শেখ হাসিনা: ভিন্নমাত্রার কূটনীতিক
বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই আমেরিকা বাংলাদেশ তথা আওয়ামী লীগ বিরোধী, এটা সবার জানা থাকার কথা। স্বাধীনতার পরেই আমেরিকা বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও তদানীন্তন মার্কিন সরকার বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাতের নানা আয়োজনে জড়িত ছিল। বঙ্গবন্ধু সরকারবিরোধী তথা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই তাদের শক্ত অবস্থান জানান দিয়েছে নানা ভাবে, তাদের নানা কাজের মধ্য দিয়ে। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু হত্যায় আমারেকির ভূমিকা কি ছিল সেটাও আদালতের মাধ্যমে সবার জানা। সেই আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যাংক আমাদের দেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নে কেমন ভুমিকা রেখেছে তা পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগ নিয়ে যা ঘটে গেছে তা সারা দুনিয়া জুড়ে সবাই জানেন।
আমাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী চীন ভারতের সাথে চরম বিরোধে জড়িয়ে ছিলেন বহুদিন। চীন ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল হানাদার পাকিস্তানের পক্ষে, বাংলাদেশের বিপক্ষে। ভারত আর রাশিয়া (তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন) ছিল আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে। চীনের সাথে বাংলাদেশ তথা আওয়ামী লীগের সম্পর্ক কোন দিনই ভালো ছিল না। ঘাড় ত্যাড়া চীন ছিল কড়া পাকি সমর্থক। স্বাধীনতার পরে তো দূরের কথা স্বাধীন দেশ হিসেবে চীনের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পরে, মানে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়া পর্যন্ত।
চীনের মতো একই অবস্থানে ছিলো সৌদি আরব। স্বাধীন দেশ হিসেবে চীনের মতো করে সৌদি আরব আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পরে, মানে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়া পরে। ১৯৭১ সাল এবং তার পরেও তারা ছিল ১৯৭১ সালের মানবতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের আশ্রয়দাতা প্রশ্রয়দাতা, অর্থ যোগানগান। সৌদি আরবের অর্থের যোগানে থেকেই মানবতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের পোয়া বারো হয়; অর্থ বিত্তে ফুলে ফেঁপে হয় কলাগাছ। যে যাই বলুক না কেন, মানবতা বিরোধী অপরাধী রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে চরম শক্তিশালী একটা দল, এখনো। তাই সৌদি আরবের সাথে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের এবং তার পরে তথা আওয়ামী লীগের সম্পর্ক ভালো ছিল না।
২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এসেছে। এই নির্বাচন সত্যিকার অর্থে পার্টিসিপেটরী না বলে অনেকের কাছেই প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের জোট তো এটাকে সুষ্ঠু নির্বাচন হিসেবে মেনে নিতে পারেন নি। কারণ তারা এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়াতে খুব কম সংখ্যক মানুষ ভোটদানে অংশ নেয়। বাংলাদেশের পার্লামেন্টের মোট আসনের অর্ধেকেরও বেশী আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন অনেক সাংসদ। সে কারণে অনেক বিএনপি এতো দিন বলে আসছিল যে, এই সরকার অবৈধ। এই সরকারের সাথে কেউ সহযোগিতা করবে না। বাংলাদেশের কোন উন্নয়ন হবে না, কোন দাতা সংস্থা সাহায্য দেবে না। কিন্তু এখনকার চিত্র ভিন্ন। বিএনপি’র নীতি নির্ধারকগন বলতে শুরু করেছেন যে, তারা ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে মহা ভুল করেছে, যার খেসারত তারা এখন দিচ্ছে। বিএনপি’র সাংগঠনিক অবস্থা খুব নাজুক বলে অনেকেই মনে করছেন, কারণ তারা সরকার বিরোধী কোন কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। দিনে দিনে তাদের সংগঠন আরো দুর্বল থেকে দুর্বলতরো হচ্ছে। অবশেষে ইদানিং বিএনপি বলা শুরু করেছে যে, আগামী নির্বাচনে তারা আর ২০১৪ সালের মত ছাড় দেবে না। মানে নির্বাচনে যাবে, যে কোন অবস্থাতেই তা’ হোক না কেন।
বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের বিচার শুরু করেছে, চলছে তা’। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় অনেকের ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতের ২০ দলীয় জোট আশা করেছিল যে সৌদি আরব, চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ এই বিচার মেনে নেবে না। বিএনপি, জামায়াত অনেক টাকা খরচ করে নামীদামী লবিস্ট নিয়োগ করে বিচার বাধাগ্রস্ত করতে পারবে। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন সত্যিকার অর্থে পার্টিসিপেটরী না হওয়ায় কোন দাতা সংস্থা ঠিকমত সাহায্য দেবে না। কিন্তু ঘটনা উল্টো হয়ে গেছে। লবিস্ট নিয়োগের টাকা জলে গেছে। সৌদি আরব মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের বিচারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা আওয়ামীলীগ সরকারের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক তৈরী করে নিয়েছে। অপরদিকে চীন এখন আমাদের ১ নং উন্নয়ন সহযোগী হবার জন্য টাকার বস্তা নিয়ে হাজির চীনের প্রসিডেন্ট স্বয়ং নিজে। চীন জাপানকে টপকিয়ে ১ নং দাতা হতে চায়। অন্যদিকে বিশ্ব ব্যাংক তাদের অতীতের ভুলবুঝাবুঝি ভুলে নতুন করে বাংলাদেশে সম্পর্ক গড়ে নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত সাহায্যের প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের প্রসিডেন্ট বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন সম্প্রতি। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের উন্নয়নে প্রচেষ্টা আর সফলতার ভূয়সী প্রশংসা করছেন। এই বিশ্ব ব্যাংক বর্তমান সরকারকে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন কিছুদিন আগেও। এখন মত পাল্টিয়েছে ৯০ ডিগ্রী এঙ্গেলে।
এই কূটনৈতিক সফলতার দাবিদার অনেকেই হ’তে পারেন। এই সফলতার পিছনে হয়তো অনেকেই অনেক শ্রম আর মেধা দিয়েছেন যার নেতৃত্বে আছেন যিনি তিনি আর কেউ নন, আমাদের দেশের সুযোগ্য প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা তাই এক ভিন্নপ্রতিভার, ভিন্নমাত্রার কূটনীতিক।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। আামদের কণ্ঠস্বর-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন