অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার
নানা অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার। অপ্রতুল চিকিৎসক, দায়িত্বে অবহেলা, ওষুধের কৃত্রিম সংকট, প্যাথলজিতে কালক্ষেপণ, কর্মকর্তাদের অসৌজন্যমূলক ব্যবহারসহ নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার নিত্য সাক্ষী শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি বারবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজরে আনার চেষ্টা করেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন আসছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শুধু তাই-ই নয়, রাতের বেলায় কোনো সমস্যা দেখা দিলে ডিউটিরত চিকিৎসককে না পেয়ে ফেরত আসতে হয় শিক্ষার্থীদের। রুমে থেকেও তারা দরজা খুলতে চান না। এ সময় ডিউটিতে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ঘুমিয়ে সময় পার করেন।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে এক সপ্তাহ সরেজমিনে পর্যবেক্ষণে এমনই চিত্র দেখা গেছে। সরেজমিনে একদিন বেলা সাড়ে ১১টায় অ্যালোপ্যাথিক বিভাগে দেখা যায়, ৯ জন চিকিৎসক ডিউটিতে রয়েছেন মর্মে নোটিশ বোর্ডে লেখা। অথচ চেম্বারে গিয়ে দেখা গেল মাত্র ৫ জনের।
অন্যদিকে হোমিওপ্যাথিক বিভাগে তিনজন চিকিৎসক ডিউটিতে থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ২ জন। একই অবস্থা দেখা যায় এর দুদিন পরও। বেলা সোয়া ১১টার চিত্র এটি।
ফলিত পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র আবু রাকিব মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, গত ৪ আগস্ট তার এক বন্ধুকে নিয়ে রাত ৩টায় হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সিরিয়াস রোগী নিয়ে চিকিৎসককে দরজায় বারবার নক করলেও তিনি দরজা খুলেননি। প্রায় আধা ঘণ্টা পর এক কর্মচারী ঘুম থেকে উঠেন, উনিসহ গিয়ে আবার কয়েকবার দরজায় নক করলে চিকিৎসক দরজা খুলেন।
মেডিকেল সেন্টার সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের ১ লাখ ৪২ হাজার ১১০ জনের বিপরীতে মেডিকেল সেন্টারে ৬ জন খণ্ডকালীনসহ অ্যালোপ্যাথিক বিভাগে মোট চিকিৎসক রয়েছেন ২৮ জন। আর হোমিওপ্যাথিক বিভাগে রয়েছেন ৬ জন। এছাড়াও ২৪ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা ৪টি। হাসপাতালে চক্ষু চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র একজন। দন্ত বিভাগে দুইজন আর নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে মাত্র একজন চিকিৎসক নিয়োজিত রয়েছেন। যিনি সপ্তাহে মাত্র দুইদিন বসেন। দেড় লাখ মানুষের বিপরীতে তা একেবারেই অপ্রতুল।
তারপরও যারা রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও দায়িত্ব পালনে ব্যাপক উদাসীনতার অভিযোগ রয়েছে। রোগীর অবস্থা সিরিয়াস দেখেও আড্ডায় থাকেন চিকিৎসকরা। মেডিকেলে সময় না দিয়ে নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন চেম্বারে সময় দিয়ে থাকেন বেশ কয়েকজন চিকিৎসক।
প্যারাসিটামল ও নাপা ছাড়া কোনো ওষুধ পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলমোহরযুক্ত ওষুধ বাহিরের বিভিন্ন ফার্মেসিতে পাওয়া যায় বলেও কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।
হোমিওপ্যাথিক বিভাগেও নিয়মিত চেম্বারে বসেন না এখানকার চিকিৎকরা। নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা দেড়েক পরও চেম্বারে বসেননি এমন নজিরও রয়েছে কয়েকজন চিকিৎসকের ক্ষেত্রে। অথচ যাওয়ার সময় আধাঘণ্টা আগে চেম্বার ছাড়েন তারা। শুধু তাই নয় রোগী দেখে টাকা নেয়ারও রীতিমতো অভিযোগ কয়েকজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। টাকা না দিলে তারা চিকিৎসা দিতে গড়িমসি করে থাকেন। আর একজন চিকিৎসক থেকে এক ছাত্র একবার ওষুধ নিলে অন্য কোনো চিকিৎসক তাকে আর দেখেন না। পূর্বের চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকলেও দেখেন না।
তবে প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. এ কে এম আব্দুর রহমান মনে করেন টাকা দেয়ার জন্য রোগীরাই দায়ী। ভর্তির সময় টাকা পে করতে হয় নামমাত্র তা জানার পরও কেন টাকা দেবেন? আর একজনকে দেখানোর পর অন্য চিকিৎসক না দেখার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এটা তো অ্যালোপ্যাথিক নয় যে, কেউ চাইলে চিকিৎসক চেঞ্জ করে ওষুধ নিয়ে নিবে। হোমিওতে এটা করা কঠিন। ধারাবাহিকভাবে একজন চিকিৎসকের ওষুধ নিতে হয়।
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রী সাবিনা আক্তার বলেন, ৬ মাস আগে একবার হিমোগ্লোবিন পরীক্ষার জন্য গেলে প্যাথলজির লোকজন বলেন যন্ত্রটি নষ্ট আছে। সম্প্রতি গেলেও একই উত্তর দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে প্রধান মেডিকেল অফিসার বলেন, তাড়াহুড়ো করলে অনেক সময় পরীক্ষার ফলাফল বিঘ্নিত হতে পারে। তাই একটু সময় নিয়েই দেওয়া হয়।
২৪ শয্যার ওয়ার্ডে দেখা যায় মাত্র ৫টি বেড ভালো আছে বাকিগুলো ভাঙা, নষ্ট। ওয়ার্ডের মধ্যেই ভাঙাচুরা বেডগুলো রাখা হয়েছে। চারদিকে সিগারেটের খোসা পড়ে আছে। ময়লা আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। যার দরুণ মশার উৎপাতও বেশি। এছাড়াও বেহাল অবস্থা স্যানেটেশন ব্যবস্থার। নিয়মিত পরিষ্কার করে না কর্মচারীরা। যার কারণে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
সার্বিক বিষয়ে প্রধান মেডিকেল অফিসার বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ভালো সার্ভিস দিতে। ১৫টি ভালো কোম্পানি থেকে মেডিকেলের জন্য ওষুধ নেওয়া হয়। বড় সমস্যা না হলেতো সাধারণ ওষুধ দেওয়া হবে। আর চিকিৎসকরা হয়তো অন্য রুমে থাকেন তাই তাদের রুমে পাওয়া যায় না। মেডিকেলের বিষয়েই পরামর্শের জন্য একে অন্যের রুমে গিয়ে থাকেন।
এ বিষযে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, সমস্যাসমূহ অবশ্যই বিবেচনার বিষয়। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ থামাতে পুলিশের অভিযান
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের দখল করে রাখা অ্যাকাডেমিক ভবনবিস্তারিত পড়ুন
১১ মের মধ্যে এসএসসির ফলাফল প্রকাশ
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল আগামী মেবিস্তারিত পড়ুন
২৮ এপ্রিল খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
তীব্র তাপদাহে এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পরে আগামী রোববার (২৮বিস্তারিত পড়ুন