‘স্টার জলসা’ বনাম ‘ইউসুফ জুলেখা, সুলতান সুলেমান এবং অান্দোলন’
অাচ্ছা,
ছেলেরা স্টার জলসা, স্টার প্লাস এর নাটক পছন্দ করে না, কিন্তু, ইউসুফ জুলেখা অার সুলতান সুলেমান কেন পছন্দ করে?
দুটাই তো বিদেশী! প্রশ্নতো থাকেই..
উত্তর টা অামিই দেই?
স্টার জলসা অার স্টার প্লাস নাটকগুলোতে পুরুষ শাসিত সমাজে প্রতিবাদী কিছু নারী এবং গতানুগতিক কোটনামী। যেটাতে অধিকাংশই নারী ক্যারেক্টাের নির্ভর।
অার ইউসুফ জুলেখা, সুলতান সুলেমান পুরুষ শাসিত সমাজে প্রতিবাদহীন নারীর বাধ্যতা কিংবা মাথা নিচু করে মেনে নয়া অার গতানুগতিক কোটনামী। যেটাতে অধিকাংশই পুরুষ ক্যারেক্টার নির্ভর।
তাই, উনারা, মানে পুরুষরা এটাতো পছন্দ করবেনই!
এটা উনাদের দোষ না, এটা ন্যাচারাল, নারীরা যেমন নারী ক্যারেক্টার পছন্দ করেন তেমনি পুরুষরাও তাদের গোত্রকেই পছন্দ করেন।
তবে, উনারা অাই মিন শিল্পী কলাকুশলীরা, কেন স্টার জলসা স্টার প্লাসের বিরুদ্ধে অান্দোলনে না নেমে, ইউসুফ জুলেখা অার সুলতান সুলেমানের বিরুদ্ধে অান্দোলনে নেমেছেন?
এর উত্তর টাও না হয় দেই?
স্টার জলসা স্টার প্লাস তো শ্রেফ উনাদের/দেশীয় শিল্পীদের এবং অামাদের বিনোদনের খোরাক, সেটা দিয়ে যেমন অামাদের পেট ভরবে না তেমনি উনাদেরও ভরবে না।
ওই স্টার জলসা, স্টার প্লাস-এ উনাদের তো পারিশ্রমিক দিয়ে নাটক সিরিয়ালে অভিনয় করার জন্য ডাকবেও না। কিংবা কোন বাংলাদেশী ডিরেক্টরের তৈরিকৃত নাটকও প্রচার করবে না।
দুই এক জন এক দুই বার সুযোগ পেতে পারেন। তবে এভেইলেভেল না।
তাই ওসব চ্যানেল, এ দেশে প্রচার করলেও কিছু যায় অাসে না, অাবার না করলেও কিছু যায় অাসেনা। সেটা বিদেশী চ্যানেল, অাইমিন ভারতীয়।
অার ইউসুফ জুলেখা, সুলতান সুলেমান হচ্ছে বিদেশী নাটকের বাংলা ডাবিংকৃত টিভি সিরিয়াল। কিন্তু প্রচার হচ্ছে অামাদের দেশীয় চ্যানেলে। পার্থক্যটা কিন্তু ওইখানেই।
দেশীয় চ্যানেলে বিদেশী কোন জনপ্রিয় নাটক সিনেমা প্রচার হলে দেশীয় ডিরেক্টরের করা নাটকগুলো অার জায়গা পাবেনা ওই চ্যানেলে। অার ডিরেক্টর তার নাটক সিনেমা চ্যানেলের কাছে বিক্রি করতে না পারলে প্রোডিওসারও অাগ্রহী হবে না নাটক সিনেমা লাখ লাখ টাকা দিয়ে বানাতে।
অার তারা অাগ্রহী না হলে অভিনয় শিল্পীরাও কাজ পাবে না! এটাইতো স্বাভাবিক! অার কাজ না পেলে এসব শিল্পীরা খাবে কি?
বলা বাহুল্য। মিডিয়ায় কাজ করা এসব শিল্পীদের অনেক নোংরামীর কারনে অনেকেই তাদের নোংরা চোখে দেখে। ফলে তারা একবার মিডিয়ায় নাটক সিনেমা করে পরিচিতি পেলে মিডিয়ার বাইরে কাজ পাওয়া এবং কাজ করা যথেষ্ঠ কঠিন হয়ে পড়ে। পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। হয়ত বুদ্ধিমানরা সেটা বুঝতে পারছেন।
অার তাই তারা তাদের জীবন জীবীকার জন্যই অান্দোলনে নেমেছেন। তারা বাধ্য নামতে। অামিও সম্পূর্ন না হলেও অন্তত এই দিকটা বিবেচনা করে তাদের সমর্থন করি।
অনেকে বলছেন, অামরা কিংবা তারা ছোট বয়সেও তো এসব ডাবিংকৃত নাটক সিরিয়াল দেখেছি। টিপু সুলতান, অালিফ লায়লাসহ অনেক কিছু দেখেছি। তখনতো ওরা অান্দোলন করে নাই, তখনতো এসব বেশি চলতো!
ভাই, কথা ঠিক, কিন্তু ভাবতে হবে, তখন অার এখন অনেক পার্থক্য, তখন শুধু একটা চ্যানেল বিটিভি ছিল। অার এখন কিন্তু দুই ডজন! এমনকি নাটক সিনেমা এখন পেশাগত দিক হয়ে উঠেছে অনেকেরই। চাকরির মতোই এ কর্ম করে সংসার চালান এখন অনেকে। তাই দেশী চ্যানেলে বিদেশী নাটক সিরিয়াল চলা মানে তাদের পেটে লাথি মারার মতই।
নিজের দেশের টিভি চ্যানেলে যদি ওদের জায়গা না হয় তাহলে কি বাইরের দেশে হবে? অার অধিকারতো তাদেরই বেশি!
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হলো?
কেন অাজ দেশি নাটকের প্রতি বিমুখ চ্যানেলগুলো বিদেশী নাটক সিনেমা ডাবিং করে চালাচ্ছে? এর দায়ও কিন্তু চ্যানেলগুলোকে দেয়া যাবেনা। এর দায় কিন্তু অাপনাদেরই।
কারণ চ্যানেলগুলো কিন্তু এখানে ফ্রি সার্ভিস দিতে দয়ার ভান্ডার নিয়ে বসেনি। তারা লাভের অংক না দেখলে কেনইবা নাটক, সিনেমা, সিরিয়াল প্রচার করবে?
চ্যানেলগুলো এ প্রজন্মে এসে এসব ডাবিংকৃত বিদেশী নাটক প্রচার করে প্রমাণ করছেনা যে বর্তমান নাটক সিনেমা থেকে সেই দুই যুগ অাগের নাটক সিনেমাও ভালো ছিল?
অবশ্যই ভালো ছিল, অার সেটা শুধু চ্যানেলগুলোর জাজমেন্ট নয়, এটা দর্শকদের জাজমেন্টও।
অাপনারা যারা অান্দোলন করছেন, তারা কি জানেন না যে চ্যানেলগুলার ইনকাম কোথায়?
যেসব নাটক সিনেমা দর্শক বিমুখ করে, সেটা যে বিজ্ঞাপনদাতাকেও বিমুখ করে সেটা তো অার অজানা নয়? অান্দোলনে নেমেছেন ভালো কথা, অাপনারা দিপ্ত টিভি ঘেরাও দেন, এসএ টিভির সামনে, মাছরাঙ্গার সামনে মানব বন্ধন করেন! তার অাগে ভাবেন, অাপনি যেমন নাটক সিনেমায় অভিনয় করে কিংবা তৈরি করে তা বিক্রি করে অায় করেন, তেমনি চ্যানেলগুলোকেও সে সব নাটক সিনেমা বিক্রি করতে হয়। দর্শক যদি এগুলো নাই দেখে তাহলে তারা বিক্রি কেমনে করবেন?
ভাবেন, ইনকাম নিয়ে নয়, ভাবেন কোয়ালিটি নিয়ে, কোয়ালিটি সম্পন্ন কিছু পেলে দর্শক সাদরে তা গ্রহণ করবে, অার দর্শক গ্রহণ করলে বিজ্ঞাপন পাবে চ্যানেল, অার অাপনার যে নাটক প্রচারে চ্যানেলের দর্শক বাড়বে, বিজ্ঞাপণ পেয়ে ইনকাম বাড়বে, সে নাটক প্রচারে কেন তারা অাগ্রহী হবে না? সেই নাটকের শিল্পীদেরও গ্রহনযোগ্যতা কেন বাড়বে না?
একঘেয়েমি নকল বাদ দিয়ে একটু ডিফারেন্স কিছু চিন্তা করেন। শুধু প্রেম পিরিতি নিয়ে নাটক, সিনেমা, সিরিয়াল দর্শক অার কত দেখবে? পরিবর্তন অানুন নিজেদের। কোন লাভ হবে কি এসব অান্দেলন করে? দর্শক না দেখলে কি দর্শকদের বিরুদ্ধেও অান্দোলন করবেন নাকি? তাই বলছি, অাগে নিজেদের লেকিং কোথায় খুঁজে বের করেন।
দেখেন, নারী শিল্পীদেরই কিভাবে হেয় করে ক্যারেক্টার দেয়া হয়, অার অাপনারা নারী অভিনেত্রীরা হাসতে হাসতে তাই গিলেন? কেন? এসব তো অামি এক জন দর্শক হিসেবে লাইক করি না, অামার মতো এমন হাজার লাখো কোটি দর্শক অাছেন দুনিয়ায়। যারা এসব পছন্দ করেন না।
কেন, একজন সমুজ্জ্বল সফল নারীর গল্প দিয়ে কি নাটক সিনেমা হয় না? নারীরা কি শুধু প্রেমিকা? শুধু হেসে খেলে, দুষ্টামি বান্দ্রামী, দশটা প্রেম পিরিতি করে বেড়ায়? ছেলেদের ঠকায়? এ ছাড়া অন্যকোন ক্যারেক্টার কি অাপনারা খুঁজে পান না? সফল নারীদের গল্পের ঝুঁলি কি খুবই কম অাপনাদের? নকলের পিছে না ঘুরে, ঘুরেন না একদিন এই বাংলাদেশ টা! কেনই বা অাপনারা নারী শিল্পীরাই এসব মেনে নেন?
অার, ছেলেদের ক্যারেক্টার কি শুধু মেয়েদের পেছনে ঘোরা? বদমাইশি করা? মিথ্যা কথা বলা? সন্ত্রাসী করা? একটা ছেলেও তো অনেক কষ্টে বড় হয় সফল হয়, এসব চিন্তার বাইরে কি বের হতে পারেন না অাপনারা? কি শিখবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অাপনাদের এই নাটক সিনেমা থেকে? খালি স্কুল কলেজ পালাইয়া কেমনে প্রেম করবে অার ছেকা দিবে এইগুলা?
এর পরিবর্তন অানেন। অান্দোলন অাপনাদের করতে হবে না। দর্শক অামরা।
যাচাই করবো অামরা। পক্ষে বলব অামরা।
লেখক-সাংবাদিক
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন