কোরআনের হৃদপিণ্ড এই সুরাটি একবার পাঠ করলে বিশ হজের সমান সওয়াব মিলবে !
পবিত্র কোরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে সূরা ইয়াসিন বিশেষ তাৎপর্য ও গুরুত্ব বহন করে। বিশ্বজাহান সৃষ্টির প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে মহান রাব্বুল আলামিন এ সূরা তেলাওয়াত করে ফেরেশতাদের শুনিয়েছিলেন। সূরা ইয়াসিনের বৈশিষ্ট্য, সৌরভ, তাৎপর্য ও ফজিলতের কথা শুনে তারা বিস্মিত হয়ে মাওলার কুদরতি পায়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়েছিলেন। সুরা ইয়াসিন শুনেই পবিত্র কোরআনের বিশালত্ব সম্পর্কে তাদের মধ্যে সম্যক ধারণা বদ্ধমূল হয়েছিল।
সূরা ইয়াসিনকে কোরআনের রূহ বা প্রাণ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ফজিলতের দিক থেকে এ সূরা যেমন অদ্বিতীয় তেমনি মানুষের জীবনসংশ্লিষ্ট বিষয় আলোচনায় এ সূরা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ইমাম গাজালি রহ. বলেন, সুরা ইয়াসিনকে কোরআনের হৃৎপিণ্ড বলার কারণ হচ্ছে, এ সূরায় কিয়ামত ও হাশর-নাশরের বিশদ ব্যাখ্যা অলঙ্কার সহকারে বর্ণিত হয়েছে। পরকালের বিশ্বাস ইমানের এমন একটি মূলনীতি, যার ওপর মানুষের সব আমল ও আচরণের বিশুদ্ধতা নির্ভরশীল।
পরকালভীতিই মানুষকে সৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করে এবং অবৈধ বাসনা ও হারাম কাজ থেকে বিরত রাখে। অতএব দেহের সুস্থতা যেমন অন্তরের সুস্থতার ওপর নির্ভরশীল; তেমনি ইমানের সুস্থতা পরকাল চিন্তার ওপর নির্ভরশীল।
সুরা ইয়াসিনের আলোচনাকে সারসংক্ষেপ করার হাজারো চেষ্টা করলেও এর প্রতিটি আয়াতই খুব ব্যাখ্যানির্ভর ও অনুধাবনযোগ্য। এই সুরার নিত্য-আবৃত্তি ও মর্মকথা বোঝা সীমাহীন নেক কাজ। এর ভক্ত মুসলমানরা অতি বিশ্বাসের সঙ্গে আপতিত বিপদাপদ ও নানা দুঃখকষ্টে তা পাঠ করে হৃদয় বা মনে সাহস জোগানোর মাধ্যমে আল্লাহর অপার করুণা লাভের ভরসা করে থাকে। জীবনের শেষ সময় যখন ঘনিয়ে আসে, তখন এই সুরা তিলাওয়াত করতে অসমর্থ হলেও অন্যের কণ্ঠে এর তিলাওয়াত শুনে আল্লাহর প্রেমে হৃদয় ভরে পরম বিশ্বাস ও ভক্তি সহকারে জীবন-বিধাতার চরম-প্রান্তে নিজেকে সমর্পণ করে দেয়। সুরা ‘তোয়াহা’ ও সুরা ‘আর-রহমান’ সম্মান ও মর্যাদায় মুসলমানের হৃদয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান দখল করে থাকলেও ‘ইয়াসিন’ নামের এ সুরাটি প্রথম স্থান অধিকার করে রেখেছে।
আমরা জানি, প্রত্যেক মানুষের জন্যই মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যুর সময় কী করা এবং মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কী শেখানো বা কী শোনানো দরকার এ সম্পর্কে হাদিসে বহু আলোচনা রয়েছে। যেমন- হজরত জাবের বিন জায়েদ (রা.) বলেছেন, মুমূর্ষু ব্যক্তির কাছে বসে মৃত্যুর সময় কোরআন পাকের সুরায়ে রায়াদ তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। এর দ্বারা মুমূর্ষু ব্যক্তি শান্তি অনুভব করে এবং তার মানসিক অবস্থা ঠিকমতো বহাল থাকে। এ সম্পর্কে হজরত শেয়রি (রা.) বলেন, মদিনায় আনসাররা মুমূর্ষু ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার আগে তার শিয়রে বসে সুরা বাকারা পাঠ করত। আর প্রিয় নবীজি (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় মৃত ব্যক্তির জন্য মৃত্যু হওয়ার কিছু সময় আগে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি এই মুমূর্ষু ব্যক্তিকে মাফ করুন। এর শয়নের জায়গা ঠাণ্ডা রাখুন। কবরকে প্রশস্ত করুন। মৃত্যুর পর শান্তিতে রাখুন। এ আত্মাকে পুণ্যবানদের আত্মার সঙ্গে মিলিত করুন। আর আখিরাতে আমাকে এবং এই ব্যক্তিকে কাছাকাছি স্থান করে দিন। তাকে দুঃখকষ্ট, বিপদাপদ থেকে বাঁচিয়ে রাখুন।’
তা ছাড়া সুরা ইয়াসিন পাঠ করা সম্পর্কে হজরত আবু দারদা থেকে একটি হাদিসে বলা হয়েছে, প্রিয় নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুমূর্ষু ব্যক্তির শিয়রে বসে সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করা হলে আল্লাহ তায়ালা তার ওপর মৃত্যুযন্ত্রণা সহজ ও লাঘব করে দেন। হাদিসে এ সুরা পাঠের অন্য আরেকটি বিশেষত্ব হলো, পাঠকারী কখনো ইমানহারা হয়ে মৃত্যুবরণ করবে না। হাদিসে আরো বলা হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক জীবের হৃদয় রয়েছে, যা তার দেহের সর্বশ্রেষ্ঠ অংশ। আর কোরআনের হৃদয় হলো সুরা ইয়াসিন। যে ব্যক্তি সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে, তার জন্য আল্লাহ তায়ালা কোরআন শরিফ ১০ বার পড়ার সওয়াব তার আমলনামায় লিখে দেবেন।’ আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘সূর্যোদয়ের সময় এ সুরা পাঠ করলে পাঠকারীর সব ধরনের অভাব দূরীভূত হবে এবং সে ধনী হবে।’ এ ছাড়া সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াতের বহুবিধ উপকার ও ফায়দা রয়েছে। যেকোনো সৎ উদ্দেশ্যে এ সুরা পাঠ করলে আল্লাহপাক পাঠকের মনোবাসনা পূর্ণ করে দেন। বালা-মুসিবত ও রোগ-শোকে এ সুরা পাঠ করলে আল্লাহপাক মুক্তি দান করেন। এ সুরা পাঠ করে ঘর থেকে বের হলে বাইরে থাকা অবস্থায় কোনো ধরনের বিপদের সম্মুখীন হবে না। রোগী বা বিপদগ্রস্তের গলায় এ সুরার লিখিত তাবিজ বেঁধে দিলে বিশেষ উপকার হয়। পাগল ও জিনগ্রস্ত রোগীর প্রতি এ সুরা পাঠ করে ফুঁক দিলে রোগী অচিরেই রোগমুক্ত হয় এবং আরোগ্য লাভ করে। সর্বদা সুরা ইয়াসিন পাঠ করলে বিচার দিনে এই সুরা আল্লাহপাকের কাছে পাঠকারীর মুক্তির জন্য সুপারিশ করবে।
আলী রা. সূত্রে বর্ণিত, যে ব্যক্তি এ সূরা পাঠ করবে, তাকে বিশ হজের সমান সওয়াব দান করা হবে। আর যে এ সূরার তেলাওয়াত শুনবে সে আল্লাহর রাহে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করার সমান সওয়াব পাবে। আর যে এ সূরাকে লিখবে, তার অন্তরে এক হাজার নূর, এক হাজার একিন, এক হাজার নেকি এবং এক হাজার রহমত প্রবেশ করিয়ে দেয়া হবে। পাশাপাশি এক হাজার হিংসা-বিদ্বেষ এবং অন্তরের রোগ বের করে দেয়া হবে। প্রত্যেক মুসলমানের প্রতিদিন সকাল-বিকাল ফজিলতপূর্ণ এই সূরাটি তেলাওয়াত করা উচিত।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ঈদের ছুটির পর বুধবার থেকে নতুন অফিস সময়সূচি
পবিত্র ঈদুল আজহার পর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিতবিস্তারিত পড়ুন
সৌদিতে হজে বিভিন্ন দেশের ৫৫০ হাজির মৃত্যু
সৌদি আরবে এ বছর হজ পালনে গিয়ে কমপক্ষে ৫৫০ জনবিস্তারিত পড়ুন
ঈদে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ টি গবাদিপশু কোরবানি
এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট ১ কোটি ৪বিস্তারিত পড়ুন