সত্যিই কী তক্ষকের মূল্য কয়েক কোটি টাকা!

তক্ষক গেকোনিডি গোত্রের একটি গিরগিটি প্রজাতির প্রাণি। একে অঞ্চলভেদে রক্তচোষা, আনজিলা, শাণ্ডা বলা হয়। এদের পিঠের দিক ধূসর, নীলচে-ধূসর বা নীলচে বেগুনি-ধূসর বর্ণের হয়।
এরা কীটপতঙ্গ, টিকটিকি, ছোট পাখি ও ছোট সাপ খেয়ে থাকে। অনেকেই তক্ষককে বিষাক্ত সরীসৃপ মনে করে। কিন্তু এরা মোটেও বিষাক্ত নয়। বাংলাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন ও ফিলিপাইনসহ বিভিন্নদেশে প্রায় ৬০০ প্রজাতির তক্ষকের বাস।
তক্ষক নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা তথা গুজবের শেষ নেই। কয়েক কোটি টাকায় বিক্রি করা যাবে! যেতেও পারে। কারণ আমরা আবার গুজবপ্রিয় কিনা! চলুন জানা যাক, তক্ষক সম্পর্কিত কিছু ভ্রান্ত ধারণা ও সেগুলার সত্যতা।
সোনা ছাড়া শরীর থেকে ছাড়ানো যায় না: অনেকে বলেন টোকে গেকো বা তক্ষকের গ্লুর মত আঠালো আঙ্গুল যুক্ত পা রয়েছে। তাই মানুষের ত্বক থেকে সহজে ছাড়ে না। মূলত তক্ষক শক্তভাবে কোথাও আটকে থাকতে পারে। এরা নিজস্ব ওজনের চেয়ে প্রায় ৮ গুণ ভারী বস্তু বহনে সক্ষম।
কিন্তু পায়ে আঠা বা গ্লু আছে এটা ঠিক নয়। বরং পায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চুলের মত গঠন আছে। যেগুলো কোন বস্তুর উপর শক্তভাবে আটকে থাকতে বায়ু শুষে ধরে। তবে এদের ছাড়াতে সোনা লাগে না। যদি তক্ষক কামড়ে ধরে তাহলে এক টুকরো কাপড় অথবা গাছের ডাল দ্বারা ছাড়িয়ে নিতে পারবেন।
ভবিষ্যত গণনা: অনেক দেশেই অনেক লোকই বিশ্বাস করে তক্ষক ভবিষ্যত বলে দিতে পারে। এজন্য তক্ষককে জিজ্ঞেস করা হয়, তাদের কতজন সন্তান হবে? উত্তরটি তক্ষকের ডাকের সময় শব্দ সংখ্যার উপর হিসেব করা হয়। অর্থাৎ এটি যতবার শব্দ করবে তত জন সন্তান হবে। খুবই হাস্যকর। যদি এটি ১২-১৪ বার শব্দ করে তো কি হবে আপনার? কারণ এরা একসাথে ১২-১৪ বার শব্দ করতে পারে।
বিষাক্ত: অনেকেই বলেন এটি বিষাক্ত এবং রক্ত চুষে নেয়! বাস্তবতা হচ্ছে এরা বিষাক্ত নয়। তবে এদের কামড় যন্ত্রণাদায়ক হয়। এরা শরীরের বর্ণ পরিবর্তন (কেমোফ্লেজ) করতে পারে অর্থাৎ পারিপার্শ্বিক পরিবেশের বর্ণের সাথে নিজেকে মিলিয়ে ফেলে। তাই অনেক সময় লালচে বর্ণও ধারণ করে থাকে। এজন্য অনেকেই ভাবেন রক্ত চুষে রক্তবর্ণ ধারণ করে।
বজ্রপাত টেনে আনা: ফিলিপাইনের অনেক নগর ও গ্রামাঞ্চলে বিশ্বাস করা হয় তক্ষক বজ্রপাত টেনে আনে।
শান্ডা তেল: আমাদের দেশের বিভিন্ন হাট-বাজার এমনকি কি শহরেরও বিভিন্ন স্থানে শান্ডার তেল নামে তক্ষকের তেল বিক্রি করা হয়। পুরুষ জননাঙ্গের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এই তেল অনেকেই কিনছেন। ফলে নির্বিচারে মারা হচ্ছে এই প্রাণিটি! বাস্তবে এই তেলের এমন গুণ নেই।
এইচআইভি ও ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহার: এইচআইভি ও ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহার হয় বলেই নাকি তক্ষক কোটি কোটি টাকায় বিক্রি হয়! কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ও বিভিন্ন গবেষণা পত্রের মাধ্যমে জানা যায়, এইচআইভি ও ক্যান্সার চিকিৎসায় তক্ষক কোনই কাজ করে না।
হাঁসের মত পা যুক্ত: সাধারণত হাঁসের মত পা যুক্ত তক্ষকের মূল্য গুইসাপের মত পা যুক্তটার চেয়ে বেশি। আবার ৩৫০ গ্রাম থেকে বেশি ওজনের তক্ষকের দাম ৩-৪ কোটি টাকা। আর এক কেজি হলেতো কথাই নেই! বাস্তবতা হল, পুরুষ তক্ষক ৩২৬ গ্রাম এবং স্ত্রী তক্ষক মাত্র ২৫০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন সম্পূর্ণ গুজবের উপর কেউ হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা আবার কারও হচ্ছে পকেট ফাঁকা! অবৈধভাবে এসব প্রাণি পাচারকালে ধরা পড়লে শাস্তির বিধানতো আছেই। তবে পাচারকালে তক্ষক ধরা পড়লে বিজিবি সদস্যরাও বলে, কয়েক কোটি টাকার তক্ষক উদ্ধার! প্রাণিটি সম্পর্কে না জেনে এভাবে বলে বিলুপ্তিকে ত্বরাণ্বিত করছে। তারাও দেখি গুজবে বিশ্বাসী! বাস্তবতা হচ্ছে শুধুই প্রতারণা।
এক সময় গুজব রটল এক টাকার সোনালী মূদ্রা সর্বোচ্চ ১২০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। চোখের সামনে অনেককেই ঠকতে দেখছিলাম। মোবাইল ফোনে ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকার লটারীর কথা শুনে ঠকেনি এমন সংখ্যাও কিন্তু কম নয়! এসব প্রতারণার হাত থেকে বাঁচার একটাই উপায় আছে। তাহল লোভ সংবরণ করা। বুঝলাম, পাশের বাসার ওরা পেয়েছে লাখ টাকা। আমার দরকার নেই এমন টাকার। পরিশ্রম করে বড় হব। স্বপ্নযোগে কোটিপতি হওয়ার ইচ্ছা পরিহার করাই উত্তম।
তক্ষক, শ্রষ্টার আরেকটি বিশ্ময়কর সৃষ্টি বলা যায়। অবাক হবেন জেনে যে, তক্ষককেও পোষ মানিয়ে ঘরে রাখতে পারবেন! যদি পশমযুক্ত প্রাণি পুষতে পুষতে বিরক্তি আসে, তবে পুষতে পারেন তক্ষক। তাদের অসাধারণ ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আপনাকে কাছে টানতেই পারে।
তথ্যসূত্র: টোকে গেকো গাইড ডট কম, উইকিপিডিয়া।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন

এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন

৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন