সেলিনা হায়াৎ আইভীর জন্য উভয় সংকট
আপাতঃ চোখে গণতান্ত্রিক উপায়ে নেওয়া সব সিদ্ধান্তই যে মঙ্গলজনক হয়, এমন না। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের দিকে চোখ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। সেখানকার তৃণমূল আওয়ামী লীগ মেয়র পদে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতির নাম প্রস্তাব করেছিল। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের গত নির্বাচনের সময় ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর অন্যতম সমর্থক ছিলেন।
আইভী আওয়ামী লীগের যে নেতার বিপক্ষে নির্বাচনে জয়ী হন পরে পক্ষ বদল করে তিনি তার দিকে চলে যান। ওই নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব প্রার্থী দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে সেটা ছিল নির্দলীয় নির্বাচন। তারপরও সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন শামীম ওসমান এবং বিএনপির তৈমুর আলম খন্দকার যিনি নির্বাচনের আগের রাতে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান। তারপরও সেটা ছিল তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক নির্বাচন। কারণ সেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগেরই ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। নির্বাচনে অনেক ভোটে জয়ী হন তিনি।
এবার যেহেতু সরাসরি দলীয় ফোরামে নির্বাচন হচ্ছে তাই মেয়র পদে পুনর্নির্বাচনের জন্য ডা. আইভীর দলীয় মনোনয়ন জরুরি ছিল। কিন্তু, গত নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বীই যেহেতু সেখানকার আওয়ামী লীগের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা তাই তৃণমূল থেকে ডা. আইভীর বদলে অন্য একজনের নাম প্রস্তাব করা হয়। নেপথ্যে যাই থাকুক, সাদা চোখে দেখলে বলতে হয় বর্ধিত সভার মাধ্যমে যেহেতু নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাই সেটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই হয়েছে।
কিন্তু, সরাসরি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড যখন তৃণমূলের ওই সিদ্ধান্ত নাকচ করে ডা. আইভীকেই দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে তখন প্রমাণ হয়েছে যে কথিত সব গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তই মঙ্গলজনক হয় না। এভাবে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিশ্চিত হলেও সবকিছু যে ডা. আইভীর জন্য সহজ হয়ে গেছে এমন নয়। যে আওয়ামী লীগের তিনি প্রার্থী নারায়ণগঞ্জের সেই আওয়ামী লীগ নেতারাই তার জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিতে পারেন।
এটা এজন্য না যে তারা গোপনে আইভীর বিরুদ্ধে কোন কিছু করবেন, বরং এজন্য যে যাদের বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম তাদেরকেই অন্তত আনুষ্ঠানিকভাবে তার নির্বাচনী মঞ্চে রাখতে হবে। ডা. আইভী যতোই আওয়ামী লীগ নেতা হন না কেন নারায়ণগঞ্জের গডফাদার আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তার উত্থান। এমনকি প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়ার আগে গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, মেয়র হিসেবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ৬০ ভাগ সফল হলেও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তিনি শতভাগ সফল।
এ সাফল্য এরকম না যে নারায়ণগঞ্জ থেকে তিনি সন্ত্রাস এবং সন্ত্রাসী গডফাদারদের মূল উপড়ে ফেলেছেন, বরং তার সাফল্য এটা যে তিনি সন্ত্রাস এবং গডফাদারদের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হয়েছেন, সে হিসেবে তিনি নারায়ণগঞ্জ ছাপিয়ে সারাদেশেও পরিচিতি পেয়েছেন। এ কারণে গত নির্বাচনে তিনি সর্বজনীন প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন, মেয়র হওয়ার পর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তার সংগ্রামে সারাদেশের মানুষের সমর্থন পেয়েছেন।
কিন্তু, আজ যখন তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী তখন যাদের বিরুদ্ধে তিনি এতোদিন সংগ্রাম করেছেন তাদেরকেও তার নির্বাচনী লড়াইয়ের অংশ করতে হবে। দলীয় প্রার্থী হিসেবে তিনি দলকে যেহেতু অস্বীকার করতে পারবেন না, তাই তাদেরকেও তিনি অস্বীকার করতে পারবেন না। তবে সাধারণ মানুষ যারা এতোদিন তার সন্ত্রাসবিরোধী সংগ্রামে সমর্থন দিয়েছেন তারা নিশ্চয়ই সেই গডফাদারদেরকে ডা. আইভীর নির্বাচনী লড়াইয়ের অংশ হতে দেখে হোঁচট খাবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন