কিভাবে বুঝবেন আপনি একজন মাথানষ্ট লেভেলের বাংলাদেশী?
১) আপনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একেবারে বেহায়া, নির্লজ্জ্ব টাইপের সাপোর্টার। দল ৫৪ রানে অলআউট হলেও আপনি টেইল এন্ডারদের নেয়া ওই একটা রান বা নয় উইকেটে হারার পর ওই একটা উইকেট পড়া নিয়ে উল্লাসিত হন( যদিও বন্ধুমহলে সমমনাদের সাথে ইচ্ছেমত গালিগালাজ করেন- তবে সেটা ভালবাসার ক্ষোভ থেকে)।
২)নিজের বাবার খুনীকে আপনি হয়ত মাপ করে দিলেও দিতে পারেন,কিন্তু এই জীবনে রাজাকারদের ক্ষমা করা আপনার পক্ষে সম্ভব না। সময়ের পরিক্রমায় একাত্তরে পাকসেনাদের পক্ষে যুদ্ধ করা বদমায়েশটা শিল্পপতি হিসেবে দেখা দিলেও আপনার চোখে সে স্রেফ রাজাকারের বাচ্চা রাজাকার। এর মৃত্যুতে আপনার একটাই আফসোস- হারামীটাকে তার পাওনা বুঝিয়ে দেয়া হলনা।
৩) আপনি খেলার সাথে রাজনীতি মিশিয়ে একাকার করে ফেলেন। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের খেলা আপনার কাছে স্রেফ খেলা না-তার চেয়ে অনেক বড় কিছু।একজন পাকি খেলোয়াড় যতই ভালো খেলুক, প্রাণ থাকতে তার প্রশংসা করা আপনার পক্ষে সম্ভব না।আমাদের ক্যাপ্টেন মাশরাফি যখন মাথায় বাংলাদেশের পতাকা জড়িয়ে বলে-” দিস উইন ইজ ফর দা ফ্রিডম ফাইটারস”, দর দর করে আপনার চোখে পানি নামে।
৪) খেলা শুরুর আগে , কোন অনুষ্ঠানের সময় বা টিভিতে যখনই “আমার সোনার বাংলা” শুনতে পান, লক্ষ কোটিবার শোনা এই গানটার সুর আপনার মনের ভেতর ঠিক একই রকমের অনুভূতি আনে, যেটা স্কুলের এসেম্বলিতে সেই পিচ্চি কালে হত। আপনার গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যায়, বুক ধুকপুক করে, দেশের জন্যে কিছু একটা করতে মন ছটফট করে। সিনেমা হলে জাতীয় সংগীতের সময় সামনের সীটে কেউ যদি বসে থাকে, সে দেশের রাজা হলেও তার সীটে লাত্থি বসিয়ে দিতে আপনি পেছপা হন না।
৫)”পাকিস্তান” নামক রাষ্ট্র এবং সেই দেশের কোনকিছুর প্রতি আপনার কোন প্রেম নেই। গুটিকয়েক ভালোমানুষ বাদে একটা আস্ত দেশ যে বদমায়েশ হতে পারে- এটা পাকিস্তানকে দেখার পর আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন। “আমি পাকিস্তানিদের অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ ফুল নিয়ে আসে তখনও”-হুমায়ূন আজাদ স্যারের এই উক্তি আপনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন।
৬) আপনি ব্যালেন্স করে চলা লোক না। রাজাকার যেদিন ফাঁসিতে ঝোলে সেদিন আপনি প্রকাশ্যে আনন্দ প্রকাশ করেন, পাকিস্তানের একাত্তরের কর্মকাণ্ডকে গালি দিয়ে সেটাকে ব্যালেন্স করতে ভারতের সাম্প্রতিক দাদাগিরিকে টানেন না। ” অন্য দেশকে ঘৃণা করার একটা, দুইটা, একশটা কারণ থাকতে পারে কিন্তু পাকিস্তানকে ঘৃণা করার কারণ বত্রিশ লক্ষ”- এই আপ্তবাক্য আপনি মেনে চলেন। প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে অবস্থান না নেয়া সব মানুষকে আপনি সন্দেহের চোখে দেখেন, তা সে যে-ই হোক না কেন।
৭) “আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি। এটা কোন আদর্শের কথা নয়, এটি একটি বাস্তব কথা। মা-প্রকৃতি আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যে মালা-তিলক-টিকিতে কিম্বা টুপি-লুঙ্গি-দাড়িতে তা ঢাকবার জো-টি নেই” বাঙালির জ্ঞানতাপস ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর এই অমর বানীটি আপনি লালন করেন।
৮)”সংখ্যালঘু” শব্দটি আপনার কাছে একটি গালি, কেউ “মালাউন” শব্দটি উচ্চারণ করলে সে আপনার বিশ বছরের পুরোন ক্লাসমেট হলেও লাত্থি মেরে তাড়িয়ে দিতে আপনি এক সেকেন্ড দ্বিধা করেন না।এই বাংলার মাটিতে একজন মুসলমান বাঙালির যতটুকু অধিকার, একজন অবাঙালি, অমুসলিম বাংলাদেশিরও ততটাই অধিকার- এটা আপনি বিশ্বাস করেন। “ধর্মবিশ্বাস/অবিশ্বাস যার যার, দেশ সবার” এই মূলমন্ত্র আপনার প্রাণে বাজে প্রতিনিয়ত।
৯) জীবিকার তাগিদে সাড়ে সাত হাজার মাইল দূরের কোন উন্নত দেশে হয়ত আপনি স্থায়ীভাবে বসতি গড়েছেন, দেশে ফেরা হবেনা কোনদিনও। নতুন দেশে সব আছে আপনার, টাকাপয়সা, ক্ষমতা-প্রতিপত্তি, খ্যাতি- সবকিছু। তবুও, প্রতিদিন আপনার একবার হলেও মনে হয়, ধুর, সব ছেড়েছুড়ে চলে যাই মাতৃভূমিতে! বাস্তবতার কঠোরতায় সেটা হয়ত করা হয়না, কিন্তু আপনার প্রবাসী দেহের হৃৎপিণ্ডে ছুরি বসালে যে রক্ত বেরূবে তার রঙ একটা না, দুটো- সবুজ আর লাল!
১০) আপনার জীবনের সবচাইতে বড় অনুপ্রেরণার নাম মুক্তিযুদ্ধ, সর্বকালের সেরা বাঙালির নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।ছয়ফুট লম্বা এই লোকটার শত ভুলত্রুটি ছাপিয়ে যে মুর্তিটি আপনার চোখে ভাসে তা হচ্ছে এক যুগস্রষ্টা নেতার, যে কিনা ভুট্টো-ইয়াহিয়ার সব হিসাব নিকাশ পালটে দিয়ে স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে জাগিয়ে তুলেছিলো একটি ঘুমন্ত, অনিচ্ছুক জাতিকে। মুক্তিযুদ্ধ আর বঙ্গবন্ধু- এ দুটো জিনিসকে কোন রাজনৈতিক দলের ক্ষুদ্র পরিসরে বেঁধে রাখার মত নির্বোধ আপনি নন। আপনি জানেন, ইতিহাস এদের স্থান বিশ্বমানবতার বৃহৎ পরিসরে- সুনির্দিষ্ট কোন দল বা জাতির ক্ষেত্রে নয়।
এছাড়াও আরও কিছু ইনফর্মাল বৈশিষ্ট্য আছে। যেমনঃ
ক) আপনি ব্লগ আর ফেসবুকে ছাগু পিটিয়ে বিমলানন্দ পান- এদের ক্ষেত্রে আপনার ভেতরে কোন মানবতা, শালীনতা ইত্যাদি সুশীলিয় বৈশিষ্ট্য কাজ করেনা।
খ) আশেপাশের দেশের কোন সেলিব্রিটি যখন বাংলাদেশকে নিয়ে কটু মন্তব্য করে, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে আপনি তার পেইজের মায়েরে বাপ সেভেন আপ করে দেন।
গ) দেশের ট্রাফিক জ্যাম,অপরাজনীতি, দুর্নীতি, হিপোক্রেসিতে মহাবিরক্ত হয়ে প্রায়ই আপনি মাথা গরম করেন- কিন্তু দিন শেষে এই দেশকে নিয়েই আপনার সব স্বপ্ন বেঁচে থাকে।
ঘ) উপরের বৈশিষ্টগুলোর অর্ধেকও যদি কোন অপরিচিত অনাত্মীয়ের ভেতরে দেখতে পান, সাথে সাথে তাকে আপনার জন্ম জন্মান্তরের আত্মীয় বলে মনে হয়।
ঙ) “জয় বাংলা” আপনার কাছে দলীয় শ্লোগান না, মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির প্রাণের রণহুংকার!
লেখক: মাসরুফ হোসেন
![](https://amaderkonthosor.com/wp-content/uploads/2024/06/cats6-1.jpg)
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
![](https://amaderkonthosor.com/wp-content/uploads/2017/08/cats-5.jpg)
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
![](https://amaderkonthosor.com/wp-content/uploads/2017/08/বঙ্গবন্ধু.jpg)
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
![](https://amaderkonthosor.com/wp-content/uploads/2016/12/তসলিমা-নাসরিন-507x350.jpg)
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন