিনুরের মৃত্যু পুলিশ নয়, শ্রমিকের গুলিতে!
পরিবহনশ্রমিকদের ধর্মঘট চলাকালে রাজধানীর গাবতলীতে বাসচালকের সহকারী (হেলপার) শাহিনুর রহমান পুলিশের গুলিতে নিহত হননি। তিনি মারা গেছেন আন্দোলনরত পরিবহনশ্রমিকদের গুলিতেই। এই শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলার এজাহারে পুলিশ এটাই দাবি করেছে।
তবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক শ্রমিক সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, তখন তিনি গাড়িতে বসা ছিলেন। দুজন লোক সরু গলি দিয়ে রাস্তার দিকে হেঁটে আসছিলেন। তখন পুলিশ গুলি করলে ওই লোকের (শ্রমিক শাহিনুর) পেটে গুলি লাগে। তখনই তিনি রাস্তায় পড়ে যান। পরে পুলিশ ওই লোকের ধারেকাছে কাউকে ঘেঁষতে দেয়নি।
গত বুধবার সারা দেশে পরিবহনশ্রমিকদের ধর্মঘটের সময় রাজধানীর গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এসআই ট্রাভেলসের চালকের সহকারী শাহিনুর রহমান (৩৭) সেদিন সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় দারুস সালাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এলিস মাহমুদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৭০০ থেকে ৮০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
জানতে চাইলে দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিমুজ্জামান বলেন, সেদিন পুলিশের গুলিতে শাহিনুর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাননি। আন্দোলনরত শ্রমিকদের গুলিতে তিনি মারা গেছেন। যাঁরা তাঁকে গুলি করে মেরেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
মানিকগঞ্জে তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের মৃত্যুর মামলায় এক বাসচালকের যাবজ্জীবন ও ঢাকার সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে ট্রাকচালকের মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় গত মঙ্গলবার সকাল থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেন পরিবহনশ্রমিকেরা।
শাহিনুর হত্যা মামলার এজাহারের বক্তব্য অনুযায়ী, গত বুধবার ৭০০ থেকে ৮০০ জন আসামি গাবতলীর আল্লাহর দান হোটেলের সামনের কারমাইকেল রোডে অবস্থান করেন। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে জনগণকে রাস্তায় চলাচলে বাধা দেন। স্বাভাবিকভাবে রাস্তায় চলতে থাকলে আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা জনগণের ওপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা বাস ভাঙচুর করেন। বাসে থাকা সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের মধ্যে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। সেদিন সকাল ১০টার দিকে অজ্ঞাতনামা আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা সাধারণ জনগণের ওপর গুলি চালালে একজন আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় একজন মারা যান।
তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ব্লকের আবাসিক সার্জন জেসমিন নাহার সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, ওই শ্রমিকের বুকে ও পেটে অনেক ছররা গুলির জখম ছিল, শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছিল।
শাহিনুর হত্যা মামলার বাদী এসআই এলিস মাহমুদ কাছে দাবি করেন, সেদিন শ্রমিকদের লক্ষ্য করে পুলিশ কোনো গুলি ছোড়েনি। আন্দোলনকারী শ্রমিকেরাই সাধারণ জনগণের ওপর গুলি ছোড়েন। ওই শ্রমিকদের গুলিতেই শাহিনুর মারা গেছেন।
তবে ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ঘটনার দিন পুলিশের ওপর আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা ইটপাটকেল ছুড়েছিলেন সত্য। কিন্তু কোনো শ্রমিককে গুলি করেননি। বরং পুলিশ আন্দোলনকারী শ্রমিকদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। আর পুলিশের ওই রাবার বুলেট লাগে শাহিনুরের শরীরে। এতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান জিয়া রহমান বলেন, যদি পুলিশের গুলিতেই শ্রমিক শাহিনুর মারা গিয়ে থাকেন, তাহলে সংক্ষুব্ধ পক্ষ বাদী হয়ে আদালতে নালিশি হত্যা মামলা করতে পারেন।
নিহত শ্রমিক শাহিনুর রহমানের বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌর এলাকার পশ্চিম বালিঘাটা মহল্লায়। তাঁর স্ত্রী মুর্শিদা বেগম অন্তঃসত্ত্বা। শাহিনুর পাঁচ ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই তিনি মোটরশ্রমিকের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাঁচ বছর আগে এসআই ট্রাভেলসে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। বৃদ্ধ বাবা ছায়ের উদ্দিন ছেলে শাহিনুরের আয়ের ওপরই নির্ভরশীল ছিলেন। মা-বাবার দেখভাল করতেন শাহিনুর। গত সোমবার রাতে বাড়ি থেকে কাজের জন্য ঢাকা আসেন। প্রথম আলো
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
আজ আইওএম মহাপরিচালক ঢাকায় আসছেন
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যামি পোপ আজ রোববারবিস্তারিত পড়ুন
অর্থনীতির প্রভাব থেকে বাংলাদেশ মুক্ত আছে : ওবায়দুল কাদের
বিশ্বের অর্থনীতির প্রভাব থেকে বাংলাদেশ মুক্ত আছে, এমন দাবি আমরাবিস্তারিত পড়ুন
গনতন্ত্র সুসংহত করাতে সবার অংশগ্রহণ জরুরী : স্থানীয় সরকার মন্ত্রী
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলামবিস্তারিত পড়ুন