হুমায়ূন আহমেদের শেষ সময়ের কিছু অম্লমধুর স্মৃতি
আজ নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। প্রয়াত এই সাহিত্যিকের জন্মদিন উপলক্ষে দেশজুড়ে চলছে নানা আয়োজন। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যম – সর্বত্র ভক্ত ও গুণগ্রাহীরা এই কথাশিল্পীকে তার মৃত্যুর পরও জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ভুলছেন না। কেউ আবার তার সঙ্গে স্মৃতি রোমন্থনে ব্যস্ত।
এমনই একজন হলেন প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন। তিনি খুব কাছ থেকে হুমায়ূন আহমেদের জীবনের শেষ সময়ে তাকে দেখেছেন।
ফেসবুকে হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করে তার স্মৃতিগুলো তুলে ধরলেন সবার কাছে:
‘আজ হুমায়ূন আহমেদ স্যার এর ৬৮ তম জন্মদিন। যার নামের আগে কোনো বিশেষণ দেয়ার এর প্রয়োজন হয় না। তার সৃষ্টির সঙ্গে পরিচয় দীর্ঘদিনের হলেও ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল খুব অল্প দিনের। যখন তিনি চিকিৎসা করতে নিউইয়র্কে যান, তখন থেকেই। এখানে বলে রাখা ভালো, ওই সময় আমি নিউইয়র্কের বাসিন্দা ছিলাম এবং চ্যানেল আই এর সঙ্গে কাজ করতাম। চ্যানেল আই থেকেও বলা হয়েছিল ওনার নিয়মিত খোঁজ খবর রাখার জন্য। স্যার এর যে কোনো প্রয়োজনে এগিয়ে যাবার জন্য।
প্রথমে যে বাসায় তিনি স্থায়ীভাবে উঠেছিলেন ওই বাসাটিও একদিনের মধ্যে আমি ভাড়া নিয়ে দিয়েছিলাম। নিউইয়র্কের বাঙালী রিয়েল এস্টেট ব্রোকার সরাফ সরকার হুমায়ূন স্যারের নাম শোনার পর খুব অল্প ভাড়ায় বাসাটি নিয়ে দিয়েছিলেন। এমন কি তিনি তার ফি পর্যন্ত নেননি।
যাই হোক, স্যার ওই বাসায় যাবার পর থেকে প্রথম ৩/৪ মাস প্রায়ই যেতাম, স্যার এর সাথে অনেক গল্প, আড্ডা হতো। এরপর আর খুব একটা যাওয়া হয়নি। কেন যায়নি সেই প্রসঙ্গে আর না যাই, তবে অনেকটা ইচ্ছে করেই যেতাম না। কিন্তু স্যার এর সাথে গল্প আড্ডা খুব মিস করতাম। কোনো ঘটনার গল্প শুরু করলে স্যার সেই প্রসঙ্গে অনেক প্রশ্ন করতেন। প্রশ্ন করে করে যে কোনো কথার কত গভীরে যাওয়া যায় – এটা স্যার সাথে গল্প না করলে হয়তো বুঝতামই না।
এই অল্প কয়দিনের পরিচয়ে বুঝতে পেরেছিলাম স্যার আমাকে বিশেষ পছন্দ করতেন। এরই স্বীকৃতি স্বরূপই হয়তো স্যার তাঁর মৃত্যুর আগে আগে ২০১২ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত
‘যখন নামিবে আঁধার’ বইয়ের উৎসর্গের তালিকায় আমার নামটিও রেখেছিলেন।যা ছিল আমার জন্য পরম পাওয়া। এই বিষয়টিও আমি জেনেছিলাম বই প্রকাশের প্রায় একমাস পর। স্যারকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করতেই উনি বললেন , “অন্যজনের কাছ থেকে জেনে তুমি এখন যে আনন্দ টা পেয়েছো, আমি আগে বলে দিলে হয়তো এতটা আনন্দ পেতে না।”
গল্প করে অল্প কয়দিনেই স্যারের অনেক আনন্দ দুঃখ কষ্ট কিছুটা হলেও অনুভব করেছি। মৃত্যুপথযাত্রী এই মানুষটিকে পুঁজি করে কিছু মানুষের ব্যবসা করার প্রবণতাও দেখেছি।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই স্যার এর মৃত্যুর খবরও চ্যানেল আই এর মাধ্যমে আমার কণ্ঠে জাতিকে সর্বপ্রথম আমিই জানিয়েছিলাম। স্যারের দুঃখজনক মৃত্যুর পর এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে, অপকর্মের অংশীদার কয়েকজনকেও দেখেছি অন্যদের দায়ী করে বক্তব্য দিতে। যারা একদিন স্যার এর সাথে কথা বলেছেন তারাও স্মৃতিচারণ করে লেখা দিয়েছেন। আজ পর্যন্ত আমি কোথাও কোনো কথা লিখিনি বা বলিওনি। স্যার এর আত্মার শান্তির জন্য হয়তো কোনোদিনই বলবো না। আমার বিশ্বাস বিতর্কে অশান্তিই বাড়ে।
কিন্তু বিতর্ক যে উঠবে এটা আমি চ্যানেল আই এর একজন কর্ণধারকে ‘মৃত্যুর আগে’ই টেলিফোনে বলে রেখেছিলাম। কেন উঠবে তাও বলে রেখেছিলাম। কারণ চ্যানেল আই থেকে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল আমি কেন শেষের দিকে যোগাযোগ রাখিনি, তাই বলতে বাধ্য হয়েছিলাম।
এখন মাঝে মাঝে মনে হয় , ওই সময় আমি সরে এসে ভুলই করেছি। নইলে হয়তো স্যার কাছ থেকে আরও অনেক কিছু শিখতে পারতাম।
আর একটি আফসোস আমার আজীবন রয়েই যাবে। তাহলে স্যার ক্যাসিনোতে গিয়ে আমার কাছে ‘ব্ল্যাক জ্যাক’ খেলা শিখতে চেয়েছিলেন। আমি স্যারকে বলেও ছিলাম যে ক্যাসিনোতে নিয়ে গিয়ে শিখাবো। স্যার ক্যাসিনোতে গিয়েও ছিলেন কিন্তু ওই সব কারণে আমার আর সাথে যাওয়া হয়নি।
তবে স্যার ব্ল্যাক জ্যাক খেলা শিখেছিলেন কিনা, তা আজও জানা হলো না।
স্যারের আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন