রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

‘শ্বেতাঙ্গ মনের ভঙ্গুরতাই’ ট্রাম্পকে জিতিয়ে দিলো!

যে মানুষটি রাষ্ট্রের কোনো নির্বাচিত পদে কখনো কাজ করেননি, যার শিাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই নেই, যে মানুষটির একমাত্র অর্থনৈতিক অভিজ্ঞতা হচ্ছে ‘ডেভেলপার’-এর ব্যবসা করে বিভিন্ন দেশে একের পর এক হোটেল ও জুয়া খেলার ‘ক্যাসিনো’ নির্মাণ ও পরিচালনা, যে ব্যক্তি ২০ বছর আগে তার একটি হোটেল ব্যবসা লাটে উঠিয়ে সেই বিপুল আর্থিক লোকসানের অজুহাতে আয়কর আইনের ফোকর দিয়ে ২০ বছর ধরে সরকারকে একটি পয়সাও আয়কর দেননি, যে মানুষটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও গত আর্থিক বছরের তার আয়কর রিটার্ন দাখিল বা প্রকাশ করেননি এ অজুহাতে যে, তার উকিলেরা অনুমতি না দেয়ায় তার আয়কর রিটার্ন প্রকাশ করতে পারছেন না; এমন একটি মানুষ কি তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশে, ধরা যাক বাংলাদেশে, প্রধানমন্ত্রীর পদে নির্বাচন প্রার্থী হতে পারবেন? অবশ্যই না। আয়কর রিটার্ন দাখিল না করার কারণে প্রথম পদেেপই তো তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে।

অথচ এমন একটি লোক ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম বিশ্বের শীর্ষদেশ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জয়ী হয়ে একেবারে প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলেন! যে অযোগ্যতাগুলো উল্লেখ করলাম, তার কোনোটাই তার নির্বাচিত হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াল না! আরো ব্যাপার হলো, তিনি সর্বাধিক সংখ্যক ভোট পাননি। প্রাপ্ত ভোটসংখ্যায় তার চেয়ে (এখনো গণনা চলছে) ১০ লাধিক ভোট বেশি পেয়েছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট দলের হিলারি কিন্টন। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ধারা, যার নজির পৃথিবীতে আর কোথাও নেই, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে তার জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিভিন্ন সংখ্যক ‘ইলেকটোরাল ভোট’ দিয়েছে, যার যোগফল যে প্রতিদ্বন্দ্বীর পে অধিক হয়, সেই প্রতিদ্বন্দ্বীই জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হন। এভাবেই ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই শ’ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে যোগ্যতাহীন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প অবিশ্বাস্যভাবে জিতে যাওয়ার পেছনে কোন ‘ফ্যাক্টর’টি সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে?

কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একাধিক দেশে অধ্যাপক, রাজনৈতিক গবেষক, সামাজিক পর্যবেক প্রমুখের মধ্যে ট্রাম্পের জয়ের পেছনে প্রধান কারণগুলো অনুসন্ধানের হিড়িক পড়ে গেছে। এর মধ্যে যে কারণটি সবচেয়ে যৌক্তিক বলে প্রতিভাত হচ্ছে, তা প্রকাশ করেছে ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এর আন্তর্জাতিক সাপ্তাহিক সংস্করণের ১৩ নভেম্বর সংখ্যার শীর্ষ প্রতিবেদনে। হেডলাইন হচ্ছেÑ ‘বিহাইন্ড দ্য ওয়েস্টস টিউমাল্ট, ‘হোয়াইট ফ্র্যাজাইলিটি’ (পাশ্চাত্যের বিপর্যয়ের পেছনে ‘শ্বেতাঙ্গ ভঙ্গুরতা’)। বিশ্বের অশ্বেতাঙ্গ জনসংখ্যার জন্য, বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার দেশ বাংলাদেশের জন্য ‘শ্বেতাঙ্গ ভঙ্গুরতা’ ব্যাপারটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য বলে মনে করি।

পাশ্চাত্যে তিন দশকের অধিককাল ধরে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সক্রিয় বিরোধিতা এবং ‘মালটিকালচারালিজম’ বা ‘বহু বর্ণের সম্মিলনের’ উদার সমাজের ওপর গুরুত্ব আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবার একজন কৃষ্ণাঙ্গ বারাক ওবামাকে প্রেসিডেন্ট পদে পেল এবং দ্বিতীয় মেয়াদে তাকে পুনর্নির্বাচিত করল। লন্ডন নগরী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত একজন মুসলিমকে মেয়র নির্বাচিত হতে দেখল;

কিন্তু এমন অভাবনীয় পরিবর্তন শ্বেতাঙ্গ সমাজের কিছু অংশে, বিশেষ করে ন্যূনতম শিাপ্রাপ্ত এবং আর্থিক ন্যূনতম সঙ্গতির শ্রেণীর শ্বেতাঙ্গদের মনে অস্বস্তিবোধের সৃষ্টি করতে থাকে। তারা মনে করতে লাগল, ‘আমাদের দেশ আমাদের হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে!’ দরিদ্র শ্রেণীর শ্বেতাঙ্গরা দেখল যে, তাদের মহল্লাগুলোতে যে পরিবেশে এবং যে প্রোপটে তারা এতকাল বাস করে এসেছে, তা ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে অথবা বদলে যাচ্ছে নবাগতদের আগমনে, যারা শ্বেতাঙ্গ নয় অথবা তাদের পরিচিত কৃষ্ণাঙ্গও নয়, যাদের পোশাক ও চালচলন সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং আরো ‘ভয়ের ব্যাপার’, যাদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

শ্বেতাঙ্গদের মনের এ অস্বস্তি জোরদার হয়ে ক্রমেই নিরাপত্তাহীনতাবোধে রূপান্তরিত হতে লাগল। মার্কিন অধ্যাপক ও সমাজবিজ্ঞানী রবিন ডিও এঞ্জেলো শ্বেতাঙ্গদের মনের এই অবস্থাকে ‘শ্বেতাঙ্গ ভঙ্গুরতা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যে ‘ব্রেক্সিট’ গণভোট হলো, তাতে স্বল্পশিতি এবং স্বল্প আয়ের শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশরাই ইউরোপ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য অধিক হারে ভোট দিয়েছে। কারণ তারা মনে করেছে, ব্রিটেন ইউরোপ থেকে বেরিয়ে গেলে ব্রিটেনে অভিবাসীদের আগমন কমে যাবে।

পর্যবেকেরা বলছেন, ইউরোপীয় দেশ ডেনমার্কে শ্বেতাঙ্গরা এখন মোট জনসংখ্যার ৮৮ শতাংশ; কিন্তু এক প্রজন্ম আগে তথা ১৯৮০ সালে ডেনমার্কে শ্বেতাঙ্গের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশ; কিন্তু শ্বেতাঙ্গ জনসংখ্যার এ ১০ শতাংশ হ্রাসেই তাদের মনে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অভিবাসীবিরোধী ড্যানিশ পিপলস পার্টি জনপ্রিয়তা পেয়ে পার্লামেন্টে দ্বিতীয় বৃহত্তম দলরূপে আসন গ্রহণ করেছে।

বিদেশে জন্মগ্রহণকারী কিন্তু জার্মানিতে অভিবাসন গ্রহণ করা অভিবাসীর সংখ্যা ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। এতে শ্বেতাঙ্গ জনসংখ্যার আশঙ্কার বহিঃপ্রকাশরূপে অভিবাসীবিরোধী ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি পার্টি’ অভূতপূর্ব জনসমর্থন পেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
পর্যবেকেরা বলছেন, শ্বেতাঙ্গদের মনের এই ক্রমবর্ধমান আশঙ্কা বিভিন্নভাবে প্রকাশ পাচ্ছে, যেমনÑ তারা অভিযোগ করছে অভিবাসীরা ড্রাগ আনে, জঘন্য অপরাধ করে। অভিবাসী আগমন রোধ করার জন্য তারা সীমান্তে কড়া পাহারা এমনকি প্রাচীর নির্মাণ সমর্থন করছে; সর্বোপরি তথাকথিত ‘ইসলামি সন্ত্রাস’কে তারা তাদের এক নম্বর শত্র“ মনে করছে। সব মিলিয়ে শ্বেতাঙ্গদের মনে ভয় ঢুকেছে যে, যখন অন্যরা এগিয়ে যাচ্ছে, তখন তারা আটকে গেছে অথবা পিছিয়ে পড়ছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গদের এসব আশঙ্কাতে সরাসরি সাড়া দিয়ে নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হচ্ছেন। এটা প্রকট যে, শ্বেতাঙ্গরা তাকে ভোট দেয়ার সময় তার অযোগ্যতাকে মোটেই আমলে নেয়নি, কারণ তারা তাকে বেছে নিয়েছে একটি অস্ত্ররূপে, যা দিয়ে তারা আশঙ্কাগুলোকে দূর করে তাদের মনে স্বস্তি ও আশঙ্কামুক্ত অবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারবে বলে ভেবেছে।

মতায় বসে ডোনাল্ড ট্রাম্প কিভাবে শ্বেতাঙ্গদের মনের অস্বস্তি ও আশঙ্কাকে দূর করে ‘শ্বেতাঙ্গ মনের ভঙ্গুরতা’র স্থলে দৃঢ়তা স্থাপন করবেন, তা সময়ই বলে দেবে।

লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক, প্রবাসী

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?