হতাম যদি রাষ্ট্রনায়ক…!
সাফাত জামিল শুভ : স্বাধীনতার পর বারবার ক্ষমতার পালাবদল আর প্রতিহিংসার রাজনীতির ফলে দেশের উন্নয়ন কাজগুলো বিঘ্নিত হয়েছে নানা সময়। যেন কোন সমস্যাই শেষ হতে চায়না। বিদ্যুৎ সমস্যার জটিলতা থেকে বের হতে চাইলে, সামনে দাঁড়ায় যানজট সমস্যা। আবার তা থেকে উত্তোরণের চিন্তার পর সামনে আসে কোটি বেকারের সমস্যা। মনে রাখতে হবে, অন্তহীন এ সমস্যা কিন্তু মোকাবেলার “অযোগ্য” নয়। সেজন্য ধৈর্য্য ধারন ও সহনশীলতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোন বিষয় না বুঝেই কট্টর বিরোধিতা করা যেন আমাদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। এ মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
আমি জানি, একদিনে এদেশকে স্বর্গ বানানো যাবে না এবং সকল সমস্যার সমাধান হয়তো রাতারাতি করা যাবে না। তবে একদিনে নয়, এক মুহূর্তে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে যার প্রতিক্রিয়া হবে সুদূরপ্রসারী।
যদি আমাকে ‘একদিনের ক্ষমতা’ দেয়া হয়, তবে এই স্বল্প সময়ে আমি কী কী কাজ করতে পারি, তা ভেবে আনন্দ পাই মাঝে মাঝে। কারণ এ ভাবনায় তো কারো ক্ষতি হবেনা। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার চিন্তা-ভাবনা অনেকটা শিক্ষাকেন্দ্রিক। তবে এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলোর বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে পারলে অবশ্যই সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আসবে বলে বিশ্বাস করি। প্রথমেই বলে রাখি আমি হিন্দি ফিল্মে দর্শকের হাততালি পাওয়ার মতো কোনো কাজ করব না। যদিও প্রস্তাবনাগুলো কারো কারো নিকট কঠোর মনে হতে পারে, সেক্ষেত্রে স্মরণ করেছি উইলিয়াম শেকসপীয়রের মহান উক্তির কথা- “I have to be Cruel, only to be Kind”।।
প্রস্তাবনা ::
১. জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বরের মাধ্যমে ফেসবুক আইডি ভেরিফাই :
বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি তথা ফেসবুক নির্ভর। ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ফেসবুকে ‘ফেমাস’ হওয়ার নামে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন থাকায় উৎসাহিত হয়ে অনেকেই সেদিকে ঝুঁকে পড়ছে। বর্তমান বাস্তবতায় নারীর অবাধ স্বাধীনতার নামে নারীকে পণ্যে পরিণত করার নবীনতম প্রয়াস এটি। এটি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে শিশু কিশোরদের মানসিক বিকাশে চরম বিঘ্ন ঘটবে যা ইতোমধ্যে দৃশ্যমান।
২. কোচিং প্রাইভেট নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা প্রত্যাহার :
পড়াশোনাকে “দৌড় প্রতিযোগীতায়” পরিণত করার দায়ভার শিক্ষক এবং অভিভাবক সমাজকেই নিতে হবে। বেশি নম্বর পাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রাইভেট টিউটর কিংবা কোচিং এর দিকে ঝুঁকে পড়েছে প্রজন্ম। কিন্তু এই নম্বর পাওয়ার যুদ্ধে সৃজনশীলতার কোন বিকাশ ঘটছেনা। শিক্ষা পদ্ধতির বারংবার পরিবর্তন শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছে, যার প্রমাণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলোর শোচনীয় ফলাফল। কোচিং বন্ধের আইনটির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধ :
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন ‘রঙ’ এর নামে পক্ষ-বিপক্ষ তৈরী করে রাজনীতিতে অংশ নিচ্ছেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে ব্যাপারটি খুব বেমানান। এখন সময় যার যার অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতি-কে এগিয়ে নেবার।শিক্ষকদের মধ্যেই যদি পক্ষ-বিপক্ষ,দলাদলি থাকে, তবে ছাত্র সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দল হওয়া তো অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। ফলে শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ ব্যাহত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মানসিকতার পরিবর্তন জরুরী।
৪. কর্মমুখী শিক্ষানীতি :
উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মমুখী শিক্ষাপদ্ধতি বিদ্যমান। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে শিক্ষার্থীরা এধরণের কোন সুযোগই পায়না। ফলে অবসর সময়ে হতাশা ও চিন্তা-চেতনার বিপর্যয় থেকে বিপথে গমন করে। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের কর্মকান্ডে তাদেরকে সম্পৃক্ত করা গেলে অবশ্যই এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব।
৫. বই পড়ায় উতসাহিত করা :
পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বিশেষ করে স্কুল-কলেজ গুলোতে কবিতা,গল্প,মুক্তিযুদ্ধ,সাহিত্যের বই চর্চার প্রচলন করা উচিত। এসব বইগুলোর মধ্য হতে প্রতি ক্লাসে প্রতিযোগীতার আয়োজন করা যায় এবং পুরস্কারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শিক্ষার প্রতি ভালোবাসা এবং আনন্দময় শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
৬. ডিবেটিং ক্লাব প্রতিষ্ঠা :
প্রতিটি স্কুল, কলেজে ডিবেটিং ক্লাব প্রতিষ্ঠার আদেশ দেয়া হবে, যার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে সমাজের প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো সম্পর্কে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে।ফলে শিক্ষার্থীরা শৈশব থেকেই সচেতন মন-মানসিকতা নিয়ে বড় হবে।
৭. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান নিয়োগে পরিবর্তন :
প্রতিষ্ঠান পরিচালনা আর শিক্ষকতা দুটি দুই বিষয়। এক্ষেত্রে বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আর্মি পারসন দিয়ে পরিচালনা করা যেতে পারে, সেক্ষেত্রে দূর্নীতি ও দলাদলি ব্যপক হারে কমবে বলে আশা করি।
৮. শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষক :
বর্তমান প্রজন্মের সাথে পরিবার এবং শিক্ষক উভয়েরই দূরত্ব বেড়েছে। একথা অনস্বীকার্য যে, ব্যক্তিগত রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকে পড়া,অযোগ্যদের নিয়োগ প্রভৃতি কারণে শিক্ষকরা ছাত্রদের প্রতি আগের মত মনোযোগী নয়। বলা যায়- বর্তমানে শিক্ষার মহান ব্রত নিয়ে কেউ শিক্ষকতা করেননা,বরং শিক্ষকতার নামে সরকারি চাকুরী করেন।
৯. শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা :
অধিকাংশ স্বনামধন্য কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শহরাঞ্চলে অবস্থিত। আবাসনের সুব্যবস্থা না থাকায় দূর দূরান্ত থেকে আগত শিক্ষার্থীদেরকে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন মেস বা প্রাইভেট হোস্টেলে থাকতে হয়। ক্লাস ব্যতীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনপ্রকার নজরদারীই থাকেনা তাদের উপর। এ সুযোগে দুষ্কৃতকারীরা নিজেদের অপকর্ম সাধন করতে এসব শিক্ষার্থীদেরকে ব্যবহার করছে। মনের অজান্তে কিংবা লোভের ফাঁদে পড়ে অনেকেই যুক্ত হচ্ছে দেশবিরোধী কর্মকান্ডে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আবাসন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নজরদারি থাকতে হবে।
মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে এ কাজগুলো দেরীতে হলেও একদিন বাস্তবায়ন হবে। সকল বিষয়ে একে অপরকে তথা সরকারকে দোষারূপের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সহনশীলতা ও যথাসম্ভব ছাড় দেয়ার মন-মানসিকতা সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেই কেবল দেশের বাঁধাহীন উন্নয়ন সম্ভব।
লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন