তনুর বাবার উকিল নোটিশে ‘দায় এড়ানো’ জবাব
কুমিল্লা: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার ময়নাতদন্ত নিয়ে তার বাবা ইয়ার হোসেনের পাঠানো লিগ্যাল নোটিশের জবাব দিয়েছেন ময়নাতদন্তকারীসহ ৩জন চিকিৎসক।
বুধবার ছয় দিন পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মহসিন-উজ-জামান চৌধুরী, ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা এবং তনুর প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক শারমিন সুলতানা এ জবাব দেন।
এর আগে ২৪ মে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন তাদের নোটিশ পাঠান। পরদিন ২৫ মে তিন চিকিৎসক নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
তনুর বাবা ইয়ার হোসেনের পক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলীর পাঠানো ওই নোটিশে তনুর মৃতদেহের প্রথম ময়নাতদন্তে ধর্ষণের আলমাত না পাওয়া ও দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে কালক্ষেপণ করায় কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মহসিন-উজ-জামান চৌধুরী বাংলামেইলকে জানান, কুমিল্লার পিপির সঙ্গে পরামর্শ করে ডাক বিভাগের গ্যারান্টেড এক্সপ্রেস সার্ভিসের মাধ্যমে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলীর আগারগাঁও, ঢাকার ঠিকানায় তিনজনের পৃথক খামে জবাব পাঠানো হয়েছে। অনুলিপি স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও কুমিল্লার পিপিকে দেয়া হয়েছে।
অধ্যক্ষ মহসিন-উজ-জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি ময়নাতদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। তাই কোনো ভুল প্রতিবেদন দেয়ার সুযোগও আমার নেই।’
ফরেনসিক বিভাগীয় প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা তার জবাবে বলেছেন, তনুর প্রথম ময়নাতদন্তের দায়িত্বে ছিলেন ডা. শারমিন সুলতানা। তাকে আমার নির্দেশনা দেয়ার সুযোগ নেই। আর দ্বিতীয় ময়না তদন্তের জন্য আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ৩ সদস্যের বোর্ডের মাধ্যমে গত ৩০ এপ্রিল তদন্ত সম্পন্ন করা হয়। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত বোর্ডের সভাপতি হলেন ডা. কামদা প্রসাদ সাহা। এক নম্বর সদস্য গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক সদস্য ডা. করুনা রানী কর্মকার এবং ২নং সদস্য ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. মো. ওমর ফারুক।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, দ্বিতীয় ময়না তদন্তকালে সংগ্রহ করা নমুনার ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন বোর্ডের কাছে পাঠানোর জন্য তদন্ত কর্মকর্তার কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পৌঁছালে দ্রুত দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ডা. কামদা প্রসাদ সাহা এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রথম ময়নাতদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নই বলেই দ্বিতীয় ময়না তদন্ত প্রতিবেদন এখনো দেয়া হয়নি। সে কারণেই লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করা বিষয়গুলো বাস্তবসম্মত নয়।
লিগ্যাল নোটিশের জবাবে ডা. শারমিন সুলতানা বলেন, গত ২১ মে তনুর (১৯) লাশের ময়নাতদন্ত করার জন্য সুরতহাল প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা এসআই সাইফুল ইসলাম, পুলিশ কনস্টেবল মোবারক হোসেনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে লাশ পাঠানো হয়। ওইদিন রোস্টার অনুযায়ী ময়নাতদন্তের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে দেশের সব মেডিকেল কলেজের নিয়মেই তদন্ত সম্পন্ন করি। সঠিক নিয়মেই সুরতহাল প্রতিবেদন পর্যালোচনা করি।
সুরতহাল প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখতে পাই, প্রতিবেদনটি কুমিল্লা সিএমএইচ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক লে. কর্নেল সেলিনা বেগম, তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম এবং বড়ভাই আনোয়ার হোসেনসহ ৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যসহ প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। তাতে লাশে যে জখমের কথা উল্লেখ আছে তার সঙ্গে মলদ্বার ও যৌনাঙ্গ স্বাভাবিক দেখা গেলো বলেও সুরতহাল প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম উল্লেখ করেন। আমি ভালোভাবে প্রতিবেদন ও লাশের জখমগুলি মিলিয়ে দেখি। আমি আমার বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞানানুসারে সব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করি।
ডা. শারমিন সুলতানা আরো বলেন, ‘আমি আট বছর ধরে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা করে আসছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশে প্রাপ্ত দু’টি স্নাতকত্তোর ডিগ্রি অর্জন করেছি। আমার কর্মজীবনে সোহাগী জাহান তনুসহ শত শত লাশের ময়না তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেছি। তনুর মৃতদেহে কোনো Sign of struggle ও Marks of Violence ছিল না। যেহেতু তার যৌনাঙ্গ স্বাভাবিক (Healthy) এবং Microbiological Test- High Vaginal swab (HVS) for detection of spermatozoa-তে No spermatozoa is seen এবং ভিসেরার chemical analysis, heart এর histopathological examination, autopsy findingsসহ সবকিছু বিবেচনা করে No sign of forceful sexual intercourse before death was found এই মন্তব্য করি এবং Chemical analysis প্রতিবেদন পেয়ে No definite opinion as to the cause of death Could be given মন্তব্য দেই।
লিগ্যাল নোটিশের জবাবে ডা. শারমিন সুলতানা আরো বলেন, ‘প্রথম ময়নাতদন্তের সময় আমার কাছে পাঠানো সুরতহালে তদন্ত কর্মকর্তা ডিএনএ পরীক্ষার কোনো চাহিদাপত্র দেননি। সাধারণত সুরতহালে পুলিশের তরফ থেকে চাহিদাপত্র দেয়া না হলে ডিএনএ এনালাইসিসের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয় না। আপনার পাঠানো লিগ্যাল নোটিশে প্রথম ময়নাতদন্তের সাথে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের যে গরমিল পাওয়ার বিষয় উল্লেখ করেছেন তা সঠিক নয়।’ আমার জানামতে, দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্যে গঠিত বোর্ড এখনো প্রতিবেদন পাঠায়নি।
আত্মপক্ষ সমর্থন করে ডা. শারমিন সুলতানা জবাব দেন, আমি সোহাগী জাহান তনুর ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে কোনো মিথ্যা তথ্য দেইনি। আপনার client জনাব ইয়ার হোসেন সোহাগী জাহান তনুর প্রথম ময়না তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে আমার সম্পর্কে আপনার কাছে যে তথ্য দিয়েছে তা সঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু মরদেহ কুমিল্লা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে তার বাসার পাশে একটি জঙ্গলের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। পরদিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. শারমিন সুলতানা তার প্রথম ময়নাতদন্ত করেন। ডিএনএ আলামত সংগ্রহের জন্য মামলার দ্বিতীয় তদন্তকারী সংস্থা ডিবির আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩০ মার্চ কবর থেকে তনুর মরদেহ উত্তোলন করা হয়। তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ আলামত সংগ্রহ করে।
গত ৪ এপ্রিল তনুর প্রথম ময়নতদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। এতে তনুকে হত্যা কিংবা ধর্ষণের আলামত ছিল না বলে জানানো হয়। তাতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। এরই মধ্যে গত ১৬ মে রাতে ডিএনএ প্রতিবেদনে তনুকে হত্যার আগে ধর্ষণ করার আলামত পাওয়ার খবর সিআইডি থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের জানানো হয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
উপদেষ্টা হাসান আরিফ আর নেই
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়েরবিস্তারিত পড়ুন
গাড়িচাপায় বুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যু: ডোপ টেস্টে গ্রেপ্তার দুজন ‘পজিটিভ’
প্রাইভেট কার চাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদের নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তারবিস্তারিত পড়ুন
সেন্টমার্টিনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান
দেশের প্রবাল সমৃদ্ধ একমাত্র দ্বীপ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সরকার পর্যটকবিস্তারিত পড়ুন