শ্রমিকদের জন্য প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) তার উম্মতদের উদ্দেশ্য করে যা বলেন
একবার একটি ব্যঙ্গ কার্টুন দেখেছিলাম। শ্রমিকের ঘাড়ে দাঁড়িয়ে ‘মে দিবসের’ ব্যানার টাঙাচ্ছেন এক শ্রমিক নেতা! হায়, শ্রমিক অধিকারের বাস্তব অবস্থা কত নির্মম তাই ফুটে ওঠেছে এ কার্টুন ছবিতে। হে দুনিয়ার মানুষ! শ্রমিক অধিকারের জন্য যিনি জীবনব্যাপী সংগ্রাম করেছেন তুমি কি তাকে চেন? তিনি আর কেউ নন তিনি হলেন হেরার সাধক মুহাম্মদ (সা.)। মেহনতি শ্রমিকের বন্ধু মুহাম্মদ (সা.)। শ্রমিক অধিকার রক্ষায় উম্মতকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘তোমরা শ্রমিককে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ দিও না। যদি কখনো এমনটি করতেই হয় তবে তুমি নিজে তাকে সাহায্য করবে। ’
আরেক হাদিসে বলেছেন, ‘শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে তার দাম চুকিয়ে দাও। ’ মজদুর-শ্রমিকদের মৌলিক সমস্যা এ দুটোই। তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করানো হচ্ছে। আর তাদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। তাই রসুল (সা.) এমন এক শ্রমনীতি ঘোষণা করেছেন, যা বাস্তবায়ন হলে বিশ্বজুড়ে মালিক-শ্রমিক এক পরিবার হয়ে ওঠবে। ঘর এবং কারখানায় উন্নতি ও সফলতা নিজ থেকে এসে ধরা দেবে।
মেহনতি শ্রমিককে দিয়ে যারা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করায়, তারা কি শোনেনি কোরআনের এ কথাটি— ‘লা ইউ কাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসআহা। আল্লাহতায়ালা কোনো সৃষ্টিকেই তার ধারণক্ষমতার বাইরে কোনো কাজকর্মের নির্দেশ চাপিয়ে দেন না। ’ এ যদি বিশ্ব প্রতিপালকের নীতি হয়, তবে তোমার আমার নীতি কেন শ্রমিক মারার নীতিতে পরিণত হয়েছে? প্রিয় ভাই, শ্রমিকও সবার মতো রক্ত-মাংসের মানুষ। তারও সাধ-আহ্লাদ আছে। আছে বিশ্রামের প্রয়োজন। জ্যামের বিড়ম্বনা সেও পোহায় প্রতিনিয়ত। তাই তাকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখা জরুরি। শ্রমিকের কোনো ভুল হয়ে গেলে হাসি মুখে ক্ষমা করে তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। যখন দেখি আমাদের মতো ভদ্র মানুষ রিকশার ড্রাইভারের গায়ে হাত তোলে। বাসার কাজের লোককে নির্মম নির্যাতন করে। গার্মেন্ট শ্রমিকদের সঙ্গে সুপারভাইজারসহ সবাই অকথ্য অত্যাচার করে। অবাক হয়ে ভাবী, এরা কেমন মুসলমান?
কোরআনের বাণী, নবীজীর শ্রমনীতি কি এদের জানা নেই? তারা কি জানেন না কেয়ামতের দিন কত ভয়াবহ দৃশ্য তাদের দেখতে হবে? আমাদের নবীজী (সা.) উম্মতের কাণ্ডারী। রহমতের সাগর। তারপরও যারা শ্রমিকের সঙ্গে জুলুম করে তাদের ব্যাপারে কত কঠোর কথা বলেছেন শুনুন। মুসলিম শরিফ থেকে বলছি, নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘ কেয়ামতের দিন ওই উম্মতের বিরুদ্ধে আমি নবী নিজে আল্লাহর ট্রাইব্যুনালে জাহান্নামের শাস্তি চেয়ে মামলা দেব, যে শ্রমিককে খাটিয়ে তার সঠিক দাম দেয় না। ’ নাউজুবিল্লাহ। নবীজী যদি বাদী হয়ে আল্লাহর আদালতে মামলা করেন, তবে সে মামলায় নবীজীই জিতবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
শ্রমিকদের সঙ্গে মালিক শ্রেণিকে দরদি অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে হবে। গত সপ্তায় রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির চার বছর পূর্ণ হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৪২ শতাংশ শ্রমিক এখনো বেকার রয়েছে। এত হাজার হাজার শ্রমিকের সংসার কীভাবে চলে কেউ কি খোঁজ রাখে? পয়লা মে একটি আলোচনা সভা বা মানববন্ধন করলেই সব শেষ হয়ে যায় না। যারা সত্যিকারভাবেই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে চান, শ্রমিকের দুয়ারে দুয়ারে যেতে হবে তাদের।
শ্রমিকের গায়ে হাত তোলা বড় অন্যায়। অথচ লেগুনার হেল্পার ছোট্ট শিশুর গায়েও হাত তোলেন অনেক পাপী। আমি নিজেই এমন অনেক ঘটনা দেখেছি। হজরত আবু মাসউদ (রা.) একবার তার বাড়ির কাজের লোককে চাবুক দিয়ে মারছিলেন। এমন সময় পেছন থেকে কে যেন বলছিল, হে আবু মাসউদ! হে আবু মাসউদ! আবু মাসউদ বলেন, প্রচণ্ড রাগের কারণে আমি বুঝতে পারিনি কে ডাকছে। পরে লোকটি কাছে আসার পর দেখি নবীজী (সা.) এগিয়ে এসেছেন। আর বলছেন, আবু মাসউদ! তুমি এই শ্রমিকের ওপর যতটা শক্তিশালী, আল্লাহও কিন্তু তোমার ওপর তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী। (মুসলিম)।
এই হাদিসে আমাদের অনেক শিক্ষার বিষয় রয়েছে। আমরা কি শ্রমিকের পক্ষে দাঁড়াতে পেরেছি? আমাদের কি অধিকার আছে নিজেকে নবীর উম্মত বলে পরিচয় দেওয়ার? হে পাঠক! আপনাদের অনুরোধ করে বলছি, আজ শ্রমিকের পাশে দাঁড়ালে কাল কেয়ামতের মাঠে আপনার পাশে নবীজী দাঁড়াবেন। হাতে থাকবে কাউসারের অমীয় পানপাত্র। মহান আল্লাহ আমাদের মেহনতি শ্রমিকের পাশে দাঁড়ানোর তৌফিক দান করুন।
লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ঈদের ছুটির পর বুধবার থেকে নতুন অফিস সময়সূচি
পবিত্র ঈদুল আজহার পর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিতবিস্তারিত পড়ুন
সৌদিতে হজে বিভিন্ন দেশের ৫৫০ হাজির মৃত্যু
সৌদি আরবে এ বছর হজ পালনে গিয়ে কমপক্ষে ৫৫০ জনবিস্তারিত পড়ুন
ঈদে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ টি গবাদিপশু কোরবানি
এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট ১ কোটি ৪বিস্তারিত পড়ুন