“ও বলেছে ভালো ছেলে পেলে বিয়ে করে ফেলতে…”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।
“আমার প্রেমিক যে, তার সাথে আমার ফেসবুকে একটা পেজে পরিচয়। পরিচয় পর্বটা খুব মজার হলেও আমি ওকে ঠিক পছন্দ করতাম না তখন। আর পছন্দ না করার কারণ ছিল অনেক। ও চিটাগাঙের স্থানীয় ছেলে তাই ওর কথা প্রায় সময় বুঝতামও না। আর ও একটু ফাজিল টাইপের, তাই আমি ওকে এক প্রকার সহ্যই করতে পারতাম না। কিন্তু ও যে মানুষ হিসেবে কতটা চমৎকার তা তখনো জানতাম না।
ও যখন আমাকে প্রোপোজ করলো তখন আমি খুব মানসিকভাবে বিপর্যয়ের মধ্যে ছিলাম। আমি সবসময় আমার ফ্যামিলি নিয়ে একধরনের হীনমন্যতায় ভুগতাম যার কিছু কারণ আছে সেগুলো আরেকদিন আপনাকে বলব। আমার কষ্ট গুলো না আপু দ্বিগুণ হয়ে যেত যখন আমি ওর ফ্যামিলির কথা শুনতাম। ওর ফ্যামিলি বন্ডিংটা এত সুন্দর ছিল যে আমার খুব হিংসা হত। ওর আর কেবল ২টা বোন ছিল যাদের একজন আমার সমবয়সী। আমার মনে হয় আমি ওকে হয়তো কোনদিনই ভালবাসতে পারতাম না যদি না ওর ফ্যামিলির এত সুন্দর একটা ধারণা ও আমাকে দিতো। ও আমাকে প্রায়ই বলত, ওর সবচেয়ে আপন ওর বাবা -মা। ওনারা আমাকে মেনে নিলেই চলবে আর কাউকে ও পরোয়া করেনা। মজার মজার বুদ্ধি শিখাতো কীভাবে ওর আম্মু আব্বুকে খুশি করতে হবে। আমার এসবই খুব ভাল লাগত।
তবে শুরুতে আমি ওকে আমার ভালবাসা বুঝতে দিতাম না অনেক ঝগড়া করতাম ওর সাথে। প্রায়দিনই ঝগড়া করতাম আর ও চুপচাপ থাকত। ও অনেক ফাজিল হলেও ওর মাথাটা একদম ঠান্ডা আর আমি ওর পুরো উল্টো। আমাদের এত ঝগড়ার পরেও ও আমাকে ছেড়ে যায়নি, যেতেও দেয় নি। সবচেয়ে বেশি আমি ঝগড়া করতাম চিটাগাঙের বিয়ের রীতিগুলো নিয়ে। বাবা একজন চাকুরিজীবি। তিনি যে আমার বিয়েতে এতকিছু দিতে পারবে না আমি জানতাম। আর ও কেবল বলতো ও মানিয়ে নেবে সব। কিন্তু রিলেশনের একবছরেরও আগেই ও কথা পাল্টে বললো ওর বাবা মায়ের উপরেই সব ডিপেন্ড করে। যদি ওনারা না চান তো ও বিয়ে করবেনা।
সেদিন আমি খুব কাঁদতে থাকি। আমি তো ততদিনে ওকে আর ওর ফ্যামিলিকে নিজের আপন ভেবে নিয়েছিলাম। তারপর ও আমাকে এই বলে শান্ত করে যে ও ওর সাধ্যমত চেষ্টা করবে আমাকেই বউ করতে। তারপর এসব নিয়ে আমি মাঝেমাঝেই ঝগড়া করতাম বাট ও চুপ থাকত। তারপর গতবছর ওর ইমেডিয়েট ছোট বোনটা বাসায় ধরা পড়ে। আপন কাজিনের সাথে প্রেম ছিল ওর। তখন ওর আম্মু আব্বু অনেক কাঁদছিল যা দেখে ও পাগলের মত হয়ে যায়। ও আব্বু আম্মুকে খুব ভালবাসে। এই জিনিসটা আমার খুব ভাল লাগে সবসময়। তখনো ভাল লেগেছিল।
এখন মূল সমস্যাটা দাঁড়িয়েছে এমন যে ও গতমাসে ঢাকা এসেছিল যখন তখন বলছিল আমি যেন আমার বাবা-মা পছন্দমত ছেলে পেলে বিয়ে করে নেই। তখন আমি ব্যাপারটা ফান হিসেবেই নিই। কিন্তু গতকাল সে আমাকে আবারো সরাসরি বললো ও আরো ৩-৪বছরো বিয়ে করবে না, আমি যেন অপেক্ষা না করি। আমি প্রথমে রেগে যাই কিন্তু পরে ওর কাছে শুনি ওর বোন, ওর কাজিন যারা ফেসবুকের মাধ্যমে আমার কথা আঁচ করেছে আর সবাই ওকে সরে যেতে চাপ দিচ্ছে। কারণ একটাই,আমি চিটাগাঙের না।
আপু, আপনি ওকে যেন ভুল বুঝবেন না। ও আমাকে ভীষণ ভালবাসে, কিন্তু ও আসলেই অসহায়। ও বারবার বলে ও একটা মাত্র ছেলে না হলে আমাকে নিয়ে দরকার হলে পালিয়েও যেতে পারতো, কিন্তু বাবা-মার মুখের দিকে তাকিয়ে ও কিছুই পারবেনা। আপু আমি ওর সমস্যা বুঝছি কিন্তু আমি যে অন্য কাউকেই বিয়ে করতে ভাবলেও লজ্জায় মরে যাই। যাকে ভালোবাসি যার জন্য এত স্বপ্ন সাজানো তাকে ফেলে বিয়ে কীভাবে করবো? আমার খুব অসহায় লাগছে।প্লিজ একটু সাজেস্ট করবেন?”
পরামর্শ:
দেখো আপু, পরামর্শ যখন চেয়েছো, তখন আমি সত্য কথাই বলব। সম্পর্কের বেশিদিন হয়নি, তুমি এখনো ভালোবাসায় অন্ধ, তাই অনেক কিছুই দেখতে পাচ্ছ না। কিন্তু তৃতীয় ব্যক্তির আঙ্গেল থেকে আমার চোখে অনেক কিছুই খটকা লাগছে।
আমি চট্টগ্রামে অনেক বছর ছিলাম। ৮ বছরের বেশী। তাই চট্টগ্রামের জীবনযাত্রা আমি একটু হলেও জানি। আমার বেশ কয়েকজন বন্ধু বান্ধবীরও সেখানে বিয়ে হয়েছে, যদিও তাঁরা চট্টগ্রামের নয়। চট্টগ্রামবাসীয়েরা বিয়ের জন্য স্থানীয় পাত্র-পাত্রী খোঁজে, এটা ঠিক। কিন্তু তাই বলে যে বাইরের কারো সাথে বিয়ে হয় না, সেটাও কিন্তু একেবারেই নয়। একটু চেষ্টা করলেই সম্ভব।
ছেলেটির যে আচরণ গুলো আমার খটকা লাগছে, মা-বাবা জানার আগেই সে কেবল বোনদের কথায় পিছিয়ে যাচ্ছে। তুমি তো মেয়ে হিসাবে কোন দিক দিয়ে খারাপ নও। অন্তত মা বাবাকে একবার বলার চেষ্টা তো করে দেখতে পারতো। চেষ্টা না করেই পিচিয়ে যাওয়ার কারণ কী? আরও বড় কথা, সে তোমাকে বিয়ে করে ফেলতে বলছে কেন? ব্যাপারটা কি এমন যে তুমি বিয়ে করে ফেললে সে মুক্ত? সম্পর্ক রাখবে না ভালো কথা। ভালো ছেলে পেলে বিয়ে করে ফেলো, এগুলো আবার কেমন কথা!
আমি একটা সহজ জিনিস বুঝি আপু। মা বাবার অমতে বিয়ে করলে তাঁরা কষ্ট পান ঠিকই। কিন্তু যখন দেখেন সন্তান ভালো আছে, মা বাবার কষ্ট দূর কয়ে যায়। পিতা মাতার কাছে সন্তানের ভালো থাকাই সব, অন্য কিছু জরুরী নয়। আর অন্যদিকে প্রেমিকাকে ছেড়ে দিলে মেয়েটির যখন অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে যায়, তাঁকে পাওয়ার আর কোন সম্ভাবনা থাকে না। চিরদিনের জন্য ভালোবাসার সমাপ্তি ঘটে। ছেলেটি যদি সত্যিই অনেক ভালোবেসে থাকে, যেমনটা তুমি বললে, তাহলে এই সহজ কথাটা তাঁর বোঝার কথা। চেষ্টা করে দেখো, সে এটা বুঝতে পারে কিনা। এর বাইরে আসলে কিছু করার নেই। কেউ সম্পর্ক না রাখতে চাইলে তো জোর করা যায় না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
আমি কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক বা আইনজীবী নই। কেবলই একজন সাধারণ লেখক আমি, যিনি বন্ধুর মত সমস্যাটি শুনতে পারেন ও তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু পরামর্শ দিতে পারেন। পরামর্শ গুলো কাউকে মানতেই হবে এমন কোন কথা নেই। কেউ যদি নতুন কোন দিক নির্দেশনা পান বা নিজের সমস্যাটি বলতে পেরে কারো মন হালকা লাগে, সেটুকুই আমাদের সার্থকতা।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
তুকতাক করার অভিযোগে গ্রেফতার মালদ্বীপের নারী মন্ত্রী
মালদ্বীপের নারী মন্ত্রী ফাতিমা শামনাজ আলী সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারবিস্তারিত পড়ুন
ওডিশার প্রথম নারী মুসলিম এমএলএ সোফিয়া ফিরদৌস
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ওডিশা থেকে প্রথম নারী ও মুসলিম এমএলএবিস্তারিত পড়ুন
গফরগাঁওয়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক শামছুন নাহার
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ- ২০২৪ এ ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়েবিস্তারিত পড়ুন